ভ্যাকসিন ট্রায়াল : টাকা চেয়েছে সিনোভ্যাক

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১০:২২ | আপডেট : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১০:৪২

বাংলাদেশে চীনের সিনোভ্যাক কোম্পানির করোনা টিকা পরীক্ষা (ট্রায়াল) নিয়ে নতুন জটিলতা দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইসিডিডিআর,বি) প্রটোকল অনুযায়ী নিজস্ব অর্থায়নে এই ভ্যাকসিনের ট্রায়াল হওয়ার কথা থাকলেও এখন কোম্পানিটি বাংলাদেশকে ট্রায়ালে যৌথ অর্থায়নের শর্ত দিয়েছে। কারণ হিসেবে সিনোভ্যাক বায়োটেক কোম্পানি তাদের আর্থিক সংকটের কথা জানিয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সিনোভ্যাক আইসিডিডিআর,বিকে চিঠি দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যৌথ অর্থায়নের শর্তের কথা জানায়। পরে আইসিডিডিআর,বি বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে। 

সিনোভ্যাকের শর্তের কথা স্বীকার করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ইতিমধ্যে এসব শর্তের কথা সারসংক্ষেপ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত এলেই মন্ত্রণালয় পরীক্ষার পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।

সিনোভ্যাকের টিকার পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত এমন একজন গবেষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আইসিডিডিআর,বির পরীক্ষা প্রটোকল অনুযায়ী বাংলাদেশে এই টিকা পরীক্ষার সব ব্যয়ভার সিনোভ্যাক কোম্পানির করার ও আইসিডিডিআর,বির ডিজাইন অনুযায়ী পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই কোম্পানিটি সরকারের কাছে কো-ফান্ডিং চেয়ে চিঠি পাঠায়। সে ক্ষেত্রে সরকার আর্থিক সহযোগিতা করতে না চাইলে কোম্পানি পরীক্ষা শুরু করতে কিছুটা দেরি হবে বলেও চিঠিতে জানায়। এমনকি আইসিডিডিআর,বির প্রটোকলের বাইরে আগামী মাসে দেশের করোনা পরিস্থিতি সার্ভে করার জন্য একটি টিম পাঠানোর শর্ত দিয়েছে।

হঠাৎ করেই সিনোভ্যাকের এসব শর্ত দেওয়ার কারণ কী, জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই গবেষক বলেন, মূলত আর্থিক সংকটে পড়েছে কোম্পানিটি। কারণ আরও তিন দেশে তাদের টিকার তৃতীয় ও শেষ ধাপের পরীক্ষা চলছে। সেখানে অর্থ বিনিয়োগ করতে হচ্ছে। তবে আর্থিক বিষয় ছাড়া অন্য কোনো কারণ আছে কি না, ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। এমন হতে পারে পরীক্ষার অনুমোদনের পর সরকার সিদ্ধান্ত নিতে এক মাসের মতো দেরি করেছে। অনুমোদনের সঙ্গে সঙ্গে শুরু করা গেলে ভালো হতো। কারণ তখন কোম্পানির আর্থিক সংকট এতটা ছিল না। এই দেরি হওয়াতেই নতুন জটিলতা দেখা দিতে পারে।

তবে এই গবেষক পরামর্শ দিয়ে বলেন, এখন সরকারের উচিত হবে আর দেরি না করে এ ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া। কারণ যত দেরি হবে, ততই নতুন সংকট দেখা দেবে। তা ছাড়া পরীক্ষায় যে পরিমাণ অর্থ সরকারকে দিতে হবে, তার পরিমাণ খুব বেশি নয়। সরকারের এই অর্থ দেওয়ার সক্ষমতা আছে।

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আবদুল মান্নান বলেন, সিনোভ্যাক কোম্পানি যে শর্ত দিয়েছে, সেটা পূরণ না করলেও তারা আমাদের সঙ্গে আছে। তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে। তারা বলেছে যে আগামী মাসে একটা সার্ভে টিম পাঠাবে।

