আজকের শিরোনাম :

করোনা : নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষদের তিন মাসের বাসাভাড়া মওকুফে প্রজ্ঞাপন জারি করা সময়ের দাবি

  আতিক আজিজ

২৫ মার্চ ২০২০, ১৯:২৫ | অনলাইন সংস্করণ

বৈশ্বিক মহামারি রূপ নেয়া করোনাভাইরাসে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হন ৩৯ জন। মৃতের সংখ্যা ৪। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৫ জন। আইসোলেনশনে আছেন ৪০ জন। এ ছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে ৪৬ জন রয়েছেন বলে আইইডিসিআর জানিয়েছে।
বিশ্বজুড়ে ১৮ হাজার ৮৯১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্ত সংখ্যা ৪ লাখ ২২ হাজার ৬১৩। আক্রান্ত মধ্যে চিকিৎসায় সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ৮ হাজার ৮৭৯ জন। বিশ্বের ১৯৭টি দেশ ও অঞ্চলে করোনার প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে।


বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি এখন বিপদজনকভাবে ছড়িয়ে পড়ার পর্যায়ে রয়েছে বলে মনে করেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। সেক্ষেত্রে শুধু ঢাকা নয় পুরো দেশকেই লকডাউন করার প্রয়োজন হতে পারে। গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলাকে লকডাউন বা অবরুদ্ধ করা হয়েছে রোববার।


সম্প্রতি দেশে আসা দুই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সেখানে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নেন। তারই প্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত এসেছে। এর আগে মাদারীপুরের শিবচর এবং ঢাকার টোলারবাগ এলাকাও অবরুদ্ধ করা হয়। পরিস্থিতির কারণে ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জের গার্মেন্টস পল্লীর পোশাক কারখানা গত রোববার বিকেলে বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।


সোববার বাংলাদেশে ৩৯ জন করোনা সংক্রমিত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিকে বাংলাদেশ করোনা মহামারীর তৃতীয় সপ্তাহে প্রবেশ করছে। প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘‘এটাকে বলা হয় ‘সুপার স্প্রিডিং’ বা বিপদজনকভাবে ছড়ানোর পর্যায়। কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত মহামারীর বিস্ফোরণ ঘটার আশঙ্কা থাকে।’’

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন যদি তাই হয়, তাহলে ঢাকাসহ আরো অনেক এলাকাকেই অবরুদ্ধ করে ফেলতে হবে। এ পর্যায়ে এমনিতেই ঢাকাসহ শহরগুলোতে যানবাহন চলাচল কমে গেছে। তৈরি পোশাক কারখানার রফতানি কার্যাদেশ বাতিল হচ্ছে প্রতিদিন, কমছে উৎপাদন। কাজ কমে যাচ্ছে শ্রমজীবী মানুষের। এমনকি অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে গত মাসের বেতন এখনো দেয়া হয়নি। অন্যদিকে শহর বা দেশ অবরুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হলে প্রায় সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধ হয়ে যাবে। এই পরিস্থিতি নি¤œবিত্ত মানুষ কিভাবে দিনযাপন করবেন?

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) প্রতিরোধে লকডাউন করে চীন অসাধারণ সাফল্য পেয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশের বাস্তবতায় লকডাউন করার আগে আটকে পড়া মানুষদের পর্যাপ্ত খাবার, পানি এবং ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করার কথা ভাবতে হবে। কারণ অনেক মানুষই দিন আনে দিন খায়। আবার টাকা থাকলেও তো অনেকেই খাবার কিনতে বের হতে পারবে না। তাই মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে হতদরিদ্রদের কথা ভাবতে হবে। অন্যথায় উপকারের চেয়ে অপকার হয়ে যেতে পারে।

যারা চাকরিজীবী নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত সবাই সঙ্কটে আছেন। বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষও।। বিশ্বব্যাংকের হিসেবে বাংলাদেশে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করেন। যারা দিন আনে দিন খায়। তার ওপর রয়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। বাংলাদেশে যারা চাকরিজীবী নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত করোনায় সবাই সঙ্কটে আছেন। 
