আজকের শিরোনাম :

বাঙ্গালির মুক্তির সনদঃ বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা

  সুভাষ সিংহ রায়

০৭ জুন ২০২০, ১৪:৩৩ | আপডেট : ০৭ জুন ২০২০, ১৪:৫১ | অনলাইন সংস্করণ

১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুর বয়স ৪৬ বছর । আর তখন অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের তখনকার শিক্ষক রেহমান সোবহানের বয়স ২৬ বছর । জনাব রেহমান সোবহান ১৯৬১ সালে লাহোরে ব্যুরো অব ন্যাশনাল রিকনট্রাকশন এর এক সেমিনারে দু’প্রদেশের অর্থনৈতিক বৈষম্য নিয়ে একটি প্রবন্ধ পড়েন। যার শিরোনাম ছিল- “Indivisibility of the national economy of Pakistan”। প্রবন্ধটি পরবর্তীতে ঢাকার পাকিস্তান অবজারভারে ছাপা হয়। রেহমান সোবহানের দুই অর্থনীতি বিষয়ক প্রবন্ধ ব্যাপক সাড়া পড়ে গিয়েছিল এবং সারা পাকিস্তান জুড়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই তরুণ শেখ মুজিবুর রহমান ১৮ -১৯ বছরের লড়াই সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদের বিশাল উন্মেষ ঘটিয়েছিলেন । বাঙ্গালি মধ্যবিত্ত শিক্ষিত সমাজ শেখ মুজিবের পক্ষে এক আট্টা হয়ে যায় । সেসময় আরো কয়েকজন তরুণ অর্থনীতিবিদ তৎকালীণ পাকিস্তানের অর্থনৈতিক বৈষম্য বঞ্চনার বিরুদ্ধে আরো কিছু প্রবন্ধ লেখেন। বাঙালি অর্থনীতিবিদদের এসব প্রবন্ধ সেই সময়কার রাজনৈতিক অঙ্গনেও প্রভাব ফেলে এবং বঙ্গবন্ধু ৬ দফা নির্মাণেও তা সহায়তা করেছিল । ছয় দফার তাৎক্ষণিক পটভূমি হিসেবে ১৯৬৫ সাল ছিল গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তান ছিল সম্পূর্ণ অরক্ষিত। একই বছর মৌলিক গণতন্ত্রের নামে নির্বাচনী প্রহসন বাঙালিদের ভীষণ ক্ষুব্ধ করে। পরের বছর ১৯৬৬ সালের ৫-৬ ফেব্রুয়ারি বিরোধী দলের জাতীয় কনভেনশন লাহোরে অনুষ্ঠিত হয়। এই কনভেনশনে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ছয় দফা কর্মসূচি উত্থাপনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় ইতিহাসের একটি মোড় পরিবর্তনকারী ঘটনা। লাহোরে বাধা পেয়ে তিনি ঢাকার তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দর গণমাধ্যমে ছয় দফার বিভিন্ন দিক ব্যাখ্যা করেন। । বঙ্গবন্ধু ‘৬৬-এর ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে সম্মিলিত বিরোধী দলগুলোর এক কনভেনশনে বাংলার গণমানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের দাবি সংবলিত বাঙালির ‘ম্যাগনাকার্টা’ খ্যাত ঐতিহাসিক ছয় দফা উত্থাপন করে তা বিষয়সূচিতে অন্তর্ভূক্ত করার প্রস্তাব করেন। কিন্তু সভার সভাপতি চৌধুরী মোহাম্মদ আলী এ দাবি নিয়ে আলোচনায় অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করলে ১১ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে ঢাকা বিমানবন্দরে সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন। ২০ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে ছয় দফা দলীয় কর্মসূচি হিসেবে গ্রহণ করা হয়। দলীয় কর্মী বিশেষ করে অপেক্ষাকৃত তরুণ ছাত্রলীগ নেতৃত্বের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। বঙ্গবন্ধু বলতেন, ‘সাঁকো দিলাম, স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতায় উন্নীত হওয়ার জন্য। ১৯৬৬ সালে ১৮ থেকে ২০ মার্চ হোটেল ইডেনে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধু সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং তাজউদ্দিন আহমেদ সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন । এই কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধুর ছয়দফা দলীয় ফোরামে পাস হয়েছিল ।

১৯৬৬ সালের ১০ মের মধ্যে আওয়ামী লীগের ৩৫০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। বঙ্গবন্ধু এটি আঁচ করে সংগঠনকে যতোটা পারেন গুছিয়েছেন। কয়েকটি স্তর করা হয়েছিল। এক স্তর গ্রেফতার হলে আরেক স্তর আন্দোলন সংগঠন করবে এই ছিল কৌশল।

