আজকের শিরোনাম :

অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স : নতুন এক আতঙ্কের নাম!

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৭:০২

অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বাংলাদেশের মতো নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশগুলোর জন্য খুব উদ্বেগের একটি বিষয়।গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি নিয়ে কী আমরা যথেষ্ট সচেতন? অ্যান্টিবায়োটিক হলো অনুজীব বিশেষত ব্যাকটেরিয়া ঘটিত বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণের চিকিত্সায় ব্যবহৃত জীবনরক্ষাকারী ওষুধ। অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার করেন স্কটিশ চিকিত্সক স্যার আলেকজান্ডার ফ্লেমিং, সেটা ১৯২৯ সালে।

বিংশ শতাব্দীর এই গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের ফলে আমরা সংক্রামক রোগগুলোকে পরাস্ত করে, একদিকে রোগাক্রান্তের সংখ্যা, অন্যদিকে মৃত্যুহার কমিয়ে আনতে সংক্ষম হয়েছি। সংক্রমণকারী অনুজীব বা ব্যাকটেরিয়ার উপর নির্ভর করে কোন চিকিত্সায় কোন অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহৃত হবে। কিন্তু আমাদের যথেচ্ছ ব্যবহার ও ভুল প্রয়োগের ফলে ব্যাকটেরিয়া গুলো ধ্বংস না হয়ে বরং অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে, যাকে বলা হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স। এটি এমন একটি অবস্থা নির্দেশ করে, যখন শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজ করে না।

১৯৪৫ সালে নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তি ও পরবর্তী ভাষণ প্রদান কালে স্যার আলেকজান্ডার ফ্লেমিং ভবিষ্যত্ বাণী করেছিলেন যে, ওষুধটির অতিব্যবহার ও কম মাত্রায় ব্যবহারের ফলে জীবাণুরা অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠতে পারে। আজ সাত দশক পর তার একথা সত্য হতে চলেছে।

বিশ্বের মোট ব্যবহৃত ওষুধের ২১ দশমিক ৩ শতাংশই হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক। আর মোট অ্যান্টিবায়োটিকের ৩০ শতাংশ ব্যবহৃত হয় মানবদেহে এবং বাকী ৭০ শতাংশ ব্যবহৃত হয় প্রাণীর স্বাস্থ্য চিকিত্সায়। ইতোমধ্যে, বাংলাদেশসহ এশিয়ার ১১ টি দেশে বেশ কিছু অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর হয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের কারণে কতজন মানুষ মারা যায় তার সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলে ও আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন এর তথ্য মতে, প্রতিবছর প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স জনিত রোগে আক্রান্ত হয় ও প্রায় ২৩ হাজার লোকের প্রাণহানি ঘটে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০৫০ সাল নাগাদ অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স জনিত কারণে প্রায় ৩০ কোটি লোক মৃত্যু ঝুঁকিতে থাকবে। অ্যান্টিবায়েটিকের কার্যকারিতা হ্রাস পাওয়ায় গণোরিয়া, ক্যান্সার, অস্ত্রোপাচার সহ জটিল রোগের চিকিত্সা ক্রমাগতভাবে কঠিন হয়ে পড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এ অবস্থাকে তুলনা করছে অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার হওয়ার আগের যুগের সঙ্গে।

অ্যান্টিবায়োটিকের সহজলভ্যতা, রেজিস্টার্ড চিকিত্সকের পরামর্শ ব্যতীত ওষুধ সেবন, ওষুধ সেবনের পর ভালোবোধ করলে পূর্ণমাত্রায় সেবন না করা, সাধারণ ঠান্ডা জ্বরের জন্য অ্যান্টিবায়েটিক ব্যবহার করা, অন্য কারো ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী সেবন করা ছাড়াও নানা কারণে জীবানুরা অ্যান্টিবায়েটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে।

লক্ষ্যনীয় বিষয় হচ্ছে, অ্যান্টিবায়েটিকে রেজিস্ট্যান্স ব্যাকটেরিয়াগুলো শুধু আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না, আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশির মাধ্যমে সুস্থ ব্যক্তির মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে ইতোমধ্যে জাতীয় কৌশলপত্র প্রণয়ন করেছে। তাই খুব দেরী হওয়ার আগেই সরকার ও সচেতন সমাজের উচিত সচেতনা কার্যক্রম বেগবান করা এবং তা তৃণমূলে ছড়িয়ে দেওয়া।

সেটি করতে ব্যর্থ হলে,আমাদের অবতীর্ণ হতে হবে জীবানুর বিরুদ্ধে এক অসম লড়াইয়ের জন্য, যেখানে রোগাগ্রস্ত ব্যক্তি চিকিত্সকের শরণাপন্ন হওয়া সত্বেও চিকিত্সার জন্য কার্যকর ওষুধ পাওয়া যাবে না, ফলে চিকিত্সা না পেয়ে মারা যাবে ব্যক্তিটি। তাই, অ্যান্টিবায়েটিক রেজিস্ট্যান্সের এই আতঙ্ক থেকে দূরে থাকতে সচেতন হওয়ার উপযুক্ত সময় এখনই।
 
লেখক : চিকিত্সা প্রযুক্তিবিদ।

এই বিভাগের আরো সংবাদ