নিম্নবিত্তদের জন্য এনজিও ঋণের কিস্তি  ছয় মাসের জন্য শিথিল করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ)। এর ফলে আগামী জুন পর্যন্ত ঋণগ্রহীতা কিস্তি পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে সেটিকে খেলাপি বা বিরূপমানে শ্রেণিকরণ করা যাবে না। গত ২২ মার্চ সংস্থাটি এ বিষয়ে একটি সার্কুলার জারি করে। এজন্য মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) প্রসংশার দাবি রাখে।
নিম্নবিত্তদের জন্য এনজিও ঋণের কিস্তি  ছয় মাসের জন্য শিথিল করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) মতো  অন্তত তিন মাসের বাসা ভাড়া বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল ব্যতীত যেনো প্রত্যেক বাসার মালিকগণ ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে না নেন তার জন্যও সরকারকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা অতীব জরুরি বলে মনে করছেন নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত ভাড়াটিয়াগণ। মানবিক দিক বিবেচনা করেই সরকারকে নিম্ন বিত্ত ও মধ্যবিত্তদের তিন মাসের বাসাভাড়া মওকুফ করার ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারের পাশাপাশি সারাদেশের বাসা মালিকদেরকে এব্যপারে আন্তরিক হতে হবে।
ঢাকাসহ সারাদেশে পরিবহন খাতে যারা বাস মিনিবাসের ড্রাইভার, সুপারভাইজার বা হেলপার হিসেবে কাজ করেন তারা মজুরি পান প্রতিদিনের ট্রিপ বা যাতায়াতের ওপর। যাত্রী ও যাতায়াত দুটিই কমে যাওয়ায় তাদের আয় অনেক কমে গেছে। পরিবহন বন্ধ হয়ে গেলে মালিকরা তাদের কোনো মজুরি দেবে কিনা এখনো কিছু জানায়নি। অটোরিকশা ও রাইডশেয়ারিংয়ে যারা কাজ করেন তাদের অবস্থাও নাজুক। যারা দিনমজুরের কাজ করেন তাদের হাতেও এখন তেমন কাজ নেই।
পোশাক কারখানায় ৪০ লাখ কর্মী কাজ করেন। সেই খাতটিই রয়েছে সবচেয়ে বড় সঙ্কটে। কারখানা মালিকরা এর মধ্যে সরকারের কাছে অর্থ সহায়তা চেয়েছেন। কিন্তু ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার জানিয়েছেন  ‘সরকার সহায়তা করবে কি করবে না সেটার ওপর নির্ভর করা যাবে না। শ্রমিকদের সবেতন ছুটি দিতে হবে। নয়তো তারা টিকতে পারবেন না। মালিকরা কারখানা লে অফের পাঁয়তারা করছেন। এটা হবে চূড়ান্ত অমানবিকতা। এতদিন তারা ব্যবসা করেছেন। এখন সঙ্কটে তারা শ্রমিকদের দেখবেন না এটা কী করে হয়?

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, ‘ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার জানিয়েছেন রাজবাড়ী, ফরিদপুরসহ তিনটি জেলায় যেখানে যৌনপল্লী আছে সেখানে কাজ না থাকায় খাদ্য সঙ্কট শুরুহয়েছে। যেসব জেলায় লকডাউন করা হয়েছে সেখানেও খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। আমরা জেলা প্রশাসকদের দেয়া চাহিদা অনুয়ায়ী খাদ্য সরবারের ব্যবস্থা করছি।’
তিনি জানান, ‘যারা নিম্ন আয়ের মানুষ, যারা কর্মহীন হয়ে পড়বেন তাদের আমরা মানবিক সহায়তা দেব। এজন্য একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়ছে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে।’
কিন্তু সারাদেশের মানুষের জন্য বিশেষ করে যারা নিম্ন মধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত তাদের নিয়ে কোনো পরিকল্পনার কথা তিনি জানাতে পারেননি। আর লকডাউন হলে খাদ্য বা অন্যান্য সহায়তা কিভাবে মানুষের কাছে পৌঁছানো হবে তাও নিশ্চিত নন তিনি। নানা পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে এই নিয়ে কেন্দ্রীয় কোনো পরিকল্পনা নাই। বিচ্ছিন্নভাব যে যার মতো কথা বলছেন।
এমআরএ ,সার্কুলারে বলা হয়, বর্তমানে করোনাভাইরাসজনিত কারণে বিশ্ববাণিজ্যের পাশাপাশি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। দেশের সার্বিক অর্থনীতির এ নেতিবাচক প্রভাবের ফলে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের ঋণগ্রহীতাদের ব্যবসা-বাণিজ্য তথা স্বাভাবিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে বাধাগ্রস্থ  হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি বিধিমালা, ২০১০ এর বিধি ৪৪ অনুসরণে ১ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে ঋণের শ্রেণিমান যা ছিল, আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত ওই ঋণ তার চেয়ে বিরূপ মানে শ্রেণিকরণ করা যাবে না।’
