আজকের শিরোনাম :

দুর্নীতি করলে আওয়ামী লীগ করা যাবে না

  সরদার মাহামুদ হাসান রুবেল

১০ জুলাই ২০২০, ২২:৪৯ | আপডেট : ১১ জুলাই ২০২০, ১২:৫৫ | অনলাইন সংস্করণ

২০০৯ থেকে আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির রাজনীতির সাথে জড়িত। কাজ শুরু করেছিলাম প্রচার ও প্রকশনা এবং তথ্য ও গবেষণা উপ-কমিটিতে। তখন এই দুই কমিটিই এক সাথে ছিলো। এই কাউন্সিলে এই উপ-কমিটি সহ শুনেছিলাম আর দুই একটা উপ-কমিটি হয়েছিল। বাকি কমিটির বিশেষ কোন কার্যক্রম আমার চোখে পড়ে নাই। যদিও আমি এমন কোন ব্যাক্তি না আমার চোখে পড়তেই হবে।


প্রচার ও প্রকশনা এবং তথ্য ও গবেষণা উপ-কমিটি তিন বছরে বিভিন্ন প্রকাশনা, ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় অনেক গুলো সেমিনার, মিটিং ও সেম্পুজিয়াম করেছে। এক প্রোগ্রামে টানা তিন দিন একাধিক সেশন সেমিনার হয়েছিল। প্রয়াত নেতা সৈয়দ আশরাফ ভাইয়ের একটি  সেশনে ক্লাস করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। এই সেশনে আশরাফ ভাই আমাদের শিখিয়েছিলেন কিভাবে সাংবাদিক ফেস করতে হবে?একজন রাজনীতিক কিভাবে সংবাদ সম্মেলন করবে ? কিভাবে প্রোগ্রাম শেষে সাংবাদিকবৃন্দের প্রশ্নের মোকাবেলা করবেন? এই প্রোগ্রামের মূল উদ্দেশ্য ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন প্রচার ও বিরোধীদের মোকাবিলার কৌশল সম্পর্কে করণীয়। সেমিনার হলেও আমি মনেকরি এটা ছিল আমার কাছে একটা রাজনৈতিক দিক্ষা। দীর্ঘদিন ছাত্রলীগ করেও এমন সেশন সেমিনার কোনদিন উপভোগ করিনি। অংশগ্রহন করেছিলেন এই উপ-কমিটির সদস্য সহ সকল জেলা কমিটির প্রচার, উপ-প্রচার ও তথ্য ও গবেষণা সম্পাদকবৃন্দ। তিন দিনের এই প্রোগ্রাম গণভবনে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উদ্বোধক ও সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অথিতি ছিলেন স্বয়ং আওয়ামী লীগ সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনা।  আর আক্ষরিক অর্থে দেড় দিন অনুষ্ঠিত  হয়েছিল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে। এই কমিটির সবচেয়ে দামী জায়গার প্রোগ্রাম ছিল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র। তাও মেইন রুম নয় ভেতরের কক্ষ ভাড়া নেওয়া হয়েছিলো। এছাড়া প্রোগ্রাম করেছে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, প্রেস ক্লাব না হয় সিরডাব মিলনায়তনে।


পরবর্তীতে এই কমিটির পক্ষ থেকেই করা হয় আওয়ামী লীগের মুখপত্র 'উত্তরণ'। পত্রিকাটির নামকরণ সহ উদ্বোধন করেছিলেন দেশরত্ন শেখ হাসিনা। দীর্ঘদিন পত্রিকাটির বিজ্ঞাপনে কাজ করেছি। আমাদের সামনে যারা নিজেদের আওয়ামী পন্থী ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিয়ে গর্ববোধ করেন বিজ্ঞাপন চাওয়ার জন্য তাদেরও নাক শিটকানো সহ্য করেছি। মজার ব্যাপার হলো দেশের একজন বিশিষ্ট শিল্পপতি যিনি আমাকে তাচ্ছিল্য করে বলেছে 'এসব প্রচার উপ-কমিটির কাজ কি'? পরের প্রচার উপ-কমিটিতে আমি বাদ পড়লেও তাকেই দেখেছি সদস্য হতে।


