আজকের শিরোনাম :

হৃদরোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে করণীয়

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০১৯, ১১:৪৯ | আপডেট : ০১ আগস্ট ২০১৯, ১১:৫৬

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, বাংলাদেশে ৫৩ ভাগ মৃত্যুর কারণ অসংক্রামক রোগ ও এর মধ্যে শীর্ষস্থানে আছে হৃদরোগ। দেশের মোট মৃত্যুর শতকরা ২৭ ভাগই হৃদরোগের নানা সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

সোসাইটি অব কার্ডিওভাস্কুলার ইন্টারভেনশনের মতে, বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে হৃদরোগের কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ১৪ দশমিক ৩১ শতাংশ।

দেশে ঠিক কতজন মানুষ হৃদরোগ সম্পর্কিত সমস্যায় আক্রান্ত তার কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকলেও বিশেষজ্ঞরা দাবি করেন যে জনসংখ্যার বিশ শতাংশই হৃদরোগের সমস্যায় ভুগছে।

এখন ঢাকাসহ সারাদেশে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় যেসব পরিবারে হৃদরোগী আছে তাদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে।

কারণ এমনিতেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ মানুষই হঠাৎ করে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ছে। সেক্ষেত্রে ইতোমধ্যেই যারা হার্টের বিভিন্ন সমস্যার জন্য চিকিৎসাধীন আছেন তারা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে পরিস্থিতি কেমন হবে তা নিয়েই উদ্বেগ তাদের।

ঢাকার মিরপুরে বসবাস করেন চাকরিজীবী সুমাইয়া হাসান । তার শ্বশুড় ও চাচা দুজনেই হৃদরোগী। বেশ কয়েক বছর ধরে তারা চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলছেন, ‘আমার চাচা ও শ্বশুর রোগী। হার্টের চিকিৎসা নিচ্ছেন বেশ কয়েক বছর ধরে। এর মধ্যেই এখন শুরু হলো ডেঙ্গু। এত অনেকটা মহামারীর মতো আকার নিয়েছে। তাই আগের বছরগুলোয় অতটা ভাবিনি। কিন্তু এবার টেনশন হচ্ছে। তাদের দুজনেরই আবার ডায়াবেটিসও আছে।’

সুমাইয়া হাসান বলেন, এডিস মশা থেকে পরিবারের সদস্যদের রক্ষা করার আপ্রাণ চেষ্টা করছি। ঘরবাড়ি সব পরিষ্কার রাখি। মশারি ব্যবহার করি সবাই। মশা প্রতিরোধী সব ওষুধ ব্যবহার করছি।’

বাংলাদেশে সুমাইয়া হাসানের মতো অনেকেরই পরিবারে হৃদরোগে ভুগছেন কিংবা আক্রান্ত হয়েছেন এমন সদস্য আছে। এমনকি অনেকে হার্টে রিং পরানো কিংবা বাইপাস সার্জারি হয়েছে এমনও অনেকে আছেন বহু পরিবারে।

ডেঙ্গু জ্বরের ব্যাপকতা বেড়ে যাওয়ার কারণে তাদের নিয়ে বাড়তি সতর্কতারও প্রয়োজন বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ রাজিব কুমার সাহা বিবিসি বাংলাকে বলেন, ডেঙ্গু জ্বর নিজেই যথাসময়ে পদক্ষেপ না নিলে প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পরে এবং তাই হৃদরোগে আক্রান্ত কেউ যদি এ জ্বরে আক্রান্ত হন তা হলে তাকে আরও দ্রুততার সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে কী পদক্ষেপ নেবেন হৃদরোগীরা
রাজিব কুমার সাহা বলছেন, যিনি ইতোমধ্যেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন বা চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের সবসময় সর্তক থাকতে হবে এডিস মশা না কামড়াতে পারে।

‘ধরুন ডেঙ্গুর যেসব লক্ষ্মণ আমরা জানি- অনেক জ্বর, বমি হওয়া, শরীরে র‍্যাশ ওঠা কিংবা পাতলা পায়খানা হওয়া- এসব হলে দ্রুততার সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।’

তিনি বলেন, খুব দ্রুত না আসলে হৃদরোগীর জন্য পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে। কারণ হৃদরোগীরা যেসব ওষুধ সেবন করে সেগুলো সাধারণত রক্ত তরল করার জন্য। এগুলো এন্টি প্লেটলেট। আবার ডেঙ্গু হলে প্লেটলেট ভেঙে যায়। তাই দুটি মিলে কি হতে পারে সহজেই বোঝা যায়। তাই জ্বরের লক্ষ্মণ বোঝা গেলেই দ্রুত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে দেখতে হবে।’

ঝুঁকি কোথায়?
রাজিব কুমার সাহা হৃদরোগে আক্রান্তদের ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার কয়েকটি ঝুঁকির কথা উল্লেখ করেন। এগুলো হলো-
>> প্রেশার কমে যাওয়া
>> হাইপোটেনশন থেকে বিপদ হওয়ার ভয়
>> ডেঙ্গু থেকে লিভার আক্রান্ত হতে পারে। বিলুরুবিন বেড়ে যাতে পারে।
>> রক্তের অণুচক্রিকায় রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়াএ
>> হৃদরোগ ছাড়াও যারা উচ্চ রক্তচাপ ও হার্ট ফেইলিউরের ওষুধ নিচ্ছেন তাদের সেসব ওষুধ রক্তচাপ কমিয়ে দিতে পারে

তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু হওয়া মানে হলো এমনিতেই বিপদে। তার মধ্যে যাদের হার্ট অ্যাটাক একবার হয়েছে কিংবা রিং পরানো আছে তাদের নিজেদেরই উপলব্ধি করতে হবে যে সমস্যা হচ্ছে কি-না। সমস্যা হলেই জ্বর যাই হোক চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।’

রাজিব কুমার বলছেন প্রথমে জ্বর নিয়ন্ত্রণে এনে শরীরের ফ্লুয়িড ম্যানেজমেন্ট ঠিক রাখতে হবে। প্রেশার ঠিক করতে হবে। জ্বর কমে গেলে হার্টের চিকিৎসায় যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।

সে কারণেই হৃদরোগে যারা ভুগছেন তাদের অধিকতর সতর্ক থাকারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

আবার ডেঙ্গু হলে চিকিৎসক হৃদরোগের চিকিৎসার যেসব ওষুধ বন্ধ করে দেন সেগুলো জ্বর সেরে গেলে যত দ্রুত সম্ভব আবার চালু করতে হবে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে।
তথ্যসূত্র : বিবিসি

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