সংস্থাটির নির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যান অমলেন্দু মুখার্জ্জি বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা আপাতত আগামী জুন পর্যন্ত কিস্তি পরিশোধের বিষয়টি রিল্যাক্স করে সার্কুলার দিয়েছি। পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে প্রয়োজনে এই সুবিধা আরও বাড়ানো হবে।
এমআরএর তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭৫৮টি এনজিও সারা দেশে প্রায় ১ লাখ ৪৩ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। ৩ কোটির বেশি গ্রাহক এই ঋণ গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে বকেয়া ঋণের পরিমাণ ৬৮ হাজার কোটি টাকা।
 কোভিড-নাইনটিনের আতংকে আতংকিত সারাবিশ্ব। আতংক ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশেও। মানুষ বুঝতে পারছে না এই ভাইরাস আমাদের কতটা ক্ষতি করবে বা ভবিষ্যত কি হতে পারে।
কোভিড নাইনটি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগে মৃত্যুর হার ২ থেকে ৩ ভাগ। ইতোমধ্যে যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তারা বয়োবৃদ্ধ এবং বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত স্বস্তির বিষয় হচ্ছে ৮ থেকে ১০ বছর বয়সের নিচের শিশুরা কোভিড-নাইনটিনে আক্রান্ত হচ্ছে না। আবার অধিকাংশ বয়স্করাও চিকিৎসায় সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। তাই আতংকিত না হয়ে সচেতন হোন।
বর্তমান পরিস্থিতিতে কেউ সর্দি, কাঁশি, জর বা ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হলে, তাকে অবশ্যই আলাদা ভাবে থেকে চিকিৎসা নিতে হবে। কারণ পরিক্ষা ছাড়া কেউ জানেনা কে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত আবার করোনা আক্রান্ত হলেও সেজন্য সরকারিভাবে চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সবকিছু রেডি থাকতে হবে। শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে অক্সিজেন সহায়তাসহ উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। চীন থেকে উৎপত্তি হলেও করোনা ভাইরাস এখন সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিষেধক আবিস্কার করতে না পারলেও, রোগটি যেন না ছড়ায় সেজন্য আবার ব্যক্তিগত ভাবেও সচেতন থাকতে হবে সবাইকে ।এবং আরো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে সরকারকে। 
 চীনে নতুন করে আরও ৪৭ জন আক্রান্ত হওয়ায় দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮১ হাজার ২১৮। অপরদিকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৩ হাজার ২৮১ জন।
বিশ্বে করোনায় সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে ইতালিতে। দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৪৩ জন করোনায় আক্রান্ত  হয়ে মারা গেছে। প্রাণ হারিয়েছে ৬ হাজার ৮২০ জন। নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৫ হাজার ২৪৯ জন। ফলে দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬৯ হাজার ১৭৬। ইউরোপের দেশটিতে এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৮ হাজার ৩২৬ জন। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্তের সংখ্যা ৫৪ হাজার ৮০৮ এবং মৃত্যু হয়েছে ৭৭৫ জনের। স্পেনে আক্রান্ত সংখ্যা ৪২ হাজার ৫৮ এবং মারা গেছে ২ হাজার ৯৯১ জন।জার্মানিতে আক্রান্ত সংখ্যা ৩২ হাজার ৯৯১ এবং মারা গেছে ১৫৯ জন। ইরানে মোট আক্রান্তের  সংখ্যা ২৪ হাজার ৮১১ এবং মারা গেছে ১ হাজার ৯৩৪ জন।
