গাঁজার বিনোদনমূলকভাবে ব্যবহার স্বাস্থ্যকে কতটা প্রভাবিত করে?
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর ২০১৮, ১৫:২৮
এ বছর ‘বিনোদনমূলক ব্যবহারের’ উদ্দেশ্যে কানাডায় গাঁজা বৈধ করেছে দেশটির সরকার।
কানাডার উদাহরণ অনুসরণ করে আরও কয়েকটি উন্নত দেশও গাঁজার বিনোদনমূলক ব্যবহারকে বৈধতা দেয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে।
যুক্তরাজ্যের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেখানে গাঁজার বিনোদনমূলক ব্যবহার বৈধ করা হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিলেও ওই সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছে দেশটির সরকার।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ বলেন, গাঁজা যে মানুষের ‘মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ক্ষতিসাধন এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে’ তা বিশ্বাস করার পেছনে শক্তিশালী বৈজ্ঞানিক প্রমাণ রয়েছে।
গাঁজার ‘বিনোদনমূলক ব্যবহার’ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের কী মত?
যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত অবৈধ মাদক মনে করা হয় গাঁজাকে।
তবে গাঁজা ব্যবহারের কারণে মানসিক ভারমুক্তি, প্রসন্নতা এবং ঘুমের অনুভূতি তৈরি হলেও অনেক বিশেষজ্ঞের মতে এর ফলে যে ‘মোহাচ্ছন্ন’ ভাব তৈরি হয়, সেটিকে যতটা কম ক্ষতিকর মনে করা হয় তা ততটা নিরীহও নয়।
রয়েল কলেজ অব সাইকিয়াট্রিস্টসের মতে অনেক ক্ষেত্রে ফলে অতিরিক্ত উদ্বেগ ও মস্তিষ্ক বিকৃতির লক্ষ্মণ দেখা যায়।
অনেক সময় সন্দেহবাতিকতা, এমনকি দৃষ্টিভ্রমও হতে পারে বলে মনে করেন গবেষকরা।
কিংস কলেজ লন্ডনের ডাক্তার মার্তা ডি ফর্টি জানান এমনটা বিশ্বাস করার মত ‘অকাট্য প্রমাণ’ রয়েছে যে, গাঁজার নিয়মিত ব্যবহারে কিশোরদের মধ্যে সিজোফ্রেনিয়াসহ নানা ধরনের মানসিক সমস্যা তৈরি হয়।
কিশোর ও তরুণদের মস্তিষ্ক ক্রমাগত উন্নয়ন হতে থাকে; তাই নিয়মিত গাঁজার ব্যবহারে তাদেরই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ড. মাইকেল ব্লুমফিল্ড।
বিশেষজ্ঞদের মতে গাঁজার যেসব জাতে উচ্চ মাত্রায় চিত্ত প্রভাবক উপাদান টিএইচসি থাকে, সেসব জাতের নিয়মিত ব্যবহারে কিশোরদের মধ্যে মানসিক সমস্যা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
যুক্তরাজ্যে অবৈধভাবে বিক্রি হওয়া গাঁজার সিংহভাগই উচ্চ ক্ষমতাশালী ‘স্কাঙ্ক’ জাতের গাঁজা।
তবে উল্লেখ্য, বিনোদনমূলকভাবে গাঁজা ব্যবহার করা অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রেই মানসিক সমস্যা তৈরি হয় না।
মানসিক সমস্যা তৈরি হওয়ার পেছনে ব্যক্তির জিনগত বৈশিষ্ট্য ভূমিকা পালন করে বলে ধারণা করা হয়।
গাঁজা ব্যবহারের ফলে স্বাস্থ্যগত কী পরিবর্তন হয় তা নিয়ে এখনো নানা বিতর্ক রয়েছে। এ বিষয়ে বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল বিভিন্ন ধরণের সমাধানের ইঙ্গিত করে।
গাঁজা কি বিষণ্ণতা তৈরি করে?
কিছু গবেষণায় গাঁজা ব্যবহারের সঙ্গে বিষণ্ণতার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলেও গাঁজার সাথে মানসিক সমস্যার ততটা সরাসরি যোগসূত্র নেই বলে মনে করেন ড. ডি ফর্টি। এমনও হতে পারে, যেসব মানুষ বিষণ্ণতায় ভোগেন তাদের গাঁজা ব্যবহারের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। গাঁজা কি আসক্তি তৈরি করে?
