আজকের শিরোনাম :

‘ক্যান্সারের জন্ম’ বিষয়ে তথ্য খুঁজছেন বিজ্ঞানীরা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০১৯, ১১:৪৮

ব্রিটিশ ও আমেরিকান বিজ্ঞানীরা ক্যান্সারের প্রাথমিক বৈশিষ্ট্য খুঁজে বের করতে এক সঙ্গে কাজ শুরু করেছেন।

ক্যান্সার হওয়ার আগেই যাতে উপসর্গ শনাক্ত করে একজন ব্যক্তিকে চিকিৎসার আওতায় আনা যায় সেটিই এই গবেষণার লক্ষ্য।

ল্যাবরেটরিতে ক্যান্সার ‘জন্ম দেয়ার’ পরিকল্পনা করছেন তারা। ক্যান্সার হওয়ার সময় প্রথম দিন কি অবস্থা হয় সেটি তারা দেখতে চান বলে জানান।

এটি ক্যান্সার প্রাথমিক অবস্থায় সনাক্তকরণের জন্য নতুন আন্তর্জাতিক জোটের গবেষণা উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে একটি।

এতে বলা হয়, ক্যান্সারের উপসর্গ প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্তকরণে একসঙ্গে কাজ করার অর্থ হলো, রোগীরা আরও দ্রুত এর থেকে লাভবান হবেন।

এ বিষয়ে ধারণা, প্রযুক্তি এবং দক্ষতা বিনিময়ের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের চ্যারিটি ক্যান্সার রিসার্চ ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়, ম্যানচেস্টার, ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড এবং ওরেগনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে এই জোট গঠন করেছে।

আগে থেকেই আছে
বিজ্ঞানীরা যৌথভাবে চেষ্টা করছেন যে, উচ্চ মাত্রায় ঝুঁকিতে থাকা রোগীদের তুলনামূলক কম জটিল পরীক্ষা যেমন রক্ত, শ্বাস এবং মূত্র পরীক্ষার মাধ্যমে নজরদারিতে রাখা, ইমেজিং কৌশল ব্যবহার করে প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার সনাক্ত এবং সনাক্ত করা যায় না এমন লক্ষণও যাতে ধরা পড়ে এমন কৌশল আবিষ্কারের চেষ্টা করছেন।

তবে তারা বলছেন যে, এই চেষ্টা অনেকটা ‘খরের গাদায় সুঁই খোঁজা’র মতো এবং এর জন্য ৩০ বছর সময় লাগতে পারে।

যুক্তরাজ্যের ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রাথমিক শনাক্তকরণ গবেষণার প্রধান ডা. ডেভিড ক্রসবি বলেন, ‘সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমরা কখনো মানুষের শরীরে ক্যান্সার জন্মাতে দেখতে পারিনি। সময়ের সাথে সাথে এটা সম্ভব হয়েছে এবং প্রতিষ্ঠিতও বটে।’

যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারের গবেষকরা উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, তারা ল্যাবে কৃত্রিম প্রতিরোধক কোষ থেকে মানুষের স্তনের টিস্যু জন্মানোর চেষ্টা করছেন যাতে খুব প্রাথমিক অবস্থাতেই ক্যান্সার সৃষ্টির সূক্ষ্ম পরিবর্তনও শনাক্ত করা যায়।

অধ্যাপক রব ব্রিস্টো বলেন, ‘এটা রোগীর দেহের বাইরে জীবন্ত কোষ ব্যাংকের মতো।’

তবে সব সময়ই ওভার-ডায়াগনোসিসের একটা ঝুঁকি থেকেই যায়। কারণ প্রাথমিক অবস্থায় থাকা সব কোষই ক্যান্সারে রূপান্তরিত হয় না।

আর তাই, মানুষের মধ্যে বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সারের ঝুঁকি জানতে হলে ক্যান্সার গবেষকদের আরো সুনির্দিষ্ট হতে হবে, মানুষ যে জিন নিয়ে জন্মগ্রহণ করে সেটির বিষয়ে জানতে হবে এবং যে পরিবেশে তারা বেড়ে ওঠে সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। আর তা হলেই কেবল তারা বুঝতে পারবেন যে কখন ব্যবস্থা নিতে হবে।

