আজকের শিরোনাম :

বেশিরভাগ কোভিড-১৯ আক্রান্তেরই ঝুঁকি কম

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৯:১০

চীনের স্বাস্থ্যা কর্মকর্তারা ৪৪ হাজারের বেশি কোভিড-১৯আক্রান্ত ব্যক্তির বিস্তারিত নিয়ে একটি জরিপের ফল প্রকাশ করেছে, বলা হচ্ছে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর এটাই এই রোগ নিয়ে বৃহত্তম জরিপ।

চীনের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেন্টেশন এর তথ্যে বলা হচ্ছে, ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রেই রোগী স্বল্প ঝুঁকিতে আছেন। যারা বেশি ঝুঁকিতে, তাদের মধ্যে বয়স্ক ও অন্যান্য রোগে অসুস্থ থাকা ব্যক্তিরা রয়েছেন।

গবেষণা আরো বলছে মেডিকেল কর্মকর্তা যারা রয়েছেন তারা বেশি ঝুঁকিতে আছেন। মঙ্গলবার উহানের একটা হাসপাতালের পরিচারক মারা গেলে মেডিকেল কর্মকর্তারা যে কতটা ঝুঁকিতে রয়েছেন সেটা আবারো আলোচনায় আসে।

৫১ বছর বয়সী লিউ ঝিমিং ছিলেন উহানের সবচেয়ে ভালো হাসপাতালগুলোর একটির পরিচালক। এ পর্যন্ত যে কয়জন স্বাস্থ্য কর্মী মারা গেছেন লিউ ঝিমিং তাদের মধ্যে সবচেয়ে সিনিয়র স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। হুবেই প্রদেশের উহান শহরটি দেশটির মধ্যে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হওয়া একটা শহর।

সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেন্টেশন বা সিসিডিসি এর প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে এই প্রদেশে মৃত্যুহার ২ দশমিক ৯ শতাংশ। যেখানে সারা দেশে এই হার শূন্য দশমিক চার শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে সব মিলিয়ে কোভিড-১৯ ভাইরাসে মৃত্যুহার ২ দশমিক ৩ শতাংশ। মঙ্গলবার চীনের প্রকাশ করা সবশেষ তথ্যে দেখা যাচ্ছে সেখানে মৃতের সংখ্যা ১,৮৬৮ জন এবং ৭২,৪৩৬ সংক্রমিত হয়েছে। চীনের কর্তৃপক্ষ বলছে ১২ হাজারের বেশি মানুষ সেরে উঠেছে।

গবেষণা থেকে কী জানা যাচ্ছে?

সিসিডিসি এই প্রতিবেদন সোমবার প্রকাশ করে এবং চাইনিজ জার্নাল এপিডেমিওলোজি তে প্রকাশ করা হয়।

ঐ প্রতিবেদনে চীনে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কোভিড-১৯ এ ৭২,৩১৪ টা কেস যেগুলো পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে একেবারে নিশ্চিত, সন্দেহজনক এবং যেগুলোর কোন লক্ষ্মণ ধরা পড়েনি।

ভাইরাস সম্পর্কে আগের বর্ণনা, সংক্রমণের ধরন এর সব ফলাফল বৃহৎ আকারে নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রতিবেদনে সমগ্র চীনে ৪৪,৬৭২ টা কেসের বিস্তারিত ভেঙ্গে বলা আছে।

তার মধ্যে কিছু কিছু সারসংক্ষেপ এমন:

৮০ দশমিক নয় শতাংশ সংক্রমণ নমনীয় মাত্রার, ১৩ দশমিক আট শতাংশ তীব্র, ৪ দশমিক সাত শতাংশ সংকটপূর্ণ।

সবচেয়ে ঝুঁকিতে ৮০ বছর বা তারচেয়ে বেশি বয়সী। এদের সংখ্যা ১৪ দশমিক আট শতাংশ।
৯ বছর বয়স থেকে ৩৯ বছর পর্যন্ত কোন ঝুঁকি নেই। মৃত্যুর হার ও অনেক কম, শূন্য দশমিক দুই শতাংশ।

এরপরের এজ গ্রুপ বা বয়সভিত্তিকভাবে শঙ্কা বাড়ছে। যেমন ৪০ বছরে শূন্য দশমিক চার শতাংশ, ৫০ বছরে এক দশমিক তিন শতাংশ, ৬০ বছরে তিন দশমিক ছয় শতাংশ এবং ৭০ বছরে এটা আট শতাংশ।

নারী পুরুষ হিসেব করলে পুরুষরা নারীদের চেয়ে বেশি মারা যাচ্ছে। নারী-এক দশমিক সাত শতাংশ, পুরুষ-দুই দশমিক আট শতাংশ।

যাদের আগে থেকেই হৃদযন্ত্রের সমস্যা, ডায়াবেটিস,শ্বাসতন্ত্রের অসুখ এবং উচ্চ-রক্তচাপ রয়েছে তারা এই ভাইরাসে সহজেই সংক্রমিত হতে পারে।

মেডিকেল স্টাফ:

মেডিকেল স্টাফ যারা সেবা দিচ্ছেন তাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে ৩০১৯জন আক্রান্ত হয়েছে। এদের মধ্যে ১৭১৬ জন নিশ্চিত এই রোগে আক্রান্ত। এবং ১১ই ফেব্রয়ারী পর্যন্ত ৫ জন মারা গেছে।

এই গবেষণা ভবিষ্যতের কি বার্তা দিচ্ছে?

