আজকের শিরোনাম :

শিশুর চোখ পরীক্ষায় দেরি হলে স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০১৮, ১২:০৮

ঢাকা, ২৮ আগস্ট, এবিনিউজ : শিশুদের চোখের সমস্যা স্থায়ী হয়ে যাওয়ার প্রধান কারণ সঠিক সময়ে তাদের চোখ বা দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা করা হয়না। এবং এই সমস্যা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে।

এ বিষয়ে অভিভাবকদের সতর্ক করেছেন যুক্তরাজ্যের চক্ষু বিশেষজ্ঞরা।

সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি গবেষণা পরিচালনা করে ব্রিটেনের অ্যাসোসিয়েশন অব অপটোমেট্রিস্টস-এওপি।

তারা ১২শ জনের ওপর জরিপ পরিচালনা করে জানতে পারে যে এর মধ্যে এক-চতুর্থাংশ শিশুর বাবা মা তাদের সন্তানদের সঠিক সময়ে চোখ পরীক্ষা করান না।

এ ছাড়া বাবা মায়ের ওপরে জরিপ চালিয়ে জানা যায় যে তাদের ৫২ শতাংশই ভাবতেন যে তাদের সন্তানদের চোখ পরীক্ষা বুঝি তাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়েই দেয়া হবে।

এ জন্য তারা আর নিজ উদ্যোগে সন্তানদের চোখ পরীক্ষা করাননি।

এটা ঠিক যে, ব্রিটেনের কিছু স্কুলে চোখ স্ক্রিনিংয়ের সুবিধা রয়েছে।

তবে ন্যাশনাল হেল্থ সার্ভিস-এনএইচএস থেকে বিনামূল্যের যে সেবা দেয়া হয়, সেটা এই চোখ স্ক্রিনিং পরীক্ষার চাইতে অনেক ভালো।

তবে সঠিক সময়ে শিশুর চোখ পরীক্ষা না করালে, রোগের চিকিৎসার ভালো ফল পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।

শিশুদের চোখে যে সমস্যাটি হয়ে থাকে
বিশ্বের প্রতি ৫০ জন শিশুর মধ্যে একজনচোখের অ্যাম্বলিওপিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে।

যেটা কিনা ‘অলস চোখ’ নামে পরিচিত। এই রোগে আক্রান্ত শিশুর একটি চোখ অপরটির তুলনায় দুর্বল হয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে দুটি চোখের দৃষ্টিশক্তিই দুর্বল হতে পারে।

মূলত, এই রোগের ফলে আক্রান্তদের একটি বা উভয় চোখ মস্তিষ্কের সঙ্গে শক্তিশালী সংযোগ সৃষ্টি করতে অক্ষম হয়ে পড়ে। এতে ওই শিশুগুলোর দৃষ্টিশক্তি সঠিকভাবে বিকাশ লাভ করতে পারেনা।

তবে সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় করা গেলে তা পুরোপুরি সারিয়ে তোলা সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

কোন বয়সে পরীক্ষা করাতে হবে?
ব্রিটেনের এনএইচএস সুপারিশ করে যে শিশুর বয়স ৪ বছর হলেই যেন তাদের চোখ পরীক্ষা করানো হয়। কেননা ৬ বছর বয়সের পর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চোখের চিকিৎসা করা কঠিন হয়ে পড়ে।

শিশুদের চোখের চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে সঠিক পাওয়ারের চশমা পরানো সেই সঙ্গে আই প্যাচ ও চোখের ড্রপ দেয়া। যেন তাদের দুর্বল চোখগুলোকে সারিয়ে দৃষ্টি আরও স্পষ্ট করে তোলা যায়।

জেন থম্পসনের মেয়ে, ইভ। এখন তার বয়স ১৪। যখন তার বয়স ৭ বছর ছিল তখন তার চোখে অ্যাম্বলিওপিয়া রোগটি ধরা পড়ে।

চক্ষু বিশেষজ্ঞ ইভের ব্যাপারে বলেন, তার রোগ নির্ণয়ে অনেক দেরী হয়ে গেছে, এজন্য ইভকে আই প্যাচিংয়ের চিকিৎসা দেয়া যাবে না। তবে প্রেসক্রিপশন চশমা ইভের দৃষ্টিশক্তি ঠিক করতে অনেকটা সাহায্য করেছে।

ওয়েস্ট ইয়র্কশায়ারের বাসিন্দা জেন থম্পসন তার মেয়ের এই চোখের সমস্যার জন্য এখন নিজেকেই দোষারোপ করেন।

তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় আমার মনে হচ্ছিলো আমি বুঝি অনেক খারাপ একজন অভিভাবক। সত্যিই, কারণ আপনি আপনার সন্তানদের জন্য সবচেয়ে ভালটাই করতে চান। তারপর উপলব্ধি করেন যে এই সমস্যাটা যদি আগেই খুঁজে বের করা যেতো। কিন্তু আপনি এ বিষয়ে সচেতন ছিলেন না। এটা মেনে নেয়াটা সত্যিই অনেক কঠিন।’

থম্পসনের মেয়ে ইভ বলেন, ‘আমি সবসময় শুধু আমার ডান চোখ দিয়েই দেখতাম। তখনও আমি বুঝতে পারিনি যে কোন সমস্যা আছে কিনা। কিন্তু চোখ পরীক্ষার সময় যখনই আমার ডান চোখটা ঢেকে দেয়া হল তখন দেখি আমার সামনের সব জিনিষই ঝাপসা, অস্পষ্ট। খুব ভয় পেয়েছিলাম। আমি আমার বাম চোখ দিয়ে প্রায় দেখিই না।’

উল্টোটা ঘটেছে নিকোলা রোথেরার ৫ বছর বয়সী মেয়ে ক্লোইর সঙ্গে। ক্লোইর বয়স যখন ৩ বছর তখন তার চোখ পরীক্ষায় অ্যাম্বলিওপিয়া রোগটি শনাক্ত হয়। তবে বয়স কম থাকায় ক্লোইকে পুরোপুরি সারিয়ে তুলতে আই প্যাচের চিকিৎসাই যথেষ্ট ছিল।

ব্র্যাডফোর্ডের বাসিন্দা নিকোলা বলেন, ‘যদি আমি ‌আমার মেয়ের চোখের অসুস্থতা ওই অবস্থাতেই ফেলে রাখতাম। তাহলে বাম চোখটি হয়তো এখনকার মতো স্বাভাবিক হতো না। আর এটা তার ভবিষ্যৎ জীবনকে সীমাবদ্ধ করে ফেলত।’

তাই একটি নির্দিষ্ট বয়সে শিশুর চোখ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা উচিত বলে মনে করেন মিসেস নিকোলা।

জেনে রাখা জরুরি
অ্যাসোসিয়েশন অব অপটোমেট্রিস্টস (এওপি) এ বিষয়ে আরও ১২৪৬ জন প্র্যাকটিসিং অপটোমেট্রিস্ট অর্থাৎ সেবায় নিয়োজিত চক্ষু বিশেষজ্ঞের ওপর গত বছর একটি জরিপ পরিচালনা করে। সেখানে,

১. ৭৪% শতাংশ চিকিৎসকই জানান যে তাদের কাছে যেসব শিশু চিকিৎসা নিতে এসেছিল, তাদের রোগটি আরও আগে সনাক্ত করা গেলে দৃষ্টিশক্তির সমস্যা আরও সফলভাবে সমাধান করা যেত।

২. এর মধ্যে, ৮৯% পরীক্ষাতেই অ্যাম্বলিওপিয়া রোগটি নির্ণয় হয়। যদি তারা আরও আগে চিকিৎসা নিতে আসতো তাহলে আরও ভাল চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হতো।

এওপি এর ফারাহ টপিয়া জানান, শিশুর দৃষ্টিশক্তি বিকাশের ক্ষেত্রে প্রাথমিক অবস্থায় চোখ পরীক্ষার মাধ্যমে তার চোখের অবস্থা সম্পর্কে জানা এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া অনেক জরুরি।

তিনি বলেন, ‘অ্যাম্বলিওপিয়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসা আগেভাগে করালে দৃষ্টিশক্তি ঠিক হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।’

যুক্তরাজ্যে ১৬ বছরের নিচে সব শিশুরা এনএইচএস তহবিলের আওতায় বিনামূল্যে চোখের চিকিৎসা করাতে পারে।

শিশুদের চোখের পরীক্ষায় আপনার আশপাশে এ ধরনের আর কি কি সুযোগ সুবিধা রয়েছে সে বিষয়ে অভিভাবকদের সচেতন করে তোলা ভীষণ জরুরি বলে মনে করেন, চিকিৎসক ফারাহ টপিয়া।

এ ব্যাপারে একটি প্রচারাভিযান শুরু করেছে এওপি। সেখানে তারা সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন তহবিল বা সুবিধার আওতায় শিশুদের প্রতিবছর চিকিৎসকের পরামর্শ চোখ পরীক্ষার ব্যাপারে অভিভাবকদের সচেতন করে থাকেন।
খবর বিবিসি

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