আজকের শিরোনাম :

খরা ও অনাবৃষ্টিতে নাকাল অস্ট্রেলিয়ার শিশুরা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৫:০৪

অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস প্রদেশে এখন যে মারাত্মক খরা আর অনাবৃষ্টি চলছে, সে রকম মারাত্মক পরিস্থিতি আগে কোনো দিন এসেছে বলে মনেই করতে পারছেন না ওই অঞ্চলের মানুষ।

এই খরা ও অনাবৃষ্টিকে অস্ট্রেলিয়াতে বলা হচ্ছে ‘দ্য বিগ ড্রাই’।

নিউ সাউথ ওয়েলসের গ্রামীণ এলাকায় এর জন্য সবচেয়ে বেশি ভুগত হচ্ছে সেই সব পরিবারকে, যাদের জীবিকা নির্ভর করে চাষাবাদ বা পশুপালনের ওপর।

গানেডা বা ম্যানিলার মতো নানা এলাকায় ঘুরে বিবিসির সাইমন অ্যাটিকনসন দেখেছেন অনাবৃষ্টির ফলে এসব পরিবারের শিশুদের জীবনে কী ধরনের প্রভাব পড়ছে!

গ্রামীণ নিউ সাউথ ওয়েলসে অনেক বাচ্চাই বলছিল আজকাল প্রচন্ড ধুলোর জন্য কেমন নিঃশ্বাস নিতেও তাদের কষ্ট হচ্ছে, ভীষণ ‘স্ট্রেসড লাগছে’।

আসলে ওই প্রদেশের বহু এলাকায় গত দুই বছর ধরে একফোঁটা বৃষ্টিও হয়নি। আর ‘বিগ ড্রাই’ নামকরণ-করা এই অনাবৃষ্টি অস্ট্রেলিয়ার বহু কৃষক ও খামারির পরিবারে বিরাট বিপর্যয় ডেকে এনেছে।

আর এর বিরূপ প্রভাবটা সবচেয়ে বেশি পড়ছে ওই সব পরিবারের বাচ্চা ছেলেমেয়েদের ওপর।

বছর-আটেকের মাইকেল যেমন বলছিল, ‘সবাই আজকাল খুব বিষণ্ণ, কারো মুখে হাসি দেখতে পাই না। বাবার সঙ্গেও আমাদের খুব কম দেখা হয় কারণ তিনি সারাদিন পশুদের খাওয়াতে ও অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থাকেন।

আসলে দীর্ঘদিন ধরে খরা চলার ফলে এই খামারি পরিবারগুলোর কাজ খুব বেড়ে গেছে - আর তার রেশ টের পাওয়া যাচ্ছে স্থানীয় স্কুলগুলোতেও।

স্কুলের ইয়ার নাইনের একটি ছেলে বলছিল, ‘আমার এখন পড়াশুনোর খুব চাপ। তাই খুব ভোরে উঠে আবার অনেক রাতে শুতে যেতে হয়। তার সঙ্গে এখন যোগ হয়েছে ফার্মের কাজ, কারণ গরুগুলোকে ভালো করে যতœআত্তি করতে হয়।’

তার বন্ধু পাশ থেকে যোগ করে, ‘আগে আমি স্কুল থেকে ফিরে একটু বিশ্রাম নিয়ে, হোমওয়ার্ক সেরেই বাইরে খেলতে বেরোতাম। কিন্তু এখন আর তার কোনও সুযোগ নেই, কারণ গরুগুলোকে খাওয়াতে হয়। মাঠে তো কোনো ঘাসই নেই, শুধু ধুলো আর ধুলো- ওরা খাবেটা কী?’

ম্যানিলা সেন্ট্রাল স্কুলের প্রিন্সিপাল মাইকেল উইনড্রেড অবধি বলছিলেন, আমার স্কুলের বাচ্চারা আজকাল খুব বিষণ্ণ থাকে। বাড়ির কথা, বা চাষাবাদের কথা তুললেই তাদের গলায় সেই বিষণ্ণতা যেন ঝরে পড়ে।

বাচ্চা মেয়ে জোসেফাইন জানাচ্ছিল, ‘আস্তাবলে যখন ঘোড়াগুলো, কিংবা অন্য গবাদি পশু বা ভেড়াগুলো ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে তখন ভীষণ দু:খ হয়। ওদেরও কিছু করার নেই - কারণ খাবারই যে নেই।’


স্থানীয় স্কুলের ডেপুটি প্রিন্সিপাল র‌্যাচেল ফার্গুসনও বলছিলেন, ‘আমাদের বাচ্চারা খুবই শক্ত ধাতের, কিন্তু ওদের পরিবারগুলো যে কী বিরাট আর্থিক চাপের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে সেটা ওরা দিব্বি বোঝে।’

নিউ সাউথ ওয়েলস এখন বৃষ্টির জন্য কাতর প্রার্থনা করছে, তবে সেখানে গ্রামীণ স্কুলের শিক্ষকরা এটাও জানেন, আজকের এই বাচ্চারা একদিন আবহাওয়ার এই অনিশ্চয়তার ওপর ভরসা না-করে পাকা চাকরি আর স্থিতিশীলতার আকর্ষণে শহরে পাড়ি জমালে তাদের কোনো দোষ দেওয়া যাবে না!
খবর বিবিসি

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