আজকের শিরোনাম :

চিন কি বৈশ্বিক পরাশক্তি হবার যোগ্যতা রাখে?

  এস. রায় মজুমদার

১১ আগস্ট ২০২০, ১৭:৪০ | অনলাইন সংস্করণ

লেখক
নেহরুই প্রথম তাঁর জীবদ্দশায় উল্লেখ করেছিলেন যে পরবর্তী শতাব্দী অর্থাৎ একবিংশ শতাব্দী হবে চিন-ভারতের, তথা এশিয়ার। তাঁর বিখ্যাত 'ডিসকভারি অফ ইন্ডিয়া' বইতে একাধিক বার এবং ১৯৪৭ সালের মার্চ-এপ্রিলে  দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ’এশিয়ান রিলেশনস কনফারেন্স’-এ আনুষ্ঠানিক ভাবে তাঁর এই প্রত্যয়ের কথা ব্যক্ত করেছিলেন। এমনকি মাও এর নেতৃত্বে কমুনিস্ট বিপ্লবের পরও চিন সম্পর্কে নেহরুর এই ধারণার পরিবর্তন ঘটেনি। মার্কিন নীতিনির্ধারকেরা তখন বিষয়টি আমলে নেননি । কারণ তাঁদের ধারণা ছিল, বিশেষত কমিউনিস্ট বিপ্লবের পর, যে চিন শেষতক সোভিয়েত সমাজতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণের অধীনে চলে যাবে এবং সোভিয়েতকে লক্ষ্যে নিয়ে হিসাব নিকাশ ফয়সালা করাই যথেষ্ট ।  চিনকে আলাদাভাবে বিবেচনায় নেয়ার দরকার হবে না। মার্কিনিদের ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে এবং পাশ্চাত্যের ছকে গড়া অর্থনৈতিক ও সামরিক বিশ্ব-ব্যবস্থা একটা সংকট-সন্ধিতে এসে দাঁড়িয়েছে পরাশক্তি হিসেবে চীনের সাম্প্রতিক উত্থান-সম্ভাবনায়। প্রশ্ন হোল পরাশক্তি হিসেবে বর্তমান ও আগামী বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবার জন্যে চিন আদৌ নিজেকে প্রমান করতে পেরেছে কি-না?

চিনের অর্থনৈতিক উত্থান সাম্প্রতিক ইতিহাসের এক বিশাল বিষ্ময়। ঊনবিংশ শতকের শেষ দশক থেকে শুরুকরে পশ্চিম ইউরোপ, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া সহ সোভিয়েত-বিরোধী মার্কিন জোটের হাতেই থেকেছে মোট বৈশ্বিক আয়ের সিংহভাগ। আরো আগে তাকালে, ঊনবিংশ শতকের শেষভাগে, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো প্রতিষ্ঠিত গণতন্ত্রের হাতেই থাকতো মোট বৈশ্বিক জি ডি পির বৃহত্তম অংশ। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে সোভিয়েত-বিরোধী আমেরিকান জোটে জাপান ও জার্মানি যুক্ত হলে এই গণতান্ত্রিক জোটের আর্থিক ভিত্তি সীমাহীন উচ্চতা লাভ করে। কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমানে গত একশো বছরের মধ্যে প্রথম মার্কিন নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক জোটের একীভূত জি ডি পি মোট বৈশ্বিক জি ডি পি-র অর্ধেকের ও নিচে নেমে এসেছে। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের অনুমান, আগামী এক দশকে তা হয়তো কমে এক-তৃতীয়াংশে গিয়ে ঠেকবে। 

বিপরীতে  চিন সহ অন্যান্য অথরিটারিয়ান রাষ্ট্রগুলোর অর্থনীতি এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা ক্রমে শক্তিশালী হচ্ছে। চিন গত দুই দশকে তার পূর্বের করুণ অর্থনৈতিক অবস্থা কাটিয়ে উঠেছে। একাদিক্রমে দশের উপরে জিডিপি ধরে রাখার ইতিহাস বর্তমান বিশ্বে একমাত্র চিনেরই। যদিও সম্পদের বন্টনে এখনো অনেক সমস্যা রয়েছে, রয়েছে মানবাধিকার সংকট। তবু চিনের উপকূলীয় বেল্টের ৪২০ মিলিয়ন মানুষের মাথাপিছু আয় বর্তমানে ২৩,০০০ ডলারের উপরে যা ক্রমেই বাড়ছে। 

