আজকের শিরোনাম :

বিশ্বে পাঁচজনের একজন মারা যায় সেপসিসে

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২০, ১০:৫৪

সারাবিশ্বে পাঁচজনের মধ্যে একজনের মৃত্যু সেপসিসের কারণে ঘটে, এটি রক্তের বিষ হিসেবেও পরিচিত। এ রোগটি সম্পর্কে এ যাবতকালের সবচেয়ে ব্যাপক বিশ্লেষণ হয়েছে।

প্রতিবেদনে অনুমান করা হয়েছে যে, বছরে এক কোটি ১০ লাখ মানুষ সেপসিসে মারা যাচ্ছে, যে সংখ্যা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যার চাইতেও বেশি।

ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বলেছেন, এই ‘উদ্বেগজনক’ পরিসংখ্যান আগের ধারণার তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে।

সেপসিসে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হন দরিদ্র এবং মধ্যম আয়ের দেশের মানুষ, তবে ধনী দেশগুলোকেও এই সেপসিস মোকাবিলায় কাজ করতে হচ্ছে।

সেপসিস কী?
সেপসিস ‘গুপ্ত ঘাতক’ হিসেবেও পরিচিত কারণ এটি সনাক্ত করা কঠিন হতে পারে। মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অতিরিক্ত কাজ করার ফলে এই সেপসিস হতে পারে। এই প্রতিরোধ ক্ষমতা কেবল সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার পরিবর্তে শরীরের অন্যান্য অংশগুলোতেও আক্রমণ শুরু করে।

এক পর্যায়ে মানুষের অঙ্গ অকেজো হয়ে যায়। এমনকি বেঁচে থাকা মানুষদেরও দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি ও অক্ষমতা নিয়ে চলতে হতে পারে।

যেসব ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের কারণে ডায়রিয়া সংক্রমণ বা ফুসফুসের রোগ হয়ে থাকে সেগুলোই সেপসিস হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ।

আক্রান্তের সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে গেল কেন?
এর আগের বৈশ্বিক হিসাবে দেখা গেছে, সেপসিসে আক্রান্ত হয়েছে ১ কোটি ৯০ লাখ মানুষ। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৫০ লাখের। কেবল মুষ্টিমেয় পশ্চিমা দেশগুলোর ওপর ভিত্তি করে এই হিসাব দেখানো হয়।

১৯৫টি দেশের মেডিকেল রেকর্ডের ভিত্তিতে ল্যানসেটে প্রকাশিত এই বিশ্লেষণে দেখা যায় যে বছরে চার কোটি ৯০ লাখ মানুষ সেপসিসে আক্রান্ত হয়।

সেপসিসে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ। যার অর্থ বিশ্বজুড়ে বছরে যত মানুষ মারা যান, তাদের প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজনের মৃত্যুর কারণ এই সেপসিস।

গবেষক, সহকারী অধ্যাপক ক্রিস্টিনা রুড বলেছেন, ‘আমি উগান্ডার গ্রামাঞ্চলে কাজ করেছি, এবং সেপসিসের ঘটনা আমরা প্রতিদিনই দেখি। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলিতে আমার সহকর্মীরা প্রতিদিন রোগীদের চিকিৎসা দিতে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন। বহু বছর ধরে তারা বলে আসছেন যে, সেপসিস একটি বড় সমস্যায় রূপ নিয়েছে। সুতরাং এই বিষয়টি আগে থেকে জানার কারণে আমি আসলে এতটা অবাক হইনি - তবে আমি এটাও আশা করিনি যে আক্রান্তের সংখ্যা আগে যেটা অনুমান করা হয়েছিল সেটার দ্বিগুণ হয়ে যাবে।’

এই বিশ্লেষণের একটি মাত্র ভালো খবর হর ১৯৯০ সাল থেকে আক্রান্তের সংখ্যা এবং মৃত্যুর হার হ্রাস পেয়েছে। আশা করি সমস্যাটির আসল পরিধিটা সামনে আসার পর সচেতনতা বাড়বে এবং এতে আরও মানুষের জীবন বাঁচাবে।

