আজকের শিরোনাম :

“মানুষ যখন রক্ত পিপাসু”

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০১৮, ১২:৩২

মোয়াজ্জিমা আক্তার লিমা, ২৫ জুলাই, এবিনিউজ: মহান সৃষ্টিকর্তা অসাধরণ কাঠামো দিয়ে তৈরি করেছেন জগৎ সংসারের সৃষ্টির সেরা এই মানুষকে। সুন্দর, সুশৃঙ্খল, সুসংবদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ জাতি গঠনের প্রধান উপাদানই হলো মানুষ। বিবেক বুদ্ধি সম্পন্ন সত্ত্বার অধিকারী এই মানুষ যখন নিজের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে সৌন্দর্যমন্ডিত করতে ব্যর্থ হয়ে উঠে তখন একটি টেকসই মজবুত এবং শক্তিশালী জাতি গঠনে ব্যাহত হয়। শুধু তাই নয় জাতির বেঁচে থাকার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে পড়ে।
আজ সমগ্র বিশ্বের দিকে দৃষ্টি ঘুড়ে তাকালে মনে হয় মানুষ তার নিজের চরিত্রের নৈতিক মূল্যবোধ পৌছে নিয়ে গেছে শূন্যের কোটায়। মানুষ তার নিজের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বিচ্যুত হয়ে মেতে উঠেছে রক্ত নামক লাল রংয়ের হলি খেলায়। মানুষ এখন নিজস্ব বোধশক্তি হারিয়ে মানবতাবিহীন, স্বার্থপর ও আত্মকেন্দ্রিক জীবন যাপন করছে। যার ফলে সমগ্র পৃথিবী অশান্তি, অন্যায়, অবিচার, যুদ্ধবিগ্রহ, দ্বন্দ্ব-কলহে পরিপূর্ণ হয়ে নরককুন্ডে পরিণত হয়েছে। পৃথিবীর এই করুণ পরিণতিতে একটু শান্তির জন্য মানুষ আজ দীর্ঘশ্বাস ফেলছে, কিন্তু কোথাও শান্তি মিলছে না। মানবতা যেন পৃথিবীর এই কঠিন অবস্থা দেখে ডুকরে ডুকরে কাঁদছে। পৃথিবীর মানুষ ক্ষুদ্র স্বার্থের চরিতার্থ করার জন্য রক্তপাতে লিপ্ত হয়ে পড়েছে।
জাতি গঠনের অন্যতম হাতিয়ার এই মানুষ যখন অন্যের প্রাণ রক্ষার চিন্তা না করে মানুষের জীবন হরণে ব্যস্ত হয়ে পড়ে তখন জাতির মধ্যে ভয়ংকর ফাটল সৃষ্টি হয়। শুরু হয় জাতিতে জাতিতে বিভক্ত এবং দ্বন্দ্ব। আজ মানুষ মানুষকে মারার জন্য পারমানবিক বোমা তৈরীর প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এমনকি অত্যন্ত আধুনিক অস্ত্রও তৈরী করছে। একদেশ আরেক দেশকে ক্ষেপনাস্ত্র নিক্ষেপ করছে। শুধু তাই নয় শুরু হয়েছে পৃথিবীর মানুষগুলোর মধ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা এবং ধর্মের অপব্যাখ্যা। এর প্রভাবে লাখ লাখ মানুষের রক্তের বন্যা বয়ে যাচ্ছে।
আজ পৃথিবীতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়ে নিজেদের মধ্যে এমনকি ভাই-ভাইয়ে, পিতা-পুত্রের দ্বন্দ্বে রক্তপাতের সৃষ্টি হচ্ছে। অথচ এই মানুষ মরণশীল। মানুষ একটা সু-নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে প্রতিনিধি হিসাবে পৃথিবীতে এসেছে। কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর মানুষ এই পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নিবেন। কিন্তু এই মরণশীল পচনশীল মানুষকে মারার জন্য মানুষ মরিহা হয়ে উঠেছে। মানুষ তার বিকেক ও মনুষ্যত্ব হারিয়ে রক্ত পিপাসু হয়ে উঠেছে। আর এই রক্ত পিপাসুরা যেকোনো অমানবিক কাজ করতেও ইতস্তত বোধ করছে না।
