ধূমপান ছাড়লে কী কী লাভ?

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২০, ১৪:১৪

দুই আঙুলের মাঝে টিমটিমিয়ে জ্বলে সিগারেট। নিজে তো পোড়েই সঙ্গে পোড়ায় মানুষের জীবনীশক্তি। নিভৃতে সিগারেট, বিড়ির ধোঁয়ার সঙ্গে আঁতাত করে ধীরে ধীরে উবে যেতে থাকে প্রাণবায়ু। কিচ্ছুটি টের পাওয়া যায় না। এমন নীরব ঘাতকের সঙ্গে দীর্ঘকালীন বন্ধুত্বের পরিণতি যে খুবই খারাপ, এটা যে কোনও মানুষই বোঝেন। তবু বোধোদয় হয় না। তামাকের নেশায় বুঁদ মানুষ সিগারেট, বিড়ির লেজে টান দিয়েই চলেছেন। আশপাশের মতো ধূমায়িত হচ্ছে তাঁদের সুস্বাস্থ্যের অলিগলিও। বড়ই জটিল সংকট। 

এই ভয়াবহতা থেকে মুক্তি পেতে ‘ধূমপান’ ছাড়তেই হবে। প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে। একদিন ধূমপান করতে করতেই হাতের সিগারেট, বিড়ি ছুঁড়ে ফেলে দিন। পূর্ণ বিচ্ছেদ ঘটিয়ে ফেলুন। আর একটাও না। কোনওমতেই না। 

বিচ্ছেদ সম্পূর্ণ হওয়ার পরের কিছু মিনিটের মধ্যেই আপনার শরীরে ঘটে যাবে বিপ্লব। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় শুরু হবে নানা সদর্থক পরিবর্তন। শরীর ‘অটো রিকভারি মোড’ চালু করে আপনা থেকেই নিজের ক্ষয়ক্ষতির মেরামতিতে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। আসুন, জেনে নেওয়া যাক ধূমপান ছাড়ার সুফল কী কী। ধূমপান ছাড়লে কী কী লাভ—ছাড়ার ২০ মিনিট পর: ধূমপান রক্তচাপ, পালস রেট বাড়িয়ে দেয়। ধূমপান ছাড়ার ২০ মিনিট বাদেই রক্তচাপ এবং পালস রেট কমে স্বাভাবিক হয়ে যায়। হাত এবং পায়ের তাপমাত্রা স্বাভাবিক হয়।

ধূমপান ছাড়ার আট ঘণ্টা পর: সিগারেটে টান দিতে দিতে রক্তে কার্বন মনোঅক্সাইডের পরিমাণ বাড়িয়ে ফেলেছিলেন। শেষ সিগারেট খাওয়ার মাত্র ৮ ঘণ্টা বাদেই শরীর নিজের প্রচেষ্টায় রক্তে কার্বন মনোঅক্সাইডের মাত্রা স্বাভাবিক করে ফেলে। 

এমনকী ধূমপান করার কারণে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রাও কমে যায়। এই নির্দিষ্ট সময় পরে অক্সিজেন লেভেল বেড়ে গিয়ে হয় স্বাভাবিক। 

ধূমপান ছাড়ার ২৪ ঘণ্টা বাদে: ধূমপান করলে হার্ট অ্যাটাকের শঙ্কা বাড়ে। কিন্তু জানলে অবাক হবেন, ধূমপানের সঙ্গে মাত্র ২৪ ঘণ্টা বিচ্ছেদের পরই হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা কমতে শুরু করে।
নেশা ত্যাগের ৪৮ ঘণ্টা পর: স্নায়ুর শেষাংশ (নার্ভ এন্ডিং) ফের বাড়তে শুরু করে। ধূমপানের অভ্যেস থাকলে স্বাদ এবং গন্ধ নেওয়ার ক্ষমতা কমতে থাকে। ৪৮ ঘণ্টা পর থেকে সেই ক্ষমতাও পুনরায় স্বাভাবিক হওয়ার পথে এগয়। 

দুই থেকে তিন মাস বাদে: দুই থেকে তিন মাস ধূমপান থেকে দূরে থাকলে শারীরিক পরিবর্তন নিজেরই চোখে পড়বে। 

