শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার সেই সব দিন
মিল্টন বিশ্বাস
২১ জানুয়ারি ২০২০, ১৫:৩৩ | অনলাইন সংস্করণ
২০ জানুয়ারি(২০২০) তিন দশক পর আরো একটি রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবন নস্যাৎ প্রচেষ্টার জবাব পেলাম আমরা। ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে শেখ হাসিনার জনসভায় পুলিশের গুলিতে ২৪ জন নেতা-কর্মী নিহত হন। ‘চট্টগ্রাম গণহত্যা’ নামে পরিচিত এই ঘটনার চার বছর পর ১৯৯২ সালে আইনজীবী শহীদুল হুদা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে চট্টগ্রামের সাবেক পুলিশ কমিশনার মীর্জা রকিবুল হুদাসহ ৪৬ জনকে আসামি করে মামলা করেন। শেখ হাসিনার জনসভায় পুলিশের গুলিতে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় ২০ জানুয়ারি পাঁচজনকে মৃত্যুদ- দিয়েছেন আদালত। মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামিরা প্রত্যেকেই পুলিশের সদস্য। বিভিন্ন সময়ে শেখ হাসিনাকে ১৯ বার হত্যাচেষ্টার সেই সব দিনগুলো স্মরণ করলে একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সংগ্রামকে খুব নিবিড়ভাবে দেখা সম্ভব হবে। বিশেষত হামলা ও হত্যাচেষ্টার মধ্যে কেবল ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা কিংবা ঈশ্বরদীতে ট্রেনে গুলিবর্ষণ অথবা গোপালগঞ্জে বোমা পুতে মারার আসামিদের বিরুদ্ধে বিচারের রায় পেয়েছি আমরা। বিচারের রায় পেতে মানবতার নেতা শেখ হাসিনাকে যেভাবে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হয়েছে সেটিও মর্মান্তিক। তাঁকে হত্যাচেষ্টার কারণ হলো- তাঁর রাজনৈতিক আদর্শ ও প্রগতিশীল মানসিকতার জয়যাত্রা।
উল্লেখ্য, ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে ডানপন্থী তথা পাকিস্তানবাদী মতাদর্শের বিপরীতে যিনি অনবরত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতৃত্বে জয়গৌরব সূচিত করেছেন, যিনি ১৯৯৬ থেকে ২০০১ এবং ২০০৯ থেকে বর্তমান সময়ের মহিমান্বিত রাষ্ট্রনায়ক তিনি আমাদের অতিপ্রিয় নেত্রী দেশরতœ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেমন তাঁর রাজনৈতিক জীবনে ডানপন্থী তথা মৌলবাদী রাজনীতির মূলে কুঠারাঘাত করে বাংলাদেশের অভ্যুদয় সম্ভব করেছিলেন তেমনি শেখ হাসিনা সকল অপশক্তিকে নির্মূল করে প্রগতিশীল রাজনৈতিক আদর্শ গড়ে তুলেছেন। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের রাজনীতির প্রগতিশীল ধারায় তিনি ব্যতিক্রম। তিনি নিজে ধার্মিক কিন্তু অন্যের ধর্মীয় চেতনাকে সম্মান করে চলেছেন। বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে শেখা তাঁর এগিয়ে যাওয়ার এই চিন্তাধারা সম্প্রীতির মূল মন্ত্র। বিরোধী দলীয় নেতা কিংবা সরকার প্রধান হিসেবে অন্য সম্প্রদায়ের প্রতিটি অনুষ্ঠানে তিনি অংশ নিয়েছেন; যা অন্য ধর্মের মানুষকে মানসিক প্রশান্তি এনে দিয়েছে। আসলে শেখ হাসিনা ‘আদর্শবাদী ও আত্মত্যাগী রাজনৈতিক নেতা’ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যোগ্য উত্তরসূরি। বঙ্গবন্ধু আজীবন সংগ্রাম করে বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে অনন্য মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছেন; সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছেন ও বাস্তবায়নে অগ্রসর হয়েছেন; তাঁর সেই আদর্শিক ধারায় স্নাত হয়ে শেখ হাসিনা মেধা ও দূরদর্শিতাসম্পন্ন রাজনীতিক হিসেবে জনগণের ভাগ্য বদলে দিয়েছেন। জননেত্রীর নেতৃত্বে এ মুহূর্তে বাংলাদেশের অগ্রগতি অসামান্য।
২.
