আজকের শিরোনাম :

সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের অনুপস্থিতির কারণ প্রাইভেট প্র্যাকটিস?

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০২ মে ২০১৯, ২০:৪৩

সম্প্রতি উপজেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের অনুপস্থিতির ঘটনায় অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন ডাক্তারদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসের সুযোগ রাখার বিষয়টিকে নিয়ে।

অনেকে মনে করছেন, যতদিন প্রাইভেট প্র্যাকটিসের সুযোগ রাখা হবে ততদিন সরকারি হাসপাতালে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা যাবে না। তবে এতে দ্বিমত জানিয়েছেন স্বাস্থ্য সচিব।

তার মতে দেশের মোট জনগোষ্ঠীর অনুপাতে চিকিৎসকদের সংখ্যা মাত্র হাতে গোনা হওয়ায় তাদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস বাদ দেয়ার কোন সুযোগ নেই।

তবে বাস্তবে উপজেলা পর্যায়ে এখনও চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি নিত্যদিনের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার বাসিন্দা মমতাজ বেগমের ভাই কিছুদিন আগে ভয়াবহ অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি তাকে নিয়ে পার্শ্ববর্তী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান।

কিন্তু সেখানে কোন ডাক্তার না থাকায় তাৎক্ষণিক কোন চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হয়নি।

মিসেস মমতাজ বলেন, "ভাইরে নিয়ে সন্ধ্যায় হসপিটালে গেসি। ইমার্জেন্সিতে কোন ডাক্তার নাই খালি কম্পাউডার আছে। সাধারণ একটা চিকিৎসার জন্য গেলেও কাউকে পাইনা।"

"আউটডোরে ডিউটির জন্য ১৬/১৭জন ডাক্তার এখান থেকে বেতন নেয়। কিন্তু আসে মাত্র তিন জন। একজন গাইনি, একজন সার্জন আরেকজন দাঁতের সার্জন আর কেউ থাকেনা।"

সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের এই অনুপস্থিতি নিয়ে সমালোচনা করেছেন খোদ চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরাও।

তবে উপজেলা পর্যায়ে চিকিৎসকদের পরিবার নিয়ে থাকার মতো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না থাকা, সেইসঙ্গে পদোন্নতি পিছিয়ে পড়তে পারে এমন আশঙ্কায় চিকিৎসকরা সেখানে থাকতে চাননা বলে জানান ময়মনসিংহের বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মতিউর রহমান।

"এখানে ভাল কোন কোয়ার্টার নাই যে একজন ডাক্তার তার ফ্যামিলি নিয়ে নিরাপদে থাকবে। অনেক উপজেলায় ভাল স্কুল নাই। আবার দেখা যায় যে হাসবেন্ডকে এক উপজেলায় দিলে ওয়াইফকে আরেক উপজেলায় নিয়োগ দেয়।"

মিস্টার রহমান আরও নানা অসঙ্গতির কথাও তুলে ধরেন, যেমন উপজেলা পর্যায়ের বেশিরভাগ হাসপাতালে ন্যুনতম চিকিৎসা সরঞ্জাম থাকেনা। থাকে না প্রয়োজনীয় জনবল।

"উপজেলায় ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসারের কোন পোস্ট নাই। অ্যানেসথেশিস্ট নাই, প্রয়োজনীয় সংখ্যক নার্স, ওয়ার্ডবয়, প্যারামেডিক্স নাই। ওটি আছে, সেখানে যন্ত্রপাতি নাই। এক্সরের ফিল্ম নাই। অ্যাম্বুলেন্স থাকলে তার চালক নাই। চালক থাকলে তেল নাই।"

"তাছাড়া রোগী স্বাস্থ্য পরিস্থিতি বুঝতে ন্যুনতম যেসব টেস্ট করার প্রয়োজন সেগুলোর কোন ব্যবস্থা নাই। এইভাবে অপারেশন দূরে থাক, নরমাল চিকিৎসা কেমনে দিবেন?" তিনি বলছেন।

এছাড়া অনেকের অভিযোগ সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসের সুযোগ দেয়ায় তারা সরকারি দায়িত্ব পালনে আগ্রহী হচ্ছেন না।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী মনে করেন, যতদিন প্রাইভেট প্র্যাকটিসের সুযোগ রাখা হবে ততদিন সরকারি হাসপাতালে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা যাবে না।

"সরকারের নীতিমালার কারণে সরকারি হাসপাতালের নৈরাজ্য দূর করা যাবেনা। সরকার মুখে যা বলে, কাজে তা করে না।"

তার মতে, বাংলাদেশে চিকিৎসকদের স্বল্পতা আর আগের মতো নেই। সবাই ঢাকা ও চট্টগ্রামমুখী হয়ে পড়ায় উপজেলাগুলো ফাঁকা হয়ে পড়েছে।

মিস্টার চৌধুরী বলেন, "আজকে ঢাকার হাসপাতাল ওভারস্টাফড। তাদেরকে ডিস্ট্রিক্ট লেভেলে পুশ করতে হবে। তাছাড়া অনেক জেলা উপজেলায় চিকিৎসক আছে, কাগজে কলমে। কিন্তু বাস্তবে নাই।"

তবে ডাক্তার চৌধুরীর এমন বক্তব্যের সঙ্গে একমত হতে পারেননি স্বাস্থ্য সচিব মোহাম্মদ আসাদুল ইসলাম।

তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে এখনও ১০ হাজার জনগোষ্ঠীর অনুপাতে চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ২৩ জন।

প্রতি বছর সাড়ে ১০ হাজার শিক্ষার্থী মেডিকেল প্রতিষ্ঠানগুলোয় ভর্তি হচ্ছেন, যার মধ্যে মেডিকেল গ্র্যাজুয়েট হচ্ছেন সাড়ে ৮ হাজারের মতো।

এছাড়া গত ১২ বছরের তুলনায় চিকিৎসা ক্যাডারের সংখ্যা চার গুণ বাড়লেও এখনও রোগী ও চিকিৎসকের অনুপাতে ভারসাম্য আসেনি।

এমন অবস্থায় প্রাইভেট প্র্যাকটিস সমস্যার সৃষ্টি করলেও সেটা তুলে দেয়া সম্ভব নয় বলে জানান আসাদুল ইসলাম।

তিনি বলেন, "প্রাইভেট প্র্যাকটিস অবশ্যই এক ধরণের বাঁধা। দেশে এখন সরকারি ডাক্তার আছেন ৩০ হাজারের মতো, জনবল আছে দুই লাখ। ১৬ কোটি মানুষকে ওই হিসেবে ভাল সেবা দিতে আমাদের আরও ১০ লাখ কর্মকর্তা কর্মচারি নিয়োগ দিতে হবে। যা আমাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব।"

তবে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই সীমিত সম্পদ ও জনবলকে দিয়েই দেশের চিকিৎসা সেবার পরিধি দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা হাতে নেয়ার কথা জানান তিনি।

দুই মাস আগে সরকারি চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করা হয়েছিল।

সেই রিট আবেদনের শুনানি শেষে হাইকোর্ট পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা তৈরিতে একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের নির্দেশ দেয়। সূত্র: বিবিসি বাংলা। 

এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