ফ্রান্সে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সংখ্যা ২২ হাজার ৩০৪ এবং মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ১শ জনের। সুইজারল্যান্ডে আক্রান্তের সংখ্যা ৯ হাজার ৮৭৭ এবং মারা গেছে ১২২ জন।দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনায় আক্রান্ত সংখ্যা ৯ হাজার ৩৭ এবং মারা গেছে ১২০ জন। যুক্তরাজ্যে এই ভাইরাসে আক্রান্ত র সংখ্যা ৮ হাজার ৭৭ এবং মৃত্যু হয়েছে ৪২২ জনের। অস্ট্রেলিয়ায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ২ হাজার ৩১৭ জন এবং মারা গেছে ৮ জন। অপরদিকে মালয়েশিয়ায় এই ভাইরাসে আক্রান্ত সংখ্যা ১ হাজার ৬২৪ এবং মৃত্যু হয়েছে ১৬ জনের।নেদারল্যান্ডে করোনায় হয়েছে ৫ হাজার ৫৬০ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ২৭৬ জনের। কানাডায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ৭৯২ এবং মারা গেছে ২৬ জন।অপরদিকে জাপানে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ১৯৩ এবং মৃত্যু ৪৩। পাকিস্তানে  করোনায় আক্রান্ত সংখ্যা ৯৭২ এবং মারা গেছে ৭ জন।
থাইল্যান্ডে করোনায় আক্রান্ত সংখ্যা ৮২৭ এবং মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের। সৌদি আরবে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৭৬৭ এবং একজনের মৃত্যু হয়েছে।সিঙ্গাপুরে করোনায় আক্রান্ত ৫৫৮ এবং মারা গেছে দু'জন। ভারতে করোনায় আক্রান্ত ৫৩৫ এবং ১০ মৃত্যু হয়েছে। কাতারে করোনায় আক্রান্ত ৫২৬। তবে সেখানে এখন পর্যন্ত কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। অপরদিকে, হংকংয়ে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩৮৬ এবং মারা গেছে ৪ জন।
 পৌনে ৩ লাখ প্রবাসীর খোঁজে পুলিশ যেমন মাঠে সক্রিয় তেমনি প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব প্রবাসীদেও ধরিয়ে দেয়া। সারাবিশ্বে আতঙ্ক ছড়ানো প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস বাংলাদেশেও ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করতে পারে বলে বিভিন্ন মহল থেকে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পুলিশের হিসাব মতে, চলতি মার্চ মাসের প্রথম ২১ দিনে বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছেন প্রায় তিন লাখ মানুষ। এদের অনেকেই এসেছেন কোভিড-১৯ আক্রান্ত দেশগুলো থেকে। দেশে ফিরেই অনেকে গ্রামের বাড়ি ফিরে গেছেন। তাদের মধ্যে মাত্র ১৮ হাজার বিদেশফেরত স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টাইনে আছেন। বাকিদের কোনো হদিস নেই। এমন পৌনে তিন লাখ প্রবাসীদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে পুলিশ।
দেশে আসার সময় বিমানবন্দরে সঠিক ঠিকানা না দেয়া ও পাসপোর্টের ঠিকানায় অবস্থান না করার কারণে ফিরে আসা এসব লোককে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সাধারণ মানুষের মাঝে ঘুরে বেড়ানো এসব প্রবাসীদের কেউ সংক্রমিত হয়ে থাকলে তাদের দ্বারা দেশের করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে বলে শঙ্কা পুলিশ কর্মকর্তাদেরও। চলতি মাসে দেশে আসা ২ লাখ ৫৭ হাজার দেশি ও ২৬ হাজার বিদেশির তালিকা সারাদেশে পুলিশ সুপারদের (এসপি) কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে নভেল করোনা ভাইরাস প্রকোপের মধ্যে যারা বিদেশ থেকে ফিরে এসেছেন, তাদের নিজ নিজ অবস্থানের তথ্য থানায় জানাতে নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। গতকাল মঙ্গলবার পুলিশ সদর দফরের এক প্রেস নোটে বলা হয়, বিদেশফেরত ব্যক্তিরা বর্তমান অবস্থান ও মোবাইল নম্বর দিয়ে সহায়তা না করলে তার বা তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে বৈশ্বিক মহামারীতে রূপ নেয়া করোনা ভাইরাসের ঝুঁকির মধ্যেই সারাদেশে কাজ করছে পুলিশ। যদিও পুলিশের পারসোনাল প্রটেক্টটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিআই) বলতে কিছুই নেই। হাত ধোয়া ছাড়া তাদের সুরক্ষায় নেয়া হয়নি দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা। সারাদিন জনসেবা দিতে ভিড়ের মধ্যে থাকার পর রাতেও বেশ কয়েকজন মিলে থাকছেন আগের মতো স্বল্প জায়গায়। বিশেষ করে রাজারবাগ পুলিশ লাইন, মিল ব্যারাক, এপিবিএন ব্যারাকে গাদাগাদি করে থাকছে কয়েক হাজার পুলিশ সদস্য।
