আজকের শিরোনাম :

পুরুষের জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি কেন আজও বাজারে আসেনি?

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ মার্চ ২০১৯, ১১:৪৪

পুরুষের জন্য এক ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি প্রাথমিকভাবে মানবদেহের জন্য নিরাপদ কিনা- তার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। আমেরিকার নিউ অর্লিনসে একটি নেতৃস্থানীয় মেডিক্যাল সম্মেলনে এ কথা ঘোষণা করা হয়েছে।

দিনে একটি করে খেতে হবে এই বড়ি। এতে আছে এক ধরনের হরমোন, যা পুরুষের দেহে শুক্রকীটের উৎপাদন বন্ধ করে দেয়ার মাধ্যমে কাজ করবে।

পুরুষদের জন্য বর্তমানে কনডম এবং ভ্যাসেকটমি ছাড়া আর কোনো জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নেই।

কিন্তু এন্ডোক্রিন ২০১৯ নামের সেই সম্মেলনে আরও বলা হয়, এ বড়ি বাজারে আসতে এক দশক পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে।

এত সময় লাগবে কেন?
যুক্তরাজ্যে মেয়েদের জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি চালু হয়েছিল ৫০ বছরেরও বেশি আগে। কিন্তু পুরুষদের বড়ি চালু করতে এত সময় লাগছে কেন?

অনেকে বলেন, পুরুষদের জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি চালু করার ক্ষেত্রে ‘সামাজিক ও বাণিজ্যিক ইচ্ছার ঘাটতি’ আছে। কিন্তু একাধিক জনমত জরিপে দেখা গেছে যে অনেক পুরুষই বলেছেন যে যদি এরকম বড়ি পাওয়া যায় তা হলে তারা তা ব্যবহার করার কথা বিবেচনা করবেন।

কিন্তু পুরুষটি যে বড়ি খেয়েছেন- সে কথা কি তার নারী সঙ্গিনী বিশ্বাস করবেন? সেটা আরেকটা কঠিন প্রশ্ন।

যুক্তরাজ্যে ২০১১ সালে চালানো এ্যাংগলিয়া রাস্কিন ইউনিভার্সিটির একটি জরিপ বলছে, ১৩৪ জন নারী উত্তরদাতার মধ্যে ৭০ জনই বলেছেন, তাদের মনে এই উদ্বেগ কাজ করবে যে তাদের পুরুষ সঙ্গীটি হয়তো বড়ি খেতে ভুলে যাবেন।

তা ছাড়া জীববৈজ্ঞানিক চ্যালেঞ্জও আছে। পুরুষদের জন্য হর্মোনভিত্তিক একটি বড়ি তৈরি করার সময় বিজ্ঞানীদের এটা নিশ্চিত করতে হবে যে- তার যৌন অনুভূতি বা পুরুষাঙ্গের উত্থানশক্তি কমে না যায়।

শুক্রকীট উৎপাদন
সন্তান জন্মদানের ক্ষমতাসম্পন্ন পুরুষের অন্ডকোষে নতুন শুক্রকীট প্রতিনিয়তই তৈরি হতে থাকে এবং এ উৎপাদন পরিচালনা করে নানা রকম হর্মোন।

পুরুষের জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি তৈরি করতে হলে এমনভাবে এ প্রক্রিয়াটি বন্ধ করতে হবে - যাতে হর্মোনের স্তর কমে গিয়ে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা না দেয়।

ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের এলএ বায়োমেড - যারা নতুন এই বড়ি তৈরি করেছে - তারা বলছে তারা হয়তো এ লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে।

গবেষকরা বলছেন, তারা ৪০ জনের ওপর প্রথম পর্বের পরীক্ষা চালিয়েছেন, এবং তারা আশাব্যঞ্জক ফল পেয়েছেন।

তারা পরীক্ষায় দেখেছেন, যারা ২৮ দিন ধরে ইলেভেন বেটা এম এন টিডিসি নামের ওই বড়িটি খেয়েছেন - তাদের হর্মোনের স্তর কমেছে এবং বড়ি খাওয়া ছেড়ে দেওয়ার পর আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে।

এদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছিল খুবই কম এবং মৃদু। ৫ জন তাদের যৌন ইচ্ছে কমে যাবার কথা বলেছেন, দুজন বলেছেন পুরুষাঙ্গের উত্থান শক্তি কিছুটা কমে যাবার কথা।

তবে তাদের যৌন ক্রিয়াশীলতা কমে যায় নি, কেউই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে বড়ি খাওয়া বন্ধ করেননি, এবং সবার দেহেই এটি ‘নিরাপদ’ বলে উত্তীর্ণ হয়েছে।

গবেষক প্রফেসর ক্রিস্টিনা ওয়াং এবং তার সহযোগীরা এ ফলাফল নিয়ে উল্লসিত, কিন্তু সতর্ক।

প্রফেসর ওয়াং বলছেন, আমাদের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে যে এই বড়ি শুক্রকীট উৎপাদন কমাবে কিন্তু যৌন ইচ্ছা আগের মতই থাকবে।

তবে জন্মনিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া হিসেবে এটা কতটা কার্যকর হবে তা জানতে হলে আরো বড় আকারে এবং দীর্ঘ সময় নিয়ে আরো পরীক্ষা চালাতে হবে।

তিনি বলছিলেন, পুরুষদের জন্মনিয়ন্ত্রণের অন্য নানা উপায়ও পরীক্ষা করছেন তিনি। অন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো- এ ধরনের গবেষণা এবং ওষুধ তৈরিতে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো কতটা আগ্রহ দেখায়। কারণ এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগের সমস্যা রয়েছে।
তথ্যসূত্র : বিবিসি

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