আজকের শিরোনাম :

দখল-বেদখলে পরিবেশ ধ্বংস করে জাতিকে শেষ করে দেওয়া হচ্ছে

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৫ মে ২০১৮, ১১:৪২

ড. সা’দত হুসাইন, ০৫ মে, এবিনিউজ : অর্থনীতিবিদদের ভাবনা অনুযায়ী প্রত্যেক ব্যক্তি স্বার্থসচেতন হয়ে থাকে। কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ এবং কর্মসম্পাদনের ক্ষেত্রে নিজের লাভ-ক্ষতি তথা স্বার্থসিদ্ধির প্রতি তার সজাগ দৃষ্টি থাকে। পুঁজিবাদী সমাজ, যাকে একটু কোমল প্রলেপ লাগিয়ে মুক্তবাজার অর্থনীতি বলা হয়, এই অনুকল্পের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এখানে ব্যক্তিকে অর্থনৈতিক এজেন্ট হিসেবে পরিগণিত করা হয়। সে সর্বোচ্চ লাভ করতে চেষ্টা করে। আবার ভোক্তা হিসেবে অল্প টাকায় সর্বোচ্চ উপভোগের সুবিধা পেতে চায়। মোটকথা ভোক্তা হোক, উত্পাদনকারী হোক কিংবা ব্যবসায়ী হোক, সে সব সময় নিজের জন্য সর্বোচ্চ সুবিধা সংগ্রহ করতে প্রয়াসী হয়। অর্থনীতির পরিভাষায় এদের বলা হয় ‘ম্যাক্সিমাইজার’।

অন্য মানুষের, বিশেষ করে সমাজ ও রাষ্ট্রের সাধারণ মানুষের ক্ষতি বা অসুবিধা সৃষ্টি না করে যদি একজন স্বার্থসচেতন ব্যক্তি তার কর্মকাণ্ড তথা কৃত্যাদি থেকে স্র্বোচ্চ সুবিধা সংগ্রহ করতে চায়, তবে কারো আপত্তি থাকার কথা নয়। অসুবিধা হচ্ছে ‘ম্যাক্সিমাইজাররা’ শুধু স্বার্থসচেতনই হয় না, তারা স্বার্থান্ধও হয়ে থাকে। নিজের লাভ বা বৈষয়িক সুবিধার ব্যাপারে তারা অন্য কারো সুবিধা-অসুবিধা, লাভ-ক্ষতি বিবেচনায় নিতে রাজি হয় না। বিশেষ করে যেসব সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান প্রতিবাদ করতে পারে না, বাধা প্রদান করতে পারে না, তাদের বিষয় এরা একবারও হিসাবে আনে না। এসব প্রতিষ্ঠান এবং স্থাপনার ওপর দিয়ে এরা সোজা স্টিমরোলার চালিয়ে দেয়।

স্বার্থান্ধ ব্যক্তির কোপানলে পড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রাকৃতিক পরিবেশ। এর মূল কারণ প্রাকৃতিক পরিবেশ তাৎক্ষণিকভাবে বা স্বল্পসময়ের মধ্যে অত্যাচারের প্রতিবাদ করতে পারে না, অত্যাচারীকে বাধা দেয় না। স্বার্থপর মানুষ স্বার্থসিদ্ধি তথা বৈষয়িক অর্জনের লোভে প্রকৃতিকে বিধ্বস্ত করে। অবারিত অত্যাচারের মাধ্যমে প্রকৃতি-পরিবেশকে ক্ষতবিক্ষত করে। সহ্যের সীমা পেরিয়ে গেলে প্রকৃতি যখন কিছুটা প্রতিশোধ নেয় অথবা বিনষ্ট প্রকৃতি-পরিবেশে যখন নিজেদের জীবন হুমকির মুখে পড়ে তখন নিজেদের লোভ ও কুকর্মের প্রতিফল তারা কিছুটা হলেও টের পায়। লোভের চাপ এত বেশি যে তবু তারা শোধরাতে চায় না। যখন জনপদ ধ্বংস হয়, বনাঞ্চলে দাবানল ছড়িয়ে পড়ে, শহর তলিয়ে যায়, সহায়-সম্পদ ভেসে যায়, জীবজন্তু এমনকি কচি শিশুরা দূষণে ধুঁকতে থাকে, তখনো সম্পদলোভী, অর্থলোভী নীরোদের আনন্দ-বিলাস থামে না।