পৃথিবীতে এখন যেকোনো কাজ করার জন্য মানুষের রক্তের প্রয়োজন হচ্ছে। পৃথিবীর মাটি আজ মানুষের রক্তে ভেজা। চারিদিকে অশান্তি আর স্তুপময় লাশ আর লাশ। পৃথিবীর মানুষের হৃদয় সেই অশান্তির আগুনে দাউ দাউ করে জ্বলছে। সরলের উপর ধূর্তের প্রতারণা, গরীবের উপর ধনীর প্রবঞ্চনা, শোষিতের উপর শাসকের লাঞ্চনা ক্রমশ বেড়েই চলছে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করার মতো মানুষ তার পরিস্থিতির মধ্যে নেই।
মানুষ যদি বুঝতে পারতো তার মহৎ উদ্দেশ্য সম্পর্কে তাহলে তারা কখনই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বার্থে নিজেদের মধ্যে রক্তপাতে জড়াতো না। নদী কখনোই তার পানি নিজের জন্য প্রবাহিত করে না। গাভী কখনো তার দুগ্ধ পান করে না। বনের পশুরাও কখনো নিজেদের প্রজাতির মধ্যে হানাহানি করে না। বনের বাঘ কখনো অন্য কোনো বাঘকে আঘাত করে না। অথচ মানুষ সৃষ্টির সেরা হয়ে এক মানুষ আরেক মানুষকে হিং¯্র জানোয়ারের মতো আঘাত করতে দ্বিধাবোধ করছে না। এর ফলে পৃথিবীর মানুষগুলো একটু স্বস্তিতে বাঁচার জন্য মাথাচাড়া দিয়ে উঠার রুদ্ধশ্বাস ফেলছে। বেঁচে থাকার জন্য শান্তির পথ খুজলেও তারা পথ খুজে পাচ্ছে না। কেননা মানুষের মধ্যে যে আদর্শ চরিত্র প্রয়োজন সেই চরিত্র আর মানুষের মধ্যে নেই। এটাই যদি পৃথিবীর অবস্থা হয় তাহলে সমগ্র মানবজাতির ধ্বংস অনিবার্য হয়ে পড়বে।
পৃথিবীর মাটি, পানি, বায়ু প্রায় সবকিছুই দূষিত হয়ে পড়েছে মানুষের মনুষ্যত্বহীন নোংরা কর্মকান্ডের ফলে। এই অবস্থায় পৃথিবীর মানুষগুলোকে বাঁচাতে হলে সমগ্র মানবজাতির মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। সবার চিন্তা ভাবনার মধ্যে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব গুণাবলিগুলোকে নিয়ে আসতে হবে। আমাদেরকে ভাবতে হবে আমার প্রথম পরিচয় আমি মানুষ। আমার ধর্মই হলো মানব ধর্ম পালন। তাই পৃথিবীর  সব মানুষগুলোর মধ্যে পারস্পারিক সম্প্রীতি, প্রেম, ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সৃষ্টি করতে হবে। আমাদের মনে করতে হবে পৃথিবীর কোথাও না খেয়ে থাকলে আমারেই ভাই-আমারেই বোন, কেউ মারা গেলে আমারই ভাই- আমারেই বোন। বিশ্বের কোথাও কেউ দুঃখ দূর্দশা জীবন যাপন করলে আমাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। কেননা আমাদের এক পিতা-মাতা থেকে সমগ্র মানব জাতির সৃষ্টি হয়েছে। এই মানবতা যখন মানুষের মধ্যে বিরাজ করবে না সে প্রকৃত মানুষ হিসেবে বিবেচিত হবে না। আমাদের এই মানবতা অর্জন করতে হবে, তাহলেই আমরা অন্যের কষ্টে কষ্টিত হবো, অন্যের ব্যাথায় ব্যথিত হবো এবং অন্যের দুঃখে দুঃখিত হতে পারবো এবং নিঃস্বার্থভাবে মানুষের কল্যাণে নিজের জান-মাল ও সম্পদ উৎসর্গ করতে পারবো। তাহলে আমরা কখনোই হায়েনাদের মতো অন্য মানুষের রক্ত চাইবো না।
তাই সমগ্র বিশ্বের মানুষদের মানবতার মাধ্যমে একে অপরে প্রতি হিংসা, বিদ্বেষ, যুদ্ধ-কলহ বন্ধ করে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ সৃষ্টি করে পৃথিবীটাকে সুন্দর করে তুলতে হবে। পৃথিবীর মানুষগুলো জাতি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ঐক্যসূত্রে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি সঠিক আদর্শকে ধারণ করে একটি শান্তিপূর্ণ বাসযোগ্য বিশ্ব তৈরি করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে। তাহলেই পৃথিবীর মানুষগুলোর স্বার্থকতা ফুটে উঠবে। 

লেখক: প্রভাষক, উইন্স কলেজ, রংপুর

এই বিভাগের আরো সংবাদ