আওয়ামী লীগের এই কাউন্সিল অধিবেশনটি ছিল বাঙালির ইতিহাসের এক বাঁক পরিবর্তন; যা ‘৬৯-এর মহান গণঅভ্যুত্থান, ‘৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচন ও ‘৭১-এর মহত্তর মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি তৈরি করেছিল। স্বভাবসুলভ কণ্ঠে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলো রে’ উদ্ধৃত করে বলেছিলেন, ‘এই আন্দোলনে রাজপথে যদি আমাদের একলা চলতে হয় চলবো। ভবিষ্যৎ ইতিহাস প্রমাণ করে বাঙালির মুক্তির জন্য এটাই সঠিক পথ।’ কাউন্সিল অধিবেশনের পর বঙ্গবন্ধু দেশের এক প্রান্তে ছুটে গিয়েছিলেন এবং তাঁর ছয় দফা মানুষের কাছে ব্যাখ্যা করেছিলেন । ৩৫ দিনে মোট ৩২টি জনসভায় তিনি বক্তৃতা করেন। স্বৈরাচারী পাকিস্তান সরকার ছয় দফার পক্ষে ৭ জুনের সর্বাত্মক হরতাল কর্মসূচির পক্ষে জনমত তৈরিতে ইত্তেফাকের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হয়ে ‘৬৬-এর ১৬ জুন পাকিস্তান প্রতিরক্ষাবিধির ৩২(১) ধারার আওতায় তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়াকে গ্রেফতার এবং দ্য নিউ নেশন প্রিন্টিং প্রেস বাজেয়াপ্ত করা হয়। পরবর্তীকালে ‘৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দৈনিক ইত্তেফাক এবং বাজেয়াপ্তকৃত নিউ নেশন প্রিন্টিং প্রেসটি ফেরত প্রদানে স্বৈরশাসক বাধ্য হয়েছিল।

রাজনীতির ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস হচ্ছে শেখ মুজিবই একমাত্র নেতা যিনি দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমোদন ব্যতিরেকেই ৬ দফা উপস্থাপন করেন । দলের সাধারণ সম্পাদক হলেও শেখ মুজিব ছয় দফা পেশ করেন তাঁর ব্যক্তিগত সুপারিশ হিসেবে। কয়েক সপ্তাহ পরেই আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে তিনি দলের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং ছয় দফাকে অনুমোদন করিয়ে নেন। এখনকার মতো এত পত্রপত্রিকা তখন ছিল না। ফলে প্রচারপত্র, পুস্তিকা প্রভৃতির ওপর নির্ভর করতে হতো। আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের আগে তাজউদ্দীন আহমদের নোট দেওয়া ছয় দফার একটি পুস্তিকা বের হয়। তার কিছুদিন পর দফাগুলোর ব্যাখ্যা দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আর একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেন। ব্যাখ্যাসংবলিত পুস্তিকাটি বঙ্গবন্ধু নিজের হাতে লিখেছিলেন, কাউকে ডিকটেশন দিয়ে লেখাননি, সে কথা বঙ্গবন্ধুর কেবিনেটের খাদ্যমন্ত্রী আবদুল মোমিন তাঁর স্মৃতিচারণে উল্লেখ করেছিলেন। পুস্তিকাটি সেকালে ব্যাপক প্রচারিত হয়েছে। ছয় দফার জনপ্রিয়তার কারণে বঙ্গবন্ধুসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের ওপর নেমে আসে নির্যাতন। তাঁর জনসভাগুলোতে রাতারাতি জনসমাগম বাড়ে। ছয় দফা আন্দোলন দুর্বল করতে আওয়ামী লীগ ও ন্যাপকে বাদ দিয়ে গঠিত হয় পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (পিডিএম)। আট দলীয় এই জোটে ছিল নুরুল আমীন, আতাউর রহমান খানদের জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট, খাজা খয়েরউদ্দিনদের কাউন্সিল মুসলিম লীগ, গোলাম আযমের জামায়াতে ইসলামী, নসরুল্লাহ খান, সালাম খানের পাকিস্তান আওয়ামী লীগ এবং মৌলবী ফরিদ আহমদের নেজামে ইসলাম পার্টি। ছয় দফার পাল্টা তারা একটি আট দফা দেয়। ছয় দফা না দিলে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর দলের নেতাদের ওপর নির্যাতন নেমে আসতো না। সরকার আগরতলা মামলাও হয়তো ফেঁদে বসত না। সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ম্যান্ডেটও ও রকম হতো না। তার পরের ইতিহাস সকলেরই জানা। সেসময়ে যারা ৬ দফার সমালোচনা করেছিলেন তাদের একটা বড় সংখ্যা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিলেন। যেমন সবুর খান। বলেছিলেন তিনি, জনগণ এ ধরনের অনেক আন্দোলন পর্যদুস্ত করেছে। ৬ দফা দেশে অনৈক্য সৃষ্টি করছে। পশ্চিম পাকিস্তানীরা যে ধরনের বিবৃতি দিচ্ছিল তার সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানি সবুরখানদের বিবৃতির তেমন কোন পার্থক্য ছিল না।

