আজকের শিরোনাম :

গর্ভের শিশুর হাতে টিকটিকির মতো পেশী থাকে

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০১৯, ১৯:০১

গর্ভের শিশুদের হাতে টিকটিকি জাতীয় অতিরিক্ত কিছু পেশী থাকে এবং তাদের জন্মের আগেই এসব ঝরে যায়, এক গবেষণায় এই তথ্য পাওয়া গেছে।

জীববিজ্ঞানীরা বলছেন, এসব পেশী ক্ষণস্থায়ী হলেও, বিবর্তনের এই বিষয়টি সম্ভবত সবচেয়ে প্রাচীন কোন অবশেষ, যা এখনও মানুষের শরীরে রয়ে গেছে। ডেভেলপমেন্ট নামের একটি জর্নালে গবেষণার এই ফলাফলটি প্রকাশিত হয়েছে।

এটা এখনও পরিষ্কার নয় যে মানব দেহে কেন এসব পেশী তৈরি হয় এবং শিশুর জন্মের আগেই সেগুলো ঝেড়ে ফেলা হয়।

জীববিজ্ঞানীরা বলছেন, মানবদেহের বিকাশের এই ধাপটির কারণেই হয়তো বৃদ্ধাঙ্গুলির কাজের দক্ষতা অনেক বেশি।

এই বৃদ্ধাঙ্গুলি হাত ও পায়ের অন্যান্য আঙ্গুলগুলোর মতো নয়। এতে অতিরিক্ত একটি পেশী থাকে।

কোনো কোন শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক লোকের আঙ্গুলে ও হাতে কদাচিৎ হয়তো অতিরিক্ত পেশী পাওয়া গেছে কিন্তু বিজ্ঞানীরা যখন সাত থেকে ১৩ সপ্তাহের গর্ভকালের ভ্রূণের থ্রিডি স্ক্যান করে পরীক্ষা করেছেন, তখন তারা সবগুলো পেশীই দেখতে পাননি।

এসব পেশী যখন থাকে, তখন, কখনো সেগুলো অঙ্গ বিকৃত হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, গর্ভে বেড়ে ওঠা এরকম ১৫টি শিশুর ওপর গবেষণা চালিয়ে তারা যেসব তথ্য পেয়েছেন, সেগুলো এধরনের জন্মগত ত্রুটির বিষয়ে আলোকপাত করতে পারে।

প্রধান গবেষক, যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. রুই দিওগো বলেছেন: "আমাদের বৃদ্ধাঙ্গুলির সাথে অনেক পেশী যুক্ত থাকে, এগুলো তার নড়াচড়াকে নিয়ন্ত্রণ করে, কিন্তু অন্যান্য আঙ্গুলের সাথে যুক্ত ছিল এরকম অনেক পেশী আমরা হারিয়ে ফেলেছি।"

"আমাদের বিবর্তনের সময় এগুলো হারিয়ে গেছে, এগুলো আমাদের খুব বেশি প্রয়োজন নেই।"

বিবর্তনের পরেও মানবদেহে আরো যেসব জিনিস রয়ে গেছে, যেমন অ্যাপেন্ডিক্স, আক্কেল দাঁত এবং ককসিক্স, এগুলোর তুলনায় এসব পেশীর গঠন বেশি জটিল।

"এসব পেশী ২৫ কোটি বছর আগে হারিয়ে গেছে," বলেন ড. দিওগো। "প্রাপ্তবয়স্ক স্তন্যপায়ী প্রাণী, ইঁদুর ও কুকুরের এই পেশী নেই। অনেক অনেক বছর আগে ছিল।"

"ধারণা করা হতো যে আমরা আমাদের নিজেদের চেয়ে মাছ, ব্যাঙ, মুরগি ও ইঁদুরের প্রাথমিক বিকাশ সম্পর্কে বেশি জানি। কিন্তু এই পদ্ধতিতে মানব-বিকাশ সম্পর্কে আমরা অনেক বিস্তারিত জানতে পারছি।"

আরেকজন নৃবিজ্ঞানী ড. সের্জেওি আলমেসিয়া, যিনি আমেরিকান মিউজিয়াম অফ ন্যাচরাল হিস্ট্রিতে আদি-মানব ও মানব বিবর্তন নিয়ে গবেষণা করেছেন, তিনি বলছেন, "এই গবেষণার ফলাফল থেকে মানব বিবর্তন সম্পর্কে আরো গভীরভাবে জানতে পারছি, আবার একই সাথে এই গবেষণা অনেক প্রশ্নেরও জন্ম দিয়েছে।"

"এই গবেষণার অভিনবত্ব হচ্ছে আমরা নির্ভুলভাবে দেখতে পারছি মানব দেহের বিকাশের ঠিক কোন পর্যায়ে এসব জিনিস আবির্ভূত হয়েছে কিম্বা হারিয়ে গেছে," বলেন তিনি।

"আমার কাছে এখন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে: আর কী কী জিনিস হারিয়ে গেছে? যখন পুরো মানবদেহ পরীক্ষা করে দেখা হবে তখন এরকম বিস্তারিত আর কী কী জিনিস আমরা দেখতে পাবো?

"কী কারণে মানবদেহের কোন কোন জিনিস হারিয়ে যাচ্ছে তারপর সেগুলো আবার আবির্ভূত হচ্ছে? এখন হয়তো আমরা জানতে পারবো যে কিভাবে সেটা ঘটছে। কিন্তু কেন হচ্ছে সেটা কি জানতে পারবো?"

জীববিজ্ঞানীরা এখন মানবদেহের অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ আরো বিশদভাবে পরীক্ষা করে দেখার পরিকল্পনা করছেন।

ইতোমধ্যেই তারা মানুষের পা পরীক্ষা করেছেন এবং দেখেছেন যে গর্ভস্থ শিশুর এই অঙ্গেও অতিরিক্ত পেশী ছিল এবং সেগুলো হারিয়ে গেছে।

বানর ও শিম্পাঞ্জির দেহে এখনও এসব পেশী রয়ে গেছে। কোন কিছু বেয়ে উপরে উঠতে এবং পা দিয়ে কোন জিনিস ধরতে তারা এসব পেশী ব্যবহার করে থাকে।

ড. দিয়োগো বলছেন, "এসব হারিয়ে ফেলার অর্থ এই নয় যে আমরা আরো উন্নত মানবে পরিণত হচ্ছি। আসলেই আমরা কিছু জিনিস হারিয়ে ফেলছি যা আমাদেরকে সুপার-মানবে পরিণত করবে।"

"সুপার-মানবের হয়তো এসব পেশী থাকবে কারণ তারা তাদের সব আঙ্গুল নাড়াতে পারবে।" "এগুলোর প্রয়োজন নেই বলেই আমরা সেসব হারিয়ে ফেলেছি।" বিবিসি

এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