আজকের শিরোনাম :

চীনে ভাইরাসে শত শত মানুষ আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা

  বিবিসি

১৮ জানুয়ারি ২০২০, ১৮:১৯ | আপডেট : ১৮ জানুয়ারি ২০২০, ১৮:২০ | অনলাইন সংস্করণ

চীনে রহস্যজনক ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া মানুষের সংখ্যা দেশটির সরকারি ভাবে প্রকাশিত সংখ্যার তুলনায় আরো অনেক বেশি বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

নতুন এই ভাইরাসে ৫০ জন আক্রান্ত হওয়ার কথা নিশ্চিতভাবে জানা গেছে বলে জানানো হয়, কিন্তু যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন এই সংখ্যা এক হাজার ৭শ জনেরও বেশি। গত ডিসেম্বরে ইউহান শহরে সনাক্ত হওয়ার পর থেকে এখনো পর্যন্ত দুই জন শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যায় মারা গেছে।

"গত সপ্তাহের তুলনায়ও এ সপ্তাহে আমি অনেক বেশি উদ্বিগ্ন," বলেন রোগ প্রাদুর্ভাব বিষয়ক বিজ্ঞানী অধ্যাপক নিল ফার্গুসন।

লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের গ্লোবাল ইনফেকশাস ডিজিজ অ্যানালাইসিস এর এমআরসি সেন্টার এই গবেষণাটি করেছে। এই প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাজ্য সরকার এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতো সংগঠনের পরামর্শক হিসেবে কাজ করে থাকে।

সিঙ্গাপুর এবং হংকং ইউহান থেকে আগত বিমান যাত্রীদের স্ক্রিনিং শুরু করেছে। শুক্রবার থেকে নিজেদের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দর যথা সান ফ্রান্সিসকো, লস এঞ্জেলেস এবং নিউইয়র্কে একই ধরণের পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রও।

আক্রান্তের সংখ্যা কিভাবে হিসাব করা হয়েছে?

এই সমস্যাটি কতটা ভয়াবহ হবে তা নির্ভর করে অন্যান্য দেশে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার কতটি ঘটনা পাওয়া যায় তার উপর। যদিও এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব চীনের ইউহান শহরকে কেন্দ্র করেই রয়েছে, তবে থাইল্যান্ডে দুই জন এবং জাপানে একজন আক্রান্ত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। "এ জন্যই আমি ভয় পাচ্ছি," বলেন অধ্যাপক ফার্গুসন।

তিনি বলেন: "ইউহান শহর থেকে রোগটি অন্যান্য দেশের তিন জন ব্যক্তির মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে, তার মানে হচ্ছে আক্রান্তের এই সংখ্যা বাস্তবে আরো অনেক বেশি হতে পারে যা হয়তো এখনো নজরে আসেনি।"

এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন সংখ্যা পাওয়া অসম্ভব কিন্তু আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গ-যা ভাইরাসের উপর নির্ভর করে, স্থানীয় জনসংখ্যা এবং ফ্লাইটের তথ্য থেকে এ সম্পর্কিত একটা ধারণা পাওয়া যেতে পারে।

ইউহান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি এক কোটি ৯০ লাখ মানুষ ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু এই বিমানবন্দর ব্যবহার করে প্রতিদিন মাত্র ৩ হাজার ৪০০ মানুষ আন্তর্জাতিক সফর করে থাকে।

এ বিষয়ে বিস্তারিত হিসাব, বিজ্ঞান বিষয়ক একটি জার্নালে প্রকাশের আগে যেটি অনলাইনে পোস্ট করা হয়েছে তাতে দেখা যায় যে, ১৭০০ মানুষ এই রোগে এখনো পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে।

এটার অর্থ কী?

