বহমান সময় : ফজলুল হক
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০১৮, ১৪:০০
ঢাকা, ০৯ জুলাই, এবিনিউজ : (এক). আল্লাহ চাইলে যে কোন মানুষকে সম্মানিত করতে পারেন। গুণী ব্যক্তিদের সাথে বসার সুযোগ করে দিতে পারেন। ভাল ভাল খাবার খাওয়াতে পারেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের ৩০ তম বার্ষিক সভা বৃহস্পতিবার ২৮ জুন (২০১৮) অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আমন্ত্রণ পেয়ে উপরের কথাগুলি আমার মনে এসেছিল। মাননীয় উপাচার্যকে ধন্যবাদ, এন্তেজাম ভাল হয়েছে। খানা টেস্টি হয়েছে। অনেক দিন মনে থাকবে। এই বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের গর্ব। অধিবেশনের প্রথম অংশে চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী প্রায় ৩০ পৃষ্ঠার সুলিখিত ভাষণ পাঠ করেন। ড. ইফতেখার কবি, লেখক এবং ভাল বক্তা। তথ্য বহুল এই ভাষণের বহুল প্রশংসা করেছেন আলোচকগণ। ভাষণ চলাকালে নাস্তা পরিবেশন করা হয়েছে। মুখরোচক নাস্তা। উপাচার্য স্মার্ট এবং বুদ্ধিমান মানুষ। দীর্ঘ বক্তব্যের মাঝখানে তিনি থামেন। বলেন, আমরা ভাগ্যবান, এই সভায় কষ্ট করে উপস্থিত হয়েছেন চবির সাবেক উপাচার্য, বর্তমানে ইউজিসির সম্মানিত চেয়ারম্যান মান্নান স্যার। তিনি দুপুর একটায় চলে যাবেন। আমার ভাষণ যখন শেষ হবে, স্যার তখন হয়ত গাড়িতে থাকবেন। স্যার বলেছেন, উনি খাবেন না। খানা প্যাকেট করে দেবো, যাতে স্যার– এয়ারপোর্টে পৌঁছে খেতে পারেন। আমি কিছুক্ষণের জন্য আপনাদের কাছে ছুটি চাচ্ছি, স্যারকে অনুরোধ করছি উনার মূল্যবান বক্তব্য দেয়ার জন্য। আমরা স্যারের বক্তব্য শোনা থেকে বঞ্চিত হবো কেন? প্রফেসর মান্নান মাইকের সামনে এলেন, হাসলেন। বল্লেন, আমি সিনেটরদের সাথে বসে অনুষ্ঠান উপভোগ করতে চেয়েছিলাম। ভিসি সাহেব গতকাল ঢাকায় ইউজিসি অফিসে ছিলেন। গতকাল ইউজিসি অফিসে সভা ছিল। উনি আমার সাথে ছিলেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আমার প্রিয় প্রতিষ্ঠান। উপাচার্য অনুরোধ করলে আমি তাঁকে “না” বলতে পারি? এই বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। ১৯৭৩ সালে আমি ৪৫০ টাকা মাসিক বেতনে ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেছিলাম। প্রফেসর মান্নানের মতো আমিও ৭৪ সালে ৪৭৫ টাকা মাসিক বেতনে সরকারী কমার্স কলেজে ব্যবস্থপনা বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলাম। আমি ৮০ এর দশকে চবি সিনেটের সদস্য ছিলাম। এবারের সিনেট সভা প্রাণবন্ত মনে হলো। আমার খুব ভাল লেগেছে।