তারপর অনেক ইতিহাস হয়ে গেছে। সব বলে আপনাদের ধৈর্য্যচুতি ঘটাবো না। সর্বশেষ গত কাউন্সিলে সদস্য ছিলাম তথ্য ও গবেষণা উপ-কমিটিতে। এই কমিটি একাধিক প্রকাশনা একাধিক সেমিনার করেছে। উপ-কমিটির মিটিং-এ যখন প্রকাশনা ও সেমিনারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো আমরা একে অন্যের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। কে কত টাকা কন্ট্রিবিউট করতে পারবে? এক হাজার থেকে টাকা কালেকশন করেছি।  কালেভাদ্রে কেউ দিয়েছে পাঁচ হাজার। এই কমিটির প্রোগ্রাম করার সবচেয়ে দামী জায়গা ছিল বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ভবন মিলনায়তন। অর্থের অভাবে অনেক প্রোগ্রাম মনের মতো সাজাতেও পারিনি। অনেক গবেষণা মূলক প্রকাশনার কাজ শেষ করেও অর্থের অভাবে প্রিন্ট করতে পারিনি।
যাক সে কথা এতোগুলো কথা কেন বললাম জানেন? প্রথমত নিজেকে জাহির করার জন্য। দ্বিতীয়ত আপনাদের বোঝানোর জন্য, আওয়ামী লীগের প্রোগ্রামে টাকা মেনেজ করা কতটা কষ্টের?


রিজেন্ট হাসপাতালের জালিয়াতি আর প্রতারণার তথ্য উদঘাটিত হওয়ার পর এই গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ ওরফে সাহেদ করিমের সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ছবি আসতে শুরু করেছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে। তিনি কী করে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপ কমিটিতে ঢুকে পড়েছিলেন? সেই প্রশ্নও আসছে রাজনৈতিক মহলে। এসব হাইব্রিড নেতাদের দাপটে দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতা থেকে শুরু করে দলের প্রকৃত ও সিনিয়র নেতারা তাদের কাছে মূল্যায়িত না হয়ে তার পরিবর্তে অনেকটা কোন ঠাসা হয়ে পড়েছে। হাইব্রিড টাউট-বাটপাররা আওয়ামী লীগে জড়িয়ে পড়েছে। তাদেরকে বিভিন্ন জনসভা, কর্মীসভা সহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচীতে জাতীয় নেতাদের সাথে প্রথম সারিতে চেয়ারে বসতে দেখা যায়। সমাজের বিভিন্ন শ্রেনীর টাউট বাটপার নিজেদের গা বাঁচাতে আওয়ামী লীগের ওপর ভর করেছে। এরাই আওয়ামী লীগের বড় ধরনের ক্ষতি করে সুবিধা নিয়ে কৌশলে চলে যাবে বলে মনে করছে দেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষক,সচেতনমহল ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গরা। বিষয়টি নিয়ে এখনই গুরুত্ব সহকারে ভেবে দেখা এবং এ বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব সহকারে নজর দেওয়া একান্ত প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তা না হলে দল ও দেশের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।