করোনাভাইরাস সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়ার সময়কাল ছিল ২৩-২৬ জানুয়ারী। এই প্রতিবেদন তৈরি করার সময় ১১ ফেব্রয়ারী পর্যন্ত সেটা ক্রমাগত ভাবে কমতে শুরু করে।

প্রতিবেদনে ধারণা করা হচ্ছে এই যে সংক্রমণ পরতির দিকে যাওয়ার যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে তার মানে হতে পারে "পুরো শহরকে আলাদা করে ফেলা, জরুরি তথ্য উচ্চ মাত্রায় বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচার করা যেমন হাত ধোয়া, মাস্ক পরা, সাহায্য নেয়া ইত্যাদি, বিভিন্ন ক্ষেত্রের রেসপন্স টিমের কার্যক্রম এই মহামারী প্রতিরোধ করতে সাহায্য করেছে"।

কিন্তু লেখকেরা সতর্ক করে বলেছে অনেকেই ছুটি শেষ করে দেশে ফিরছে। দেশটির প্রয়োজন হবে প্রস্তুত থাকা সম্ভাব্য সব সতর্ক ব্যবস্থা নেয়া।

এই ভাইরাসের প্রতি চীনের প্রতিক্রিয়া ছিল উহানকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা। যেটা কিনা হুবেই প্রদেশের সবচেয়ে বড় শহর। প্রদেশের অন্যান্য স্থান এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে যাওয়ার ক্ষেত্রে তীব্র বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।

প্রমোদতরীগুলোর কী করা হচ্ছে?

জাপানের ইয়োকোহামা বন্দরে কোয়ারেন্টিন করা প্রমোদতরী ডায়মন্ড প্রিন্সেস থেকে দুইটি উড়োজাহাজে করে মার্কিন নাগরিকদের সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

সোমবার ভোররাতে টোকিওর হ্যানেডা বিমানবন্দর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের পাঠানো বিমান ছেড়ে যায় বলে জানাচ্ছে কিওডো নিউজ এজেন্সি।

চীনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হবার কারণে জাপানের ইয়োকোহামা বন্দরে গত ৩রা ফেব্রুয়ারি থেকে আটকে ছিল ডায়মন্ড প্রিন্সেস।

জাহাজটিতে ৩৫৫ জনেরও বেশি লোকের করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিশ্চিত করা হয়েছে। চীনের বাইরে একক কোন জায়গায় সবচেয়ে বেশি সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে এই জাহাজেই।

ডায়মন্ড প্রিন্সেস জাহাজে প্রায় ৪০০ মার্কিন যাত্রী ছিলেন, এদের মধ্যে অন্তত ৪০জনের করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঘটেছে। তাদের চিকিৎসা জাপানেই হবে।

ডায়মন্ড প্রিন্সেস জাহাজটিকে প্রায় ৩,৭০০ যাত্রী নিয়ে ইয়োকোহামা বন্দরে কোয়ারেন্টিন করা হয়। এদিকে দু হাজার যাত্রী সমেত আরেকটি প্রমোদতরীকে অবশেষে ক্যাম্বোডিয়ার বন্দরে ভিড়তে দেয়া হয়েছে।

জাহাজটি দিনের পর দিন সাগরে ভেসে ছিলো, কোন বন্দরই এটিকে ভিড়তে দিচ্ছিল না, কারণ তাদের সন্দেহ ছিলো এই জাহাজের যাত্রীরা করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে দিতে পারে।

'দ্য ওডিসি অব দ্যা এমএস ওয়েস্টারড্যামকে' পাঁচটি দেশের বন্দর থেকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছিলো। এটিতে ১,৪৫৫ জন যাত্রী এবং ৮০২ জন ক্রু ছিল। দুই সপ্তাহ ধরে সাগরে প্রমোদবিহার করার কথা ছিল জাহাজটির।

১৪ দিনের এই বিহার শেষ হয়ে যাওয়ায় জ্বালানী ও খাদ্য সঙ্কট দেখা দেয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। থাইল্যান্ড ছাড়াও জাপান, তাইওয়ান, গুয়াম ও ফিলিপিন্স এর আগে বন্দরে ভিড়তে দেয়নি জাহাজটিকে।

এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