আজকের শিরোনাম :

সুস্থ থাকার জন্য খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা জরুরি

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০১৯, ১০:৪১ | আপডেট : ১৮ জানুয়ারি ২০১৯, ১২:৪১

পৃথিবীকে রক্ষার প্রতিশ্রুতি নিয়ে একটি ডায়েট প্রস্তুত করেছেন বিজ্ঞানীরা, যা দিয়ে সামনে দশকগুলোতে ১০০ কোটিরও বেশি মানুষকে খাওয়ানো যাবে। আর এটি সম্ভব হবে আমাদের গ্রহের কোনো ক্ষতি না করেই।

সামনের দশকগুলোয় কোটি কোটি মানুষের খাদ্য সরবরাহ কীভাবে করা যাবে সেটি নিয়েই এতদিন গবেষণা করছিলেন বিজ্ঞানীরা।

আমরা যেসব খাবারে আমাদের প্লেট ভরিয়ে রাখি, সেখানে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা দরকার বলে মনে করেন তারা।

অবশেষে তারা একটি উপায় বের করেছেন। আর সেটা হলো- ‘দ্য প্লানেটারি হেলথ ডায়েট’ অর্থাৎ পৃথিবী সুরক্ষায় স্বাস্থ্যকর ডায়েটের মাধ্যমে।

এ ডায়েটটি তৈরি করা হয়েছে মাংস ও দুগ্ধজাতীয় খাবার বাদ না দিয়েই।

তবে প্রোটিন চাহিদার একটা বড় অংশ মেটাতে সেখানে বাদাম, বিভিন্ন ধরনের ডাল আর বীজ যুক্ত করা হয়েছে।

বিজ্ঞানীদের পরামর্শ হলো ডায়েট থেকে মাংসের পরিমাণ কমিয়ে বিকল্প প্রোটিনের উৎস্য খোঁজা।

যেসব পুষ্টিকর খাবার আমরা এড়িয়ে যেতে চাই সেগুলোর প্রতি আগ্রহ জন্মানোর ওপরও তারা জোর দেন।

আপনি যদি প্রতিদিন মাংস খেয়ে থাকেন তা হলে আপনার ডায়েটে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা জরুরি। তার মানে এ নয় যে, আর মাংসই খাবেন না। মাংস খাবেন, তবে পরিমিত হারে।

যেমন- রেড মিটের কোনো খাবার যেমন বার্গার যদি খেতেই হয় তা হলে সেটি সপ্তাহে একদিন খাবেন। বড় আকারের স্টেক মাসে একবারের বেশি খাবেন না। এ ছাড়া সপ্তাহের অন্য আরেক দিন মাছ বা মুরগির মাংস দিয়ে প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে পারেন। আর বাকি দিনগুলোয় প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে হবে বিভিন্ন উদ্ভিদজাত খাবার খেয়ে। এ ক্ষেত্রে গবেষকরা প্রতিদিন বাদাম, বীজ বা ডাল খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

এ ছাড়া নানা ধরনের ফল এবং সবজি খাওয়া বাড়ানোর কথাও জানান তারা। যেন সেটি প্রতিবেলার খাবার প্লেটের অন্তত অর্ধেক অংশ জুড়ে থাকে। এ ছাড়া শ্বেতসারযুক্ত খাবার যেমন আলু বা কাসাভাও ডায়েটে যুক্ত করা যেতে পারে।

আপনি প্রতিদিন কোন কোন খাবার কী পরিমাণে খেতে পারবেন সেটি জেনে নিন।

* বাদাম - দিনে ৫০ গ্রাম।
* শিমের বিচি, ছোলা, বিভিন্ন ধরনের ডাল- দিনে ৭৫ গ্রাম।
* মাছ- দিনে ২৮ গ্রাম।
* ডিম- প্রতিদিন ১৩ গ্রাম (সপ্তাহে একটি অথবা দুটি ডিমের বেশি নয়)
* মাংস- লাল মাংস দিনে ১৪ গ্রাম এবং মুরগির মাংস দিনে ২৯ গ্রাম।
* কার্বোহাইড্রেট অর্থাৎ শস্যজাতীয় খাবার যেমন রুটি এবং চাল দিনে ২৩২ গ্রাম খাওয়া যাবে। এ ছাড়া আলুর মতো অন্যান্য শ্বেতসার সবজি দিনে ৫০ গ্রাম।
* ডেইরি বা দুগ্ধজাত খাবার দিনে ২৫০ গ্রাম, যা কিনা এক গ্লাস দুধের সমান।
* শাকসবজি- দিনে ৩০০ গ্রাম এবং ফল ২০০ গ্রাম।

এ ছাড়া এ ডায়েটে চাইলে ৩১ গ্রাম চিনি এবং ৫০ গ্রাম তেল যেমন- জলপাই তেল যোগ করা যাবে।

এগুলোর স্বাদ কি অনেক খারাপ হবে?
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অধ্যাপক ওয়াল্টার উইলেট বলেছেন, না এসব খাবার মানেই যে স্বাদ ভালো নয়, এমনটা ভাবা ঠিক না। তিনি নিজেও এক সময় তিন বেলা লাল মাংস খেতেন। অথচ এখন তিনি নিজেকে এ স্বাস্থ্যকর ডায়েটের আওতায় নিয়ে এসেছেন।

উইলেট বলেন, ‘খাবারের প্রচুর বৈচিত্র্য রয়েছে, আপনি হাজারো উপায়ে একটার সঙ্গে আরেকটা মিশিয়ে ওই খাবারগুলো গ্রহণ করতে পারেন। আমরা কাউকে স্বাদ থেকে বঞ্চিত করতে এই ডায়েট প্রস্তুত করিনি। বরং এমন কিছু তৈরির চেষ্টা করেছি যেটা খাওয়া সহজ এবং উপভোগ্য।