১৯৬৬ সালে ৬ জুন বঙ্গবন্ধু কারাগারে বসে যা লিখেছিলেন তা আমরা ‘কারাগারের রোজনামচা’ থেকে পাই। ১৯৬৬-এর ৬ জুন তিনি লিখেছেন- "ত্যাগ বৃথা যাবে না, যায় নাই কোনো দিন। নিজে ভোগ নাও করতে পারি, দেখে যেতে নাও পারি, তবে ভবিষ্যৎ বংশধররা আজাদী ভোগ করবে। কারাগারের পাষাণ প্রাচীর আমাকেও পাষাণ করে তুলেছে। এ দেশের লাখ লাখ কোটি কোটি মা-বোনের দোয়া আছে আমাদের ওপর। জয়ী আমরা হবই। ত্যাগের মাধ্যমে আদর্শের জয় হয়।" ৭ জুন লিখেছিলেন , "মনে শক্তি ফিরে এল এবং দিব্যচোখে দেখতে পেলাম ‘ জয় আমাদের অবধারিত’। কোনো শক্তি আর দমাতে পারবে না।" আবার বঙ্গবন্ধু ৮ জুন তাঁর খাতায় লিখেছিলেন এভাবে "ছয়দফা যে পূর্ব বাংলার জনগণের প্রাণের দাবি-পশ্চিমা উপনিবেশবাদী ও সাম্রাজ্যবাদীদের দালাল পশ্চিম পাকিস্তানের শোষকশ্রেণী যে আর পূর্ববাংলার নির্যাতিত গরীব জনসাধারণকে শোষণ বেশি দিন করতে পারবেনা, সে কথা আমি এবার জেলে এসেই বুঝতে পেরেছি। বিশেষ করে ৭ই জুনের যে প্রতিবাদে বাংলার গ্রামেগঞ্জে মানুষ স্বতঃস্ফুর্তভাবে ফেটে পড়েছে, কোনো শাসকের চক্ষুরাঙানি তাদের দমাতে পারবে না। পাকিস্তানের মঙ্গলের জন্য শাসকশ্রেণীর ছয়-দফা মেনে নিয়ে শাসনতন্ত্র তৈয়ার করা উচিত। যে রক্ত আজ আমার দেশের ভাইদের বুক থেকে বেরিয়ে ঢাকার পিচঢালা কাল রাস্তা লাল করল, সে রক্ত বৃথা যেতে পারে না। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য যেভাবে এ দেশের ছাত্র-জনসাধারণ জীবন দিয়েছিল তারই বিনিময়ে বাংলা আজ পাকিস্তানে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা। রক্ত বৃথা যায় না। যারা হাসতে হাসতে জীবন দিল, আহত হলো, গ্রেপ্তার হলো, নির্যাতন সহ্য করল তাদের প্রতি এবং তাদের সন্তান-সন্ততিদের প্রতি নীরব প্রাণের সহানুভূতি ছাড়া জেলবন্দি আমি আর কি দিতে পারি! আল্লাহর কাছে এই কারাগারে বসে তাদের আত্মার শান্তির জন্য হাত তুলে মোনাজাত করলাম। আর মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম, এদের মৃত্যু বৃথা যেতে দেব না, সংগ্রাম চালিয়ে যাবো। যা কপালে আছে তাই হবে। জনগণ তাদের দাম দেয়। ত্যাগের মাধ্যমেই জনগণের দাবি আদায় করতে হবে।”৭ জুন সম্পর্কে পরবর্তীকালেও বিস্তারিত কেউ লেখেন নি। ৮ জুন ইত্তেফাক, সংবাদ বন্ধ থাকে। সংবাদ ৯ তারিখে নাটকীয়ভাবে শিরোনাম দেয়-‘আমাদের নীরব প্রতিবাদ’-“যে মর্মান্তিক বেদনাকে ভাষা দেওয়া যায় না, সেখানে নীরবতাই একমাত্র ভাষা। তাই গতকল্য সংবাদ প্রকাশিত হইতে পারে নাই। আমাদের এই নীরব প্রতিবাদ একক হইলেও আমাদের পাঠকরাও শরীক হইলেন, ইহা আমরা ধরিয়া লইতেছি।” ৭ জুন পুলিশের গুলিতে শহিদ হন ১১ জন। দু’জনের কথা সবাই বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। একজন মনু মিয়া। বেঙ্গল বেভারেজের শ্রমিক। বেঙ্গল বেভারেজ ছিল তেজগাঁ শিল্প এলাকায়। মনু মিয়ার বাড়ি ছিল সিলেট। অন্যজন আজাদ এনামেল অ্যান্ড অ্যালমুনিয়ামের শ্রমিক আবুল হোসেন। বাড়ি নোয়াখালি। তেজগাঁ স্টেশনের কাছে ইপিআরের সামনে বুক পেতে দাঁড়ান। তারা তখুনি গুলি করে তাঁকে হত্যা করে। নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের কাছে বিক্ষোভের সময় পুলিশের গুলিতে মারা যান ৬ জন। গ্রেফতারের সংখ্যা ছিল ১৫০০-এর বেশি। শ্রমিক এলাকাগুলিতে সন্ধ্যায় কারফিউ জারি করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু ৭ জুন জেলে ভোরবেলায় উঠলেন। খবর পেলেন হরতাল চলছে। এবং "এই সংগ্রাম একলা আওয়ামী লীগই চালাইতেছে।" সারাদিন টেনশনে কেটেছে তাঁর। লিখেছেন- “হরতাল যে সাফল্যজনকভাবে পালন করা হয়েছে সে কথা সকলেই বলছে। এমন হরতাল নাকি কোনোদিন হয় নাই, এমনকি ২৯ শে সেপ্টেম্বরও না*। বঙ্গবন্ধু ৭ জুন তাঁর খাতায় লিখেছিলেন , "তবে আমার মনে হয় ২৯ শে সেপ্টেম্বরের মতোই হয়েছে হরতাল।গুলি ও মৃত্যুর খবর পেয়ে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেছে। শুধু পাইপই টানছি-যে একটি তামাক বাইরে আমি ছয় দিনে খাইতাম, সেই টি এখন চারদিনে খেয়ে ফেলি। কি হবে? কি হতেছে? দেশকে এরা কোথায় নিয়ে যাবে, নানা ভাবনায় মনটা আমার অস্থির হয়ে রয়েছে।...”