একসময় বিশেষজ্ঞরা মনে করতেন গাঁজায় কোনো আসক্তি তৈরি হয় না। কিন্তু বর্তমান গবেষণায় প্রমাণিত হয় যে গাঁজার ব্যবহার, বিশেষ করে নিয়মিত ব্যবহার, আসক্তি তৈরি করতে পারে। নিয়মিত গাঁজা ব্যবহারকারীদের অন্তত ১০%-এর মধ্যে গাঁজার ওপর নির্ভরতা তৈরি হয়। ব্যবহার ছেড়ে দেয়ার সময় অনেকের ক্ষেত্রে নানা ধরণের শারীরিক ও মানসিক উপসর্গ দেখা যায়। রয়্যাল কলেজ অব সাইকিয়াট্রিস্টসের মতে নিয়মিত ব্যবহার ছেড়ে দেয়ার পর গাঁজা ব্যবহারের তীব্র ইচ্ছা, ঘুমে ব্যাঘাত, আকস্মিক মেজাজ পরিবর্তন, বিরক্তি এবং অস্থিরতার মত উপসর্গ দেখা যেতে পারে ব্যক্তির মধ্যে। ড. ব্লুমফিল্ড বলেন, এর মধ্যে অধিকাংশ উপসর্গ মানসিক হলেও গাঁজার টিএইচসি যে কিছু মানুষের মধ্যে শারীরিকভাবেও আসক্তি তৈরি করতে পারে তার যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। ‘গাঁজা আসক্তি আসলেই আছে এবং এর ফলে মানুষের জীবন নষ্ট হতে পারে’, বলেন ড. ব্লুমফিল্ড। স্মৃতিশক্তি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়?
প্রফেসর মর্গানের মতে গাঁজা ব্যবহারের ফলে স্বল্প মেয়াদে স্মৃতিশক্তি এবং বোধশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর প্রভাব সামান্য এবং কম ক্ষতিকর হলেও ২০ দিন পর্যন্ত মানুষের শরীরকে তা প্রভাবিত করার সক্ষমতা রাখে। গাঁজা কি কোকেন বা হেরোইনের মত ভারী মাদক ব্যবহারের পথ খুলে দেয়?
প্রফেসর মর্গান বলেন কিছু হেরোইন,কোকেন, মেথ্যাম্ফেটামিনের মতো হার্ড ড্রাগ ব্যবহারকারী গাঁজা ব্যবহার করলেও এমন কোনো প্রমাণ নেই যে যারা গাঁজা ব্যবহার করে তারা ভবিষ্যতে হার্ড ড্রাগ ব্যবহার করবে। তবে নিয়মিত গাঁজা ব্যবহারের ফলে সিগারেটের মত বৈধ মাদক ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে উঠতে পারে। সিগারেটকে ‘সবচেয়ে বেশি ক্ষতিসাধক মাদক’ হিসেবে চিহ্নিত করেন প্রফেসর মর্গান। ক্যান্সার আর গাঁজার সম্পর্ক কী?
সিগারেটের ব্যবহারের ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রকম হৃদরোগের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই প্রশ্ন উঠতেই পারে; গাঁজার ব্যবহারেও কি এই ধরনের রোগের সম্ভাবনা বাড়ে? এটি এখনো পরিষ্কার নয় যে গাঁজা ব্যবহারই ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় নাকি গাঁজা ব্যবহারকারীদের মধ্যে যে ক্যান্সারের ঝুঁকি তৈরি হয় তা গাঁজা গ্রহণ করার সময় গাঁজার সাথে মেশানো তামাকের কারণে তৈরি হয়। তবে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের মতে নিয়মিত গাঁজার ব্যবহারে ব্রঙ্কাইটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। গাঁজার স্বাস্থ্যগত উপকার রয়েছে কি?
বিনোদনমূলকভাবে গাঁজা ব্যবহার করে আসছেন এমন অনেক ব্যক্তিই বলেছেন যে গাঁজা ব্যবহারে তারা উপকৃত হয়েছেন। নতুন এক গবেষণায় এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে, যা ইঙ্গিত করে যে গাঁজা চিকিৎসা দীর্ঘকাল-স্থায়ী ব্যথা উপশমে, বমি ভাব এবং অতিরিক্ত উদ্বেগ দূর করায় উপকারী। এ ছাড়া ঘুমের সমস্যা, ক্ষুধামন্দা, পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার এবং পার্কিনসনস রোগের উপশমের ক্ষেত্রে গাঁজার কার্যকারিতার কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে।
খবর বিবিসি এবিএন/সাদিক/জসিম
কিছু গবেষণায় গাঁজা ব্যবহারের সঙ্গে বিষণ্ণতার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলেও গাঁজার সাথে মানসিক সমস্যার ততটা সরাসরি যোগসূত্র নেই বলে মনে করেন ড. ডি ফর্টি। এমনও হতে পারে, যেসব মানুষ বিষণ্ণতায় ভোগেন তাদের গাঁজা ব্যবহারের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। গাঁজা কি আসক্তি তৈরি করে?