আসলে প্রকৃতির যে বৈচিত্র্য এবং বিশালতা সে সম্পর্কে স্বার্থান্ধ গোষ্ঠী তো বটেই, সাধারণ মানুষেরও ধারণা সীমিত ও অস্পষ্ট। এ ধারণা স্পষ্ট হওয়া দরকার। অল্প কথায় সাধারণভাবে প্রকৃতি-পরিবেশ বলতে বোঝায় কোনো স্থানের ভূ-প্রকৃতি, জলবায়ু, তাপমাত্রা (শৈত্য-উষ্ণতা), বনজঙ্গল, জীবজন্তু (পাখিসহ), পোকা-মাকড়, কীটপতঙ্গ, নভোস্তর ইত্যাদি। এর প্রতিটি উপাদানের ব্যাপ্তি এত বিশাল যে আমাদের জীবনের প্রতি মুহূর্ত এর আওতায় আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা। ভূ-প্রকৃতিতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে সমভূমি, মালভূমি, বালুমহল, মরুভূমি, মরূদ্যান, দ্বীপাঞ্চল, বালিয়াড়ি, প্রবাল-দ্বীপ, বনভূমি ইত্যাদি। জলবায়ুর জলের মধ্যে রয়েছে মহাসাগর, সাগর, নদী, ঝরনা, জলপ্রপাত, খাল-বিল, হাওর-বাঁওড়, জলাভূমি, হ্রদ, দিঘি, পুকুর, নালা-ডোবা, প্রণালি, প্রবহমান স্রোতধারা আরো কত কী। বায়ুর মধ্যে রয়েছে স্নিগ্ধ বাতাস, দমকা হাওয়া, ঝড়ঝঞ্ঝা, টর্নেডো, সাইক্লোন, বিষাক্ত হাওয়া ইত্যাদি। জীবজন্তু, পাখ-পাখালির বর্ণনা দিয়ে শেষ করা যায় না। এরা আমাদের পাশে থেকে আমাদের জীবনের সঙ্গে মিশে গেছে। পোকা-মাকড়, কীটপতঙ্গ না থাকলে আমাদের বেঁচে থাকা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। বিভিন্নভাবে মানুষ এদের দ্বারা উপকৃত হয়। গাছপালা, বনাঞ্চল আমাদের জীবন ধারণের জন্য অত্যাবশ্যকীয়। গাছ বিষাক্ত গ্যাস গ্রহণ করে আমাদের জন্য অক্সিজেন নিঃসরণ করে। আরো নানাভাবে গাছ আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করে।

 লোভী মানুষ স্বার্থসিদ্ধির জন্য দখল-বেদখলের মাধ্যমে প্রকৃতি ও পরিবেশকে ধ্বংস করে চলেছে। মনে হয় সবচেয়ে বেশি অত্যাচার চলছে জলাধার ও জলধারার ওপর। এর মাধ্যমে দেশের বিপুল এলাকাকে আমরা বসবাসের অযোগ্য করে ফেলেছি। সারা দেশে অসংখ্য নদী-খালের প্রবাহ বন্ধ করে দেওয়ার ফলে নদীর বুকে হাজার হাজার চর জেগেছে, নদীর নাব্যতা হারিয়ে গেছে এবং যাচ্ছে। যে জায়গার ওপর দিয়ে প্রাণবন্ত নদী বয়ে যেত, আজ সে জায়গায় চাষাবাদ হচ্ছে, গাড়ি চলছে, ধূলিঝড় উঠছে। এলাকায় মরুকরণ শুরু হয়েছে। সেচের জন্য এখন নদী-খালের পানি পাওয়া যাচ্ছে না। নদীর বুকে গড়ে উঠছে পাকা ভবন। কয়েক বছরের মধ্যে হয়তো এলাকাটি হয়ে পড়বে ধূলি-ধুসরিত জনপদ। চাষাবাদও হারিয়ে যাবে। পানির অভাবে দক্ষিণ আফ্রিকার একটি শহর পরিত্যক্ত হতে চলেছে। আমাদের দেশেও পানির অভাবে কিছু জনপদ পরিত্যক্ত হতে পারে। তা না হলেও অন্ততপক্ষে সে জনপদে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা দৃশ্যমানভাবে কমে যাবে। একসময়ের খরস্রোতা নদী চরাঞ্চলে পরিণত হবে। নাব্যতা হারানোয় এ অঞ্চল দুর্গম এলাকায় পরিণত হবে।