এই সময়কালে 
১. শরীরে রক্তপ্রবাহ ভালো হতে শুরু করে 

২. ফুসফুস নিজের ক্ষয়ক্ষতি সারিয়ে কার্যক্ষমতা ৩০ শতাংশ বাড়িয়ে নেয়। 

৩. শ্বাস নিতে আর তেমন কষ্ট হয় না। একটু হাঁটলে আর হাঁফিয়ে যাবেন না। গড়িগড়িয়ে চলতে পারবেন। বয়স থাকলে দৌড়ানোর চেষ্টা করে দেখতে পারেন। সিঁড়ি ভেঙে উঠতে পারবেন। 

৪. চাইলে সহজেই জিমেও ঘাম ঝরিয়ে নিতে পারেন। আগের মতো তেমন কষ্ট হবে না। 

এক মাস থেকে নয় মাসের মধ্যে: ফুসফুসের মধ্যে থাকে ছোট ছোট রোম। এর নাম সিলিয়া। এই সিলিয়া ফুসফুসকে পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি আরও গুরুত্বপূর্ণ বহু কাজে সাহায্য করে। মুশকিল হল, ধূমপান করলে সিলিয়ার ক্ষতি হয়। তাই মাঝেমাঝেই কাশি, বুকে কফ জমা, ইনফেকশন ইত্যাদি সমস্যা লেগেই থাকে। 

ধূমপান ছাড়ার কয়েকমাসের মধ্যেই সিলিয়া নিজের ক্ষত সারিয়ে বাড়তে থাকে। তখন নিজেই বুঝতে পারবেন যে, খুকখুক করে কাশি, কফ জমা কাশি অনেক কম হচ্ছে। এমনকী সংক্রমণজনিত অসুখবিসুখের আশঙ্কাও কমে। প্রায়ই ঠান্ডা লেগে যাওয়া, গলা ব্যথার মতো সমস্যাও হ্রাস পায়।

ধূমপানের সঙ্গে মাথাব্যথার সম্পর্ক রয়েছে। ধূমপান ছাড়ার কিছুদিনের মধ্যেই সেই সমস্যাও দূরে যেতে শুরু করে। যখন তখন আর মাথ্যব্যথা হয় না। এই নির্দিষ্ট সময়ে আপনার মনোযোগের ক্ষমতাও বাড়ে। কাজে সহজেই মন বসবে।

নেশা ছাড়ার এক বছর বাদে: এক বছর বাদে ধূমপায়ী মানুষের তুলনায় ধূমপান ছেড়ে দেওয়া মানুষের হার্টে করোনারি আর্টারি ডিজিজ হওয়ার আশঙ্কা অর্ধেক হয়ে যায়। অর্থাৎ হার্টের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কায় বুক ধড়ফড় করার দিন প্রায় শেষ।    

ধূমপান পাঁচ বছর ত্যাগ করলে লাভ: ধূমপান ছাড়ার পাঁচ বছর পর সিগারেট-বিড়ির প্যাকেটে ছাপানো ক্যান্সারের বীভৎস ছবি এবং সতর্কবাণীর কথা মনে রাখার প্রয়োজনও অনেকখানি কমে যায়। 

ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে প্রাণহানির আশঙ্কা অর্ধেক হয়ে যায়।

মুখ, গলা, খাদ্যনালী, ব্লাডার, কিডনি, প্যাংক্রিয়াসে ক্যান্সারের ঝুঁকিও বহুগুণ কমে যায়।

কোনওদিনও ধূমপান না করা মানুষের স্ট্রোকের যতটা ঝুঁকি থাকে, ধূমপান ছাড়ার পাঁচ বছর বাদে আপনারও স্ট্রোকের ঝুঁকি হয় ঠিক ততটা।

ক্রনিক রোগে লাভ: ডায়াবেটিস, কিডনি ফেলিওর, অ্যাজমা সহ বিভিন্ন জটিল রোগ থাকলে ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার পর শরীরে অভূতপূর্ব উন্নতি হয়। তাই সুস্থ থাকতে এবং পরিবারের কথা মাথায় রেখে আজই ধূমপান ছাড়ুন। বিশ্বাস করুন, অনেক ভালো থাকবেন।

এবিএন/জনি/জসিম/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