আজকের শিরোনাম :

টিগ্রের রাজধানীর ‘সম্পূর্ণ দখলে’ নেয়ার দাবি ইথিওপিয়ার

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০২০, ১১:৩৮ | আপডেট : ২৯ নভেম্বর ২০২০, ১২:০৩

ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবিই আহমেদ বলেছেন, সরকারি বাহিনী দেশটির উত্তর টিগ্রের আঞ্চলিক রাজধানী ‘সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে’ নিয়েছে।

টিগ্রে পিপলস লিবারেশন ফ্রন্টের (টিপিএলএফ) বিরুদ্ধে আগ্রাসনের ব্যাপকতা বাড়ানোর পর কিছুদিন আগে মেকেলে অঞ্চল দখল করে সেনাবাহিনী।

সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে টিপিএলএফের নেতা বলেছেন যে, তারা ‘আত্ম-সংকল্প বজায় রাখার অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে’ করবেন এবং ‘শেষ পর্যন্ত আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে লড়াই’ করতে চায়।

সাম্প্রতিক এই সংঘর্ষে শত শত মানুষ মারা গেছে এবং কয়েক হাজার মানুষ ঘড়ছাড়া হয়েছেন।

আঞ্চলিক দল টিপিএলএফের বিরুদ্ধে ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবিই আগ্রাসনের ঘোষণা দিলে এ মাসের শুরুতে সংঘাতের শুরু হয়।

টুইটারে এক বিবৃতিতে আবিই লিখেছেন, সেনাবাহিনী ওই অঞ্চলের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমি জানাতে পেরে আনন্দিত যে আমাদের কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং টিগ্রে অঞ্চলের সেনা অভিযান স্বথগিত হয়েছে।’

আবিই জানিয়েছেন, সেনাবাহিনী টিপিএলএফের হাতে আটক হওয়া কয়েক হাজার সেনাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে এবং বেসমারিক নাগরিকদের নিরাপত্তা মাথায় রেখে অভিযান চালানো হয়েছে।

আবিই বলেছেন, ‘যা ধ্বংস করা হয়েছে, সেগুলো পুনর্র্নিমাণের এবং যারা শহর ছেড়ে চলে গেছে তাদের ফিরিয়ে আনার কঠিন কাজ এখন আমাদের সামনে।’

তবে ওই অঞ্চলে সংঘাতের বিষয়ে বিস্তারিত জানা কঠিন, কারণ টিগ্রের সাথে সব ধরনের ফোন, মোবাইল এবং ইন্টারেনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে।

টিপিএলএফের প্রতিক্রিয়া কী?
সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে পাঠানো একটি টেক্সট মেসেজে টিপিএলএফ নেতা দেব্রেতসিয়ন গেব্রেমাইকেল যুদ্ধক্ষেত্রের পরিস্থিতি সম্পর্কে সরাসরি মন্তব্য না করলেও অভিযোগ করেছেন যে, সরকারি বাহিনীর ‘নৃশংসতা’র কারণে ‘শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ’ করাটাকেই তারা একমাত্র সমাধান মনে করছেন।

তিনি লিখেছেন, ‘আমাদের আত্ম-সংকল্প বজায় রাখার অধিকার প্রতিষ্ঠা করার প্রশ্ন এটি।’

এর আগে সংবাদ সংস্থা এএফপির একটি টিপিএলএফের একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়, যেখানে তারা ওই অঞ্চলে ‘যুদ্ধবিমান ও গোলাবারুদ ব্যবহার করে হত্যাযজ্ঞ’ চালানোর বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্বপ্রদায়কে নিন্দা জ্ঞাপন করার আহ্বান জানিয়েছিল।

মেকেলেতে আক্রমণের জন্য তারা এরিত্রেয়ার সরকারের বিরুদ্ধেও অভিযোগ তোলে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, টিপিএলএফ এখন পাহাড়ে পালিয়ে গিয়ে পরবর্তী সময় কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে গেরিলা আক্রমণের প্রস্তুতি নিতে পারে।

টিপিএলএফ কারা?
টিপিএলএফের যোদ্ধারা মূলত স্থানীয় মিলিশিয়া এবং প্যারামিলিটারি ইউনিটের সদস্য ছিলেন। ধারণা করা হয় তাদের সংখ্যা আনুমানিক ২ লাখ ৫০ হাজার।

টিপিএলএফের নেতা দেব্রেস্তিয়ন গেব্রেমাইকেল বলেছেন টিগ্রে'র সেনাবাহিনী তাদের ‘অঞ্চল শাসনের অধিকার রক্ষা করার জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত।’

দাতব্য সংস্থাগুলো আশঙ্কা করছে এই সংঘাতের কারণে মানবাধিকার সংকট তৈরি হতে পারে এবং হর্ন অব আফ্রিকা অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।

ইথিওপিয়ার সরকার নিয়োজিত মানবাধিকার কমিশন টিগ্রের যুবকদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনেছে।

কমিশন বলছে, মাই-কাদ্রা শহরে ৬০০'র বেশি টিগ্রের বাইরের বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে তারা। টিপিএলএফ ওই ঘটনার সাথে কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করেছে।

সরকার ও টিপিএলএফ কেন যুদ্ধ করছে?
২০১৮ সালে আবিই ক্ষমতা নেয়ার আগ পর্যন্ত কয়েক দশক ধরে ইথিওপিয়ার সেনা এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে টিপিএলএফের কর্তৃত্ব বজায় ছিল।

গত বছর আবিই ক্ষমতাসীন জোট ভেঙে দেন এবং একাধিক নৃতাত্বিক গোষ্ঠীভিত্তিক আঞ্চলিক দল গঠন করেন এবং তাদের নিয়ে একটি দল গঠন করেন। টিপিএলএফ ওই দলে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানায়।

সেপ্টেম্বরে ওই দ্বন্দ্ব আরও বৃদ্ধি পায় যখন টিগ্রেতে একটি আঞ্চলিক নির্বাচন হয়। যদিও করোনাভাইরাস মহামারির জন্য সেসময় পুরো দেশে সব ধরনের ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল।

আবিই সে সময় ভোটকে অবৈধ বলে ঘোষণা করেন।

টিগ্রের প্রশাসন আবিইর সংস্কার কার্যক্রমকে নেতিবাচকভাবে দেখে। তারা মনে করে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারকে বেশি ক্ষমতা দিয়ে আঞ্চলিক রাজ্যগুলোর ক্ষমতা সীমিত করতে চান।

এরিত্রিয়ার প্রেসিডেন্ট ইসাইস আফওয়ের্কির সঙ্গে আবিইর ‘নীতি বহির্ভূত’ বন্ধুত্বরও সমালোচক তারা।

২০১৯ সালে এরিত্রিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখার জন্য নোবেল শান্তি পুরষ্কার পাওয়া আবিই মনে করেন টিপিএলএফ তার কর্তৃত্বকে খর্ব করতে চায়।
খবর বিবিসি

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