আজ ‘মুজিববর্ষে’ দাঁড়িয়ে মনে পড়ছে ২০১৪-এর ১৯ সেপ্টেম্বর প্রভাবশালী ব্রিটিশ সাময়িকী ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ পত্রিকার বক্তব্যসমূহ। সেসময় বলা হয়েছিল, ‘বাংলাদেশের সব ক্ষমতা এখন শেখ হাসিনার হাতে। বিরোধী দল রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছে। সবই এখন সরকারের হাতের মুঠোয়। অন্তহীন লড়াইয়ে জিতে চলেছেন এক নারী।’ অসাধারণ বাক্য ছিল এটি। যদিও এই ম্যাগাজিনটি তার কয়েক বছর আগে একাধিক সংখ্যায় শেখ হাসিনা সরকার সম্পর্কে নেতিবাচক প্রতিবেদন ছাপিয়েছিল। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীর বিচার ইস্যুতে কিংবা র্যাবের প্রসঙ্গে তাদের ভূমিকা ছিল ন্যক্কারজনক; কিংবা পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের টালবাহানার সময় মহাজোট সরকারকে নির্মমভাবে আক্রমণ করেছিল। সেই সাময়িকী আজ শেখ হাসিনার প্রশংসায় পঞ্চমুখ- এর চেয়ে সুখের খবর আর কী আছে আমাদের কাছে। ‘দ্য ইকোনমিস্ট’-এ প্রকাশিত ‘পলিটিক্স ইন বাংলাদেশ: ওয়ান অ্যান্ড অনলি ওয়ান’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনার শাসন ন্যায়সঙ্গত। সেটার কারণ দেশের অর্থনীতির উন্নয়নের সফলতা। ২০০৯ সালে তিনি ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে দারিদ্র্যের হার দ্রুত কমে এসেছে। সাম্প্রতিক একটি জনমত জরিপ অনুসারে নির্বাচনের আগের তুলনায় সরকার এখন আরো বেশি জনপ্রিয়। বিদেশি সরকারগুলো এখন শেখ হাসিনার সঙ্গেই ব্যবসা করতে ইচ্ছুক। ভারত, চীন, জাপান, রাশিয়া তার প্রধান উদাহরণ। ওই বিদেশি পত্রিকার সূত্র ধরে আরো বলা যায়, এদেশবাসী জানেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ উৎক্ষেপণ এবং ভারতে বাংলাদেশ টেলিভিশনের সম্প্রচার একটি অনন্য অগ্রগতি। এভাবে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে চমৎকার সাফল্য দেখিয়েছে। এছাড়া আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও অগ্রগতি প্রতিষ্ঠায় এদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। এজন্যই চীন-জাপান-ভারতের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধানসহ বিশ্বের সকল নেতৃবৃন্দ শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করছেন নিঃশঙ্কচিত্তে। তবে তিনি জাতিসংঘের একাধিক সাধারণ অধিবেশনে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের কাছে অস্ত্রের বদলে শিক্ষা খাতে আরো ব্যয় বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে প্রগতির পথেই হেঁটেছেন। কারণ প্রকৃত শিক্ষা আমাদের মুক্তি অর্জনের সোপান। ১১ লাখ নিরাশ্রয় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে এদেশে আশ্রয় দেয়াও এই শিক্ষারই অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত।
৩.