১৯৬৬ সালের ৭ জুন থেকে ২০২০ সালের ৭ জুন ৫৪ বছরের ব্যবধান । রাজনীতির অনেক অনেক ঘটনা দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে এত গুলো বছর পার করেছি । কিন্তু ১৯৬৬ সালে যেমন আওয়ামী লীগকে একাই পথ চলতে হয়েছে ; আজও আওয়ামী লীগকে একাই পথ চলতে হচ্ছে । বাংলাদেশে ডান বাম মধ্যপন্থী অনেক রাজনৈতিক দল আছে কিন্তু একমাত্র আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ - সহযোগী সংগঠন ছাড়া ৭ জুন দিবস পালন করে না । এটা অন্যান্য রাজনৈতিকদলের আত্মহননমনস্কতা । আজ আমরা যে সমৃদ্ধ অগ্রগতির যে জায়গায় এসে পৌঁছেছি তা বঙ্গবন্ধু ছয়দফার আন্দোলন থেকে উৎসরিত । এই মর্মকথা মর্মে ধারণ করতে হবে । গত এগারো বছর ধরে নানা প্রতিকূলতা পায়ে দলে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় তিন গুণ করেছেন, স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করেছেন তাঁকেই নতুন প্রজন্ম সমর্থন দেবে ।

পাদটীকা : নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে সম্মিলিত বিরোধী দলের আহ্বানে (১৯৬৪ সালের ) ২৯ সেপ্টেম্বর পূর্ব পাকিস্তানে পূর্ণ হরতাল পালিত হয়। পশ্চিম পাকিস্তানেও হরতাল হয়েছে। এই প্রথম পূর্ব বাংলায় রেলের চাকা সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে। হরতালের সময় অসংখ্য শোভাযাত্রা ও জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। বিকেলে পল্টন ময়দানে ২ লাখ লোকের এক জনসভায় মওলানা হামিদ খান ভাসানী সভাপতিত্ব করেন। প্রদেশের সর্বত্র হরতাল ছিল শান্তিপূর্ণ। রাজধানীতে কাঁচা সবজির দোকানও খোলেনি। কোথাও পিকেটিংয়ের প্রয়োজয় হয়নি। বদরগঞ্জ, উলিপুর, গাইবান্দা, ঝালকাঠি, পাবনা, নোয়াখালী, ফরিদপুর, সুনামগঞ্জ, ঢাকা, ফেনী, কুষ্টিয়া, বগুড়া, কুমিল্লাসহ সর্বত্র হরতাল পালিত হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে মিছিল ও জনসমাবেশ হয়। এগুলোতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফাতেমা জিন্নাহর প্রতি সমর্থন জানানো হয়।

সূত্র : সংবাদ ও আজাদ, ৩০ সেপ্টেম্বর এবং ৩ ও ৪ অক্টোবর ’৬৪

লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক

সৌজন্যে : পিআইডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