বাংলাদেশের ক্ষমতাধরদের একটা বড় কাজ হচ্ছে দখলবাজি। দখলবাজরা সবাই যে জাতীয় পর্যায়ে ক্ষমতাধর তা নয়। জেলা-উপজেলা, গ্রাম-ইউনিয়ন, এমনকি পাড়া-মহল্লায় যারা ক্ষমতাবান, তারাও দখলবাজিতে বেশ আগুয়ান। এরা যে সবাই শাসকদলের তা-ও নয়। পেশি-বীর্য প্রদর্শন করে তারা দখল অভিযান শুরু করে। জাতীয় পর্যায়ের প্রবল ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা ভূমি, নদী-নালা, খাল-বিল, মাঠ-ময়দান, রাস্তাঘাট দখলে ততটা উৎসাহী বা উদ্গ্রীব নয়। তারা কমিশনবাজি, টেন্ডারবাজি, নিয়োগ বাণিজ্য, মনোনয়ন বাণিজ্য, বড় অঙ্কের চাঁদাবাজি, কম্পানি বা সংস্থার অংশীদারিতে (চধৎঃহবৎংযরঢ়) বেশি উৎসাহী। এসব কাজে অর্থ সমাগমের পরিমাণ অনেক বেশি। স্থানীয় পর্যায়ের দখলদাররা প্রয়োজনীয় সাহায্য-সমর্থন পায় বিভিন্ন বিভাগের জেলা-উপজেলা, তহশিল বা ইউনিয়ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে। এসব কর্মকর্তা-কর্মচারী লোভে, ভয়ে অথবা আড়ষ্ট জড়তার কারণে দখলদারকে অপকর্মে বাধা দেন না। বরং সময় বিশেষে তাঁরা দখলদারদের সহায়তা করার জন্য মুখিয়ে থাকেন। ক্ষমতাবান দখলদাররা যে তাঁদের প্রতি খুশি রয়েছে এ কথা জেনেই তাঁরা কৃতার্থ বোধ করেন।

দখলদাররা প্রথমে নদী-খালে বাঁশ পুঁতে রাখে। তারপর বাঁশের বেড়া দিয়ে স্রোত আটকায়। ধীরে ধীরে বাঁশের সংখ্যা, বেড়ার সংখ্যা বাড়তে থাকে। কিছু অংশে স্রোত বন্ধ হয়ে নদীর পানি থিতু হয়ে যায়। বিভিন্ন কৌশলে দখলদাররা সে অংশ ভরাট করা শুরু করে। একসময় দেখা যায়, ভবন তৈরি করার উপযুক্ত একটি ভিটি রূপ পরিগ্রহ করেছে। খাল বা নদী সে জায়গায় সংকীর্ণ হয়ে গেছে। আরো কিছুকাল পরে দেখা যায় ভিটিতে স্থাপনা উঠছে। রাষ্ট্রের সম্পত্তি নদীর তীরে ব্যক্তির মালিকানাধীন স্থাপনা স্থায়ীভাবে রূপ নিতে থাকে। একের দেখাদেখি অন্যরাও নদী-খাল দখলের অভিযানে অংশ নিতে থাকে। বিভিন্ন স্থাপনায় শক্ত বাধা পেয়ে নদীর স্রোত স্তিমিত হতে থাকে, নদীতে জন্ম নেয় ডুবোচর। একসময় নদী যায় শুকিয়ে। পরিবেশ যায় বদলে। ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে স্রোতধারা বাধা পেয়ে গতি বদলিয়ে ভিন্নপথে চলতে শুরু করে। নদীর এক তীরে চর পড়ে, অন্য তীরে চলে ভাঙনের তাণ্ডব। এই দুই অভিঘাতই সাধারণ মানুষের জন্য ক্ষতিকর। সারা দেশের বিপুলসংখ্যক নদী-খাল যখন শুকিয়ে যাচ্ছে, পানিশূন্য নদীতে ধু ধু বালু উড়ছে, তরমুজ, চিনাবাদাম, কাঁচা মরিচ আর কুমড়ার চাষ হচ্ছে তখন চিন্তাশীল, বিবেকবান মানুষ জনপদ বিরান হওয়ার আশঙ্কায় শঙ্কিত। লোভী, ক্ষমতাবানরা বোধ হয় সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করছে না। তারা নিজের স্বার্থসিদ্ধিতে সদা ব্যস্ত। জনপদ ধ্বংস হলে তাদের কিছু আসে যায় না।