প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে ‘অসাম্প্রদায়িক’ চেতনা গভীরভাবে বিজড়িত; একইসঙ্গে ‘মানবতাবাদ’ও। ২০০৩ সালে প্রকাশিত ‘সহে না মানবতার অবমাননা’ গ্রন্থটি শেখ হাসিনার মানবতা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার অনন্য দলিল। তিনি এই গ্রন্থে বিএনপি-জামায়াতের ক্ষমতা দখল থেকে শুরু করে হিন্দু-খ্রিস্টান-বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষ এবং আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের ওপর বীভৎস হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, লুটপাটের অনুপুঙ্খ তথ্য সংকলন করেছেন। নির্মম ও বর্বর তাণ্ডবের সেই বিবরণ দিতে গিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণের ঘটনাগুলো বিস্তৃত পরিসরে উপস্থাপন করেছেন। উপরন্তু হিন্দুদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের কথা লিখে তাদের নিরাপত্তার জন্য তৎকালীন সরকার যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। শেখ হাসিনার রাষ্ট্র পরিচালনার আদর্শ হচ্ছে গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও জবাবদিহিতামূলক শাসনব্যবস্থা কায়েম করা। এজন্য প্রতিটি নির্বাচনের আগে দলের ইশতেহারে সেই বিষয়টি তুলে ধরা হয়। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদের নির্বাচনী ইশতেহারে ধর্মীয় সংখ্যালঘুর প্রতি ‘বৈষম্যমূলক আচরণ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের চির অবসানে’র প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। ২৮ ডিসেম্বর (২০১৩) দশম সংসদের নির্বাচনী ইশতেহারে (২০১৪) কিংবা ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতা দূর করে রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনের সর্বক্ষেত্রে শান্তি, শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করার প্রত্যয় উচ্চারিত হয়েছে। একথা স্বীকার করতেই হবে যে আওয়ামী লীগই একমাত্র রাজনৈতিক সংগঠন যারা দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিশ্বাস করে। সুস্থ ধারার রাজনীতির ধারক বাহক বলেই সকল ধর্মের মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতি অনুসরণ করে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি স্থাপনের নিরলস প্রয়াস রয়েছে আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনার। এজন্য ‘মুজিববর্ষে’র ৩০ জানুয়ারি সরস্বতী পূজার দিন ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ঘোষিত তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে।
৪.
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিস্তার এবং ধর্মীয় জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসদমনে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্ব অনন্যরূপে চিহ্নিত। আইন, বিচার ও নিবিড় নজরদারির জন্য বাংলাদেশে জঙ্গিরা সুবিধা করতে পারছে না। জঙ্গিবাদ ও নাশকতা নির্মূলে বর্তমান সরকার গত ১১ বছরে সাফল্যের শিখরে পৌঁছেছে। অথচ আমাদের সকলের মনে আছে, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছিল তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে। শেখ হাসিনার ওপর সেই ভয়ঙ্কর হামলার এক বছর অতিবাহিত হওয়ার আগেই শোকাবহ আগস্টেই ২০০৫ সালে ঘটে দেশব্যাপী বোমা হামলার ঘটনা। তবে বর্তমান সরকারের বহুমুখী পদক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে জঙ্গি এবং সন্ত্রাসবাদ নির্মূল হয়েছে এবং বাংলাদেশের আপামর মানুষ এখন জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় আবহমান বাংলা সবসময়ই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর ছিল। এ সেদিন পর্যন্ত অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকা-ের আগেও এদেশে জঙ্গিবাদের সরব উপস্থিতি লক্ষ করা যায়নি। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর শাসন-কালোত্তর টানা ২১ বছর সামরিক শাসকদের মদদে দেশের মধ্যে ধর্মীয় উগ্রবাদের জন্ম হয়। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সরকার ক্ষমতায় এলে পটভূমি পাল্টে যায়। মৌলবাদী গোষ্ঠী মাথা তুলে দাঁড়াতে ব্যর্থ হয়। তবে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে জঙ্গিরা তৎকালীন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ২০০৯ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসীন হলে জঙ্গিরা গা-ঢাকা দেয়। আত্মগোপনে থাকা এসব জঙ্গি ও জঙ্গি সংগঠন বর্তমান সরকারের সময় রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে আবারও মাথা তোলার চেষ্টা করছে। আর সংগঠনগুলোর সবই একই নেটওয়ার্কে ধর্মীয় উগ্রবাদিতার কার্যক্রম অনুসরণ করে নাশকতার বিস্তৃত কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছে।
৫.