প্রফেসর মান্নান আমার ক্লাসমেট। ঘনিষ্ঠ বন্ধু। সভা শুরু হওয়ার আগে তাকে আমি উপাচার্য মহোদয়ের অফিসে দেখতে পাই। তাকে জিজ্ঞেস করি, আজ চাটগাঁয় থাকবে? মান্নান মাথা নাড়ে, থাকবো না। বলে, ১টায় চলে যাবো। জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন শেষ হয়েছে। বাজেট পাশ হয়েছে।’ রেওয়াজ অনুসারে বাজেটোত্তর ডিনার হয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ডিনারের তারিখ একটু এগিয়ে এনেছেন। আজ সন্ধ্যা সাড়ে ছটার আগে আমাকে ঢাকায় ডিনার ভ্যানুতে ঢুকে যেতে হবে।
হালকা মেজাজ ও হাস্যরসের মধ্য দিয়ে বক্তৃতা শুরু করলেন ইউজিসি চেয়ারম্যান। মান্নান এই বিশ্ববিদ্যালয়ের খুব জনপ্রিয় শিক্ষক। ছাত্রছাত্রীরা তার প্রশংসা করে। ভাল বক্তৃতা করে, ভাল লেখক, টিভি টক্ শোতে মন মাতানো বক্তা। মান্নান সাহেব বল্লেন, উপাচার্য মহোদয়ের লিখিত ভাষণ তথ্য –সমৃদ্ধ। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জিজ্ঞেস করলেন, ছাত্রছাত্রীদের কয়টি পুরস্কার দিবেন? আমি (মান্নান) বল্লাম, সাড়ে তিনশ এর কাছাকাছি। সচিব মহোদয় মাঝখানে পাঁচ মিনিট বক্তৃতা দিলেন, কারণ পুরস্কার দিতে দিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ক্লান্ত হচ্ছিলেন। মানুষ কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারে? উপাচার্য অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁেিড়েয় দীর্ঘ ভাষণ পাঠ করছেন। উনার ক্লান্ত হওয়ার কথা। বুদ্ধি করে আমাকে ডেকেছেন। এখন উনি জিরিয়ে নিতে পারবেন। পানি খেয়ে নিতে পারবেন। সবাই জোরে করতালি দিয়ে মান্নান সাহেবের হিউমারাস বক্তব্যকে স্বাগত জানালেন। দেখলাম, সাংবাদিকরা মান্নানের বক্তব্যের নোট নিচ্ছে। আমাদের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কথা মনে পড়লো, উনার বক্তৃতা খুব পছন্দ করি। বক্তব্য উপস্থাপনের সময় এমন হাস্যরসের সৃষ্টি করেন, যার তুলনা আমি খুঁজে পাইনা।
মান্নান সাহেব বল্লেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আসল কাজ গবেষণা করা। গবেষণা করে জ্ঞান সৃষ্টি করা। নলেজ ডিসিমিনেশন এবং নলেজ এপলিকেশন। এমন গবেষণা দরকার যার সুফল বিশ্ব পাবে। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের অব কাঠামো আছে, জনবল আছে, সরকার তহবিল দিচ্ছে। তাকে চলতে হবে, তাই সে চলছে। এটা আমরা আশা করি না। অন্তত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সে রকম হবে না। আরেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা ভাবুন, যে দুনিয়াকে বদলে দিচ্ছে, দেশে কৃষি, শিল্পকে এগিয়ে দিচ্ছে, তার গবেষণা নিয়ে আমরা গর্বিত। মানুষ গবেষণার সুফল পাক এটা আমরা চাই। একটা বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞানের কেন্দ্রবিন্দু। গবেষণামানুষের জন্য। কে ভাল করছে, না করছে আমরা পার্থক্যটা বুঝতে পারি। অনেক করতালির মধ্যে মান্নান সাহেব বল্লেন, টন টন কাগজ আমাদের অফিসে দরকার হয়, অথচ এখন তথ্য সংরক্ষণের জন্য বিশাল অনলাইন ভান্ডার রয়েছে। কাগজ নিয়ে বসে থাকার সময় কোথায়? এখন