জিনগত পরিবর্তন-ঘটানো মানবশিশু তৈরি করা কি উচিত?
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৮:২০
মানুষ এখন উদ্ভিদ, প্রাণী এবং আমাদের নিজেদের জিনে পরিবর্তন ঘটানোর ক্ষমতা অর্জন করেছে। কিন্তু ভবিষ্যৎ মানব প্রজন্মের জিনগত সংকেতে পরিবর্তন আনার ব্যাপারে এতকাল মনে করা হতো যে না, এই সীমাটা অতিক্রম করা ঠিক হবে না।
কিন্তু এখন একজন চীনা বৈজ্ঞানিক দাবি করছেন, তিনি প্রথমবারের মতো জিনগত পরিবর্তন ঘটানো শিশু সৃষ্টিতে ভুমিকা রেখেছেন। তার এই কাজের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, সমালোচনাও হচ্ছে।
কিন্তু রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য এমন পরিবর্তন করা যাবে না-ই বা কেন? এটাও তো একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।
জিএম মানুষ?
অধ্যাপক হে জিয়ানকুই দুটি যমজ কন্যাশিশুর ভ্রূণের ডিএনএ থেকে এমন একটি প্রোটিন আলাদা করেছেন - যার ফলে হয়তো তাদের কখনো এইচআইভি ভাইরাস সংক্রমণ হবে না।
তিনি বলেছেন, সিসিআরফাইভ নামের প্রোটিনের ওপর এ গবেষণাটি তিনি তার বিশ্ববিদ্যালয়কে না জানিয়েই করেছেন।
শেনজেনের সাদার্ন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজির এই অধ্যাপকের গবেষণায় এমন আটটি দম্পতি জড়িত ছিলেন যাদের প্রত্যেকেরই পিতা ছিলেন এইচআইভি-পজিটিভ এবং মা ছিলেন এইচ আইভি-নেগেটিভ।
জিনগত পরিবর্তন ঘটানো কন্যাশিশু দুটির ইতিমধ্যেই জন্ম হয়েছে। তা ছাড়া এরকম আরেকটি শিশু এখন মায়ের পেটে - তার জন্ম হবে কয়েক মাস পর।
অধ্যাপক হে এখনো তার গবেষণায় কৃতকার্য হবার পক্ষে কোন তথ্যপ্রমাণ দেন নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা অধ্যাপক হে'র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে।
কিন্তু এ ঘটনাটি যেমন একদিক দিয়ে হতে যাচ্ছে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এক মাইলফলক, অন্যদিকে তেমনি এ নিয়ে গুরুতর নৈতিক বিতর্কও উঠছে।
প্রশ্নটা হলো: যেহেতু এখানে মানব ভ্রুণের জিন-সম্পাদনা করা হচ্ছে, তার জেনেটিক কোড বদলে দেয়া হচ্ছে - তাই এখানে মাত্র একজন ব্যক্তির জিনগত পরিবর্তন হচ্ছে না, এটা কার্যত ভবিষ্যত প্রজন্মের জিনও বদলে দিচ্ছে।
অনেক দেশই এ ধরণের পরীক্ষানিরীক্ষা নিষিদ্ধ করেছে। তারা শুধু 'প্রজনন-সংক্রান্ত নয় এমন ক্ষেত্রে' জিনগত পরিবর্তনকে সীমিত রেখেছে।
যেমন যুক্তরাজ্যে পরিত্যক্ত আইভিএফ কোষের ওপরই শুধু জিন সম্পাদনার কাজ করা যায়। কিন্তু তা ভ্রুণে পরিণত হলেই বিজ্ঞানীরা এর ওপর আর কোন জিনগত পরিবর্তন করতে পারেন না।
কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ ক্ষেত্রে নীতিমালা অনেকটা শিথিল। জাপানে এখনো এ নিয়ে আলোচনা চলছে।
