আজকের শিরোনাম :

আগামী এক প্রজন্মের মধ্যে কি ম্যালেরিয়া নির্মূল সম্ভব?

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১২:১০

সম্প্রতি এক গবেষণা বলছে, বিশ্বের অন্যতম পুরনো মরণব্যাধি ম্যালেরিয়া থেকে সম্পূর্ণ পরিত্রাণ সম্ভব।

প্রতি বছর এখনো বিশ্বের ২০ কোটির বেশি মানুষ ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়ে থাকেন, বেশির ভাগ সময় যার শিকার হয় শিশুরা। গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, ম্যালেরিয়াকে হারানো এখন আর দূর কল্পনা নয়।

বরং ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে বছরে যদি মাত্র ২০০ কোটি মার্কিন ডলার বাড়তি ব্যয় করা যায়, তা হলেই অর্জন হতে পারে এই লক্ষ্য।

ম্যালেরিয়া কী?
প্ল্যাসমোডিয়াম নামে এক ধরনের পরজীবীর সংক্রমণে ম্যালেরিয়া হয়। স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশার কামড়ে ম্যালেরিয়ার জীবাণু একজনের থেকে আরেকজনে ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্ত হলে তীব্র জ্বর, মাথা ব্যথা এবং কাঁপুনি হয় একজন মানুষের। ম্যালেরিয়ার পরজীবী লিভার ও লোহিত রক্ত কণিকার কোষ আক্রমণ করে।

অন্য উপসর্গের মধ্যে ম্যালেরিয়া থেকে রক্তশূন্যতা হতে পারে এবং আক্রান্ত হতে পারে মস্তিষ্কও।

এখনো প্রতি বছর ম্যালেরিয়ায় চার লাখ ৩৫ হাজার মানুষ মারা যায়, যাদের বেশির ভাগ শিশু।

ম্যালেরিয়া চিকিৎসার অগ্রগতি কতদূর?
ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে অনেকটাই এগিয়েছে বিশ্ব। এ অগ্রগতির পেছনে বড় কারণ সাম্প্রতিক দশকগুলোতে বিশ্বব্যাপী মানুষ মশার কামড় ঠেকানোর বিভিন্ন উপায় বের করেছে। যেমন কীটনাশক মাখানো মশারি, এবং ম্যালেরিয়া চিকিৎসায় উন্নত ওষুধ আবিষ্কার। তবে, বিশেষ করে আফ্রিকায় এখনো ম্যালেরিয়া এক বিরাট আতংকের নাম।

ম্যালেরিয়াতে গোটা পৃথিবীতে প্রতি বছর যত মানুষ মারা যায়, তার অর্ধেকই মারা যায় আফ্রিকা অঞ্চলের পাঁচটি দেশে।

নতুন এই প্রতিবেদন কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে নতুন এই প্রতিবেদন গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তিন বছর আগে এই প্রতিবেদনের কাজ শুরু করে, এর সম্ভাব্যতা যাচাই এবং কত খরচ হতে পারে, তা জানার জন্য।

বিশ্বের ৪১ জন শীর্ষস্থানীয় ম্যালেরিয়া বিশেষজ্ঞ দল, যে দলে বিজ্ঞানী থেকে অর্থনীতিবিদও রয়েছেন, তারা এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবী থেকে ম্যালেরিয়া নির্মূল সম্ভব।

তাদের প্রতিবেদন ল্যানসেট সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে একে প্রথম বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে।

রিপোর্টের অন্যতম প্রণেতা স্যার রিচার্ড ফেচেম জানিয়েছেন, ‘আগে একে সূদরপ্রসারী স্বপ্ন বলে মনে করা হলেও, এখন আমাদের হাতে প্রমাণ আছে ২০৫০ সালের মধ্যে, মানে আগামী এক প্রজন্মের মধ্যেই ম্যালেরিয়া নির্মূল সম্ভব।’

তবে লক্ষ্য অর্জনে ‘বোল্ড অ্যাকশন’ মানে জোরালো পদক্ষেপ দরকার বলে তিনি জানিয়েছেন।

সাফল্য অর্জনে কী প্রয়োজন?
ম্যালেরিয়া নির্মূলে পৃথিবীতে অগ্রগতি অনেকটা হলেও, এখনো আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চল যেমন সেনেগাল থেকে উত্তর পশ্চিমে মোজাম্বিক পর্যন্ত এলাকা থেকে ম্যালেরিয়া তাড়ানো এখনো দূর অস্ত।

বিজ্ঞানীদের নতুন লক্ষ্য অনুযায়ী ২০৫০ সালের মধ্যে ম্যালেরিয়া দূর করতে হলে বর্তমান প্রযুক্তিসমূহ কার্যকর করতে হবে, সেই সাথে এ লক্ষ্যে নতুন উপায় খুঁজে বের করতে হবে।

বিশেষ করে জিন ভিত্তিক চিকিৎসা পদ্ধতি উদ্ভাবনের কথা ভাবতে হবে। এই পদ্ধতি বংশানুক্রমে পাওয়া জিনের বৈশিষ্ট্যের মতোই, ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী জিনকে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে সঞ্চালিত করবে।

মানে তত্ত্বগতভাবে এই জিন মশাকে বংশবৃদ্ধিতে অক্ষম করে তুলবে, এবং ক্রমে তাদের পুরো গোষ্ঠীকে ধ্বংস করতে সক্ষম হবে।

তবে, আগামী এক প্রজন্মের মধ্যে ম্যালেরিয়া নির্মূলের ব্যপারে সকলেই আশাবাদী এমন নয়।

আফ্রিকায় ম্যালেরিয়া নির্মূলে গঠিত আঞ্চলিক জোট বলছে, এটি খুবই উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা, এজন্য একই সঙ্গে মশা ও প্ল্যাসমোডিয়াম পরজীবী নিধন করতে হবে।

এজন্য নতুন কোন পন্থা উদ্ভাবন ছাড়া সে লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয় বলে সতর্ক করেছে জোট।

কত খরচ হবে?
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে এই মূহুর্তে বছরে প্রায় সাড়ে চারশো কোটি মার্কিন ডলার খরচ হয়। নতুন লক্ষ্য অর্জনে বছরে আরো ২০০ কোটি ডলার বাড়তি ব্যয় করতে হবে।

বিজ্ঞানী দলের হিসাব অনুযায়ী, এর সঙ্গে আরো খরচ রয়েছে, যেমন লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত প্রাণহানি, এবং পরবর্তী গবেষণার খরচকেও এই ব্যয়ের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।

লক্ষ্য অর্জন কতটা বাস্তব?
২০১৬ সালে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই ছিলো ম্যালেরিয়ার ঝুঁকিতে। উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের বিভিন্ন জায়গা, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া, পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত লোকের সংখ্যা বেড়েছে। যদিও অন্যান্য অঞ্চলে ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব কমেছে বা একই রকম আছে। তবে, পৃথিবী থেকে কোন রোগবালাই একেবারে নির্মূল বেশ কঠিন একটি কাজ।

এর আগে ১৯৮০ সালে কেবলমাত্র গুটিবসন্ত রোগই পৃথিবী থেকে চিরকালের মত বিদায় হয়েছে বলে ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে পোলিও নির্মূলের কাজ চলার সময় দেখা গেছে কাজটি কত কঠিন।
তথ্যসূত্র : বিবিসি

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