আজকের শিরোনাম :

প্রেসক্রিপশন ছাড়া মানুষ অ্যান্টিবায়োটিক খায় কেন?

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০১৮, ১৩:৫১

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিক এক গবেষণা অনুযায়ী, অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধের ভুল এবং অসচেতন ব্যবহারের কারণে বিশ্বব্যাপী নিউমোনিয়া, যক্ষ্মার মতো রোগের চিকিৎসা প্রক্রিয়া ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া, অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স পূরণ না করা বা ছোটখাটো শারীরিক সমস্যার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার প্রবণতা বাংলাদেশের মানুষের মধ্যেও প্রবল।

অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সবশেষ গবেষণায় উঠে আসে, অ্যান্টিবায়োটিকের ভুল এবং অসচেতন ব্যবহারের কারণে এ জাতীয় ওষুধ কার্যকারিতা হারাচ্ছে আশঙ্কাজনক হারে।

২০১৫ সাল পর্যন্ত বিশ্বের ৬৫টি দেশের মানুষের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের তথ্য যাচাই করে তৈরি করা হয় এই প্রতিবেদন।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধের ভুল ব্যবহারের কারণে এ জাতীয় ওষুধের বিরুদ্ধে এক ধরনের প্রতিরোধ তৈরি হয় শরীরে। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ধরনের রোগের ক্ষেত্রে ওষুধের কার্যকারিতা হারায়।

চট্টগ্রামের বাসিন্দা নাবিলা আলম মাঝেমধ্যেই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খেয়ে থাকেন। তিনি বলেন, ‘সাধারণ কিছু রোগের জন্য যেসব ওষুধ দেয়া হয়, সেগুলো মাঝেমধ্যেই আমরা প্রেসক্রিপশন ছাড়াই খেয়ে থাকি। তা সাধারণ ওষুধ হোক বা অ্যান্টিবায়োটিক হোক।’

তার পরিচিত অনেকেই বিশেষজ্ঞ পরামর্শ ছাড়াই ওষুধ খেয়ে থাকেন বলে জানান নাবিলা আলম।

নাবিলা আলম স্বীকার করেন এভাবে ওষুধ গ্রহণ করার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে একেবারেই সচেতন নন তিনি।

‘ওষুধ খেলে সাময়িকভাবে অসুখ ঠিক হয়ে যায়, তাই এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে সাধারণত চিন্তাই করা হয় না।’

নাবিলা আলম মনে করেন এ ব্যাপারে সচেতনতার অভাব থাকার কারণেই সাধারণ মানুষ ওষুধ ভুলভাবে ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে।

ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন বা ব্যবস্থাপত্র ছাড়া ক্রেতার কাছে অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করা যাবে না- সরকারের পক্ষ থেকে ওষুধের দোকানগুলোকে এমন একটি নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল গত বছর। কিন্তু সরেজমিনে অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা যায় ওই নিয়মের বাস্তবায়ন একেবারেই নেই।

ঢাকার মহাখালী এলাকার একটি ফার্মেসি থেকে বহুল ব্যবহৃত একটি অ্যান্টিবায়োটিক কিনতে চাইলে কোনো প্রশ্ন ছাড়াই ওষুধ বিক্রি করেন দোকানদার।

সরকারের নির্দেশনা সম্পর্কে দোকনদারের কাছে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান নির্দেশনা সম্পর্কে তিনি অবগত আছেন।

তার পর যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসের সাথে জানান, যেই ওষুধটি কেনা হচ্ছে সেটি নাকি অ্যান্টিবায়োটিকই নয়!

২০১৪ সালে বাংলাদেশের রাজশাহীর কয়েকটি এলাকার মানুষের তথ্য নিয়ে করা একটি গবেষণায় উঠে আসে যে সেসব অঞ্চলের প্রায় ২৭ শতাংশ মানুষ সাধারণ অসুখের ক্ষেত্রে নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ খান। অর্থাৎ ডাক্তারের কাছে যাওয়ার প্রয়োজনও বোধ করেন না তারা।

আবার ডাক্তাররাও অনেকসময় দরকার না থাকলেও রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ খাওয়ার সুপারিশ করে থাকেন- এমন অভিযোগও পাওয়া যায় প্রায়ই।

চাঁদপুরের একটি হাসপাতালে মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে কর্মরত নাজমা আহমেদ বলেন, ডাক্তাররা অনেকসময় বাধ্য হয়েই রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ সুপারিশ করে থাকেন।

নাজমা আহমেদ বলেন, ‘মনে করুন, রোগী দুই দিন জ্বরে ভুগে এলো ডাক্তারের কাছে, তার সাথে কথা বলে মনে হলো ভাইরাল জ্বর, যা স্বাভাবিকভাবেই হয়তো ৫-৭ দিনের মধ্যে সেরে যাবে। কিন্তু এমন ক্ষেত্রে রোগীকে ৫-৭ দিন অপেক্ষা করতে বললে অনেকসময়ই তারা ক্ষুণœ হন। তারা চান ডাক্তার এমন ওষুধ দিক যাতে খুব দ্রুত রোগ সেরে যাবে।’

রোগীদের মধ্যে নিজেদের জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে বা অনেক সময় চাপে পরেই ডাক্তাররা অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেন বলে মনে করেন নাজমা আহমেদ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা অনুযায়ী, অ্যান্টিবায়োটিকের ভুল ব্যবহার অব্যাহত থাকলে অদূর ভবিষ্যতে আবারও ভয়াবহ রূপে ফিরে আসতে পারে যক্ষ্মা, টাইফয়েড, নিউমোনিয়ার মতো রোগব্যাধি।
খবর বিবিসি বাংলা

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