আজকের শিরোনাম :

শীতকালে ঠান্ডার সংক্রমণ বেশি হয় কেন?

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০১৯, ১০:০৩

এই ঠান্ডা, এই গরম করতে করতে এবারের শীতটা যেন হুট করেই পড়ে গেল, তাই না? সারাদিন ঠিকঠাক গেলেও ভোরের দিকের ঠান্ডা বাতাস জ্বর আর সর্দি লাগিয়ে দেওয়ার জন্য কিন্তু যথেষ্ট। সময়টাই এমন যে আপনি খুব সাবধান থাকলেও শরীরটা খারাপ হয়ে যেতে পারে। এ নিয়ে তাই একটু জেনে নিন। হয়তো এই সচেতনতাই আপনাকে একটু হলেও বাড়তি নিরাপত্তা দেবে পুরো শীতজুড়ে-

ভাইরাসের পছন্দের আবহাওয়া-

যদি বাইরের আবহাওয়াটা না ঠান্ডা, না গরম; আর সাথে মৃদু একটা বাতাস থাকে- এমন সময় নিশ্চয় আপনার মন চায় ঘুরে বেড়াতে? ভাইরাসের জন্যেও ব্যাপারটা ঠিক এমনই। নিজেদের পছন্দের আবহাওয়ায় একটু বেশিই ঘুরে বেড়ায় তারা। আর তাদের পছন্দের সময়টাই হলো এই ঠান্ডা আর শুষ্ক বাতাসের আবহাওয়া।

সম্প্রতি একটি পরীক্ষায় দেখানো হয় যে, ভিন্ন ভিন্ন আর্দ্রতা এবং আবহাওয়ায় ভাইরাসের ওপরে কেমন প্রভাব পড়ে। দেখা যায় যে, বেশিরভাগ ভাইরাস, বিশেষ করে রাইনোভারসাসেস ভাইরাসটি এমন আবহাওয়ায় ছড়িয়ে পড়ে বেশি। ভাইরাসের মাধ্যমে সংক্রমণের পরিমাণটাও এই সময়ে বেড়ে যায়।

মূলত, একজন মানুষের শরীরের সংস্পর্শে কোনো ভাইরাস আসলে পরিমাণে বেড়ে যেতে থাকে এবং একটা সময় শরীরে সংক্রমণ তৈরি হয়। আর কোনো মানুষের শরীর ঠান্ডা থাকলে সেক্ষেত্রে ভাইরাসের পক্ষে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া এবং পরিমাণে বৃদ্ধি পাওয়াটা সহজ হয়।  

এছাড়া ঠান্ডা আবহাওয়া ফ্লু সৃষ্টিকারী ভাইরাসকে বাড়তি সুরক্ষা দিয়ে থাকে। বেশ শক্ত একটা অবস্থানে চলে যায় এসময় ভাইরাস। ফলে অন্য মানবদেহে ছড়িয়ে যাওয়া তার পক্ষে সহজ হয়। অন্যদিকে, উষ্ণ আবহাওয়ায় ভাইরাসের ওপরের শক্ত আবরণ সরে যায় এবং সেটি মানবদেহে ছড়াতে পারে না সহজে।

সমস্যাটা দুই পক্ষের-

শীতকাল যে কেবল ভাইরাসকে শক্তিশালী করে দেয় তা নয়, চিকিৎসকদের মতে এটি মানুষের শরীরকেও নাজুক করে তোলে। ফলে, ভাইরাসের সাথে লড়াই করার শক্তি আমাদের মধ্যে কমে যায়। একদিক দিয়ে ঠান্ডা আমাদের রক্ত চলাচলকে শিথিল করে দেয়। অন্যদিকে, শুষ্ক বাতাস শরীরের প্রাথমিক রোগপ্রতিরোধক ক্ষমতাকে কমিয়ে আনে।

ঠান্ডায় শ্বেত রক্তকণিকাও সঠিকভাবে পরিবাহিত হতে পারে না। ফলে ঠান্ডার ভাইরাস আক্রমণ করে শরীরকে। সংক্রমণ তৈরি হয়। রোদের ভিটামিন ডি এর কারণে একটু হলেও যে সাহায্যটুকু পেতে পারতো শরীর, শীতে রোদ কম থাকায় সেটাও সম্ভব হয় না। বিশেষ করে, রাতে তো সমস্যা আরও বেড়ে যায়। সবমিলিয়ে শরীর পুরোপুরি নাজুক হয়ে পড়ে। আর ভাইরাস খুব সহজেই শক্তিশালী হয়ে আক্রমণ করতে এবং শরীরে বাসা বাঁধতে পারে।

ঘরের বাইরে যাচ্ছেন না?

অনেকেই শীতকালে ঘর থেকে বের হতে চান না। ব্যাপারটি কিন্তু এমন নয় যে, আপনি ঘরের বাইরে না বের হলেই আপনার শরীরে ভাইরাস আক্রমণ করবে না। মূলত, এক্ষেত্রে আমাদের শরীরে ভাইরাসের সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা আরও বেশি থাকে। ঘরের ভেতরে ভাইরাস অন্তত সাতদিন বজায় থাকে।

এছাড়া কফের ভাইরাস অন্তত ৬ ফুট পর্যন্ত ছড়াতে পারে। সবমিলিয়ে বাইরের থেকে ঘরে ভাইরাসের টিকে থাকার প্রবণতা থাকে বেশি। তাই, ঠান্ডা লেগেছে বলে ঘরে বসে থাকলে বা ঠান্ডার ভয়ে ঘর থেকে বের না হলে এতে করে উল্টো ফলাফলও হতে পারে। হয়তো দেখা যাবে, যে ভয়ে আপনি ঘরে বসে আছেন, সেটাই আপনাকে আরও বেশি কাবু করে ফেলেছে। তাও শুধু ঘরে বসেই!

তাই, ঠান্ডাকে ভয় না পেয়ে এবং ঠান্ডার দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার পর সেখান থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা না করে চেষ্টা করুন আগে থেকেই এর প্রতিরোধ করার। এ ক্ষেত্রে প্রথমত, সবসময় নিজের হাত পরিষ্কার রাখুন। দ্বিতীয়ত, ভেজা টিস্যু ব্যবহার করুন। এবং সর্বশেষ, চারপাশের বাতাসকে আর্দ্র করার চেষ্টা করুন। এতে করে রোগ হওয়ার আগেই রোগের মোকাবেলা করতে সক্ষম হবেন আপনি।

এবিএন/শংকর রায়/জসিম/পিংকি

এই বিভাগের আরো সংবাদ