আজকের শিরোনাম :

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ‘খেজুর’

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৩ মে ২০১৯, ০৯:৩৮

রোজার ইফতারে খেজুর থাকবে না এটা ভাবাই যায় না। কারণ রোজাদার ব্যক্তিরা এটাকে সুন্নত হিসেবে পালন করে থাকেন। ইফতারিতে খেজুরের উপস্থিতি থাকাটা যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। সারাদিন রোজা রাখার পর পেট খালি থাকায় শরীরে গ্লুকোজের স্বল্পতা দেখা দেয়, যা ইফতারে পূরণ করতে হয়। আর খেজুর সেটি দ্রুত পূরণে সাহায্য করে।

যদিও সারা বছরই খেজুর পাওয়া যায়, তবু রমজান মাস ছাড়া খেজুর কমই খাওয়া হয়। তবে, কেউ চাইলে পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এই ফলটি সারা বছরই খেতে পারেন। মিষ্টি এই ফলটি পুষ্টির এক অসীম উৎস। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত খেজুর খেলে অনেক রোগ থেকে দূরে থাকা যায়।

খেজুর ফলকে চিনির বিকল্প হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। খেজুরের পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে বলা হয় চারটি বা ৩০ গ্রাম পরিমাণ খেজুরে আছে ৯০ ক্যালোরি, এক গ্রাম প্রোটিন, ১৩ মি.লি. গ্রাম ক্যালসিয়াম, ২.৮ গ্রাম ফাইবার এবং আরও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান।

খেজুর শক্তির একটি ভালো উৎস। তাই খেজুর খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শরীরের ক্লান্তিভাব দূর হয়। আছে প্রচুর ভিটামিন বি। যা ভিটামিন বিসিক্স মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।

ইফতারে খেঁজুর খেলে যেসব উপকার পাবেন-

পেটের গ্যাস কমে: রমজানে সারাদিন রোজা রাখার ফলে খালি পেটে গ্যাস জমে। আর ইফতারে সবার আগে খেজুর চিবিয়ে খেলেই পেটের গ্যাস দূর হয়ে যায়।

মায়ের বুকের দুধ: খেজুর বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েদের জন্য সমৃদ্ধ এক খাবার, যা মায়ের দুধের পুষ্টিগুণ আরও বাড়িয়ে দেয় এবং শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়া ক্যালসিয়াম হাড় গঠনে সহায়ক। আর খেজুরে আছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, যা হাড়কে মজবুত করে।

কফ ও শুষ্ক কাশি দূর করে: সারাদিন রোজা রাখার কারণে দিনের বেলায় দেহের পরিচর্যা করা যায় না। তাই ইফতারে খেজুরের পরিমাণ বাড়িয়ে দিলে তা ওষুধ হিসেবে কাজ করে। খেজুর কফ দূর করে, শুষ্ক কাশি এবং এজমায় উপকারী।

ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে: একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত খেজুর খাওয়া শুরু করলে দেহের ভেতরে পটাশিয়ামের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, যার প্রভাবে রক্তচাপ সহজেই নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। তাই প্রতিদিনের ইফতারে খেজুর রাখলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।

দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটে: খেজুর খেলে শরীরের এমন কিছু উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, যা দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করে।সেইসঙ্গে রাতকানা রোগসহ অন্যান্য চোখের রোগের প্রকোপ কমতেও সময় লাগে না।

ব্রেন ভালো রাখে: খেজুরে উপস্থিত ডায়াটারি ফাইবার, পটাশিয়াম, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং আরও নানাবিধ উপকারী উপাদান শরীরে প্রবেশ করার পর ব্রেন সেলের ক্ষমতাকে এতটাই বাড়িয়ে তোলে যে ব্রেন পাওয়ার বৃদ্ধি পায় চোখে পরার মতো।এজন্য আশপাশের মানুষদের থেকে যদি একটু বেশিই বুদ্ধিমান হয়ে উঠতে চান, তাহলে প্রতিদিন ২-৩টি করে খেজুর খেতে ভুলবেন না।