একসময় বিশেষজ্ঞরা মনে করতেন গাঁজায় কোনো আসক্তি তৈরি হয় না। কিন্তু বর্তমান গবেষণায় প্রমাণিত হয় যে গাঁজার ব্যবহার, বিশেষ করে নিয়মিত ব্যবহার, আসক্তি তৈরি করতে পারে। নিয়মিত গাঁজা ব্যবহারকারীদের অন্তত ১০%-এর মধ্যে গাঁজার ওপর নির্ভরতা তৈরি হয়। ব্যবহার ছেড়ে দেয়ার সময় অনেকের ক্ষেত্রে নানা ধরণের শারীরিক ও মানসিক উপসর্গ দেখা যায়। রয়্যাল কলেজ অব সাইকিয়াট্রিস্টসের মতে নিয়মিত ব্যবহার ছেড়ে দেয়ার পর গাঁজা ব্যবহারের তীব্র ইচ্ছা, ঘুমে ব্যাঘাত, আকস্মিক মেজাজ পরিবর্তন, বিরক্তি এবং অস্থিরতার মত উপসর্গ দেখা যেতে পারে ব্যক্তির মধ্যে। ড. ব্লুমফিল্ড বলেন, এর মধ্যে অধিকাংশ উপসর্গ মানসিক হলেও গাঁজার টিএইচসি যে কিছু মানুষের মধ্যে শারীরিকভাবেও আসক্তি তৈরি করতে পারে তার যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। ‘গাঁজা আসক্তি আসলেই আছে এবং এর ফলে মানুষের জীবন নষ্ট হতে পারে’, বলেন ড. ব্লুমফিল্ড। স্মৃতিশক্তি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়?
প্রফেসর মর্গানের মতে গাঁজা ব্যবহারের ফলে স্বল্প মেয়াদে স্মৃতিশক্তি এবং বোধশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর প্রভাব সামান্য এবং কম ক্ষতিকর হলেও ২০ দিন পর্যন্ত মানুষের শরীরকে তা প্রভাবিত করার সক্ষমতা রাখে। গাঁজা কি কোকেন বা হেরোইনের মত ভারী মাদক ব্যবহারের পথ খুলে দেয়?
প্রফেসর মর্গান বলেন কিছু হেরোইন,কোকেন, মেথ্যাম্ফেটামিনের মতো হার্ড ড্রাগ ব্যবহারকারী গাঁজা ব্যবহার করলেও এমন কোনো প্রমাণ নেই যে যারা গাঁজা ব্যবহার করে তারা ভবিষ্যতে হার্ড ড্রাগ ব্যবহার করবে। তবে নিয়মিত গাঁজা ব্যবহারের ফলে সিগারেটের মত বৈধ মাদক ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে উঠতে পারে। সিগারেটকে ‘সবচেয়ে বেশি ক্ষতিসাধক মাদক’ হিসেবে চিহ্নিত করেন প্রফেসর মর্গান। ক্যান্সার আর গাঁজার সম্পর্ক কী?
সিগারেটের ব্যবহারের ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রকম হৃদরোগের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই প্রশ্ন উঠতেই পারে; গাঁজার ব্যবহারেও কি এই ধরনের রোগের সম্ভাবনা বাড়ে? এটি এখনো পরিষ্কার নয় যে গাঁজা ব্যবহারই ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় নাকি গাঁজা ব্যবহারকারীদের মধ্যে যে ক্যান্সারের ঝুঁকি তৈরি হয় তা গাঁজা গ্রহণ করার সময় গাঁজার সাথে মেশানো তামাকের কারণে তৈরি হয়। তবে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের মতে নিয়মিত গাঁজার ব্যবহারে ব্রঙ্কাইটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। গাঁজার স্বাস্থ্যগত উপকার রয়েছে কি?
বিনোদনমূলকভাবে গাঁজা ব্যবহার করে আসছেন এমন অনেক ব্যক্তিই বলেছেন যে গাঁজা ব্যবহারে তারা উপকৃত হয়েছেন। নতুন এক গবেষণায় এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে, যা ইঙ্গিত করে যে গাঁজা চিকিৎসা দীর্ঘকাল-স্থায়ী ব্যথা উপশমে, বমি ভাব এবং অতিরিক্ত উদ্বেগ দূর করায় উপকারী। এ ছাড়া ঘুমের সমস্যা, ক্ষুধামন্দা, পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার এবং পার্কিনসনস রোগের উপশমের ক্ষেত্রে গাঁজার কার্যকারিতার কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে।
খবর বিবিসি এবিএন/সাদিক/জসিম
এই বিভাগের আরো সংবাদ