কারা সেপসিসে আক্রান্ত হন?
সেপসিসে আক্রান্ত হন সবচেয়ে বেশি, নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের মানুষ। শতাংশের হিসাবে যা প্রায় ৮৫%। সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে শিশুরা। পাঁচ বছরের কম বয়সী ১০ জন শিশুর মধ্যে চারজনের সেপসিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

তবে যুক্তরাজ্যের জন্য সেপসিস একটি চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। স্পেন, ফ্রান্স এবং ক্যানাডার মতো দেশের চাইতে ব্রিটেনে সেপসিসে মৃত্যুর হারও বেশি।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, প্রতি বছর যুক্তরাজ্যে সেপসিসের কারণে প্রায় ৪৮ হাজার মানুষ মারা যান।

সেপসিসের লক্ষণগুলো আরও দ্রুত সনাক্ত করতে এবং চিকিৎসা শুরু করার জন্য ব্রিটেনের স্বাস্থ্যসেবা খাত বড় ধরনের চাপের মুখে রয়েছে।

সেপসিস প্রতিরোধে করণীয় কী?
সংক্রমণের সংখ্যা কমিয়ে আনার মাধ্যমে সেপসিসে আক্রান্তের সংখ্যা কমানো যেতে পারে। অনেক দেশের ক্ষেত্রে সেপসিস প্রতিরোধের উপায় হল, সুষ্ঠু পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা, বিশুদ্ধ পানি এবং সঠিক সময় সঠিক টিকার জোগান।

অন্যান্য চ্যালেঞ্জের মধ্যে একটি হলো, দেরি হওয়ার আগেই সেপসিস আক্রান্ত রোগীদের ভালভাবে চিহ্নিত করা। এবং দ্রুত তাদের চিকিৎসা শুরু করা।

অ্যান্টিবায়োটিক্স বা অ্যান্টিভাইরাসের মাধ্যমে প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করলে সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব, যা বিশাল পার্থক্য আনতে পারে।

অধ্যাপক মহসেন নাঘাভি বলেছিলেন, ‘সেপসিসে মৃত্যুর সংখ্যা পূর্বের অনুমানের চাইতে অনেক বেশি হওয়ায় আমরা খুব উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছি, অথচ এই সমস্যাটি প্রতিরোধযোগ্য এবং চিকিৎসার মাধ্যমেও সারিয়ে তোলা যায়। নবজাতকের মধ্যে সেপসিস প্রতিরোধে আমাদের নতুন করে চিন্তা-ভাবনা দরকার। এবং এই রোগের এক গুরুত্বপূর্ণ উদ্দীপক অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্টেন্স মোকাবেলায় প্রয়োজন আরও বেশি সজাগ হওয়া।’

সেপসিসের লক্ষণগুলো
প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে-

>> অস্পষ্ট কথা।
>> চরম কাঁপুনি বা পেশী ব্যথা।
>> সারাদিনে কোনো প্রস্রাব না হওয়া।
>> মারাত্মক শ্বাসকষ্ট
>> দ্রুত হৃৎস্পন্দন এবং শরীরের তাপমাত্রা অনেক বা কম হওয়া।
>> ত্বকের রং একেক জায়গায় একেক রকম বা ছোপ ছোপ দাগ।

শিশুদের মধ্যে-
>> চেহারা দেখতে নীলচে বা ফ্যাকাসে হয়। ত্বকের রং একেক জায়গায় একেক রকম দেখায়।
>> খুব অলস থাকে বা ঘুম থেকে জাগানো কঠিন হয়ে যায়।
>> শিশুর শরীর স্পর্শ করলে অস্বাভাবিক ঠাণ্ডা অনুভূত হয়।
>> খুব দ্রুত শ্বাস নিলে।
>>  ত্বকে এক ধরনের ফুসকুড়ি হওয়া যা আপনি চাপ দিলেও মুছে যায় না।
>> হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়া বা খিঁচুনি
তথ্যসূত্র : বিবিসি

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