সম্প্রতি বিদেশে থেকে দেশে ফেরা প্রবাসীদের বিষয়ে পুলিশ সদর দফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, জানুয়ারি থেকে সাড়ে ছয় লাখ মানুষ দেশে এসেছেন। এর মধ্যে মার্চ মাসের ২০ দিনেই এসেছেন ২ লাখ ৯৩ হাজার। আর গত সোমবার পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইনে গেছেন মাত্র ১৭ হাজার ৭৯০ জন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, বিদেশফেরত যেসব ব্যক্তি কোয়ারেন্টাইনের ব্যাপারে সরকারি নির্দেশনা না মেনে অন্যদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়। এসব প্রবাসীদের নামের তালিকা সারাদেশে পুলিশ সুপারদের কাছে পাঠানো হয়। এখন এরা কোয়ারেন্টাইনের নিয়মকানুন সঠিকভাবে অনুসরণ করছে কি-না, তা জানতে পুলিশ তাদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে।
করোনা আক্রান্ত দেশ থেকে আসা প্রবাসীদের অনেকেই নির্বিঘ্নে হাটবাজারে শপিংমলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, কেউ কেউ দাওয়াত দিয়ে লোকসমাগম করছেন। কিন্তু এসব লোককে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। দেশে আসার সময় সঠিক ঠিকানা না দেয়া ও পাসপোর্টে ঠিকানায় অবস্থান না করার কারণে ফিরে আসা এসব লোককে খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ। দাবি গোয়েন্দ দের।  বিদেশ থেকে ফেরা এসব লোককে কোয়ারেন্টাইনে রাখা নিয়ে বিপাকে পড়েছে পুলিশ। ফিরে আসা এসব লোক পরিবার ও সমাজের সঙ্গে মিশে গেছেন বলে ধারণা মাঠপর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের। একাধিক দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিদেশফেরত মানুষ নিজের উদ্যোগে যদি এগিয়ে না আসে, তাহলে ভয়াবহ ক্ষতি হয়ে যাবে। সে ক্ষতি সামাল দেয়া আমাদের সবার পক্ষে কঠিন হয়ে যাবে।
বিদেশফেরতরা কোথায় আছেন, জানাতে হবে থানায়: নভেল করোনা ভাইরাস প্রকোপের মধ্যে যারা বিদেশ থেকে ফিরে এসেছেন, তাদের নিজ নিজ অবস্থানের তথ্য থানায় জানাতে বলেছে পুলিশ সদর দফতর। মঙ্গলবার  পুলিশ সদর দফতরের এক প্রেস নোটে বলা হয়, বৈশ্বিক মহামারীতে রূপ নেয়ার মধ্যে বিদেশফেরত অধিকাংশ ব্যক্তিই পাসপোর্টের দেয়া ঠিকানায় অবস্থান না করায় তাদের শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বিদেশফেরতদের বাধ্যতামূলকভাবে ঘরে থাকার (হোম কোয়ারেন্টাইন) কথা বলা হলেও তা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় বিদেশফেরতদের নিজ উদ্যোগে স্থানীয় থানায় তথ্য দিয়ে তাদের অবস্থান জানাতে অনুরোধ করা হলো পুলিশ সদর দফতরের পক্ষ থেকে।
এআইজি (মিডিয়া) মো. সোহেল রানা স্বাক্ষরিত প্রেস নোটে বলা হয়, বিদেশফেরত অধিকাংশ ব্যক্তি তাদের পাসপোর্টের ঠিকানায় অবস্থান না করে ঘোরাফেরা করছেন, যা বর্তমান পরিস্থিতির কারণে নিজের এবং সাধারণ জনগণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। ১ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত যারা দেশে এসেছেন তাদের নিকটস্থ থানায় যোগাযোগ করে বর্তমান অবস্থান, মোবাইল নম্বর দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। অন্যথায় সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন-২০১৮, বাংলাদেশ দন্ডবিধি, সেই সাথে প্রযোজ্য অন্যান্য আইনের উপযুক্ত ধারা প্রয়োগ করা হবে। প্রয়োজনে পাসপোর্ট রহিত করার উদ্যোগ নেয়া হবে। বিদেশফেরতদের পক্ষে অন্য কেউ গিয়েও থানায় তথ্য দিতে পারবেন বলেও প্রেসনোটে বলা হয়।
বাঁচতে লড়ছে মানুষ দেশেই তৈরি হচ্ছে ৪ লাখ পিপিই, এগিয়ে চলছে গণস্বাস্থ্যের কাজ, প্রস্তুত হচ্ছে স্বেচ্ছাসেবীরা, ছাত্ররা তৈরি করছে স্যানিটাইজার মাস্ক। ভাইসের বিস্তার বাড়ায় প্রতিরোধে এগিয়ে আসছে মানুষ। সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে সামর্থ্যমতো সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। পারসোনাল প্রোটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) এর অভাবে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে আতঙ্কে ছিলেন চিকিৎসক, নার্স ও হাসপাতালের কর্মীরা। এই সমস্যা দূর করতেও এগিয়ে এসেছে সাধারণ মানুষ। কিটের স্বল্পতায় ব্যাপক আকারে করোনা