আজকের শিরোনাম :

অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি না বাইপাস : কোন পদ্ধতি বেশি নিরাপদ?

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারি ২০২০, ১১:৩০

অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি

স্টেন্ট কী?
হার্টের করোনারি ধমনিতে কোলেস্টেরল প্লাক জমে, ধমনির মধ্যে রক্ত সঞ্চালন বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সেখান থেকে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার ভয় রয়ে যায়। তাই অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির মাধ্যমে, ধমনির মধ্যে জমা প্লাক বা বাধা সৃষ্টিকারী পদার্থ অপসারণ করা হয়। এর পর ওই অংশে বসানো হয় স্টেন্ট। ক্ষুদ্র স্টেন্ট ধমনির মধ্যে রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে।

কখন স্টেন্ট বসে?
দুই রকম পরিস্থিতিতে স্টেন্ট বসানো যায়। অ্যাকিউট হার্ট ডিজিজ এবং ক্রনিক হার্ট ডিজিজ।
অ্যাকিউট অবস্থা, অর্থাৎ রোগীর বুকে ব্যথা উঠেছে বা হার্ট অ্যাটাকের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে এমন অবস্থা।
অন্যদিকে ক্রনিক হার্ট ডিজিজ বলতে বোঝায়, যেখানে রক্ত সরবরাহের অপ্রতুলতার দরুণ রোগীর রোগ লক্ষণ যেমন অ্যানজাইনা দেখা দিয়েছে, জীবনযাত্রার কিছু পরিবর্তন ও ওষুধের দ্বারা যথাযথ উপসর্গ নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না, এই পরিস্থিতিতে রোগের প্রকোপ কমানোর জন্য হার্টের ধমনিতে স্টেন্ট বসানো যায়। সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ শিরাগুলিতে ৭০ শতাংশ বা তারও বেশি ব্লক থাকলে স্টেন্ট বসে।

স্টেন্টিংয়ের আগে কী পরীক্ষা?
কোন অবস্থায় স্টেন্ট বসাতে হচ্ছে তার ওপর নির্ভর করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা। অ্যাকিউট অবস্থায় স্টেন্ট বসালে, রোগীর রক্ত সংগ্রহ করে হেপাটাইটিস বি, এইচআইভি, ক্রিয়েটিনিন প্রভৃতি পরীক্ষার জন্য পাঠিয়ে দিয়ে দ্রুত রোগীর প্রাইমারি অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি এবং স্টেন্টের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
ক্রনিক হার্ট ডিজিজের ক্ষেত্রে বেশ কিছু পরীক্ষা আগে থেকে করিয়ে নেওয়া হয় যেমন— ইসিজি, ইকোকার্ডিওগ্রাফি, টিএমটি, ব্লাড সুগার, ব্লাড ইউরিয়া-ক্রিয়েটিনিন, হিমোগ্লোবিন, লিভার ফাংশন, হেপাটাইটিস বি, এইচআইভি।

একাধিক ব্লক থাকলে, তখন?
উপযুক্ত ধমনি ও উপযুক্ত পদ্ধতি অবলম্বন করে, একাধিক রক্তবাহী নালীতে স্টেন্ট বসানো যায়।

স্টেন্ট বসালে কতদিন নিরাপদে থাকা যায়?
স্টেন্ট বসানোর পরে দুই ধরনের সমস্যা হতে পারে— স্টেন্ট থ্রম্বোসিস এবং রি-স্টেনোসিস। স্টেন্ট থ্রম্বোসিস-এ স্টেন্টের মধ্যে রক্ত জমাট বাঁধে। স্টেন্টিংয়ের পর সাধারণত এক বছরের মধ্যে এমন সমস্যা হতে পারে। রি-স্টেনোসিসের সমস্যায় স্টেন্টের মধ্যে ফাইব্রাস টিস্যু, প্রলিফেরেটেড এন্ডোথেলিয়াল সেল জমে রক্ত সঞ্চালনের পথ সরু হয়ে যায়। এই সমস্যাও স্টেন্ট বসানোর এক বছরের মধ্যেই হতে পারে।