পেপারলেস অফিস চাই। দিনে কয়েকবার মেইল চেক করুন। একজন ছুটির আবেদন দিয়েছে, আপনি বললেন, পাইনি। অফিস আদেশ পাঠানো হয়েছে, আপনি বল্লেন, পাইনি। এখন পেপার কম্যুনিকেশনের আশা করছেন কেন? কাগজের জন্য অপেক্ষা কেন? মেইলে কম্যুনিকেশন হচ্ছে। নিজেকে বদলাতে হবে। মান্নান বললেন, আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্যুনিকেশন পড়াতাম। যিনি ম্যাসেজ গ্রহীতা তিনি সহজ প্রকাশ চান। দীর্ঘ সময় ধরে কথা শুনতে চাননা। উপাচার্যের এই লিখিত ভাষণ চমৎকার। এর মেইন মেইন অংশ পড়ে দিলে ভিসি সাহেবের কষ্ট হতো অনেক কম। একজন সিনেটর হেসে বল্লেন, ভিসি সাহেবের বক্তব্য শুনতে ভাল লাগে। মান্নান সাহেবের বক্তৃতা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের দিন বদলের মনোভাবের ইংগিত তার বক্তব্যে ছিল। সকল দর্শক স্রোতা তার প্রশংসা করেছে। ইনারা আমাদের চাটগাঁর গর্ব। মান্নান সাহেবের বক্তব্য শেষ হলে, উপাচার্য মহোদয় মাইক নেন। হেসে বল্লেন, ড. মনজুরুল আমিনের অনুরোধ শিরোধার্য। আমি বক্তব্য অব্যাহত রাখব। তিনি ভাষণ পড়া শুরু করলেন। উপাচার্যের ভাষণে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকান্ডের বিশদ বিবরণ আছে। এমন সুলিখিত ভাষণ কম শুনেছি। বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকা এটির অংশবিশেষ পরের দিন ছেপেছে। এস এম ফজলুল হক এবং প্রফেসর ড. শামসুদ্দিনসহ আরো অনেক সিনেট সদস্য বলেছেন, ভিসি সাহেবের বক্তব্য ভাল হয়েছে।
(দুই). আমরা সরকারকে বাহবা দিই। বাংলাদেশে এখন উদ্ভাবকের জন্য খুব ভাল সময়। সরকারের মনোভাব পজেটিভ। অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। আমরা– লেখকদের কাজ হলো এস্টাব্লিশমেন্টের সমালোচনা করা। ফরমায়েশী লেখক এবং একচোখা লেখক– সরকারের কোন উপকার করতে পারেনা। কিন্তু আমি কি রকম সমালোচনা করব? ভালকে ভাল– খারাপকে খারাপ বলব। সরকারের কি কোন অর্জন থাকতে পারেনা? বাংলাদেশ তথ্য প্রযুক্তিতে অনেক এগিয়েছে।স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া দেখুন। সব অন–লাইনে হচ্ছে। টেন্ডার– এখন ই–টেন্ডার। ই–কমার্স–এ বেচাকেনা হচ্ছে। বিল পেমেন্ট হচ্ছে অন–লাইনে। ভর্তি বাণিজ্য, টেন্ডারবাজী কমানোর সূযোগ আছে। লেখাপড়ায় ক্লাসে ডিজিটাল কনটেন্ট উপস্থাপন করা হচ্ছে। দক্ষিণ কোরীয়া আইসিটিতে এগিয়ে আছে। দক্ষিণ কোরীয়ার তরুণ উদ্যোক্তারা বেশ খুশী। সেখানে তরুন তরুণীদের জন্য নানা সুযোগ আছে। সবাই “জবের” পেছনে ছুটছেনা। তারা প্রযুক্তিকে কাজে লাগাচ্ছে। তারা নিজেদের বদলে ফেলছে।