শনাক্তের পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছিল না। সেই কিটও তৈরি হচ্ছে বেসরকারি উদ্যোগে। হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করে বিনামূল্যে অসহায় ও শিক্ষার্থীদের কাছে বিতরণ করছে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা। জানা যায়, সাধারণ মানুষের উদ্যোগে পারসোনাল প্রোটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) বা বিশেষ সুরক্ষিত পোশাক তৈরি করা হচ্ছে। পরে এগুলো হাসপাতালগুলোয় বিন্যামূল্যে সরবরাহ করা হবে। পিপিইর ৩০টি নমুনা বা স্যাম্পল তৈরি করা হয়েছে। পে ইট ফরোয়ার্ড ও মানুষ মানুষের জন্য নামের দুই সংগঠনের উদ্যোগে পুরো প্রক্রিয়ার অর্থায়ন   করছে বুয়েট অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস ট্যাক্সেশন অ্যাসোসিয়েশন ও ঢাকা রোটারি ক্লাব নর্থ-ওয়েস্ট। এর কারিগরি কাজের দায়িত্বে থাকা মার্কস অ্যান্ড স্পেনসারের বাংলাদেশের প্রধান স্বপ্নœ ভৌমিক জানান, পিপিই বানানোর বিষয়টি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। সাধারণ সেলাই মেশিনে পোশাকগুলো সেলাই করা হয়েছে। সেলাইয়ের কারণে পুরোপুরি বায়ুরোধী করা যায়নি। আশা করছি, দুই-তিন দিনের মধ্যেই প্রাথমিকভাবে ব্যবহার উপযোগী পিপিই বানানো সম্ভব হবে।
অন্যদিকে, ইতিমধ্যে করোনাভাইরাস কভিড-১৯ পরীক্ষার পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীলের নেতৃত্বে ড. নিহাদ আদনান, ড. মোহাম্মদ রাঈদ জমিরউদ্দিন ও ড. ফিরোজ আহমেদ র্যাপিড ডট ব্লট নামের পরীক্ষার এই পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। জানা যায়, বিজন কুমার শীল গণবিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালের প্রধান বিজ্ঞানী। ড. বিজন ও তার দলের উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে মাত্র ৩৫০ টাকায় ১৫ মিনিটে করোনা শনাক্ত সম্ভব বলে দাবি করেছেন গণস্বাস্থ কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। আর সরকার যদি এর ওপর ট্যাক্স-ভ্যাট আরোপ না করে তাহলে মাত্র ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় এটি বাজারজাত করা সম্ভব হবে। সামাজিক সংগঠনগুলোর মধ্যে ‘বিদ্যানন্দ’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মী ও তাদের স্বেচ্ছাসেবকরা নিজেরাই হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক, চিকিৎসকদের পারসোনাল প্রোটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) তৈরি করে তা সাধারণ মানুষের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করেন। প্রতিষ্ঠানটি চিকিৎসক ও রসায়নবিদদের উপস্থিতিতে হ্যান্ড সলিউশন তৈরি করছে। প্রতিষ্ঠানটিকে সহায়তায় অনেকেই অনুদান দিচ্ছেন। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটি চিকিৎসক ও নার্সদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য গাউন তৈরি করেছে। বিদ্যানন্দের কিছু স্বেচ্ছাসেবী প্রায় তিন-চারশ গাউন তৈরি করে সংশ্লিষ্টদের পৌঁছে দিচ্ছেন। এর বাইরে প্রতিষ্ঠানটি হাজার হাজার মাস্ক তৈরি করে তা বিভিন্ন হাসপাতাল ও চ্যারিটেবল প্রতিষ্ঠানের কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে বিক্রি করে। জনসমাগম বেশি হয় এমন স্থানগুলোতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে বিদ্যানন্দের স্বেচ্ছাসেবকরা জীবাণুনাশক স্পে ছিটিয়ে যাচ্ছে শহরের বিভিন্ন স্থানে। ঢাকার কয়েকটি স্থানে হাত ধোয়ার ব্যবস্থাও করেছে সংস্থাটি।
বাজারের ওপর চাপ ও ক্রেতার খরচ কমাতে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি ও সচেতনতার কাজ করছে। শুধু তাই নয়, এ স্যানিটাইজার তারা বিনামূল্যে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন। রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর মধ্যে ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের নেতা-কর্মীরা মানুষের মধ্যে বিনামূল্যে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ শুরু করেছে। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা প্রথম দফায় ১০০ মিলিগ্রামের ১০ হাজার পিস স্যানিটাইজার তৈরি করে। এর পাশাপাশি সংগঠনটির অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়, জেলা ও মহানগর শাখাও হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি ও বিতরণ করে। একইভাবে শ্রমজীবী মানুষ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে হ্যান্ড স্যানিটাইজার সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় পরিবেশ মানবাধিকার সোসাইটি ( জাপমাস) ও কেন্দ্রীয় ছাত্র ইউনিয়ন।