কত শতাংশের স্টেন্টিংয়ের পর সমস্যা হয়?
প্রতি বছর গবেষণা হচ্ছে। বছর বছর আধুনিক স্টেন্ট আসছে। নতুন মেডিকেটেড স্টেন্ট-এর সমস্যা পুরনোদের থেকে অনেক কম। স্টেন্ট থ্রম্বোসিস শতকরা এক ভাগেরও কম ও রি-স্টোনোসিস শতকরা পাঁচ ভাগ বা তারও কমের ক্ষেত্রে হতে দেখা গিয়েছে।

ওপেন হার্ট সার্জারি আর স্টেন্টিং—ফারাক কতটা?
স্টেন্ট বসানোর জন্য রোগীর দেহে বড় কোনো কাটাছেঁড়া করতে হয় না। হাতের বা পায়ের শিরায় অর্থাৎ রেডিয়াল বা ফিমোরাল আর্টারিতে সুচ ঢুকিয়ে তার পর তার মধ্যে ২ মিলিমিটার ব্যাসার্ধের ক্যানুলা প্রবেশ করানো হয়। এই ক্যানুলার মধ্যে দিয়ে সরু সরু নল বা ক্যাথিটার নিয়ে যাওয়া হয় হার্টের পেশির রক্তবাহী নালিকা পর্যন্ত। এই ক্যাথিটারের মধ্যে দিয়ে বেলুন, স্টেন্ট পাঠানো হয়। ব্লকের জায়াগায় বেলুন স্থাপন করে বাইরে থেকেই ফুলিয়ে দেওয়া সম্ভব। এছাড়া বেলুন ছাড়াই সরাসরিও স্টেন্ট বসানো যায়। স্টেন্ট বসানো হয়ে গেলে ক্যাথিটার বের করে নেওয়া হয়। অর্থাৎ ক্ষত বলতে ওই দুই মিলিমিটার! 
রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান মাত্র দুদিনে। কার্যক্ষমতাও ফিরে আসে ওটির পরদিনই। দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন। অবশ্য হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সময় স্টেন্ট বসালে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে বেশি সময় লাগে।
অন্যদিকে বাইপাসে বুক কেটে রক্তবাহী নালিকা বসানো হয়। চেষ্টা করা হয় বেশি সংখ্যক রক্তবাহী ধমনি বা গ্রাফ্ট সংগ্রহের। গ্রাফ্ট বসানোর জন্য ধমনিকে পায়ের শিরার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে অপারেশনের ফলাফল ভালো হয়। এগুলোর সাহায্যে বিকল্প পথ তৈরি করা হয়। হার্টের যে ধমনিতে আগে থেকে সামান্য ব্লক হয়েছে, বা পরে হয়েছে সেগুলোয় পরবর্তীকালে জটিলতা এলেও, নতুন ধমনিগুলি অবস্থা সামাল দিতে পারে।
তবে স্টেন্ট বসানো হয় মূল সমস্যা উদ্রেককারী ধমনিতে বা যে ধমনিগুলিতে বিপদসীমার উপরে ব্লক রয়েছে সেগুলিতে। ফলে যে ধমনিগুলোয় ইতোমধ্যে প্লাক জমতে শুরু করেছে সেগুলোতে পরবর্তীকালে জটিলতা হওয়ার সুযোগ থেকেই যায়।
হার্টের অনেকগুলো রক্তবাহী নালিকায় জটিলতা দেখা দিলে বা অবস্থা মারাত্মক জটিল হলে স্টেন্ট বসিয়ে লাভ হয় না। সেক্ষেত্রে রোগীকে বাইপাস করতে বলা হয়।