ঐতিহ্যগতভাবেই বিশ্বের সমাজতান্ত্রিক শক্তিগুলো সবসময় মানবতা, স্বাধীনতা, শোষণমুক্তির পক্ষে এবং উপনিবেশবাদ ও পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে উত্তর-ঔপনিবেশিক স্বাধীনতাকামী রষ্ট্রগুলোর পাশে বন্ধুর মত ভূমিকা রেখেছে। এক্ষেত্রে একমাত্র ব্যতিক্রম হোল চিন। প্রমান, একাত্তর সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সোভিয়েতসহ সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর বিপরীতে পুঁজিবাদী আমেরিকার এবং দখলদার পাকিস্তানের দোসর হিসেবে সমাজতান্ত্রিক চিনের ঘৃন্য ভূমিকা। ধারণা করা হয় যে চিনের নৈতিকতার মানদন্ড নির্ধারণকারী হোল একমাত্র চিনা কম্যুনিস্ট পার্টি এবং তার স্বার্থ। এখানে পৃথিবীর মানুষের সাধারণ নৈতিকতা এমনকি চিনা জনগনের ইচ্ছা-অনিচ্ছারও কোন ভূমিকা নেই। 
একেবারে সাম্প্রতিক সময়ের আগ পর্যন্ত চিন নিজেকে এক রহস্যময় আড়ালে লুকিয়ে রাখতো। পাশ্চাত্যের দেশগুলো চিনের এই আড়ালকে বলতো চিনের ‘লৌহ যবনিকা’। 
বঙ্গবন্ধুও তাঁর চিন ভ্রমনকালে চিনের লোকজনের এই দূরত্ব এবং আড়াল-প্রিয়তার বিষয়টি লক্ষ্য করেন। তিনি তাঁর সে বাজে অভিজ্ঞতার কথা ‘আমার দেখা নয়া চীন’ বইতে উল্লেখ করেছেন। গত বছর সে বইয়ের প্রকাশনা উৎসবের খবর ফলাও করে প্রচার করে চিনের সরকারি মহল রাজনৈতিক ফায়দা লোটার সুযোগ অবশ্য হাতছাড়া করেনি। সর্বপ্রকার সম্ভাব্য উপায়ে আমাদের  স্বাধীনতার বিরোধীতা করে এমনকি বঙ্গবন্ধুর দুর্ভাগ্যজনক হত্যার আগপর্যন্ত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দিয়ে চিন যে চরম বৈরিতা এবং কূটনৈতিক অভদ্রতা দেখিয়েছিলো, স্বার্থের গন্ধ পেয়ে চিন এখন তা ঢেকে ফেলতে চায়। অনেকটা চক্ষুলজ্জার মাথা খেয়ে চিন এখন প্রচার করছে যে স্বয়ং বঙ্গবন্ধুই নাকি স্বাধীনতার আগে থেকেই চিনের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এটি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একধরনের মিথ্যাচারের পর্যায়ে পড়ে। এই একটা দৃষ্টান্ত থেকেই চিনের নড়বড়ে নৈতিক অবস্থানের স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। দুনিয়ার আর কোন সমাজতান্ত্রিক দেশের ক্ষেত্রে এই নীতিহীনতা দেখা যায়নি। 

সোভিয়েত রাশিয়া এবং পরবর্তী রাশিয়ার সাথেও চিনের সুসম্পর্ক থাকেনি। এমনকি ঠান্ডা যুদ্ধের যুগেও চিন সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েতের সাথেও ভালো সম্পর্ক রাখেনি। অথচ অবৈধভাবে দখলকৃত তিব্বতকে দমনে রাখা সোভিয়েতের সাহায্য ছাড়া চিনের পক্ষে কোনক্রমে সম্ভব ছিলো না। স্মরণ করুন ১৯৫৬-৫৭ সালের তিব্বত বিদ্রোহের কথা। মোটামুটি ১৯১২ থেকেই তিব্বত দালাইলামার নেতৃত্বে নিজের স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় রাখছিলো। ১৯৪৯ সালে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পরপরই চিন ১৯৫০এ তিব্বত দখল করে বসে।  বিদ্রোহ শুরু হলে যথারীতি আমেরিকা তিব্বতে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিলো। সি আই এ তিব্বতি প্রতিরোধে নানাভাবে সহায়তা দিচ্ছিলো। কিন্তু স্টালিনের সোভিয়েত বিমানবাহিনীর সরসরি সহায়তা নিয়ে চিন তিব্বতে বেপরোয়া বোমাবর্ষণ শুরু করলে তিব্বতিদের স্বাধীনতার স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়। এহেন রাশিয়াকেও সোভিয়েতোত্তর অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সুযোগ নিয়ে নানাভাবে চিন নিজের স্বার্থে ব্যবহার করেছে। একের পর এক সোভিয়েত প্রযুক্তি সস্তায় কিনেছে, গোয়েন্দাবৃত্তি করে হস্তগত করেছে, ‘রিভার্স এন্জিনিয়ারিং’ নামের চৌর্যবৃত্তির মাধ্যমে অর্জন করে বিদেশে তা রফতানী করে লাভবান হয়েছে। রাশিয়ার সাথে বর্তমানে সম্পর্ক আগের চেয়ে ভালো। তবু সর্বশেষ গত জুলাইয়ের শেষে রাশিয়া চিনে পূর্বনির্ধারিত এস ৪০০ ক্ষেপনাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থার সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। শোনা যাচ্ছে এর কারণও নাকি গোয়েন্দাদের মাধ্যমে চিনের চৌর্যবৃত্তির চেষ্টা। এই ধরনের হীনতা উদীয়মান বিশ্বনেতৃত্বের জন্যে নিতান্ত বেমানন এবং লজ্জাকরও বটে। 