করোনা প্রতিরোধে এগিয়ে এসেছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। এরই মধ্যে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (এআইইউবি), ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ফার্মেসি বিভাগ, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ সচেতনতার পাশাপাশি হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করে মানুষের কাছে বিনামূল্যে পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এ ছাড়া বর্তমানে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ ডিপার্টমেন্টের উদ্যমী শিক্ষার্থীরা ভার্চুয়াল মেডিকেল সার্ভিস সেবা দিচ্ছেন।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) রসায়ন বিভাগের উদ্যোগে করোনাভাইরাসের প্রাথমিক প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় জীবাণুনাশক ‘চুয়েটাইজার’ নামে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত প্রস্তুত  প্রণালি অনুসরণ করে এটি তৈরি করা হয়। চুয়েটের রসায়ন বিভাগের ল্যাবে ১০০ মিলিলিটার সাইজের ৩০০ ইউনিট স্যানিটাইজার তৈরি করা হয়েছে। চুয়েটের রসায়ন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. রাজিয়া সুলতানার নেতৃত্বে চুয়েটাইজারটি তৈরি করা হয়
করোনাভাইরাস সংক্রমণের এ সময়ে মিরপুরের ‘বাসন্তী নিবাস’ নামের নারীদের ক্যাপসুল হোটেলে বিনামূল্যে নারী চিকিৎসক এবং নার্সদের থাকার ব্যবস্থা করেছে। থাকার সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি হোটেলটি সেই চিকিৎসক ও নার্সদের সকাল, দুপুর এবং রাতের খাবারও বিনামূল্যে সরবরাহ করছে। এ ছাড়া করোনা প্রতিরোধে ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপভিত্তিক পেজের সদস্যরাও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মাঝে মাস্ক ও হাত ধোয়ার সাবান বিতরণ করছেন। এমনই একটি গ্রুপ ০৭০৯-এর সদস্যরা সম্প্রতি শহরের জনবহুল স্থান, এয়ারপোর্ট ও রেলস্টেশনে প্রয়োজনীয় এ দ্রব্যগুলো বিতরণ করেন। বর্তমানে এ ধরনের আরও অনেক গ্রুপের সদস্যদের এই ইতিবাচক কাজে অংশগ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছে। এদের কেউ কেউ সচেতনতার অংশ হিসেবে লিফলেটও বিতরণ করছেন।
মহামারীর গতি বাড়লেও রোধ সম্ভব : করোনাভাইরাসের প্রকোপ থেকে সুরক্ষা সরঞ্জামাদির উৎপাদন বাড়াতে জি-টোয়েন্টিভুক্ত দেশগুলোকে আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রস আধানম গ্যাব্রিয়েসুস হুশিয়ার করে বলেছেন, করোনাভাইরাস থেকে সৃষ্ট মহামারী আরও বেগবান হচ্ছে।
তবে এখনও এর গতিপথ পাল্টে দেয়া সম্ভব। বিভিন্ন দেশে স্বাস্থ্যকর্মীদের করোনা আক্রান্ত  হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে টেড্রস বলেন, পারসোনাল প্রোটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) না থাকার কারণেই এমনটা ঘটেছে। তিনি বলেন, নিরাপদে থাকলেই স্বাস্থ্যকর্মীরা তাদের কাজটা ভালোভাবে করতে পারবেন।