স্টেন্টিং নাকি বাইপাস- কোনটা বেশি নিরাপদ?
আগের বেশ কিছু সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, স্টেন্টের তুলনায় বাইপাসের রেজাল্ট কিছু ক্ষেত্রে অনেক ভালো। পরের পরিসংখ্যান অন্যরকম। এ ক্ষেত্রে সিনটাক্স ট্রায়ালের কথা বলা যায়। ২০০৫ সাল থেকে ২০০৭ সাল অবদি ১৮০০ রোগীর হার্টে বিশেষ স্টেন্ট বসানো হয়েছিল। পরবর্তী ১০ বছরে ওই রোগীদের পর্যবেক্ষণ করে দেখা যাচ্ছে, সমস্ত ধরনের প্রাণহানির ক্ষেত্রে বাইপাস ও স্টেন্ট বসানোর ফলাফল সমান সমান। তবে যদি শুধু লেফট মেইন আর্টারিতে ব্লকেজের সমস্যার দিকে নজর দেওয়া হয়, তাহলে স্টেন্ট-এর রেজাল্ট সামান্য হলেও ভালো। অন্যদিকে যেখানে জটিলতা অনেক বেশি বা তিনটে ধমনিতেই ব্লক খুলতে হবে— এমন ক্ষেত্রে বাইপাসের ফলাফল স্টেন্টের তুলনায় ভালো। অবশ্য ২০০৫ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে যে সমস্ত স্টেন্ট ব্যবহার হয়েছিল, তার তুলনায় এখন আরও অন্যধরনের স্টেন্ট পাওয়া যাচ্ছে। অতএব সঠিক ফলাফলের জন্য আমাদের ভবিষ্যতের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হবে।

রোগীর জন্য আপনার পরামর্শ কী?
স্টেন্ট বসান বা বাইপাস করান, হার্টের অন্যান্য রক্তবাহী নালীতে প্লাক জমার প্রক্রিয়া থেমে থাকে না। তাই অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি হোক বা বাইপাস, চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধ খেয়ে যেতেই হবে।
আর চিকিৎসকদেরও মনে রাখতে হবে, রোগীর ক্ষেত্রে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি ঠিক হবে নাকি বাইপাস— এই সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হলে, একা নয়, হার্ট টিম গঠন করে সঠিক এবং যৌথ সিদ্ধান্ত নিন। টিমে থাকবেন সার্জেন, কার্ডিওলজিস্ট, অ্যানাস্থেটিস্ট। রোগীর বয়সের কথাও মাথায় রাখতে হবে। প্রয়োজন হলে স্টেন্টিং-এর পর জটিলতা হলে ফের স্টেন্টিং বা বাইপাস করা যায়। একইভাবে বাইপাস সার্জারির পরেও হার্টে জটিলতা দেখা দিলে স্টেন্টিং অথবা সার্জারি করা যায়।

বাইপাস সার্জারি
শুরুর কথা

সালটা ১৯৫৭। একটি ১৪ বছরের বাচ্চার কার্ডিয়াক ক্যাথের দায়ভার নিজের সহকারীর উপর ছেড়ে চট করে ধূমপান সারতে গেলেন অভিজ্ঞ কার্ডিওলজিস্ট ডাঃ ম্যাসন সোনস। তবে অনভিজ্ঞ অ্যাসিস্টেন্ট সঠিকভাবে নিজের কাজ করতে পারলেন না। তাঁর ভুলের জন্য বাচ্চাটির কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হল। প্রাণ যায় যায় অবস্থা! কোনও মতে কার্ডিয়াক ম্যাসাজ করে রোগীর প্রাণ ফেরানো হল। ডা. সোনস ভর্ৎসনা করলেন তাঁর অ্যাসিস্টেন্টকে। তবে সন্ধেবেলায় সেই ভুলের পর্যালোচনা করতে বসে ডা. সোনস বুঝলেন যে তাঁর সহকারীটি ভুল বসত ক্যাথিটার নিয়ে হার্টের আর্টারিতে ঢুকে পড়েছিল। ব্যাস, এই ভুল থেকেই খুলে গেল নতুন জ্ঞানের দরজা। ডা. সোনস বুঝলেন, এই পদ্ধতিতে হার্টের আর্টারিতে প্রবেশ করে ছবি তোলা সম্ভব। এভাবেই শুরু হল যুগান্তকারী করোনারি অ্যাঞ্জিওগ্রাফি। এরপর থেকে হার্টের ছবি তুলে রোগ নির্ণয় করা বেশ সহজ হয়ে পড়ল। কিন্তু এত কিছু জানতে পারার পরও চিকিৎসা সেই তিমিরেই পড়ে রইল। কারণ হার্টে ব্লক রয়েছে বুঝলেও, ব্লক সারানোর কোনও চিকিৎসা তখনও ছিল না। এই সমস্যার উত্তর খুঁজতে লেগে পড়লেন পৃথিবীর বাঘা বাঘা চিকিৎসকরা। চলল আলোচনার পর আলোচনা। কিছুতেই সমাধান মেলে না। অবশেষে ১৯৬৭ সালে পথ দেখাল আর্জেন্তিনার এক জুনিয়ার চিকিৎসক রেনে ফ্যাভালোরো। তিনি বলেছিলেন, পায়ের থেকে ধমনি কেটে এনে হার্টের বাইপাস সার্জারি করার কথা। এই সার্জারি আবিষ্কারের পরই বদলে গেল হার্টের চিকিৎসা। এখনও পর্যন্ত পৃথিবীতে যত ধরনের সার্জারি হয়েছে তার মধ্যে করোনারি বাইপাস সার্জারির সংখ্যা সবথেকে বেশি। পরিসংখ্যান বলছে, এই নির্দিষ্ট সার্জারি আসার পর পৃথিবীতে মানুষের গড় আয়ু অনেকটাই বেড়েছে।
এবার সরাসরি যুগান্তকারী হার্ট বাইপাস সার্জারির কথায় আসা যাক। হৃৎপিণ্ডের করোনারি আর্টারি ব্লক হলে বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে স্বাভাবিক রক্ত চলাচল বাধা পায়। এরফলে হৃৎপিণ্ড সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। সমস্যা বেশি দূর গড়িয়ে গেলে এর থেকে হার্ট ফেলিওর পর্যন্ত হতে পারে। এই সমস্যা সমাধানের অন্যতম পদ্ধতি হলো হার্ট বাইপাস সার্জারি। এ ক্ষেত্রে শরীরের অন্য জায়গা থেকে ধমনি কেটে এনে হার্টের ওই সমস্যার জায়গাটিকে বাইপাস করা হয়। বিষয়টা একটু সহজ করা যাক। ধরুন আপনার বাড়ির সামনের বড় রাস্তাটা একটি জায়গায় অত্যন্ত সরু। ফলে ওই জায়গায় ভীষণ যানজট হচ্ছে। কোনো গাড়ি স্বাভাবিক গতিতে এগতে পারছে না। এ সমস্যা সমাধানে পৌরসভা রাস্তার ওই সরু জায়গাটির আগে থেকে অন্য একটি রাস্তা তৈরি করে এনে সরু জায়গাটি পেরিয়ে যাওয়ার পর আবার মূল রাস্তার সঙ্গে নতুন রাস্তাটিকে মিশিয়ে দিল। দুটি রাস্তা তৈরি হওয়ার ফলে স্বাভাবিকভাবেই যানজটও কমে গেল। হার্টের ক্ষেত্রেও ঠিক একই পদ্ধতি নেওয়া হয়। বাইপাস সার্জারি করে ধমনির ওই সমস্যার জায়গাটিকে এড়িয়ে যাওয়া হয়। ফলে হৃৎপিণ্ডে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয়ে যায়।

