আজকের শিরোনাম :

মেনোপজ : নারীর শরীরে কী ধরনের প্রভাব ফেলে?

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ মে ২০১৯, ১৫:৩১

মেনোপজ একটি স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়া। সাধারণত ৪৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সে নারীদের পিরিয়ড বন্ধ হয়ে আসার ঘটনা ঘটে। তবে অপারেশন করে কোনো নারী যদি তার দুটো ওভারি অথবা জরায়ু ফেলে দেয় তা হলেও পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যায়।

যুক্তরাজ্যে নারীদের মেনোপজ হওয়ার গড় বয়স ৫১ বছর।

শরীরের এ বদলের পেছনে কারণ কী?
নারীদের শরীরে এই পরিবর্তন আসার পেছনে মূল কারণ ওয়েস্ট্রোজেন নামের একটি হরমোন। এটি নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য চক্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

নারীদের ওভারি বা ডিম্বাশয়ে প্রতিমাসে যে ডিম্ব উৎপাদন হয় এবং সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য নারীর শরীর যেভাবে প্রস্তুত হয় তার পেছনেও রয়েছে এই হরমোনের ভূমিকা।

কিন্তু বয়স হতে থাকলে নারীদের শরীরে ওয়েস্ট্রোজেন হরমোনের উৎপাদন কমে যেতে থাকে। এই হরমোনই প্রজননের পুরো প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।

তাই বয়স হতে থাকলে নারীদের ডিম্বাশয়ে ডিম্বের পরিমাণও কমতে থাকে। পিরিয়ডের পরিমাণ কমতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় জন্ম দেওয়ার প্রক্রিয়াও বন্ধ হয়ে যায়।

হরমোনে বদল এলে শরীরে এর কী প্রভাব পড়ে?
এর ফলে নারীর শরীরে ব্যাপক প্রভাব পড়ে। মেনোপজের পর শরীর অদ্ভুত সব আচরণ শুরু করে। অবশ্য পরিবর্তনটা দেখা যায় মেনোপজ শুরু হবার আরও আগে থেকেই। এই স্তরটিকে তাই বলা হয় প্রি-মেনোপজ।

মেনোপজের সময় আকস্মিকভাবে আগুনের উল্কার মতন শরীরে গরম অনুভূত হওয়া, রাতের বেলায় ঘাম হওয়া, ঘুম না হওয়া, দুশ্চিন্তা হওয়া, মনমরা ভাব এবং যৌনতায় বা মিলনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলার ঘটনা অতি সাধারণ।

এ ছাড়া মূত্রথলিতে সমস্যা এবং যোনিপথ শুষ্ক হয়ে যাওয়ার ঘটনাও খুব স্বাভাবিক। আর ওয়েস্ট্রোজেন হরমোনের উৎপাদন যখন শরীরে একেবার বন্ধ হয়ে যায় এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়ে নারীদের হাড় ও হৃদপিণ্ডের উপরে।

তবে যদি থেরাপির মাধ্যমে হরমোন প্রতিস্থাপন করা যায় এবং শরীরে ওয়েস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমাণ ঠিক রাখা যায় তাহলে শরীরে এর নেতিবাচক প্রভাব কিছু কমানো সম্ভব।

কেন এত গরম লাগে?
ওয়েস্ট্রোজেন হরমোনের অভাবে এ রকম অনুভূতি হয়। এটি মানুষের ব্রেইন বা মস্তিষ্কের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

সাধারণত তাপমাত্রার পরিবর্তন হলে শরীর সেটির সাথে খাপ খাইয়ে নেয়। কিন্তু যখন ওয়েস্ট্রোজেন হরমোন কমে যায়, মানবদেহে থার্মোস্টেট বা তাপমাত্রা বোধের বিষয়টি এলোমেলো বা দুর্বল হয়ে যায়। ফলে, অনেক সময় মস্তিষ্ক মনে করে শরীরে অতিমাত্রায় গরম লাগছে।

ওয়েস্ট্রোজেন হরমোনের কারণে মানুষের মুড বা মেজাজের উপরেও প্রভাব পড়ে। এই হরমোনের পরিমাণ কমে গেলে দুশ্চিন্তা বাড়তে পারে ও মনমরা ভাব হতে পারে।

এ ছাড়া ওয়েস্ট্রোজেন হরমোনের অভাবে ত্বকেও প্রভাব পড়ে। ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় এবং মনে হয় যেন ত্বকের নিচে পোকা-মাকড় হাঁটাহাঁটি করছে।

ওয়েস্ট্রোজেন হরমোনের সাথে অন্য আরও হরমোন সম্পৃক্ত। যেমন প্রোজেস্টেরোন ও টেস্টোস্টেরোন। তবে, ওয়েস্ট্রোজেন হরমোনের মতন এগুলোর প্রভাব এতোটা তীব্র নয়।

মেনোপজের লক্ষণ কী?
কেউ মেনোপজের উপসর্গে ভুগছে কিনা সেটি জানার জন্য রক্ত পরীক্ষা করা যেতে পারে। তবে, সবসময় যে পরীক্ষার ফল খুব নির্ভুল হবে এমন নয়।

তবে, কোনো ডাক্তারের সাথে আলাপ করে একজন নারী যে সব লক্ষণগুলো তার শরীরে দেখছেন সেগুলো জানানো যেতে পারে। মেনোপজের পর ওয়েস্ট্রোজেন হরমোন শরীরে আর পুনরুৎপাদন হয় না। ফলে, মেনোপজের পর ওয়েস্ট্রোজেন হরমোনের অভাব নিয়েই জীবনের বাকিটা সময় কাটাতে হয়।

চিন্তিত হওয়ার কী কিছু আছে?
গাইনোকোলজিস্ট ও মেনোপজ বিশেষজ্ঞ ড. হেদার কুরি বলেছেন, মেনোপজ নিয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হবার কিছু নেই।

মেনোপজের লক্ষণ দেখা দিলে ডাক্তারের সাথে আলাপ করলে এই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

মেনোপজের ক্ষেত্রে হরমোন প্রতিস্থাপন থেরাপিকে একটি কার্যকর উপায় বিবেচনা করা হয়। তবে, এই নিয়ে বিতর্কও রয়েছে। কারণ হরমোন প্রতিস্থাপনের বেশ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে।

যে দিকে নজর রাখবেন
মেনোপজ নারীর স্বাস্থ্যের জন্য একটি ভালো দিক। মেনোপজ হলে যদি নিচের বিষয়গুলো নারীরা খেয়াল করেন তাহলে সুস্বাস্থ্য পাওয়া সম্ভব।

* ব্যালেন্সড ডায়েট বা ভারসাম্যপূর্ণ খাবার খাওয়া। চর্বিযুক্ত খাবার না খাওয়া। হৃৎপিণ্ড ও হাড়কে সুরক্ষা দিতে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া।

* দুশ্চিন্তা, চাপ ও হৃদরোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে নিয়মিত কিছু ব্যায়াম করা।
* হার্টের অসুখ ও হঠাৎ গরম লাগা কমাতে ধূমপান ও অ্যালকোহল পান বন্ধ করা।
তথ্যসূত্র : বিবিসি

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