ব্যয়বহুল লড়াই
এ পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা বলেছেন যে, প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার শনাক্ত করার যে গবেষণা সেটি এখনো ছোট মাত্রায় এবং সংযোগহীন। এ ছাড়া বড় আকারের মানুষের মধ্যে পরীক্ষা করার সুযোগও নেই।

ডা. ক্রসবি বলেন, এই সমন্বয় ‘আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় সাগর সমান পরিবর্তন আনবে, শেষ পর্যায়ে ক্যান্সার সনাক্তের পর তার চিকিৎসায় ব্যয়বহুল লড়াইয়ের পরিবর্তে প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্ত এবং এর চিকিৎসা আরও বেশি সস্তা করা হবে।’

জরিপ বলছে, প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত ৯৮ শতাংশ রোগী চিকিৎসার পর কমপক্ষে ৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। আর ৪র্থ ধাপে বা শেষ পর্যায়ে আক্রান্ত হলে এই হার থাকে মাত্র ২৬ শতাংশ। কিন্তু বর্তমানে, স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত মাত্র ৪৪ শতাংশ রোগী প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হওয়ার পর চিকিৎসা নিয়ে থাকেন।

যুক্তরাজ্যে একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর মানুষের স্তন, অন্ত্র এবং জরায়ুর ক্যান্সার আছে কিনা তা পরীক্ষা করার সুযোগ রয়েছে।

তবে অন্যান্য ক্যান্সার যেমন অগ্ন্যাশয়, যকৃত, ফুসফুস এবং প্রোস্টেট ক্যান্সার শনাক্তের জন্য নির্ভরযোগ্য কোনো পদ্ধতি নেই, যার মানে হচ্ছে এসব ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা আরও কম।

ইউসিএলের অধ্যাপক মার্ক এমবার্টন বলেন, ইমেজিংয়ের উন্নয়ন যেমন এমআরআই ছিল ‘নীরব বিপ্লব’, যা বায়োপসির জন্য ব্যবহৃত সুচকে প্রতিস্থাপন করেছে, যা প্রোস্টেট ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হতো। ইমেজিংয়ে শুধু আগ্রাসী কোষগুলোকে দেখা যায়, কিন্তু চিকিৎসায় দরকারি নয় এমন অন্য অনেক বিষয় এটি এড়িয়ে যায়।

তিনি বলেন, এটা ব্যয়বহুল এবং সময় সাপেক্ষ এবং এটি এখনো প্রাইম টাইমে আসার মতো হয়নি।

ইমেজিং এখন আরও বেশি উন্নত হয়েছে, আরও সুনির্দিষ্ট হাইপার-পোলারাইজ এমআরআই স্ক্যান এবং ছবি যেখানে টিউমারে লেজার লাইট পরিচালনা করে শব্দ তরঙ্গ সৃষ্টি করা হয় এবং পরবর্তী সময় এগুলো বিশ্লেষণ করে নতুন ইমেজ তৈরি করা হয়।

অধ্যাপক এমবার্টন বলেন, পরবর্তী ধাপ ছিল এটা দেখা যে, কোন ধরনের ক্যান্সার এই ইমেজিংয়ে ধরা পরে।

কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রেবেকা ফিৎজারেল্ড, খাদ্যনালি এবং কোলনে প্রাক-ক্যান্সারজনিত ক্ষত শনাক্ত করতে নতুন ধরনের একটি এন্ডোস্কোপ তৈরি করছেন।

তিনি বলেন, প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করার বিষয়ে তেমন মনোযোগ দেয়া হয়নি এবং ক্যান্সার শনাক্তে কিছু পরীক্ষা খুবই সাধারণ এবং সস্তা হতে পারে।

অধ্যাপক ফিৎজারেল্ড বলেন, আন্তর্জাতিক সহকর্মীদের সাথে কাজ করার জন্য মুখিয়ে আছেন তিনি এবং সম্ভাব্য সব ধরনের উপায় খতিয়ে দেখতে চান তিনি।

যুক্তরাজ্যের ক্যান্সার গবেষণা প্রাথমিক শনাক্তকরণের গবেষণায় আন্তর্জাতিক যৌথ প্রকল্পে ৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে।

যেখানে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির কানারি সেন্টার এবং ওরেগনের ওএইচএসইউ নাইট সেন্টার ইনস্টিটিউট যৌথভাবে ২০ মিলিয়নে দেয়ার কথা জানিয়েছে।
তথ্যসূত্র : বিবিসি

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