দখল-বেদখলে নদী-খালের গতিপথ রোধ করে, নদীকে ধু ধু বালুচরে পরিণত করে স্বার্থান্ধ লোভীরা থেমে যায়নি। নানা বর্জ্য ফেলে নদীর পানিকে বিষাক্ত করা হয়েছে। পুঁতিময় দুর্গন্ধে তীরবর্তী এলাকাকে করা হয়েছে অস্বাস্থ্যকর। এসব এলাকায় চলাফেরা করা, বসবাস করা কষ্টকর, ঝুঁকিপূর্ণ। ঢাকার আশপাশের নদীতে নামা যায় না, গায়ে চুলকানি হয়, ঘেন্না লাগে। এই পানিতে মাছ বাঁচে না, মানুষের ব্যবহারের অযোগ্য হয়েছে এসব নদীর পানি। যারা নদী-খালের এই সর্বনাশ করছে, তারা উদাসীন। পত্রপত্রিকার সমালোচনা তাদের গায়ে লাগে না। পরিবেশের কী হলো সেটি তাদের ধর্তব্য নয়। টাকা রোজগার তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য। অন্য কোনো দিকে তাকানোর প্রয়োজন নেই। অসুবিধা হলে তারা আবাসস্থল বদলে নেবে। পরিবারের সদস্যদের বিদেশের বাসস্থানে পাঠিয়ে  দেবে। নিজেও বছরের উল্লেখযোগ্য সময় বিদেশে গিয়ে থাকবে। দেশ থেকে অর্থ যাবে। বিদেশি মুদ্রায় বিদেশে সময় ভালোই কাটবে।

স্বার্থান্ধ দখলদার গোষ্ঠী নদী-খালের মতোই দখল করে নিয়েছে নিচু ভূমি, জলাধার, মুক্তাঙ্গন, খেলার মাঠ। জলাভূমি ভরাট করা হয়েছে, নির্মাণ করা হয়েছে সুরম্য প্রাসাদ। নিচু জমি, জলাধার হারিয়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। এখন পানি সরে যাওয়ার জায়গা নেই। দুই ঘণ্টা বৃষ্টি হলে সব তলিয়ে যায়। রাস্তায় নামে নৌকা, রাবার বোট। মাঠ-ময়দান, মুক্তাঙ্গন ভরে গেছে নতুন নতুন ভবনে। বিশুদ্ধ মুক্ত বায়ুতে নিঃশ্বাস নেওয়ার উপায় নেই। বাচ্চাদের খেলার মাঠ নেই। তারা গৃহবন্দি থাকছে। স্কুলের মাঠ দখল করে ছাগলের বাজার বানানো হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে ছাত্ররা স্কুলে আসছে না। ফলে স্কুলের কক্ষগুলো কার্যত দখল করে নিয়েছে বাজারের মাতবররা। যাদের স্বার্থ জড়িত, স্কুল বন্ধ হয়ে গেলেও তাদের দুঃখ নেই। দুঃখ যা আছে সে তো গরিব-অসহায় মানুষের কপালে। নগরের পার্কগুলো অযতেœ বিবর্ণ হয়ে গেছে। এগুলো চলে গেছে এলাকার বখাটে, পকেটমার ও হাইজ্যাকারদের কবলে। মানুষ এখন ময়লা-আবর্জনা, দুর্গন্ধযুক্ত বিষাক্ত আবহাওয়ার মধ্যে চলাফেরা করতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। পরিণামে তাদের দেহে বাসা বাঁধছে নানা রূপ মরণব্যাধি; অবিবেচক স্বার্থান্ধরা এসব দিকে তাকাচ্ছে না। তারা বিরাট করে গেট লাগিয়ে ওরসের গরু, ছাগল, ভেড়া জড়ো করে বেঁধে রাখছে পার্কের ভেতরে। ওরসের গরু-ছাগল-ভেড়ার মতো জবাই হয়ে যাবে নগরের মানুষ। আয়োজকদের কাছে আসবে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা।