কখন বাইপাস সার্জারি?
এই বিষয়ে আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন এবং ইউরোপিয়ান সোসাইটি অব কার্ডিওলজির নির্দিষ্ট গাইডলাইন রয়েছে। প্রতি তিন বছর অন্তর বিভিন্ন গবেষণার উপর ভিত্তি করে গাইডলাইনে পরিবর্তন আনা হয়। একজন ফিজিশিয়ান হোক বা সার্জেন— এই নির্দেশিকার উপর ভিত্তি করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
এই নির্দেশিকা অনুযায়ী হার্টের বাইপাস সার্জারি করা হয়— হার্টের ধমনিতে দুইয়ের বেশি ব্লক থাকলে ব্লকটি ভীষণ জটিল। যেমন- আর্টারিতে ১০০ শতাংশ ব্লক, অনেকটা জায়গাজুড়ে ব্লক রয়েছে, আঁকাবাঁকা ধমনি, টেকনিক্যাল জটিলতা রয়েছে ইত্যাদি পরিস্থিতিতে রোগীর ডায়াবেটিস থাকলে সহজতম ব্লকের অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টিও জটিল আকার নিতে পারে। তাই ডায়াবেটিস আক্রান্তের ক্ষেত্রে বাইপাস সার্জারি করার কথা ভাবা হয়।

সার্জারির আগে টেস্ট
প্রয়োজন অনুযায়ী রোগীর অ্যাঞ্জিওগ্রাফি, সিটি স্ক্যান, টিএমটি টেস্ট করানো হয়ে থাকে। এ ছাড়া ব্লাড সুগার, ব্লাড ইউরিয়া, ক্রিয়েটিনিন, হিমোগ্লোবিন, লিভার ফাংশন সহ অন্যান্য কিছু রক্ত পরীক্ষাও করতে দেওয়া হয়।

সুস্থ হতে সময় লাগে
বাইপাস সার্জারি করলে হাসপাতালে মোটের ওপর সাত দিন থাকতে হয়। পরের সাত দিন যায় বাড়ির পরিবেশের সঙ্গে ধাতস্থ হতে। কাজকর্মে ফেরার খুব তাড়া থাকলে তৃতীয় সপ্তাহের কাছাকাছি কাজে ফেরা যায়। তবে হাতে সময় থাকলে অপারেশনের তিন থেকে চার সপ্তাহ পর কাজে যাওয়াই ভালো। গাড়ি চালানো, স্কুটার চালানো, সাইকেল চালানো বা হাত দিয়ে ঠেলাঠেলি করতে হয়, এমন কোনো কাজ সার্জারির এক মাস পর থেকে করা যায়।

অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি না বাইপাস
এই দুটি সার্জারিই প্রতিনিয়ত অসংখ্য মানুষের প্রাণ বাঁচিয়ে চলেছে। অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করাটা খুবই সহজ। রোগীর শরীরে কাটাছেঁড়া কম করতে হয়। হাসপাতালে কম থাকতে হয়। রোগী খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠেন। তাই প্রাথমিকভাবে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির চমক খুব বেশি। তবে এই বিশেষ সুবিধা নিতে গিয়ে কোনও হঠকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না। নির্দিষ্ট গাইডলাইন মেনেই নিশ্চিত করতে হবে যে রোগীর বাইপাস সার্জারি করা হবে না অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গাইডলাইনে কেসস্টাডি সহ স্পষ্টভাবে লেখা রয়েছে, কোনও রোগীর কেমন পরিস্থিতিতে স্টেন্ট বসাতে হবে অথবা বাইপাস সার্জারির সাহায্য নিতে হবে। এই গাইডলাইনের বাইরে গিয়ে কোনও কাজ করাই উচিত নয়। তবে দুঃখের হলেও, আমাদের দেশের বহু চিকিৎসকই এই গাইডলাইনের তোয়াক্কাই করেন না। এর ফল রোগীকেই ভুগতে হচ্ছে।
অনেকেই ভাবেন অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির ঝুঁকি বোধহয় বাইপাসের তুলনায় কম। তবে এই ধারণাটি ভুল। বরং বাইপাস সার্জারি ও অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির ঝুঁকি প্রায় সমান।
এবার সিদ্ধান্তে আসা যাক। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির তুলনায় বাইপাস করালে রোগী দীর্ঘকালীন সুফল ভোগ করেন। কিন্তু এর অর্থ এমন নয় যে, দলে দলে রোগীর বাইপাস করা প্রয়োজন। বরং গাইডলাইন মেনেই চিকিৎসা হোক। জিতুক বিজ্ঞান!
(তথ্যসূত্র : ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বর্তমান)

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