বিশ্বজুড়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করা নভেল করোনাভাইরাস কোনো ‘গবেষণাগারে তৈরি হয়নি’, প্রাকৃতিক বিবর্তনের মাধ্যমে ভাইরাসটির উদ্ভব হয়েছে বলে এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এই প্রতিবেদন রোগটির উৎপত্তির বিষয়ে সব ধরনের ষড়যন্ত্র তত্ত্বকে নাকচ করে দিয়েছে বলে মত টেলিগ্রাফের। ডিসেম্বরের শেষে চীনের উহান শহরে ভাইরাসটি প্রথম শনাক্ত হয়েছিল। এরপর এটি মাস খানেকের মধ্যে দ্রুতগতিতে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া প্রাদুর্ভাবের পাশাপাশি শঙ্কা ও ভুল তথ্যও বিশ্বজুড়ে ডালপালা  মেলেছে। মহামারীর পাশাপাশি বিশ্বকে ‘তথ্যের মহামারীর’ বিরুদ্ধেও লড়াই করতে হচ্ছে বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সার্স-কভ-টু নামের নতুন করোনাভাইরাসটি আসলে গবেষণাগারে তৈরি হয়েছে, সাধারণভাবে এমন একটি মিথ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়েছে। কিন্তু নতুন গবেষণায়, যার ফলাফল নেচার মেডিসিন সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে, গবেষকরা করোনাভাইরাসটির জেনোম সিক্যুয়েন্স বিশ্লেষণ করেছেন আর এটি যে মানুষ তৈরি করেনি, প্রাকৃতিকভাবে উদ্ভব হয়েছে সে বিষয়ে জোরালো প্রমাণ পেয়েছে। 
এদিকে, বছরের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস নিয়ে কী ঘটেছিল সে সম্পর্কিত একটি গোপন প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে খবর প্রকাশ করেছে দেশটির সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট। চীনে করোনাভাইরাসে সংক্রমিতরা ছিল নীরব বাহক। প্রতি তিন জনে একজন এ ভাইরাস নীরবে বহন করে। 
করোনাভাইরাসের কারণে হাজার হাজার মানুষ স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টাইনে আছেন। তবে ঘরবন্দী থেকেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। ভারতের ফরিদাবাদের সর্বোদয়া হাসপাতালের আইসিউ পরিচালক শেফা পাওয়ার কিছু কৌশলের কথা বলেছেন যা অবলম্বন করলে করোনা থেকে দূরে থাকা সম্ভব। যেমন:
১. অতি জরুরি না হলে পরিবারের কাউকে বাইরে যেতে নিরুৎসাহিত করতে হবে। ২. গৃহপরিচারিকা বা বাইরে থেকে যারা ঘরে আসছেন তাদের বিষয়ে সাবধান হতে হবে। তাদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে হবে।৩. প্রতিদিন ঘরে আনা তরল দুধের প্যাকেটকে ভালো করে ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। ৪. বাইরে থেকে যেসব দ্রব্যসামগী আনা হচ্ছে তা পঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা না থাকলে তা ঘরের এক কোণে রেখে দিন। ১২-২৪ ঘণ্টা পর সেখানে ভাইরাস থেকে থাকলে নিজে থেকেই মারা যাবে। ৫.বাইরে থেকে ঘরে আসলে কোনো কিছু স্পর্শ করার আগেই গায়ের কাপড়-চোপড় পরিষ্কার করে নিতে হবে। গোসল করতে হবে, চুল পরিষ্কার করতে হবে। ভাইরাসের সংক্রমণ শূন্যের কোঠায় নেমে আমার পর আমরা যা ইচ্ছা তাই করতে পারবো। তাই এ কয়দিন সাবধান থাকা বেশি জরুরি।
ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন অর্গানাইজেশনের সংস্থাটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার উপর বিশেষ জোড় দিয়েছে। আমাদের দেশে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই পরীক্ষা-নিরীক্ষার। তাই পরীক্ষার-নিরীক্ষার উপকরণ দেশে না আসা পর্যন্ত সবাইকে সচেতন থাকতে হবে, যাতে ভাইরাসটি ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে না পড়ে।
কেউ সর্দি, কাঁশি, জর বা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তাকে যেন অস্পৃশ্য ভেবে ঘৃণা না করি, তার চিকিৎসা যেন ব্যহত না হয়। আর সবাই যেন মানবিক আচরণ করি আক্রান্ত মানুষদের সাথে। চলতি মার্চ মাসের প্রথম ২১ দিনে বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছেন প্রায় যে তিন লাখ মানুষ দেশে অবস্থান করছেন তাদেও উচিত নিজ নিজ দায়িত্ববোধ থেকে পালিয়ে না থেকে স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টাইনে যাওয়া। দেশের বাস্তবতায় লকডাউন করার আগে আটকে পড়া মানুষদের পর্যাপ্ত খাবার, পানি এবং ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করে লকডাউন করতে হবে। নিম্ন আয়ের মানুষ ও চাকরিজীবী নি¤œ মধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত মানুষদের তিন মাসের বাসা ভাড়া মওকুফ করার প্রজ্ঞাপন জারি করা সময়ের দাবি। ###
লেখক : কবি, সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক, মানবাধিকারকর্মী


আতিক আজিজ
 সম্পাদক: কাঁচামাটি  
 ব্যবস্থাপনা পরিচালক : ইস্টিশন মিডিয়া লি:
 চেয়ারম্যান: জাতীয় পরিবেশ মানবাধিকার সোসাইটি (গভ:রেজি:নং-এস-৮৯১৩)


এবিএন/মমিন/জসিম
 

এই বিভাগের আরো সংবাদ