রেনিটিডিন: কী পাওয়া গেছে? বেশি খেলে কতটা ঝুঁকি?

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৮:২৯

বাংলাদেশে গ্যাস্ট্রিকের খুব জনপ্রিয় একটি ঔষধ রেনিটিডিন। যেকোনো সময় ঔষধের দোকানে গেলেই এটি কিনতে পাওয়া গেছে।

রেনিটিডিন জাতীয় ঔষধে ক্যান্সার হতে পারে এমন কিছু উপাদান পাওয়া যাওয়ায় বিশ্বের অনেক দেশ ঔষধটি বাজার থেকে তুলে নিচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা এফডিএ এবং ইউরোপিয়ান মেডিসিন এজেন্সি এই ঔষধের ব্যবহার সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়ে এটি নিয়ে অধিকতর গবেষণা করছে। তবে বাংলাদেশ গতকাল রেনিটিডিন আমদানি, উৎপাদন ও বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে।

রেনিটিডিন বেশি খেলে কতটা ঝুঁকি?

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাষ্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বহুদিন যাবত বাংলাদেশে ঔষধ শিল্পের পর্যবেক্ষণ করছেন।

তিনি বলছেন, "রেনিটিডিন ঔষধটা নিজে ক্যান্সার তৈরি করে না। খাওয়ার সাথে সাথেই কিছু ঘটবে না। এর নিজের ক্যান্সার জাতীয় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। রেনিটিডিনের কাঁচামাল উৎপাদনের সময়, কিছু কাঁচামালের একটি মিশ্রণে ক্যান্সারের ঝুঁকিযুক্ত কোন উপাদান তৈরি হয়েছে। বিশ্বে বহু ল্যাবে এর কাঁচামাল তৈরি হয়। এটি সব কাঁচামাল উৎপাদকের ক্ষেত্রে ঘটেনি।"

তিনি বলছেন, "ধরুন রান্নায় যদি লবণ বেশি হয়ে যায় বা একটা ভুল মশলা দিয়েছেন তখন সেটি আপনি খেতে পারবেন না। বিষয়টা সেরকম।" তিনি বলছেন, এখন যেটি করা হচ্ছে সেটি সতর্কতা।

একসময় পেপটিক আলসার হলে অস্ত্রোপচার করতে হতো। রেনিটিডিন বাজারে আসার পর সেটির দরকার অনেক কমে গিয়েছিলো।

বাংলাদেশে যে ব্যবস্থা

ঔষধ প্রযুক্তির শিক্ষক অধ্যাপক আবম ফারুক বলছেন, বাংলাদেশ মূলত ভারতের দুটি ল্যাব থেকে রেনিটিডিন ঔষধের কাঁচামাল আমদানি করে থাকে।

এই দুটি ল্যাবের কিছু নমুনায় "কারসিনোজেনিক" উপাদান বা ক্যান্সারের ঝুঁকি আছে এমন উপাদান পাওয়া গেছে।

সেই কাঁচামাল ব্যবহার করে যারা বাংলাদেশে ঔষধটি বানাচ্ছে সেই ঔষধের ক্ষেত্রে এই সাবধানতা।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলছেন, সরকারের উচিৎ আরও পরিষ্কার করে বিষয়টি মানুষজনকে জানানো।

যে কোম্পানির কাঁচামালের সাথে এর সম্পর্ক এবং দেশের যে কোম্পানি তাদের কাছ থেকে কাঁচামাল এনে রেনিটিডিন জাতিয় ঔষধ বানায় সেটি সরকারের সরাসরি ঘোষণা দেয়া দরকার বলে তিনি মনে করছেন।

ঠিক কী পাওয়া গেছে ঔষধটিতে?

ক্যান্সার হতে পারে এমন কিছু উপাদান বলতে ঠিক কী বলা হচ্ছে সেটি ব্যাখ্যা করে অধ্যাপক ফারুক বলছেন, রেনিটিডিন জাতীয় সবগুলো ট্যাবলেটে ক্যান্সার তৈরি করতে পারে এমন উপাদান পাওয়া গেছে বিষয়টি তেমন নয়।

কিছু ট্যাবলেটে পাওয়া গেছে। তিনি বলছেন, "বিষয়টা হল রেনিটিডিন তৈরি করতে যেসব কেমিক্যাল লাগে, উৎপাদনের সময় অতি সামান্য পরিমাণে কিছু বাই-প্রোডাক্ট কেমিক্যাল তৈরি হল। যেটি পরিশোধন করতে হয়। সেরকম কোন উপাদান হয়ত থেকে যেতে পারে।"

তিনি আরও বলছেন, "ট্যাবলেটের আকৃতি যাতে ঠিক থাকে, ট্যাবলেট যাতে শক্ত থাকে সেজন্য ট্যাবলেট বানাতে আরও কিছু জিনিস লাগে। সেসব জিনিসের সাথেও কোন বিক্রিয়া হতে পারে। ঔষধের যে প্যাকেজিং সেই আবরণ থেকেও কিছু পদার্থ তৈরি হতে পারে যাতে ইমপিউরিটিজ আছে। হতে পারে রেনিটিডিন ঔষধটির নিজের রাসায়নিক গঠনের পরিবর্তন হলো।"

এফডিএ এটি নিয়ে এখনো গবেষণা করছে। সাবধানতা হিসেবে ঔষধটি অনেক দেশে বিক্রি করা হচ্ছে না।

এখন কী করণীয়?

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলছেন, "বাংলাদেশে মানুষজন অনেকসময় চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে ইচ্ছেমত ঔষধ খেয়ে থাকেন। এখন সবচেয়ে বড় কাজ হবে দরকার না হলে ঔষধ খাবেন না। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রেনিটিডিনের বিকল্প ঔষধ ব্যাবহার করুন। বাজারে এখন অনেক ধরনের ঔষধ আছে। আর রোগের আগে থেকে প্রতিকারের ব্যবস্থা নিন। ভয় পাবেন না।"

তবে তিনি সংশয় প্রকাশ করছেন, বাংলাদেশে বাজার থেকে এত ঔষধ তুলে নেয়া বা এর বিক্রি বন্ধ করা কতটা সম্ভব হবে।
তিনি বলছেন, "বাংলাদেশে ঔষধ বিক্রেতাদের উপর সরকারের তেমন নিয়ন্ত্রণ নেই। চেষ্টা হয়েছে কিন্তু সম্ভব হয়নি।"

এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