গত কাউন্সিলে কিছু উপ-কমিটি দেখলাম প্রোগ্রাম এমন কি মিটিং করেছে দেশের পাঁচ তারা হোটেল গুলোতে। আমরা ভাবতাম এতো টাকা উনারা পান কোথায়? এই টাকার উৎস কি? সাহেদ করিম ধরা খাওয়ার পর অনুভব করলাম এই টাকার উৎস কারা?
দয়াকরে কেউ বিষয়টি ব্যক্তিগত ভাবে নিবেন না। দলের ভেতরে ডানপন্থী প্রতিক্রিয়াশীলদের চক্রান্ত শেষ হয়নি। এই চক্রান্ত আমাদেরই প্রতিহত করতে হবে। ১৯৭২ সালে কুষ্টিয়ায় এক জনসভায় বক্তব্য বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন “আওয়ামী লীগ থেকে দুর্নীতিবাজদের বের করে দাও” ।  সেই আমলে আশি হাজার দুর্নীতির মামলা হয়েছিল। মন্ত্রী থেকে আমলা কেউ সেদিন রেহায় পায় নাই। দেশের মানুষ জাতির পিতার কথা বিশ্বাস করেছিল। তেমনি এইবার শেখ হাসিনার “দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স” নীতিকেও স্বানন্দে গ্রহণ করেছেন দেশের সকল শ্রেণির শান্তিপ্রিয় মানুষ।
আশার কথা হলো দুর্নীতি ও অনিয়মে জড়িতদের সরকার ধরে যাচ্ছে। দুর্নীতিবাজ কে কোন দলের সেটা বড় কথা নয়, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। আর চোর ধরে সরকার কেন চোর হবে? আওয়ামী লীগ ধরে আবার আওয়ামী লীগকে দোষারোপ করা হয়। এটাই হচ্ছে দুর্ভাগ্য। দুঃখজনক হলো, দুর্নীতি মুক্ত সোনার বাংলার স্বপ্ন দ্রষ্টা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে অংকুরে বিনাশ করেছে তার দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নকে। আর বহাল তবিয়তে দেশের মাটিতে বেঁচে আছে দুর্নীতিবাজ অন্যায়কারীরা। কালের প্রবাহে এসব দুর্নীতিবাজদের  রাজনৈতিক, সামাজিক প্রশাসনিক ব্যবস্থায় কেবলই বাহিক্য রং বদল হয়। মুখোশের আড়ালে এদের একটাই পরিচয় ও নাম  'দুর্নীতিবাজ।'
আমি ব্যক্তিগত ভাবে সবসময় একজন নতুন উদ্যোক্তার পক্ষে। বোধকরি কত টাকা পূঁজি আছে বা কি ধরনের সুযোগ-সুবিধা আছে তা নয়, বরং একজন উদ্যোক্তার সবচেয়ে বড় মূলধন তার নতুন কিছু করতে চাওয়ার ইচ্ছা। এক্ষেত্রে কেউই যেন কোন দলের পরিচয়ে বঞ্চিত না হয়। তার মানে এই নয় সরকারি দলের সীল গায়ে লাগিয়ে কেউ যেন জালিয়াতি করার সুযোগ না পায়।


সাম্প্রদায়িকতা থেকে স্বায়ত্তশাসন, স্বায়ত্তশাসন থেকে স্বাধীনতা, স্বাধীনতা থেকে শোষিতের গণতন্ত্র, শোষিতের গণতন্ত্র ও সোনার বাংলা থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশ—আওয়ামী লীগ রাজনীতির এই পাঁচটি রূপান্তর বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সংগ্রামের মধ্যেই আওয়ামী লীগের জীবন এবং সংগ্রামের মধ্যেই তার এক যুগ থেকে আরেক যুগে উত্তরণ ও রূপান্তর।


৭০ বছর বয়সে পৌঁছলেও আওয়ামী লীগ তার তারুণ্য হারায়নি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, যুগান্তরের লক্ষ্য ও কর্মসূচি এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্ব—এই তিনটি রক্ষাকবচের জোরেই আওয়ামী লীগ সংশোধিত হবে, নতুন প্রাণ পাবে। এটাই আওয়ামী লীগের ৭০ বছরের ইতিহাস। এই ইতিহাস অপরাজেয়।

লেখক : আহবায়ক- বঙ্গবন্ধু পরিষদ, ঢাকা মহানগর 

এই বিভাগের আরো সংবাদ