সচিব আরও বলেন, তারা শর্ত দিয়েছে। কিন্তু সে শর্ত যে পূরণ করতেই হবে, এ রকম নয়। আবার সরকার মনে করলে করতেও পারে। তারা ফিন্যান্সিয়াল সাপোর্ট চাইছে। এটা তো সরকারের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। তবে তারা এটাও বলেছে, আর্থিক সহযোগিতা না পেলে তারা ট্রায়াল শুরুর ব্যাপারে কিছু সময় চেয়েছে। কারণ কোম্পানিটি ইতিমধ্যেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ট্রায়ালের ব্যাপারে ইনভেস্টমেন্ট করেছে।

তবে সিনোভ্যাক কোম্পানির এমন শর্তের ব্যাপারে কোনো চিঠির কথা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানে না বলে জানিয়েছেন অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার খুরশিদ আলম। 

তিনি বলেন, আমি ঠিক জানি না। কোনো চিঠি দিয়ে থাকলে মন্ত্রণালয়কে (স্বাস্থ্য) দিয়েছে। আমাদের কাছে কোনো চিঠি দেয়নি। আমরা এ ব্যাপারে কিছু জানি না। এ রকম কোনো চিঠি আমাদের কাছে আসেনি। যোগাযোগটা দুই দেশের মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে হয়েছে। মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় চিঠি লিখেছিলেন। তিনি আমাদের এ ব্যাপারে কিছু জানাননি।  

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘যত দূর শুনেছি, চীনের সিনোভ্যাক কম্পানি তাদের আগের জায়গা থেকে সরে এসে এখন ট্রায়ালে বাংলাদেশের আর্থিক অংশীদারি চাচ্ছে। এটি যুক্তিযুক্ত হয় না। আমরা তাদের ট্রায়ালের সুযোগ করে দিচ্ছি, সেটিই বড় কথা। এসব নিয়েই হয়তো তাদের ট্রায়ালটি ঝুলে গেছে।’

সংক্রমণ কমে গেলে ট্রায়ালের উপগোগিতা কমে যাবে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, একদিক থেকে কিছুটা তো কমবেই। তবে চাইলে যেকোনো সময়ই টিকার ট্রায়াল করা যায়।

এর আগে, গত ১৮ জুলাই বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি) আইসিডিডিআর,বিকে এ টিকার পরীক্ষার অনুমোদন দেয়। তবে সরকারের অনুমতি পেতে সময় লাগে এক মাসেরও বেশি সময়। এ সময় টিকা নিয়ে নানা ধরনের কথাবার্তা বলেন স্বাস্থ্য সচিব ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তখন টিকা পরীক্ষার ব্যাপারে একধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। অবশ্য গবেষকরা শুরু থেকেই দেশে সিনোভ্যাক কোম্পানির টিকা পরীক্ষার ব্যাপারে সরকারকে তাগিদ দিয়ে আসছেন। করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি কমিটিও তাদের শেষ বৈঠকে দেশে টিকা পরীক্ষার ওপর জোর দেয়। তারপরও পরীক্ষার সরকারি অনুমোদন পেতে এক মাসের বেশি সময় লেগে যায়। গত ২৮ আগস্ট সিনোভ্যাক টিকার পরীক্ষার অনুমতি দেয় সরকার। সেদিনই পরীক্ষার জন্য চীন থেকে সিনোভ্যাক কোম্পানির টিকা দেশে আনার অনুমতি দেয় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। সঙ্গে সঙ্গে অনুমতির কাগজপত্র চীনে কোম্পানির কাছে পাঠিয়েও দেয় আইসিডিডিআর,বি। সর্বশেষ যে হাসপাতালে পরীক্ষা করা হবে, সেসব হাসপাতালকেও নির্দেশনা দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

শেষ অনুমোদনের পর আইসিডিডিআর,বি গণমাধ্যমকে বলেছিল, ১২-১৫ দিনের মধ্যেই পরীক্ষার জন্য চীন থেকে টিকা এসে পৌঁছবে। কিন্তু এক মাস পর ২৪ সেপ্টেম্বর টিকার পরিবর্তে কিছু শর্ত দিয়ে চিঠি পাঠায় সিনোভ্যাক কোম্পানি। এর ফলে এই টিকার পরীক্ষা নিয়ে নতুন জটিলতা দেখা দিল।

এবিএন/জনি/জসিম/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