অধ্যাপক ফার্গুসন বলেন, "এখনই হুঁশিয়ারি দেয়াটা একটু অগ্রিমই হয়ে যায়" কিন্তু তিনি গত সপ্তাহের তুলনায় এখন "আরো বেশি উদ্বিগ্ন" বলে জানান।

চীনের কর্তৃপক্ষ বলছে, এক ব্যক্তি থেকে আরেক ব্যক্তিতে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার কোন ঘটনা এখনো দেখা যায়নি। বরং ভাইরাসটি আগে শুধু পশু-পাখিকে আক্রান্ত করলেও এটি এখন আরো শক্তিশালী হয়েছে এবং এটি মানুষের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ছে। এই ভাইরাসটি ইউহানের একটি সিফুড এবং বন্যপ্রাণীর বাজারের আক্রান্ত পশু থেকে এসেছে বলেও জানানো হয়।

অধ্যাপক ফার্গুসন বলেন: "মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাটিকে আগের চেয়ে আরো গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা উচিত।"

"করোনাভাইরাস সম্পর্কে আমরা যা জানি তা বিশ্লেষণ করে আমার যে ধারণা সেটি হচ্ছে যে, শুধুমাত্র পশুর সংস্পর্শ এতো বেশি সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হওয়ার একমাত্র কারণ হতে পারে না।" কোন একটি ভাইরাস কিভাবে ছড়িয়ে পড়ছে তা জানাটাই এটির হুমকি পরিমাপের অন্যতম উপায়।

ভাইরাসটি আসলে কী?

আক্রান্ত রোগীদের কাছ থেকে ভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ করে তা গবেষণাগারে পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। চীনের কর্তৃপক্ষ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এই সংক্রমণ যে ভাইরাসের কারণে হচ্ছে সেটি আসলে এক ধরণের করোনাভাইরাস।

অনেক ধরণের করোনাভাইরাস রয়েছে, কিন্তু শুধু ছয় ধরণের ভাইরাস মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে। নতুন ভাইরাস-সহ এটি হবে সপ্তম।

একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে দেখা দেয় সাধারণ সর্দি, কিন্তু মারাত্মক ধরণের সংক্রমণ বা সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম বা সংক্ষেপে সার্স হচ্ছে এক ধরণের করোনাভাইরাস। যাতে ২০০২ সালে ৮০৯৮ জন আক্রান্ত হয়েছিল এবং এদের মধ্যে ৭৭৪ জন মারা গিয়েছিল।

ভাইরাসের জিনগত বৈশিষ্ট্য (জেনেটিক কোড) বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে যে, মানুষকে আক্রান্ত করা অন্য করোনাভাইরাসের তুলনায় সার্সের সাথে এটির বেশি মিল রয়েছে। এই ভাইরাসের কারণে রোগীরা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয় এবং এদের মধ্যে দুই জন মারা যায়।

অন্য বিশেষজ্ঞরা কী বলছে?

ওয়েলকাম মেডিকেল রিসার্চ চ্যারিটির পরিচালক ডা. জেরেমি ফারার বলেন: "এই মহামারি থেকে আরো অনেক কিছু আসতে পারে।" "অনিশ্চয়তা এবং তথ্যের ফাঁক রয়েই যায়, তবে এটা পরিষ্কার যে মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণের একটা নূন্যতম মাত্রা তো রয়েছেই।"

"চীন এবং অন্যান্য দেশ থেকে আমরা আক্রান্ত হওয়ার খবর পাচ্ছি এবং এই সংক্রমণের ধরণ অনুযায়ী, আরো অনেক দেশে এ ধরণের আরো অনেক সংক্রমণের ঘটনা রয়েছে।"

নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোনাথন বল বলেন: "যে বিষয়টা আসলেই গুরুত্বপূর্ণ সেটি হচ্ছে, গবেষণাগারে ব্যাপক হারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া এ ভাইরাসে আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা বলাটা খুব কঠিন।"

"কিন্তু আমাদের হাতে আরো তথ্য আসার আগ পর্যন্ত এই সংখ্যাটাকে আমাদের গুরুত্বের সাথে নিতে হবে, ৪১টি ক্ষেত্রে পশু থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ার তথ্য রয়েছে, তবে সনাক্ত হয়নি এমন আরো অনেক সংক্রমণ রয়েছে বলেও আশঙ্কা রয়েছে।"

এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