আজকের শিরোনাম :

অন্ত্র সম্পর্কে ৭টি বিস্ময়কর তথ্য

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০১৮, ১২:১৫

আপনার শরীরের কোন অংশে মেরুদণ্ডের চাইতেও বেশি নিউরন থাকে এবং কোন অংশটি কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র থেকে স্বাধীনভাবে কাজ করে?

সম্ভবত ‘অন্ত্র’ আপনার প্রথম উত্তর ছিল না। কিন্তু সত্যি হচ্ছে, আমাদের অন্ত্র লাখো নিউরনের সঙ্গে সংযুক্ত, যে কারণে অন্ত্রকে মানবদেহের ‘দ্বিতীয় মস্তিষ্ক’ হিসেবে ডাকা হয়।

আমাদের পরিপাকতন্ত্রের কাজ শুধু খাবার-দাবার শোষণ করা নয়, বরং এর চেয়েও আরও বেশি কিছু।

আমাদের শরীরে যে পরিমাণ রোগজীবাণু রয়েছে সেগুলো আমাদের শরীরকে অসুস্থ করে ফেলতে পারে।

অন্ত্রের স্বাস্থ্যের ওপর আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং মানসিক স্বাস্থ্যনির্ভর করে কিনা সে বিষয়ে এখনো গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা। এবার জেনে নেয়া যাক অন্ত্র সংক্রান্ত কিছু বিস্ময়কর তথ্য-

অন্ত্রের রয়েছে স্বাধীন স্নায়ুতন্ত্র
পুষ্টিবিদ ডা. মেগান রসি বলেছেন, শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের তুলনায় আমাদের অন্ত্র স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। এটি মস্তিষ্কের কোনো কোনো সাহায্য ছাড়াই স্বাধীনভাবে নিজের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।

ডা. মেগান রসি একাধারে অন্ত্রের স্বাস্থ্যের ওপর পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এবং অন্ত্রের চিকিৎসা সংক্রান্ত একটি বইও লিখেছেন।

অন্ত্রের এই স্বাধীনভাবে কাজ করাকে অভ্যন্তরীণ স্নায়ুতন্ত্র (ইএনএস) বলা হয়, যেটা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের (সিএনএস) একটি শাখা। যার কাজ শুধু পরিপাকতন্ত্রের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করা।

এই পুরো ব্যবস্থাটা নিউরনের সমন্বয়ে তৈরি একটি নেটওয়ার্কের মতো কাজ করে। যেটা পাকস্থলী ও হজম-ক্রিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত।

অন্ত্রের এই অভ্যন্তরীণ স্নায়ুতন্ত্র মূলত সিম্প্যথেটিক ও প্যারাসিম্প্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে।

আমাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অন্ত্রের ভূমিকা
ডা. রসির মতে, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলার পেছনে অন্ত্রের স্বাস্থ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কেননা আমাদের রোগ প্রতিরোধক কোষের ৭০% অন্ত্রের ভেতরে থাকে।

সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, গ্যাস্ট্রো-ইনটেস্টাইনাল বা পরিপাকতন্ত্রের সমস্যাগুলো, সর্দি, কাশি, জ্বরের মতো সাধারণ রোগ হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়।

কতবার টয়লেট হওয়া স্বাভাবিক?
আমাদের শরীরের বর্জ্য শুধু খাদ্যের অবশিষ্টাংশ নয়। বরং এর ৫০% জুড়ে রয়েছে ব্যাকটেরিয়া। এর মধ্যে এমন সব ব্যাকটেরিয়া রয়েছে যেটা কিনা আমাদের শরীরের জন্য আসলেই উপকারী।

এ কারণে, যাদের অন্ত্রে ‘খারাপ’ ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধির সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে ফিকাল ট্রান্সপ্লান্ট একটি কার্যকর চিকিৎসা হতে পারে।

এই চিকিৎসা স্টুল ট্রান্সপ্লান্ট বা মল প্রতিস্থাপন হিসেবেও পরিচিত। এটি এমন এক প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়া যেখানে একজন সুস্থ মানুষের শরীর থেকে মলের ব্যাকটেরিয়া অসুস্থ মানুষের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়।

এই বিষয়ে কথা বলার এক পর্যায়ে ডাঃ রসির কাছে জানতে চাওয়া হয় আমাদের দিনে কয়বার টয়লেটে যাওয়া উচিত?।

তিনি বলেন, প্রতিদিন তিনবার থেকে শুরু করে সপ্তাহে তিনবার টয়লেট হওয়া গবেষণায় স্বাভাবিক হিসেবে ধরা হয়।

অন্ত্র সুস্থতায় খাদ্য নির্বাচন
আমাদের অন্ত্রে রয়েছে কয়েক ট্রিলিয়ন জীবাণুর বসতি। এ জীবাণুগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ কেননা তারা নির্দিষ্ট কিছু পুষ্টিকর উপাদান হজম করতে সাহায্য করে। প্রতিটি মাইক্রোবায়াল গ্রুপ একেক ধরণের খাবারের ওপর কাজ করে। তাই বিভিন্ন বৈচিত্র্যের খাবার অন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করে, যা আমাদের আরও সুস্থ হয়ে ওঠার সঙ্গে সম্পর্কিত।