চীনের সরকার ইতিমধ্যে অধ্যাপক হে-র গবেষণায় আইন ভাঙা হয়েছে কিনা সে ব্যাপারে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জুলিয়ান সাভুলেস্কু বিবিসিকে বলছেন, মি. হের গবেষণা সুস্থ স্বাভাবিক শিশুদেরকে জিন সম্পাদনাজনিত ঝুঁকির মুখে ফেলে দিতে পারে - এবং তাতে কোন সুফল মিলবে এমন কোন নিশ্চয়তা থাকবে না। অন্য কিছু বৈজ্ঞানিক বলেছেন, অধ্যাপক হে যেভাবে দুটি শিশুর জিনে পরিবর্তন করেছেন এবং সিসিআরফাইভ বাদ দিয়েছেন - তাতে এইচআইভির ঝুঁকি কমে গেলেও অন্য রোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে - যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জা, বা ওয়েস্ট নাইল ভাইরাস। অধ্যাপক সাভুলেস্কু বলছেন, এধরণের পরিবর্তন এখনো পরীক্ষামূলক স্তরে রয়েছে। এর সাথে কোষের অনাকাঙ্খিত বৃদ্ধি বা মিউটেশন সম্পর্কের কথা বলা হয়, যার ফলে ভবিষ্যত জীবনে জিনগত সমস্যা বা ক্যান্সারের মতো সমস্যা হতে পারে। লন্ডনের সেন্ট জর্জেস বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. ইয়ালদা জামশিদি বলছেন, আমরা এর দীর্ঘমেয়াদি প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে খুবই কম জানি। তাই এরকম পরীক্ষাকে অনেকেই 'নৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য' বলবেন। ডিজাইনার বেবি? আরো একটা ভয় যে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে 'ডিজাইনার বেবি' বা তথাকথিত 'পছন্দমত শিশু' তৈরির প্রবণতা তৈরি হতে পারে - যাকে বলা হয় 'ইউজেনিক্স '। বিজ্ঞানীদের আশংকা, এতে মানুষের মধ্যে 'জিনগত বৈষম্য' বা সামাজিক বিভক্তি দেখা দিতে পারে, অর্থাৎ যাদের আর্থিক সঙ্গতি আছে তারা হয়তো তাদের সন্তানদের জিন সম্পাদনা করে তাদের ইচ্ছেমত 'উন্নততর' মানবশিশু তৈরির চেষ্টা করতে পারে। অধ্যাপক হে অবশ্য বলছেন, তার কাজ শুধুই এমন শিশু তৈরির জন্য যারা রোগে ভুগবে না - 'উন্নত মেধা' বা 'বিশেষ কোন রঙের চোখওয়ালা' শিশুর জন্য নয়। এতে সামাজিক বিভক্তি তৈরি হোক তা তার কাম্য নয়। এর আগে ২০১২ সালে সিআরআইএসপিআর বা 'ক্রিস্পআর' প্রযুক্তি উদ্ভাবন হয়েছিল - যাকে বলা যায় একরকম আণবিক কাঁচি যা দিয়ে দেহকোষের কোন একটা ডিএনএ কেটে বাদ দেয়া যায়, নতুন ডিএনএ বসিয়ে দেয়া যায়, বা তাতে কোন পরিবর্তন আনা যায়। এটা ছিল এক বৈপ্লবিক আবিষ্কার - কারণ এর আগে এত সহজে জেনেটিক কোড পরিবর্তন করার উপায় কখনোই ছিল না। ফিলাডেলফিয়ার একটি হাসপাতাল দেখিয়েছে যে তারা কোন প্রানী জন্মানোর আগেই তার ভ্রুণে পরিবর্তন আনতে পারে এই ক্রিস্পআর প্রযুক্তি দিয়ে। কিন্তু তারা এটাও বলেছে যে মানুষের জিন নিয়ে এরকম কিছু করতে গেলে তা এমন সব প্রশ্ন তৈরি করবে যা বিজ্ঞানের সীমানার বাইরে। তাই এরকম কিছু করার আগে মানুষকে অত্যন্ত জটিল নৈতিক বিতর্কের মীমাংসা করতে হবে। সূত্র: বিবিসি বাংলা। এবিএন/মমিন/জসিম
