আজকের শিরোনাম :

‘চীনা সংশ্লিষ্টতা’ থাকায় ড্রাগন ফলের নামই পাল্টে গেল ভারতে

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ জানুয়ারি ২০২১, ১৩:৪২

ভারতে গুজরাটের রাজ্য সরকার ঘোষণা করেছে যে ড্রাগন ফলের নামের সাথে ‘চীনা সংশ্লিষ্টতা’ থাকার কারণে এই ফলের নাম বদলে এর নতুন নামকরণ হবে ‘কমলম্’, যা পদ্ম ফুলের সংস্কৃত নাম।

গুজরাট সরকারের এ সিদ্ধান্ত নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ঠাট্টা-মস্করার ঝড় বইছে- এক কথায় এবার ফলের নাম নিয়ে টানাটানিতে তোলপাড় সামাজিক মাধ্যম।

গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ভিজয় রুপানি তার সরকারের এ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন।

পদ্ম ফুল হিন্দুদের জন্য পবিত্র এবং এটি ভারতের জাতীয় ফুল।

ভারত ও চীনের মধ্যে হিমালয় অঞ্চলে দীর্ঘ সীমান্ত বরাবর সেনাবাহিনীর মধ্যে উত্তেজনা ও অচলাবস্থার পটভূমিতে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক এখন তলানিতে রয়েছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ভারতে ড্রাগন ফলের চাষ শুরু হয়েছে। গুজরাট রাজ্যের বিভিন্ন জায়গাতে এখন এই ফলটির চাষ হয়।

ক্যাকটাস পরিবারের এক ধরনের ফল ড্রাগন ফল। এই ফলের বাইরের আবরণে রয়েছে অনেকটা ড্রাগনের গায়ের চামড়ার মত খোঁচা খোঁচা আঁশ, আর এর থেকেই এই ফলের নাম ড্রাগন ফল।

এই ফল উৎপাদন হয় উষ্ণমন্ডলীয় আবহাওয়ায়, আর মধ্য আমেরিকা এর আদি জন্মস্থান। দক্ষিণ আমেরিকা থেকেই মূলত এই ফলের আমদানি। কিন্তু এই ফলের নামের কারণে ভারতে অনেকে মনে করে এই ফল এসেছে চীন দেশ থেকে।

ভারতে প্রতিবেশী চীনাদের সাথে ড্রাগন নামটা জড়ানোর সংস্কৃতি অনেক দিনের। একই ভাবে ভারতীয়দের কথা উল্লেখ করতে চীনে হাতি শব্দটা ব্যবহারেরও প্রচলন রয়েছে।

গত বছর গ্রীষ্ম মওসুমে হিমালয় সীমান্তে বৈরি দুই দেশের সৈন্যদের মধ্যে সশস্ত্র সংঘাতের পর থেকে প্রতিবেশী দুটি দেশের মধ্যে শীতল সম্পর্ক বিরাজ করছে।

ড্রাগন ফলের নাম বদলের সিদ্ধান্ত গুজরাট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী রুপানি ঘোষণা করেন মঙ্গলবার। অন্যদিকে, পদ্ম ফুল ভারতীয় জনতা পার্টির নির্বাচনী প্রতীকও।

‘‘ড্রাগন ফল নামটি যথাযথ নয়। তাছাড়া ড্রাগন নামটি বললেই চীনের কথা প্রথমে মাথায় আসে। কাজেই এ ফলের নাম আমরা বদলে এর নাম ‘কমলম্’ দিয়েছি,'” স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমকে জানান রুপানি।

এর বেশি কিছু জানাননি রুপানি। কিন্তু তার এই মন্তব্যের পর থেকে সামাজিক মাধ্যম উত্তাল হয়ে উঠেছে ঠাট্টা-মস্করায়।

যেমন একজন টুইটারে মন্তব্য করেছেন- ‘চীনের ভারতীয় ভুখন্ডে অনুপ্রবেশের চেষ্টার সত্যিকার সৃজনী জবাব কী হতে পারে সামরিক ঐতিহাসিকরা সেটা জেনে নিন- এর জবাব হলো সরকারিভাবে থাই ফলের নাম বদলে দেয়া। আমাদের সাথে কোন গোলমাল বাঁধানোর চেষ্টা করলে এমন কড়া জবাবই পেতে হবে। আমরা সব কিছুর নাম বদলে দিতে পারি”- এমনটাই ছিল এই টুইটের ভাষা।

বিজেপি সরকারের আমলে শহর থেকে রাস্তা সবকিছুর নাম বদলের যে হিড়িক পড়েছে, এসব ঠাট্টা-তামাশার মধ্যে দিয়ে সেসব সিদ্ধান্তকে এক হাত নিয়েছেন সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরা।

অনেকেই বিজেপির এই উদ্যোগকে সমালোচনা করেছে এই বলে যে ভারতের শতাব্দী প্রাচীন ইসলামী শাসনের ইতিহাস বিজেপি সরকার ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে ফেলতে চায়, ভারতের ইতিহাস নতুন করে লিখেত চায় নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকার।

দিভেশ ভগত যেমন ঠাট্টার সুরে টুইট করেছেন, ‘'ওরা এখন ফলের নামও বদলাতে শুরু করেছে!’

আরেকজন টুইটার ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘তিনি অন্তত আশ্বস্ত যে ফলটা অন্তত তিনি খেতে পারবেন।’

সরকার নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার ধুয়া তুলে যেভাবে জুন মাস থেকে সব চীনা অ্যাপ বন্ধ করেছে, তাতে তিনি ভেবেছিলেন ‘#বয়কটড্রাগনফ্রুট এ রকম কোন হ্যাশট্যাগ এখন ট্রেন্ডিং করতে দেখা যাবে।’

সামাজিক মাধ্যমে ড্রাগন প্রসঙ্গে অনেকে ‘গেম অফ থ্রোনস’-কেও টেনে এনেছেন তাদের পোস্টিংয়ে।

ড্রাগন ফলের নাম বদলে দেয়ায় খালেসি আর তার ড্রাগনদের নিয়েও প্রচুর মস্করা চলছে সামাজিক মাধ্যমে।
সূত্র : বিবিসি

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