ডা. মেগান রসি বলেন, ‘আমি বলতে চাই যে, মাইক্রোবসরা আমাদের অভ্যন্তরীণ পোষা প্রাণীর মতো, আপনি যার যতœ নিতে এবং লালন পালন করতে চান।’

যারা সবসময় একই ধরণে খাবার খায় তাদের অন্ত্রের জীবাণুগুলো এতটা সক্রিয় বা শক্তিশালী থাকেনা।

অন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত আপনার মেজাজ মর্জি
ডা. রসি বলেছেন যে আপনার যদি অন্ত্রের সমস্যা দেখা দেয়, তা হলে আপনি কতোটা মানসিক চাপে আছেন সেটা পরীক্ষা করা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, ‘ডাক্তারি অনুশীলনে থাকাকালে আমি সবসময় আমার রোগীদের দিনে ১৫ থেকে ২০ মিনিটের জন্য ধ্যান করার পরামর্শ দিতাম। চার সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন ধ্যান করায় এক পর্যায়ে এটি তাদের অভ্যাসে পরিণত হতো। এবং এতে তাদের অন্ত্রের সমস্যাও ঠিক হয়ে যায়। তাই মানসিক চাপমুক্ত থাকা সত্যিই অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’

আমাদের অন্ত্রের সঙ্গে মেজাজ যুক্ত থাকার পেছনে একটি সাধারণ কারণ হল, আমাদের পরিপাকতন্ত্রে আনুমানিক ৮০% থেকে ৯০% সেরোটোনিন উৎপন্ন হয়। সেরোটোনিন এক ধরনের রাসায়নিক বার্তাবাহক যার সঙ্গে আমাদের পরিপাক ক্রিয়া থেকে শুরু করে মানসিক রোগ সংক্রান্ত শরীরের নানা কার্যক্রম জড়িত।

এক কথায় সেরোটোনিনের নি:সরণের ওপর নির্ভর করে আমাদের মেজাজ ভালো থাকা, না থাকা।

দীর্ঘমেয়াদি চাপ শরীরে সেরোটোনিন নিঃসরণের মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে, যা আমাদের মন মেজাজ, উদ্বেগের মাত্রা এবং সুখের মতো মানসিক অবস্থা প্রভাবিত করতে পারে।

পশু এবং মানুষের ওপর আগের গবেষণাগুলো থেকে পাওয়া তথ্য প্রমাণ থেকে জানা যায় যে, বিষণ্ণতাসহ অন্যান্য মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত রোগীর অন্ত্রে মাইক্রোবায়াল গোলযোগ পাওয়া গেছে।

সাইকোবায়োটিক্সের ওপর নতুন একটি গবেষণা চলছে। যেখানে মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে সুস্থ অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকা তুলে ধরা হয়েছে।

বিশ্বাসের নেতিবাচক প্রভাব
যদি আপনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে কয়েক ধরণের খাবার আপনার জন্য খারাপ, তাহলে আপনার এ সংক্রান্ত নেতিবাচক উপসর্গ দেখা দেবে।

সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে জানা গেছে, আপনি যদি কোনো নির্দিষ্ট ধরনের খাবার খেতে ভয় পাওয়া শুরু করেন তবে সেটি খাওয়ার সময় আপনার উপসর্গগুলো দেখা দিতে পারে।

কেননা কিছু মানুষের পাকস্থলি বেশ সংবেদনশীল।

ডা. রসি বলেন, ‘আমার ক্লিনিকে আমি প্রতিনিয়ত দেখেছি যে একটা বিশ্বাস কিভাবে অন্ত্রের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।’

অনেকে বিশ্বাস করে যে গ্লুটেন বা ল্যাকটোস তাদের জন্য খারাপ হবে, বাস্তবে তাদের ওইসব খাবারে এলার্জি বা অসহিষ্ণুতা না থাকলেও শুধু বিশ্বাসের কারণে সেগুলো খাওয়ার পরে তারা সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে।

আপনি চাইলেই পারেন পরিপাক স্বাস্থ্য উন্নত করতে
ডা. রসি কিছু অভ্যাস তালিকাভুক্ত করেছেন, যা পরিপাকতন্ত্র সুস্থ রাখার জন্য মেনে চলা প্রয়োজন। সেগুলো হলো-
* অন্ত্রের মাইক্রোবায়াল সক্রিয় ও শক্তিশালী রাখতে বিভিন্ন ধরণের খাবার খান।


* পছন্দমতো উপায়ে নিজের মানসিক চাপ মোকাবিলা করুন, সেটা হতে পারে, ধ্যান, শিথিলকরণ, বা যোগব্যায়াম।
* আপনার যদি ইতোমধ্যে অন্ত্র সমস্যা থাকে, তাহলে অ্যালকোহল, ক্যাফিন এবং মশলাযুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কেননা এ ধরণের উপাদান সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
* ভালোভাবে ঘুমানোর চেষ্টা করুন। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, আপনি যদি ঘুমের ধরণ পরিবর্তন করে দেহঘড়ির ছন্দ ব্যাহত করেন তবে আপনার অন্ত্রের জীবাণুগুলির চক্রও বাধাগ্রস্ত হবে। এবং মনে রাখবেন, অন্ত্রের জীবাণুগুলোকে সুস্থ রাখতে তাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করা জরুরি।
তথ্যসূত্র : বিবিসি বাংলা

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