ওজন কমাতে সাহায্য করে: ওজন কমাতে খেজুরের জুড়ি নেই। কারণ এতে রয়েছে ফাইবার, যা কলেস্টোরেল থেকে মুক্তি দেয়। ফলে ওজনকে না বাড়িয়ে সঠিক ও সুন্দর রাখতে খেজুর বেশ উপযোগী।

হার্টের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়: ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে নিয়মিত খেজুর খেলে শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমতে শুরু করে। ফলে হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের আশঙ্কা হ্রাস পায়।

হাড় ও দাঁত: আমরা জানি, ক্যালসিয়াম হাড় ও দাঁতের সুস্থতায় বিশেষভাবে কাজ করে। আর খেজুর দেহে ক্যালসিয়াম সরবরাহ করে।

অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের ঘাটতি দূর হয়: খেজুরে প্রচুর মাত্রায় প্রাকৃতির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা একাধিক রোগকে দূরে রাখার পাশাপাশি শরীরের গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এখানেই শেষ নয়, এই ফলটিতে বেশ কিছু অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল প্রপাটিজও রয়েছে, ফলে নিয়মিত খেজুর খেলে সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও অনেকাংশে হ্রাস পায়।

ক্যানসার দূরে রাখে: প্রতিদিন তিনটে করে খেজুর খেলে শরীরে এমন কিছু উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি পায় যে তার প্রভাবে ক্যানসারের সেলের জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। ফলে ক্যানসারের মতো মারণ রোগ ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না, বিশেষত কোলোরেক্টাল ক্যানসারের মতো রোগ দূরে রাখতে সাহায্য করে।

শিশুদের রোগবালাই: খেজুর শিশুদের মাড়ি শক্ত করতে সাহায্য করে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ডায়রিয়াও প্রতিরোধ করে। তাই শুধু রমজান মাসে কেন, বছরজুড়েই খাদ্য তালিকায় থাকুক খেজুর।

ত্বক সুন্দর হয়ে ওঠে: খেজুরে উপস্থিত ভিটামিন সি এবং ডি শরীরে প্রবেশ করার পর ত্বক টানাটান হয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে বলিরেখাও গায়েব হতে শুরু করে। ফলে ত্বক প্রাণবন্ত এবং উজ্জ্বল হয়ে উঠতে সময় লাগে না। এ ছাড়া এই ফলটিতে উপস্থিত অ্যান্টি-এজিং প্রপাটিজ, ত্বকের বয়স ধরে রাখতেও নানাভাবে সাহায্য করে।

নানাবিধ পেটের রোগের প্রকোপ কমায়: নিয়মিত এই ফলটি খেলে কোনো ধরনের পেটের রোগই আর মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে না। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ইফতারে তিনটি করে খেজুর খেলে শরীরে ভেতরের উপকারী ব্যাকটেরিয়ায় মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ফলে বদ-হজম, কোলাইটিস এবং হেমোরয়েডের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়।

খেজুরের স্বাস্থ্য উপযোগিতা অনেক। খেজুরের মধ্যে প্রাকৃতিক আঁশের আধিক্য থাকায় এর উপকারিতা ও গুরুত্ব অনেক। গবেষকদের মতে শুকনা খাবারের মধ্যে খেজুরেই সবচেয়ে বেশি পলিফেনল থাকে। বিপজ্জনক অনেক রোগ থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে পলিফেনল। খেজুরের চেয়ে ভালো পটাশিয়াম উৎস আর হয় না। এটা সোডিয়ামেরও ভালো উৎস। কিডনি ও স্ট্রোক জটিলতা এড়াতে এর ব্যাপক প্রয়োজন রয়েছে। এ কারণে চিকিৎসকরা প্রতিদিন খেজুর খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

এবিএন/শংকর রায়/জসিম/পিংকি

এই বিভাগের আরো সংবাদ