আজকের শিরোনাম :

শিশুদের জন্য কি ‘মিষ্টি’ জাতীয় খাবার নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে?

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০১৯, ১২:০৭ | আপডেট : ০১ জুলাই ২০১৯, ১২:১৫

বাচ্চারা মিষ্টি বা চিনি জাতীয় খাবার খেতে পছন্দ করে, এমন একটি সাধারণ ধারণা প্রচলিত আছে বিশ্বজুড়ে। কিন্তু বর্তমানে সারা দুনিয়ায় বাচ্চাদের স্থূলতা, দাঁত ও চোখের সমস্যার কারণে শিশুদের খাদ্যাভ্যাসে ব্যাপক পরিবর্তন আনার তাগিদ দিয়েছেন শিশু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

সম্প্রতি ব্রিটেনের রয়্যাল কলেজ অব পেডিয়াট্রিকস অ্যান্ড চাইল্ড হেলথের গবেষকেরা এক রিপোর্টে দেখেছেন, বাচ্চাদের খাবারে মিষ্টির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা গেলে এবং মিষ্টি খাবারের প্রতি তাদের নির্ভরশীলতা তৈরির আগেই সবজি খাওয়ানো শুরু করা গেলে তা তাদের সুষম পুষ্টির জোগান দেবে।

এমনকি যেসব খাবারে বাড়তি চিনি যোগ করা হয়নি বলে লেবেল লাগানো থাকে, সেসব খাবারও মধু কিংবা ফলের রসের মাধ্যমে মিষ্টি করা হয় বলে তারা জানিয়েছেন।

মা-বাবাদের উচিত শিশুদের একটু তেতো খাবারও দেয়া।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এর ফলে শিশুরা দাঁত ক্ষয়, স্থূলতা বা মোটা হয়ে যাওয়া এবং অপুষ্টির হাত থেকে বেঁচে যাবে। সেই সঙ্গে স্থূলতা থেকে পরবর্তী সময় ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কাও কমবে।

রয়্যাল কলেজ অব পেডিয়াট্রিকস অ্যান্ড চাইল্ড হেলথের ওই রিপোর্টে মূলত যুক্তরাজ্যের শিশুদের স্বাস্থ্য পরিস্থিতির বিবরণ দেয়া হলেও, বলা হয়েছে পুরো বিশ্বে শিশুদের প্রায় একই রকম অবস্থা।

স্থূলতা
সারা দুনিয়ার মতো যুক্তরাজ্যেও শিশুদের মধ্যে স্থূলতা একটি বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে।

ফলে দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগের মূল লক্ষ্যগুলোর একটি হচ্ছে ২০৩০ সালের মধ্যে ইংল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডের শিশুদের মধ্যে মোটা হয়ে যাবার প্রবণতা ঠেকানো। এ জন্য যেসব খাবারে চিনি ও চর্বি বেশি রয়েছে, তা নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।

এ লক্ষ্যের অংশ হিসেবেই ২০১৮ সালে যুক্তরাজ্যে চিনি জাতীয় পানীয়ের ওপর কর আরোপ করা হয়েছে। এখন শিশু খাদ্যে চিনির পরিমাণ নির্দিষ্ট করে দেওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

বন্ধ মিষ্টি পানীয়
শিশুদের মিষ্টি জাতীয় পানীয় একেবারেই দেয়া উচিত নয়। আর যেসব খাবার - যেমন বিভিন্ন ফলের রস বা মিশ্রণ এবং সিরাপ- যেগুলোয় বলা হয় কোন বাড়তি চিনি যোগ করা হয়নি, তাও পরিমিত হারে দেয়া উচিত বাচ্চাদের।

চিকিৎসকরা বলছেন ক্যান জাতীয় যেসব খাবার, সেসবে বাচ্চাদের অভ্যস্ত না করে বরং তাজা ফলমূল, মিষ্টি ছাড়া দুধ জাতীয় খাবারে বাচ্চাদের অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।

গবেষক দলের প্রধান প্রফেসর মেরি ফিউট্রেল বলছেন, বাচ্চাদের দুধ ছাড়ানোর জন্য মা-বাবারা অনেক সময় মিষ্টি জাতীয় খাবারের অভ্যাস করান আর এই সময়েই মিষ্টি খাবারের আসক্তি হয় বাচ্চাদের।

‘দেখা যায় ফলের পিউরি বা মিশ্রণ ও তরল জাতীয় মিষ্টি খাবার দেয়া হয় বিকল্প হিসেবে। বাজারে প্রচলিত বাচ্চাদের প্যাকেটজাত এবং টিনজাত খাবারে হাই এনার্জি ও প্রচুর মিষ্টি থাকে। আর প্যাকেট বা বোতলের মুখ থেকে খেলে সে প্লেট ও চামচ বা হাত দিয়ে খাবার খাওয়াও শেখে না।’

মিষ্টি জাতীয় খাবার মানা কেন?
গত কয়েক দশক ধরে বিজ্ঞানী আর চিকিৎসকদের ক্রমাগত উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে চিনি বা শর্করা। তাদের কাছে এটি হয়ে দাঁড়িয়েছে জনস্বাস্থ্যের এক নম্বর শত্রু।

সরকার এর ওপর কর বসাচ্ছে। স্কুল আর হাসপাতালগুলো খাদ্যতালিকা থেকে একে বাদ দিয়ে দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন: আমাদের খাবার থেকে চিনি সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে দিতে।

আমরা সবসময়ই শুনছি, যারা বেশি মিষ্টি খায় তাদের টাইপ-টু ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি।

বেশি করে সবজি
প্রফেসর ফিউট্রেল বলছেন, মিষ্টি জাতীয় খাবারের প্রতি শিশুদের আকর্ষণ থাকবেই। কিন্তু মা-বাবাদের খেয়াল করতে হবে কোন খাবার শিশুর জন্য ভালো।

‘শিশুরা কিন্তু প্রাকৃতিকভাবেই নানা ধরনের খাবার খেয়ে দেখতে চায়, যদি তাদের সে সুযোগ দেয়া হয়। ফলে তাদের নানা রকম খাবারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়াও খুব জরুরি।’

এ জন্য মা-বাবাদের খাবারের উপকার এবং অপকার দুটোই জানতে হবে।

যুক্তরাজ্যে প্রতিবছর ৫ বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের ২৩ শতাংশ দাঁতের সমস্যায় ভোগে।

কতটা মিষ্টি খেতে পারবে বাচ্চারা?
চিকিৎসকরা বলছেন, দুই বছর বয়সী একটি শিশু দিনে যেসব খাবার খাবে তার ৫ শতাংশের বেশি মিষ্টি জাতীয় খাবার হওয়অ উচিত নয়। কিন্তু এ মুহূর্তে যুক্তরাজ্যের একজন শিশু দিনে গড়ে প্রায় সাড়ে ১১ শতাংশ মিষ্টি জাতীয় খাবার খায়।

এ জন্য যত বেশি সম্ভব তাজা ফল ও সবজি খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

আর প্রচুর কায়িক শ্রম ও খেলাধুলার প্রতি বাচ্চাদের আগ্রহী করে তুলতে হবে।
তথ্যসূত্র : বিবিসি

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