আমাদের নগর-বন্দরের রাস্তাঘাট দখল করে নিয়েছে নানা গোষ্ঠীর লোকজন। এদের মধ্যে রয়েছেন হকার, বাস কাউন্টারের মালিক, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী-কর্মকর্তা। রাস্তার ওপর বাজার বসেছে, হকাররা পসরা সাজিয়ে বসে গেছে, বাসের টিকিট বিক্রি করছে বড় বড় ছাতা অথবা ছোট টংঘর বসিয়ে কম্পানির লোক, রাজনৈতিক দলের অফিস ঘর বানানো হয়েছে ফুটপাত দখল করে, পুলিশ বক্সও রয়েছে কোনো কোনো ফুটপাতে। মনে হয় সবার দখলের অধিকার রয়েছে রাস্তা ও ফুটপাতের ওপর। শুধু চলার অধিকার নেই পথচারীর।

শত শত কোটি টাকা খরচ করে যে মহাসড়ক নির্মাণ করা হয়েছে তা চলে গেছে বাস, ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিকদের দখলে। রাস্তার এক বিরাট অংশকে তারা গ্যারেজ বানিয়েছে। বিরাট বপুর ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, এমনকি কনটেইনার ক্যারিয়ার রাস্তার এক পাশে ঘুমিয়ে আছে। যেখানে চার লাইনে যানবাহন চলাচলের কথা, সেখানে কষ্টেসৃষ্টে আড়াই লেনে তা চলছে। সৃষ্টি হচ্ছে ভয়ানক যানজট। আধা ঘণ্টার পথ পেরোতে সময় লাগছে দুই ঘণ্টা। টঙ্গী থেকে জয়দেবপুরের ভোগড়ার মোড় পর্যন্ত রাস্তা এর প্রকৃষ্ট প্রমাণ। মাত্র ১২ কিলোমিটার রাস্তা পেরোতে সময় লাগে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। কখনো বা আড়াই ঘণ্টা। যে অংশটুক গ্যারেজ হিসেবে দখল করা হয়নি, তারও এক পাশ দখল করে নিয়েছে ওয়াসা বা সিটি করপোরেশন। তাদের লোক খোঁড়াখুঁড়ি করছে। কবে এ খোঁড়াখুঁড়ি শেষ হবে, রাস্তা আবার মেরামত করা হবে তা কেউ বলতে পারে না। রাস্তার মালিক জনগণ হলেও তার দখল স্বার্থান্ধ সুবিধাভোগীদের হাতে। মানুষের অসুবিধা তারা দেখতে অভ্যস্ত নয়। স্বার্থসিদ্ধি হলেই তারা তৃপ্ত। স্বার্থই সব সুখের মূল।

দখল-বেদখলকে দেশের প্রাধান্যযুক্ত সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। যারাই ক্ষমতাসীন হবে, এ সমস্যা দূরীকরণের জন্য সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে তাদের তৎপর হতে হবে। কাগজে-কলমে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত সমস্যা হিসেবে শনাক্ত করলে চলবে না, সমস্যা সমাধানের জন্য প্রাসঙ্গিক আইন-কানুনে লাগসই সংশোধন আনতে হবে। প্রশাসনিক কাঠামোকে কার্যকরভাবে শাণিত করতে হবে। সমস্যার বিশালত্ব ও জটিলতার কারণে শুধু বিভাগীয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর দ্বারা সমস্যা মোকাবেলা করা সম্ভব হবে না। সেহেতু সহায়ক এজেন্ট (ড়ঁঃংড়ঁৎপব)  নিয়োজন যথার্থ হবে। দখল-বেদখলকারীদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংক্ষিপ্ত বিচারব্যবস্থা তথা ভ্রাম্যমাণ আদালত প্রচলন করতে হবে। দখল-বেদখলকে শাস্তিযোগ্য ঘৃণ্য অপরাধ হিসেবে বিচারিক ও গণ-আদালতের কাঠগড়ায় তুলতে হবে। দখলকারীরা বংশানুক্রমে নিন্দিত হওয়ার পাত্র। এদের দুর্বৃত্তপনা নির্বিকারভাবে সহ্য করে আমরা জনপদের অনেক ক্ষতি করেছি। নিজেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এবার বেঁচে থাকার তাগিদে আমাদের প্রতিবাদ করতে হবে। প্রতিরোধ গড়তে হবে। (কালের কণ্ঠ থেকে সংগৃহীত)

লেখক : সাবেক মন্ত্রিপরিষদসচিব ও  পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান

এই বিভাগের আরো সংবাদ