বাঙালি সংস্কৃতির জাগরণ ও ধারণ এবং লালন করেছেন শেখ হাসিনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও হাজার বছরের চিরায়ত বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম ধারক-বাহক তিনি। গভীর মমতায় লালন করেছেন আমাদের শ্রেষ্ঠত্বের সকল দৃষ্টান্ত। ১৯৮১ সালের ১৭ মে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে বলেছেন- ‘আমার একমাত্র দায়িত্ব পিতার অধরা স্বপ্ন সফল করা।’ শেখ হাসিনা বলে থাকেন, ‘জনগণের ভাত ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করাই আমার রাজনীতি।’ শিশুদের মধ্যে ভবিষ্যৎ দেখতে ভালোবাসেন, ‘শিশুরা আমাদের দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ। আমাদের বর্তমানকে উৎসর্গ করে তাদের ভবিষ্যতকে আনন্দ, উজ্জ্বল, স্বস্তি ও শান্তিময় করে তুলতে হবে।’ শেখ হাসিনা দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন ও সংগ্রাম, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সাহসী যোদ্ধা, বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার প্রবক্তা এবং রাজনৈতিক দূরদর্শীতার কারণে তাঁকে বিশেষভাবে শান্তি পুরস্কার ও সম্মানীয় ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করা হয়। অনেকগুলো পদক তাঁর প্রগতিশীল রাজনৈতিক ভূমিকার স্মারক।
যে কোনো সংকট মুহূর্তে কিংবা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনা ত্বরিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ১৯৮২ থেকে আজ পর্যন্ত অনেকগুলো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত তিনি প্রচণ্ড দৃঢ়তার সঙ্গে নিয়েছেন। প্রতিকূল পরিবেশ, সহকর্মীদের শত বাধা এবং সুশীল সমাজ কিংবা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের চিন্তা-চেতনা সম্পূর্ণরূপে তাঁর বিপক্ষে থাকার পরও তিনি এগিয়ে গিয়েছেন। ১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে এবং পরবর্তীতে আবার সংসদ থেকে বের হয়ে আসা একটি বিশাল ব্যাপার ছিল। ১৯৯১ সালের পর বিএনপিবিরোধী আন্দোলনে সফলতা, ১৯৯৬ সালের সরকার প্রধান হিসেবে সাফল্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা তেমনি ১/১১’র প্রেক্ষাপটে অতি দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ অনন্যসাধারণ। সব শেষে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনটি তিনি করেছিলেন দূরদর্শী রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে- বিরোধী পক্ষসহ তাবৎ দুনিয়ার ক্ষমতাবান রাষ্ট্রশক্তির হুমকি-ধামকি উপেক্ষা করে কেবলমাত্র নিজের দলের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে। এজন্য তাঁর উপলব্ধি তাৎপর্যবহ-‘বাংলাদেশের জনগণের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করে উন্নত জীবন নিশ্চিত করতে আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তাদের ভালোবাসার প্রতিদান আমাকে দিতেই হবে। জনগণের জন্য একটা সুন্দর, উন্নত জীবন উপহার দেব, এই আমার প্রতিজ্ঞা।’(সবুজ মাঠ পেরিয়ে, সবুজ মাঠ পেরিয়ে) ‘জনগণের জন্য একটা সুন্দর, উন্নত জীবন উপহার দেব’- এই প্রত্যয় কেবল অর্থনৈতিক উন্নয়নে সীমাবদ্ধ থাকেনি। বরং জনগণের চেতনা বিস্তারে তিনি কাজ করে চলেছেন সাংস্কৃতিক জগত বিনির্মাণে। তিনি বাঙালি জাতিসত্তার চেতনাকে জাগ্রত করার প্রাণান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আবার কোনো শিল্পী-সাহিত্যিক অসুস্থ হলে চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা করেছেন; যেমন এন্ড্রু কিশোরের চিকিৎসার সমস্ত দায়িত্ব তিনি নিয়েছেন। বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের জাগরণের এসব কথা তাঁর রাজনৈতিক আদর্শের সঙ্গেই বিজড়িত।
৬.
কুচক্রী মহলের দ্বারা ১৯ বার হত্যাচেষ্টার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। কারণ শেখ হাসিনা পিতার মতোই অসীম সাহসী, দৃঢ়তায় অবিচল, দেশপ্রেম ও মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন একজন আদর্শবাদী নেতা। দেশের যে কোনো সংকটে তাঁর নেতৃত্ব দলমত নির্বিশেষ সকল রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের কাছে একমাত্র গ্রহণযোগ্য। সেখানে দ্বিতীয় কোনো বিকল্প নেই। বাঙালি এক নারী পরিবারের প্রায় সবাইকে হারিয়ে দুঃসহ স্মৃতির রক্তক্ষরণকে জয় করে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন; লড়াই করছেন শুধু গণতন্ত্রের জন্যই নয়, সব প্রতিকূলতার বিরুদ্ধেই- তাঁর সেই সংগ্রাম প্রগতিশীল রাজনীতির অন্যতম দিক। বাংলাদেশের প্রতীক হিসেবে তিনি জনগণের কাছে আজ নন্দিত।
লেখক : অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ এবং পরিচালক, জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়,
email- [email protected]
এই বিভাগের আরো সংবাদ