আসুন চিনের আর এক বৃহৎ প্রতিবেশী ভারতের সাথে সম্পর্কে। শুরু থেকেই স্বাধীন ভারতের নেতৃত্ব চিনকে সবসময় ইতিবাচক হিসেবে দেখতে চেয়েছে। এমনকি জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধিত্বও অনেকটা ভারতের বদান্যতায় পাওয়া। তৎকালীন বিশ্বমোড়ল আমেরিকা স্বাভাবিকভাবেই চায়নি সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে আরও একটি কম্যুনিস্ট দেশ চিনকে স্থায়ী প্রতিনিধি বানাতে। এই অঞ্চল থেকে প্রথম পছন্দ ছিলো বিশ্বের সর্ববৃহৎ গনতন্ত্র ভারত। কিন্তু নেহেরুর তথাকথিত জোটনিরপেক্ষ ঝোঁক এবং দোদুল্যমানতার ফলে চিন সুজোগটি সহজে কব্জা করে ফেলে। তারপর নেহেরুর ’হিন্দি-চিনী ভাই ভাই’ কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ১৯৬২তে চিন অতর্কিতে ভারত আক্রমন করে বিশ্বের প্রাচীনতম সভ্যতার এই প্রতিবেশি দেশদুটির মধ্যে বিশ্বাসহীনতা এবং শত্রুতা একরকম পাকাপোক্ত করে ফেলে। এই ধারাবাহিকতার সর্বশেষ লাদাখের গালওয়ান।

এ প্রসঙ্গে সাম্প্রতিক কালে চিনের ‘বুলিং’ বা গায়ের জোর দেখানোর কিছু দৃষ্টান্ত দেখা যেতে পারে। আন্তর্জাতিক নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে চিন ইদানীং প্রতিবেশিদের সাথে গায়ের জোর দেখাতে শুরু করেছে। সাগরের মৎস ও খনিজ জ্বালানীর বিপুল সংগ্রহ কুক্ষিগত করার জন্যে সম্প্রতি চিন দক্ষিণ চিন সাগরের পুরোটা নিজের বলে দাবী করছে। উপকূলীয় প্রতিবেশি ভিয়েতনাম সহ মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ব্রুনেই, ফিলিপাইন এবং তাইওয়ানের মাছধরা নৌযান ও খনিজ-অনুসন্ধানী নৌযানগুলোকে স্রেফ গায়ের জোরে তাড়িয়ে দিতে শুরু করেছে। সুদূর অস্ট্রেলিয়া এবং জাপানের পাশের অনেক দ্বীপে নিজের দখল কায়েম করতে চাইছে। শুধু তাই নয়। দক্ষিণ চিন সাগরে কৃত্রিম দ্বীপ বানিয়ে সেগুলোতে চিনা বিমানবাহিনীর ঘাঁটি বানাতে শুরু করে দিয়েছে। আধুনিক বিশ্বের অর্থনৈতিক উৎকর্ষের প্রতীক হয়ে থাকা হংকং থেকে বৃটেন দীর্ঘ ঔপনিবেশিক শাসন গুটিয়ে চিনের হাতে সমর্পন করে চলে গেছে। শর্ত ছিল একটাই। হংকংয়ের চলমান মুক্ত অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থায় সমাজতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রন আরোপ না করে আগামী ৫০ বছর চিন স্থিতাবস্থা বজায় রাখবে। চিন রাজী হয়ে আমেরিকাকে স্বাক্ষী রেখে চুক্তিও করেছিল। এখন আর চিনের তর সইছে না। কয়েক বছর যেতে না যেতেই একতরফা ভাবে চুক্তি ভেঙ্গে চিন হংকংয়ে হস্তক্ষেপ শুরু করে দিয়েছে। 

