সিউলের টয়লেটে গোপন ক্যামেরা ধরার অভিযান
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১২:১৬
দক্ষিণ কোরিয়ায় টয়লেটে এবং পোশাক পরিবর্তনের ঘরে গোপন ক্যামেরা একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত বছরে ৬ হাজারের বেশি ঘটনা রয়েছে যেগুলো ‘স্পাই ক্যাম পর্ণ’ নামে পাওয়া গেছে।
ভিডিওগুলো অনলাইনে আপলোড করার সময় অবশ্যই ওই ব্যক্তির কোনো অনুমতি নেয়া হয় না।
সেসব ভিডিও ছেড়ে দেয়া হয় কোনো না কোনো পর্ণগ্রাফির ওয়েবসাইটে।
এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীরা বলছেন, সিউলে বাড়তে থাকা এধরনে অপরাধ যদি অচিরেই নিয়ন্ত্রণে না আনা যায় তবে তা অন্যান্য দেশেও একইভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে। আর তখন সেটি প্রতিকার হবে খুবই কঠিন।
এই বছরের শুরুর দিকে হাজার হাজার নারীরা এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছিলেন। তারা গোপন ক্যামেরা ব্যবহারের বিরুদ্ধে সেই বিক্ষোভে লিখেছিলেন, ‘আমার জীবন তোমার কাছে পর্ণ না।’
দেশটির অ্যাকটিভিস্টরা বলছেন, মেয়েরা সব সময় একটা আতঙ্কের মধ্যে থাকেন, কথন তাদের অনুমতি ছাড়ায় ছবি তোলা হবে অথবা ভিডিও করা হবে।
স্পাই ক্যাম পর্ণের শিকার ৮০% নারী। সিউলের পাবলিক টয়লেট গুলো এতদিন মাসে একবার চেক করা হত সেখানে কোন গোপন ক্যামেরা আছে কিনা সেটা পরীক্ষা করে দেখার জন্য।
কিন্তু এখন থেকে টয়লেটের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি প্রতিদিন এই কাজটি করবেন।
প্রযুক্তিগতভাবে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর একটি হলো কোরিয়া, একই সঙ্গে ডিজিটাল সংযুক্তিতেও এগিয়ে।
স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা এখানে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি, প্রায় ৯০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্করই রয়েছে স্মার্টফোন এবং অন্তত ৯৩ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু এই প্রযুক্তিগত অগ্রগতিই এ ধরনের অপরাধীকে সনাক্ত করতে বা ধরতে কঠিন করে তুলেছে।
২০১৫ সালে ডিজিটাল সেক্স ক্রাইম আউট নামে একটি গ্রুপ তৈরি করা হয় যার নাম হা ইনা, আর এটি তৈরি করেন পার্ক সো-ইয়ুন।
তাদের মূল লক্ষ্য ছিল কুখ্যাত 'সোরানেট' নামের একটি ওয়েব সাইটকে ধ্বংস করা।
এই সাইটে নারীদের কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই তাদের হাজার হাজার ভিডিও আপলোড এবং শেয়ার করা হতো, আর যার ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল লাখ লাখ।
সেখানে গোপন ক্যামেরার ভিডিওগুলোর বেশিরভাগই ছিল পোশাক বদলানোর রুম বা টয়লেট থেকে ধারণ করা অথবা কোনো সাবেক প্রেমিকের তোলা ভিডিও যা প্রতিশোধ হিসেবে ওই ওয়েব সাইটে দিয়ে দেয়া হতো।
সেসব ঘটনার শিকার অনেক নারীকে এমনকি আত্মহত্যার পথ পর্যন্ত বেছে নিতে হয়েছে।
এসব ভিডিও কোনো একটি ওয়েব সাইট থেকে সরিয়ে দেবার পরেও অন্য কোনো পর্ণ সাইটে আবার হয়তো আপলোড করা হতো কিংবা তা শেয়ার করার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তো।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একজন কর্মকর্তা এর আগে বিবিসিকে বলেছিলেন কারা এই কাজটা করছে সেটা ধরা বেশ কঠিন কারণ তারা ক্যামেরা বসানো ১৫ মিনিটের মধ্যে সেটা আবার সরিয়ে ফেলতে পারে।
গত বছর স্পাই ক্যামেরা লাগানোর সাথে জড়িত সন্দেহে ৫ হাজার ৪০০শ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু তাদের মধ্যে ২% এর কম জেলখানায় রয়েছে।
বর্তমানে দেশটিতে এ অপরাধের শাস্তি এক বছরের জেল কিংবা ১০ মিলিয়ন স্থানীয় মুদ্রা, যার পরিমাণ হলো ৮ হাজার ৯০০ মার্কিন ডলার। তবে শাস্তির মাত্রা বাড়ানোর পাশাপাশি সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, প্রয়োজন নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন।
খবর বিবিসি এবিএন/সাদিক/জসিম
খবর বিবিসি এবিএন/সাদিক/জসিম
এই বিভাগের আরো সংবাদ