এ খাদ্যাভ্যাস কেন প্রয়োজন?
ইট-ল্যান্সেট কমিশনের অংশ হিসেবে বিশ্বের প্রায় ৩৭ জন বিজ্ঞানীর একটি দলকে একত্রিত করা হয়। সেখানে কৃষি থেকে শুরু করে জলবায়ু পরিবর্তন সে সঙ্গে পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা ছিলেন।

টানা দুই বছর গবেষণার পর তারা এ ডায়েট তালিকা তৈরি করেছেন, যেটি পরবর্তী সময় ল্যানসেটে প্রকাশ করা হয়।

এখন তাদের লক্ষ্য বিভিন্ন দেশের সরকার এবং ডাব্লুএইচওর মতো সংস্থাগুলোর কাছে এ গবেষণা ফলাফল পাঠানো।

যেন সব জায়গায় এ খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন আনা যায়।
২০১১ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা ৭০০ কোটিতে পৌঁছেছে এবং বর্তমানে বিশ্বের মোট জনসংখ্যা ৭৭০ কোটি। ২০৫০ সাল নাগাদ এ সংখ্যা ১ হাজার কোটিতে পৌঁছাতে পারে, যা কিনা বাড়তেই থাকবে। এ বাড়তি জনগোষ্ঠীর খাবারের জোগান নিশ্চিত করতে তারা এ গবেষণাটি করেন।

এ খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন কি জীবন বাঁচাবে?
গবেষকরা বলছেন, যে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তনের কারণে প্রতি বছর প্রায় এক কোটি ১০ লাখ মানুষের মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব। অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে যেসব অসুস্থতা হয়ে থাকে যেমন, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এবং কয়েক ধরনের ক্যান্সার, এগুলো উন্নত দেশের মানুষ মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণ। তবে সঠিক খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে সেই হার অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব।

এ ডায়েট কি পৃথিবীকে রক্ষায় সাহায্য করবে?
গবেষকদের লক্ষ্য হলো- সামনের দশক-গুলোয় বিশ্বের বাড়তি জনসংখ্যার সবার খাদ্যের যোগান নিশ্চিত করা সেটা পরিবেশের ক্ষতি না করেই। যেখানে বরং,
* গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানো যাবে।
* জৈববৈচিত্রের যেসব প্রজাতি বিলুপ্ত যাচ্ছে সেগুলো রক্ষা করা যাবে।
* কৃষিজমি আর বাড়াতে হবে না।
* পানি সংরক্ষণ করা যাবে।

তবে, শুধু খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনাই যথেষ্ট নয়। এ ক্ষেত্রে খাদ্যের ফলে সৃষ্ট বর্জ্যের হার কমিয়ে আনা সেইসঙ্গে বিদ্যমান জমিতে খাদ্যের উৎপাদন বাড়ানো জরুরি।

এ খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন কতটা বাস্তবসম্মত
এপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গেলে বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে। বিশেষ করে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় লাল মাংস খাওয়ার হার ব্যাপকভাবে কমাতে হবে।

পূর্ব এশিয়াকে মাছের ওপর নির্ভরতা এবং আফ্রিকায় শ্বেতসার সবজির খাওয়ার পরিমাণ কমানো প্রয়োজন।

স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টকহোম রেসিলিয়েন্স সেন্টারের পরিচালক লাইন গর্ডন বলেন, ‘আগে কখনই এ হারে এবং এ গতিতে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা হয়নি।’

লাল মাংসের ওপর কর বাড়ানো ডায়েটে পরিবর্তন আনার একটা উপায় হতে পারে বলে মনে করেন গবেষকরা।

খাদ্য উৎপাদন গ্রহের জন্য কত খারাপ?
বিশ্বব্যাপী গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের প্রায় এক চতুর্থাংশের জন্য দায়ী খাদ্য উৎপাদন ও বনের জন্য জমি ব্যবহার। এ ছাড়া বিদ্যুৎ ও তাপ উৎপন্নের জন্যও যে পরিমাণ গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন হয় সেটা বিশ্বের সব রেলগাড়ি, উড়োজাহাজ বা অন্যান্য যানবাহনের চাইতেও অনেক বেশি।

খাদ্য খাতের পরিবেশগত প্রভাব যদি আরও কাছ থেকে বিশ্লেষণ করা হয় তাহলে দেখা যাবে যে, মাংস এবং দুগ্ধজাত খাবারের উৎপাদন পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

বিশ্বব্যাপী, গবাদি পশুর কারণে ১৪% থেকে ১৮% গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন হয়ে থাকে। এ ছাড়া বৈশ্বিক উষ্ণতার জন্য দায়ী অন্যান্য গ্যাস যেমন মিথেন এবং নাইট্রাস অক্সাইডের নির্গমন সবচেয়ে বেশি হয় কৃষি খাতের কারণে।

এ ছাড়া বায়ু দূষণের একটি প্রধান কারণ এই কৃষিজমি। কেননা এসব খামার থেকে অ্যামোনিয়ার সৃষ্টি হয়। যেটাকে বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি বলে উল্লেখ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লুএইচও)

একইভাবে পানির ক্ষেত্রেও বড় ধরণের হুমকি এই কৃষি ও খাদ্য উৎপাদন খাত। কেননা বিশ্বের ৭০% পরিষ্কার পানি ব্যবহার হয়ে যায় কৃষিজমি সেচের কাজে।
খবর বিবিসি বাংলা

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