আরও আছে। তিব্বত তো বহু আগে দখলে নিয়েছে। এখন নেপাল, ভুটান, ভারতের বহু অংশ নিজের বলে দাবী করছে। হিমালয় অঞ্চলের প্রতিবেশির ইচ্ছা, সুবিধা-অসুবিধার ধার না ধেরে নিজের অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত সুবিধা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সম্পূর্ণ নিজের স্বার্থে উদ্ভাবিত ‘বেল্ট এন্ড রোড’ বৃহৎ প্রকল্প একতরফা ভাবে বাস্তবায়ন শুরু করেছে। এক্ষেত্রে সন্ত্রাসবাদে সমর্থনের অভিযোগে মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় পড়ে কাহিল অর্থনীতির পাকিস্তানকে ঋণের লোভ দেখিয়ে দলে টেনে নিয়েছে। দীর্ঘ গৃহযুদ্ধে নাজুক শ্রীলংকা এবং মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় পড়া পাকিস্তান ও ইরানের মত বিকল্পহীন দুর্বল অর্থনীতির দেশগুলোকে উন্নয়নের নামে বিপুল অংকের ঋণ দিয়ে নিজের ‘ঋণ ফাঁদে’ ফাঁসিয়ে ফেলতে চাইছে। ভারতকে ঋণের জালে আটকাতে না পেরে পাকিস্তান ও অন্যান্য প্রতিবেশিদের হাত করে পরোক্ষ চাপে ফেলে কাবু করতে চাইছে। পৃথিবীর অনেকেই নানা কারণে আমেরিকাকে বড় ‘বুলি’ হিসেবে মনে করতো। কিন্তু চিনের এই নগ্ন ‘বুলিং’-এর কাছে আমেরিকাও তো হেরে যাবে। 

চিনের ‘ডাবল স্ট্যানডার্ড’-এর একটা বড় উদাহরণ ‘চিন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর’। কাশ্মিরকে অমিমাংসিত এলাকা বলে বিবেচনা করে চিন পাকিস্তানের গলায় সুর মিলিয়ে ভারতের পার্লামেন্টে ৩৭০ ধারা বিলোপের বিরোধিতা করছে। কিন্তু অনেক আগে থেকেই সেই একই কাশ্মিরের পাকিস্তান অধিকৃত অংশের উপর দিয়ে ভারতের আপত্তি উপেক্ষা করে চিন রাস্তা-রেলপথের মত স্থায়ী স্থাপনা তৈরি করে চলেছে অবলীলায়। নিজের স্বার্থ যেখানে জড়িত, সেখানে কাশ্মির ’অমিমাংসিত’ এলাকা হলেও কিছু যায় আসে না। এ এক অদ্ভুত চৈনিক নৈতিকতার উদাহরণ বটে যা কোন সম্ভাব্য বিশ্বনেতৃত্বের লক্ষণ হতে পারে না। 

১৪.১ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি এখন চিন (২০১৯)। উপরে একমাত্র আমেরিকা (২১.৪ ট্রিলিয়ন)। কঠোর অথরিটারিয়ান ব্যবস্থার কারণে চিনের কোন অভ্যন্তরীন জবাবদিহিতা নেই। নিজের শ্রমবাজারে নামমাত্র সুবিধা দিয়ে ব্যাপক মুনাফ করা সম্ভব, পাশ্চাত্যের গণতন্ত্র ও মুক্ত অর্থনীতিতে যা সম্ভব নয়। অভ্যন্তরীন বন্টনে নজর না দিয়ে বিপুল উদ্বৃত্ত অর্থ শুধুমাত্র রাজনৈতিক ও সামরিক কৌশলগত লক্ষ্য অর্জনে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে দিয়ে সাময়িকভাবে কিছু ছিচকে মোড়লিপনা অর্জনের পথে চিন খানিকটা হয়তো এগিয়েছে, কিন্তু তার পেছনে স্বার্থ ছাড়া দৃশ্যত কোন আদর্শ কাজ করেনি। বর্তমানে শিথিল হয়ে আসা বিশ্বব্যবস্থার আমেরিকান মডেলের পেছনে নামেমাত্র হলেও গণতন্ত্র ও মুক্তবাজার অর্থনীতির একটা লক্ষ্য অন্তত ছিলো। বিকল্প হিসেবে গ্রহণযোগ্য কোন্ মডেল চিন দেখাতে পারে বিশ্বকে? সমাজতন্ত্র-ভিত্তিক? তাহলে প্রশ্ন: চিন নিজেই সমাজতান্ত্রিক আদর্শ অনুসরণ করছে কি-না। অথরিটারিয়ান? আজকের পৃথিবী কি তা খাবে? মনে হচ্ছে পরবর্তী একটা গ্রহণযোগ্য বিশ্বব্যাবস্থা গড়ে ওঠার অপেক্ষাকাল যেরকমটা ভাবা হচ্ছে, তার চেয়ে অনেক বেশি দীর্ঘ হতে চলেছে।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ের ভাষ্যকার।

এই বিভাগের আরো সংবাদ