প্রসঙ্গ সোশ্যাল মিডিয়া : সৈকত ঘোষ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০১৮, ১১:৪৫

ঢাকা, ০৭ জুলাই, এবিনিউজ : বাইরের দেখাটাই শেষ দেখা নয়, হয়তো বৃক্ষের আছে অন্য এক গোপন পরিচয়... ভাবছেন হঠাৎ কাব্য করতে বসলাম কেন! কেউ বুঝে, কেউ না বুঝে, কেউ আবার নাওয়া-খাওয়া ভুলতে বসেছেন কিন্তু ধরতে পারলেন না। একটু না হয় ভাবুন। এনার দাপটে হামেশাই আপনার রাতের ঘুম উড়ে যায়, গাড়ির ভেতর ঝুলতে ঝুলতেও মন উসখুস করে। রান্না করতে করতে করতে, অফিসের ফাঁকে, কফিশপে প্রিয়জনের হাতে হাত রেখে, অ্যাসাইনমেন্ট বানাতে বানাতে, এমনকি ছেলেকে হিস্ট্রি পড়াতে বসেও টুক করে একবার এনার ঘরে উঁকি না দিলে মন ভালো লাগে না। এতক্ষণে নিশ্চই বুঝতে পারছেন ‘সখী এডিকশন কারে কয়!’ আপনি কি খুব একা, হতাশায় ভুগছেন, সদ্য ব্রেকআপ, মনের মতো বন্ধু-বান্ধবী খুঁজতে এখন আর পেপার কাটিং খুলে বসতে হবে না। এ দুনিয়ায় হাত বাড়ালেই বন্ধু। যেমনটি চান, যেভাবে চান। না আছে খরচা, না আছে ভয়, অনলি এনজয়। শুধু আপনাকে একটা অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে, না না ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নয়Ñ এ হলো সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যাকাউন্ট। হাতে অ্যান্ড্রয়েড ফোন উইথ ফোরজি থাকলে তো সোনেপে সোহাগা। ফেসবুক, টুইটার ইনস্টাগ্রাম, স্কাইপ, ইমো, লিংকডিন, হোয়াটসঅ্যাপ, হাইক, ইউটিউব, গুগল প্লাস, মেসেঞ্জার আরও কত চান। পছন্দমতো এক বা একাধিক অপশন বেছে নিলেই কেল্লাফতে। এবার প্রশ্ন ফিচার। কি চাই, আপনার চ্যাট থেকে ভিডিও কল, নিউজ আপডেট থেকে লেটেস্ট সিনেমা, গসিপ থেকে মিউজিক, গেম থেকে রেসিপি, প্রিয় বই থেকে রোজকার বাজারÑ এ জগতে সবকিছুই মিলবে ফিঙ্গার টিপসে। টোয়েন্টিফার্স্ট সেঞ্চুরির ভার্চুয়াল দুনিয়ায় সোশ্যাল নেটওয়ার্ক ছাড়া কোনো গতি নেই। তা আপনি একে এডিকশন বলেন বা নিডস। একবার চ্যাটরুমে ঢুকে গেলেই ব্লিঙ্ক করা সম্পর্কেরা আপনাকে হাতছানি দেবে। আর তারপর হাতেনাতে ফল, খেলা জমতে বেশিক্ষণ লাগবে না।
শিশুদের কাছে খুব সহজেই চলে আসছে একাধিক অ্যাডাল্ট এলিমেন্ট, যা প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়ায় তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক। এ ছাড়া অধিক এডিকশন কন্সেনট্রেশন ব্রেক করে কাজের ক্ষতি করছে। স্টুডেন্টদের ক্ষেত্রে পড়াশোনায় হ্যাম্পার করছে সোশ্যাল মিডিয়া নামক ভাইরাস। মানসিক ভ্যালগারিটি বাড়িয়ে দিচ্ছে সোশ্যাল ক্রাইমের প্রবণতা। সবচেয়ে বড় কথাÑ যে কোনো সম্পর্কে কমে যাচ্ছে সময়। রিয়েল দুনিয়ার চেয়ে ইম্পর্ট্যান্ট হয়ে উঠছে ভার্চুয়াল জগৎ। লাইক-কমেন্টের যুগে জীবন এখন সোশ্যাল মিডিয়া। ভদ্র মহোদয়রা ছলে-বলে সোশ্যালে আপডেট থাকুন, না হলে এ সমাজ কি আপনাকে মেনে নেবে! স্ট্যাটিসটিকস বলছে চায়ের দোকানের পানুদা থেকে ডাকসাইডে মন্ত্রী থেকে মিস বিউটি, কলেজের হার্টথ্রব রকি থেকে টালিউড কুইন নূসরতÑ কে নেই ইঁদুর দৌড়ে। প্রতি মুহূর্তে কী করছেন, কোথায় যাচ্ছেন, কী খাচ্ছেন কমবেশি সবাই ছবিসহ আপলোড করে দিচ্ছেন তাও আবার ডিটেলে। আর তারপর লাইক-কমেন্টের যুদ্ধ, ফলোয়ার সংখ্যা দিয়ে বিচার হচ্ছে ওজন। ফেসবুক হাতে এখানে মোটামুটি সবাই ছোট-বড়-মেজো মাইক্রো মিনি সেলেব্রিটি। কাকে ছেড়ে কাকে দেখবেন। ভাগ্য প্রসন্ন থাকলে বন্ধুত্বের আহ্বান পেয়ে যেতে পারেন সমুদ্রগুপ্ত, রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ, জর্জ বুশ, উত্তম কুমার থেকে মেরিলিন মনরোর। এ ছাড়া রয়েছে উদার আকাশ, অচিন পাখি, সমুদ্র ঝিনুক, আমি অমানুষ, বুলেট পঞ্চুর মতো একাধিক রহস্যময় অ্যাকাউন্ট। সবচেয়ে মজার ব্যাপার, যার সঙ্গে মুখ বাড়ালেই কথা বলা যায়, সেই পাশের বাড়ির মানুষটির সঙ্গেও কথা হচ্ছে ফেসবুকে। হাইটেক যুগে বাবা-মা, বন্ধু-বান্ধব, অফিস-ফ্যামিলি, প্রেম-ঝগড়া সবকিছুই ঢুকে গেছে মেসেঞ্জার আর হোয়াটসঅ্যাপের চক্করে। আর এ সবকিছুর মাঝে শেষ হয়ে আসছে মুখোমুখি বসার দিন। সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে অনেক ক্ষেত্রে ভেঙে যাচ্ছে সম্পর্ক। আবার অনেক সময় না বুঝে-শুনেই জড়িয়ে পড়ছে সম্পর্কে। (আমাদেরসময় থেকে নেয়া)

লেখক : কবি

এই বিভাগের আরো সংবাদ