আমাদের বাংলাদেশের অবস্থাও আশাব্যঞ্জক। “বাংলাদেশ কিছুই পারেনা”– এমন অবজ্ঞা মিশ্রিত বুলি এক ধরনের বুদ্ধিজীবীর মুখে লেগে আছে। এটা তাদের মুদ্রাদোষে পরিণত হয়েছে। প্রগতিশীল চিন্তার সরকার, মানে “খারাপ” সরকার, কিন্তু এসব মিথ্যা প্রমানিত হয়েছে। বাংলাদেশ এখন সব পারে। আমি বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ কোরীয়ার কয়েকটি স্টার্টআপ উদ্যেগের কেসস্টাডি নিয়ে কাজ করেছি। আমি অবাক হয়ে দেখেছি, বাংলাদেশ সরকারের অনেক পদক্ষেপ ভারত, সিংগাপুরের চাইতেও কার্যকর। দক্ষিণ কোরীয়ার ক্ষেত্রে লক্ষণীয় হলো, উদ্ভাবন আর সৃজনশীলতাকে নিয়ে তরুণরা এগুচ্ছে, উদ্ভাবনকে কাজে লাগাচ্ছে, তেমন পরিবেশ সেখানে তৈরী হয়েছে। দক্ষিণ কোরীয়ার সরকার ও তাদের তরুনদের উদ্যোগকে সহায়তা দিচ্ছে। সরকার তরুণদের অর্থ দিচ্ছে। মেন্টরিং করছে, আইনি সহায়তা দিচ্ছে। তরুণ তরুণীদের সামাজিক ভাবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য সহায়তা দিচ্ছে। কোরীয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা হয়। সেটা কেবল পেপার ওয়ার্ক নয়। সেটা পদোন্নতি পাওয়ার হাতিয়ার নয়। কারো সুবিধার জন্য যেন তেন থিসিস লেখা নয়। গবেষকগণ কৃষি, শিল্প ক্ষেত্রে নানা মাত্রায় গবেষণালবব্ধ জ্ঞানকে কাজে লাগানোর সূযোগ সৃষ্টি করেছেন– এটা আমরা দক্ষিণ কোরিয়ার ক্ষেত্রে দেখতে পাই। নলেজ শেয়ারিং, নলেজ এপলিকেশন– খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে তারা মনে করে। এটা যে কোন দেশের তরুণদের “নলেজ–বিপ্লবে” সামিল হতে সাহস যোগাবে। তরুণদের কাজ “টেন্ডারবাজী” করা, জনগণকে জিম্মি করে নিজের প্রতিপত্তি বৃদ্ধি করা নয়। তাদের কাজ হলো জ্ঞানভিত্তিক সমাজ নির্মাণের জন্য কাজ করা। আমার কথা, কার পছন্দ হলো, না হলো– তাতে আমার কিছু যায় আসেনা। রাজনীতি করে আপনি গ্রুপ সৃষ্টি করবেন, আপনার রাজনৈতিক বলয় তৈরী করবেন, জনগণকে কথা বলতে দিবেননা, এমন অবস্থা সৃষ্টি করবেননা। তখন আমাদেরকে লিখতে হবে– এই রাজনীতি চাইনা। “নলেজ–বিপ্লব” বিরোধী রাজনীতিকে মানুষ ছুড়ে ফেলে দিবে।
উদ্ভাবন ও সৃজনশীলতাকে কাজে লাগানোর অনেক সূযোগ আছে। সিংগাপুর, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া এমনকি ভারত, এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে। তরুণদের উদ্ভাবনী শক্তি ও সৃজনশীলতাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলিকে নলেজ– বেইজ্ড করতে হবে। শিক্ষায় উৎকর্ষতা আনতে হবে। এটা সমাজের চাহিদা পুরণে সক্ষম হতে হবে। বেকার তৈরীর কারখানা বন্ধ করে দিতে হবে। জিপিএ–৫ বিক্রি করে মাফিয়ারা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে রাহুমুক্ত করতে “মাফিয়াদের” হটাতে হবে। শিক্ষক হবেন যথার্থ শিক্ষক। ডাক্তার হবেন– যথার্থ ডাক্তার। ছাত্ররা হবে যথার্থ ছাত্র। কোন দলের ছাত্র রগ কাটে। কোন দলের ছাত্র মাথা ফাটায়। সরকারী দল করেন বলে– শিক্ষক, ডাক্তার বা অন্য পেশাজীবী “চেঙ্গিশ খাঁর” মতো ঔদ্ধত্ত্য তাদের মানায়না। সংযত হোন। পেছনের দিকে তাকান। সীমার মধ্যে থাকুন। স্বেচ্চাচারিতা চাইনা। নিষ্ফলুষ রাজনীতি চাই। এদেশে প্রাইভেট সেক্টরে তরুণ উদ্যোক্তারা অসাধ্য সাধন করেছে। তরুণরা চাকুরি চায় না, তারা চাকুরী দিতে পারে। আমাদের বুয়েট, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষনায় ভাল করেছে। সিংগাপুরের ন্যাচারাল রিসোর্স কি আছে? দেখতে হবে, তারা কি করে এত উন্নতি করেছে? দক্ষিণ কোরিয়ার রিসোর্স কি? আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ কি কম? সিংগাপুর, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া– তারা কি পুঁজির উপর, সম্পদের উপর ভাসতেছিল? সৌদি আরবের তেল আছে, তেল বেচে সে পেট্রো ডলার কামায়। সিংগাপুরের কিছু নাই, বাট সে ডলারের উপর ভাসছে। আমাদের অবস্থাও বদলাচ্ছে। যখন হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় রোগী মরে, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন ছাত্র সন্ত্রাস করে, স্কুলের ছাত্র হয় গ্যাং স্টার– তখন মন খারাপ হয়ে যায়। এসব হাসপাতাল, স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের দরকার কি?
(তিন). বিশ্বের সব চাইতে বৃহৎ টেক্সিসেবা দাতা কে? আপনি বলবেন– উবার। বাট্ উবারের কোন নিজস্ব টেক্সি নাই। সেতো ভালই চালাচ্ছে? বিশ্বের সবচাইতে বেশী পরিচিতি প্রাপ্ত সামাজিক যোগাযোগের অনলাইন মাধ্যম কোনটি? আপনি বলবেন, ফেসবুক। তো, বেশ ভাল, ফেসবুক ছাড়া আপনি চলতে পারবেন? আমাদের এক ছাত্র কাঁদতেছে। কি হচ্ছে? মোবাইলের মাদারবোর্ড বসে গেছে। তাতে কি? সে কাঁদতে কাঁদতে বলে, ফেসবুক বন্ধ। আমরা সবাই এই ফেসবুকে লিখি। আমার এই কলাম ছাড়া অন্য প্রায় সব কলাম ফেসবুকে পোস্ট করা হয়। ফেসবুকের অনেক পোস্ট আজাদীতে ছাপানো হয় (আমার পোস্ট ছাড়া)। আমরা কনটেন্ট তৈরী করি। কিন্তু “ফেসবুক” সে নিজে এক লাইন কনটেন্ট তৈরী করেনা। বিশ্বের সব চাইতে বড় দোকান কোনটি? আপনি বলতে পারেন– আলীবাবা। কিন্তু তার কোন গুদাম ঘর নাই। বিশ্বের সব চাইতে চালু পর্যটন আবাসন স্পট কোনটি? সেরা আবাসন উদ্যোগ কোনটি? এটি হচ্ছে– এয়ারবিএনবি। তার নিজস্ব হোটেল নাই। ডরমিটরি, লজ নাই। বাংলাদেশের এটা নাই, সেটা নাই, শুনে কাজ নাই। গঠনমূলক রাজনীতি ও উদ্ভাবনী শক্তির ব্যবহার, দক্ষতা, সুশাসন– নতুন দিগন্ত উম্মোচন করতে পারে।আমরা নিশ্চিত, কিছু ডাক্তার নামধারী, শিক্ষক নামধারী, ছাত্র নামধারী, রাজনীতিবিদ নামধারী, ব্যবসায়ী নামধারী– স্বেচ্ছাচারী মানুষকে ট্যাকল করতে পারলে বাংলাদেশ অচিরে সিংগাপুর, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়াকে ছাড়িয়ে যাবে। উদ্ভাবনী ও সৃজনশীল চিন্তার, পরিশ্রমী মানুষকে সামনে এগুতে সাহায্য করুন। (দৈনিক আজাদী থেকে নেয়া)
লেখক : সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ, অধ্যক্ষ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ
এই বিভাগের আরো সংবাদ