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জুলিয়ান সাভুলেস্কু বিবিসিকে বলছেন, মি. হের গবেষণা সুস্থ স্বাভাবিক শিশুদেরকে জিন সম্পাদনাজনিত ঝুঁকির মুখে ফেলে দিতে পারে - এবং তাতে কোন সুফল মিলবে এমন কোন নিশ্চয়তা থাকবে না। অন্য কিছু বৈজ্ঞানিক বলেছেন, অধ্যাপক হে যেভাবে দুটি শিশুর জিনে পরিবর্তন করেছেন এবং সিসিআরফাইভ বাদ দিয়েছেন - তাতে এইচআইভির ঝুঁকি কমে গেলেও অন্য রোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে - যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জা, বা ওয়েস্ট নাইল ভাইরাস। অধ্যাপক সাভুলেস্কু বলছেন, এধরণের পরিবর্তন এখনো পরীক্ষামূলক স্তরে রয়েছে। এর সাথে কোষের অনাকাঙ্খিত বৃদ্ধি বা মিউটেশন সম্পর্কের কথা বলা হয়, যার ফলে ভবিষ্যত জীবনে জিনগত সমস্যা বা ক্যান্সারের মতো সমস্যা হতে পারে। লন্ডনের সেন্ট জর্জেস বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. ইয়ালদা জামশিদি বলছেন, আমরা এর দীর্ঘমেয়াদি প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে খুবই কম জানি। তাই এরকম পরীক্ষাকে অনেকেই 'নৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য' বলবেন। ডিজাইনার বেবি? আরো একটা ভয় যে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে 'ডিজাইনার বেবি' বা তথাকথিত 'পছন্দমত শিশু' তৈরির প্রবণতা তৈরি হতে পারে - যাকে বলা হয় 'ইউজেনিক্স '। বিজ্ঞানীদের আশংকা, এতে মানুষের মধ্যে 'জিনগত বৈষম্য' বা সামাজিক বিভক্তি দেখা দিতে পারে, অর্থাৎ যাদের আর্থিক সঙ্গতি আছে তারা হয়তো তাদের সন্তানদের জিন সম্পাদনা করে তাদের ইচ্ছেমত 'উন্নততর' মানবশিশু তৈরির চেষ্টা করতে পারে। অধ্যাপক হে অবশ্য বলছেন, তার কাজ শুধুই এমন শিশু তৈরির জন্য যারা রোগে ভুগবে না - 'উন্নত মেধা' বা 'বিশেষ কোন রঙের চোখওয়ালা' শিশুর জন্য নয়। এতে সামাজিক বিভক্তি তৈরি হোক তা তার কাম্য নয়। এর আগে ২০১২ সালে সিআরআইএসপিআর বা 'ক্রিস্পআর' প্রযুক্তি উদ্ভাবন হয়েছিল - যাকে বলা যায় একরকম আণবিক কাঁচি যা দিয়ে দেহকোষের কোন একটা ডিএনএ কেটে বাদ দেয়া যায়, নতুন ডিএনএ বসিয়ে দেয়া যায়, বা তাতে কোন পরিবর্তন আনা যায়। এটা ছিল এক বৈপ্লবিক আবিষ্কার - কারণ এর আগে এত সহজে জেনেটিক কোড পরিবর্তন করার উপায় কখনোই ছিল না। ফিলাডেলফিয়ার একটি হাসপাতাল দেখিয়েছে যে তারা কোন প্রানী জন্মানোর আগেই তার ভ্রুণে পরিবর্তন আনতে পারে এই ক্রিস্পআর প্রযুক্তি দিয়ে। কিন্তু তারা এটাও বলেছে যে মানুষের জিন নিয়ে এরকম কিছু করতে গেলে তা এমন সব প্রশ্ন তৈরি করবে যা বিজ্ঞানের সীমানার বাইরে। তাই এরকম কিছু করার আগে মানুষকে অত্যন্ত জটিল নৈতিক বিতর্কের মীমাংসা করতে হবে। সূত্র: বিবিসি বাংলা। এবিএন/মমিন/জসিম
এই বিভাগের আরো সংবাদ