নির্বাচন কোনো ছেলেখেলা নয়
প্রভাষ আমিন
১৫ জানুয়ারি ২০২০, ১০:১২ | অনলাইন সংস্করণ
কোনো একটা ইস্যুতে একজন মানুষের একটা সুনির্দিষ্ট অবস্থান থাকা উচিত। যেমন আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীর ধর্ষকের ক্রসফায়ার চাইবেন, আবার অন্য ক্রসফায়ারে মানবাধিকার লঙ্ঘণের অভিযোগ তুলবেন; দুটো তো একসাথে চলবে না। হয় আপনি সব ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের বিপক্ষে অথবা পক্ষে। মাঝামাঝি কোনো অবস্থান নেই। বিএনপি সাম্প্রদায়িক শক্তির সাথে জোট বাধলে আপনি গেল গেল রব তুলবেন আর আওয়ামী লীগ সাম্প্রদায়িক শক্তির সাথে সমঝোতা করলে আপনি বলবেন, এটা তাদের কৌশল; এটা হওয়া উচিত নয়। হয় আপনি সবক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, নয় আপনি সাম্প্রদায়িক। কিন্তু একজন মানুষ যখন ঘন ঘন অবস্থান বদলায়, সিদ্ধান্ত বদলায়; অন্য মানুষ বিভ্রান্ত হয়। তবে একজন মানুষকে সারাজীবন একই অবস্থানেই থাকতে হবে, একই আদর্শ অনুসরণ করতে হবে; এমন কোনো কথা নেই। দলবদল করা, আদর্শ বদল করা, অবস্থান বদল করা যে সবসময় খারাপ তাও কিন্তু নয়। মানুষ তো আর রোবট নয়, তার মন বদলে যেতে পারে, ভাবনায় বদল আসতে পারে, নিজের ভুল বুঝতে পারেন বা নতুন করে ভুল করতে পারেন। যৌবনে কট্টর নাস্তিক অনেককে দেখেছি শেষ বয়সে হজ্ব করে পাক্কা হুজুর বনে গেছেন। তবে একজন মানুষের অবস্থান বদল করা আর একটি দলের অবস্থান বদল করা এক নয়। একটি সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক আদর্শের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে একটি রাজনৈতিক দল। তবে রাজনৈতিক দলের আদর্শও বদলাতে পারে, সেটা হতে পারে যুগের সাথে; আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে। বরং সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে আদর্শ বদলাতে না পারলেই বরং ঝুকি থাকে। অনেক বড় দল এভাবে হারিয়ে গেছে। কিন্তু কোনো একটি রাজনৈতিক দল যখন চলমান সময়ে ঘন ঘন বদলায়, তখন সেটা সময়ের সাথে তাল মেলানো নয়; সেটা দেউলিয়াত্ব। দলের কর্মী-সমর্থকরা এতে বিভ্রান্ত হন। যেমন বিএনপির নেতাকর্মী-সমর্থকরা হচ্ছেন গত কয়েকবছর ধরে।
নির্বাচন, সংসদ প্রশ্নে বিএনপির অবস্থান যেন শরতের আকাশ, ক্ষণে ক্ষণে রং বদলায়। অংশগ্রহণ, বয়কট, আগের রাতে বর্জন, ভোটের দুপুরে বর্জন- অস্থির বালক যেন। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সেই সরকারের অধীনে প্রায় সব স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। তার অনেকগুলোতে তাদের চমক লাগানো ফলাফলও ছিল। বিশেষ করে ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে অনুষ্ঠিত পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয় বিএনপির নেতাকর্মীদের দারুণভাবে উজ্জীবিত করেছিল। সারাদেশেই বিএনপির পক্ষে একটা দারুণ জোয়ার সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু সেই জোয়ারের সুবিধাটুকু নিতে পারেনি বিএনপি, আসলে নিতে চায়ইনি। ২০১৪ সালের নির্বাচনেই অংশ নেয়নি বিএনপি। নির্বাচনে অংশ না নিলেও প্রতিহতের চেষ্টায় দেশজুড়ে ব্যাপক সন্ত্রাস করে সমর্থনের জোয়ারে ভাটার টান লাগিয়ে দেয় বিএনপি। জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নিলেও এরপর অনুষ্ঠিত বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। সেটাও আবার নিরবচ্ছিন্ন নয়; কোনো নির্বাচনে তারা যাচ্ছেন, কোনো নির্বাচনে যাচ্ছেন না। কোনটাতে যাবেন, কোনটাতে যাবেন না; তারও কোনো মানদন্ড নেই। পুরোটাই যেন ছেলেখেলা। একবার বলেন, এই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচনে যাবে না। আবার বলেন, আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে যাচ্ছি। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যাওয়ার যুক্তি হিসেবে বিএনপি নেতারা বিভিন্ন সময়ে বলেছেন, যেহেতু এ নির্বাচনে সরকার পরিবর্তন হবে না, তাই যেতে অসুবিধা নেই। যেন সরকার পরিবর্তন হয়ে গেলে বিএনপি বিশাল বিপাকে পড়ে যাবে। নির্বাচনে যাওয়া, না যাওয়া, বয়কট, প্রতিহতের সাথে বিএনপির আরেকটা স্টাইল আছে- বর্জন। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে আগের দিন মধ্যরাতে বর্জন করেছে, ঢাকায় করেছে নির্বাচনের দিন দুপুরে। কখন যে কোনটা করবে, তার কোনো গ্যারান্টি নেই। এমনও হয়েছে বিএনপি বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে, কিন্তু পরে দেখা গেল বিএনপি প্রার্থী জিতে গেছেন। এমনও হয়েছে, বিএনপিপন্থি কোনো বুদ্ধিজীবী বা বিএনপির কোনো নেতা টক শো'তে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থাকার পক্ষে হাজারটা যুক্তি দিলেন। সকালে সেই টক শো পুনঃপ্রচার হতে হতেই শোনেন, বর্জন। নীতির ব্যাপারে, সিদ্ধান্তের ব্যাপারে এমন অধারাবাহিক দল বিশ্বের ইতিহাসে বিরল।
সরকার পরিবর্তনের ঝুকি না থাকায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যাওয়া, না যাওয়া, বয়কট, বর্জন করতে করতেই ২০১৮ সাল চলে আসে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচন তো সরকার পরিবর্তনের নির্বাচন। এবার কী হবে? ২০১৪ সালের রাজনৈতিক অবস্থান বিবেচনায় বিএনপির বয়কট এবং প্রতিহত করার কথা। কিন্তু সবাই যে বলছে, ২০১৪ সালের নির্বাচনে না গিয়ে বিএনপি ভুল করেছে। জনগণ আওয়ামী লীগের ওপর ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে আছে। একবার নির্বাচনে গেলেই ক্ষমতা নিশ্চিত। এমন সুযোগ হেলায় হারানো ঠিক হবে না। ক্ষমতায় যাওয়া যেন সময়ের ব্যাপার মাত্র। ক্ষমতায় গেলে কে রাষ্ট্রপতি হবেন, কে প্রধানমন্ত্রী হবেন, কে নিজে চাবি নিয়ে গিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে আসবেন; সব ঠিক প্রায়। না হওয়ার কোনো কারণ নেই। টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের ওপর মানুষ চরম বিরক্ত। বেগম জিয়া কারাগারে থাকায় বিএনপির পক্ষে সিমপ্যাথি ভোটের জোয়ার হবে। তাছাড়া এবার শুধু ২০ দল নয়, সাথে আছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ, ডান-বাম সব এক হয়েছে ধানের শীষের পতাকাতলে। আওয়ামী লীগের নৌকা এবার ডুববেই। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, মাহমুদুর রহমান মান্না, আ স ম আব্দুর রব, ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ব্যারিস্টার মইনুলের মত সেনাপতিরা তো আছেনই; তাদের সর্বাধিনায়ক হলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী, কোনো নির্বাচনে জেতার যার কোনো দুর্নাম নেই; সেই ড. কামাল হোসেন। সাজ সাজ রব। লাখে লাখে সৈন্য মরে কাতারে কাতার, শুমারও করিয়া দেখি মাত্র ৮ জন। বিএনপির ৬ জন, ঐক্যফ্রন্টের ২ জন। তবে কেউ ভাববেন না, এটা জনগণের রায়। এটা হলো গণতন্ত্র নিয়ে, নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের রাজনীতিবিদদের ছেলেখেলা।
এটা সবাই মানবেন, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ নির্বাচনগুলোর একটি। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে গবেষণা হলে সবচেয়ে খারাপ নির্বাচন নিয়ে ১৫ ফেব্রুয়ারি আর ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে দারুণ লড়াই হবে। আওয়ামী লীগ হয়তো ধরে আনতে বলেছিল, পুলিশ আর প্রশাসন মিলে হাত পা বেধে নিয়ে এসেছে। অনেকে বলেন, ২৯ ডিসেম্বর রাতেই নির্বাচন হয়ে গেছে। ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারাও কথা বলতে অস্বস্তি বোধ করেন। আড়ালে-আবডালে হাসাহাসি করেন, মাইকের সামনে পড়ে গেলে বলেন, নির্বাচন সর্বাঙ্গীন ভালো হয়নি, আমাদের আরো ভালোর দিকে যেতে হবে। আওয়ামী লীগের শরিক রাশেদ খান মেনন প্রকাশ্যে ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন নিয়ে সবচেয়ে ভালো মূল্যায়নটি ছিল সাংবাদিক মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জুর। ৩১ ডিসেম্বর তিনি ফেসবুকে লিখেছিলেন, 'ছেলে নকল করেছিল টেনেটুনে পাশ করার জন্য। ফলাফলে দেখা গেল গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে। তবে আমার ধারণা, এই নির্লজ্জ ডাকাতিটা না করলেও ৩০ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগই জিততো। কারণ বিএনপি অনেক আগেই নির্বাচনের মাঠ ছেড়ে দিয়েছিল। সত্যি কথা বলতে কি বিএনপি আসলে সিরিয়াসলি মাঠেই নামেনি। মধ্যরাতে ভোট সেরে ফেলার আইডিয়াটা কার মাথায় এসেছিল জানি না, তবে আওয়ামী লীগ নির্বাচনের প্রস্তুতিতে সিরিয়াস ছিল। নির্বাচনের কয়েকমাস আগে থেকেই ধানমন্ডিতে আলাদা অফিস নিয়ে এইচ টি ইমামের নেতৃত্বে বিশাল টিম দিনরাত কাজ করেছে। গবেষণা, জরিপ, হিসাব, প্রার্থী- ঘুম নেই কারো চোখে। দেশের প্রত্যেক অঞ্চলের জন্য আলাদা ডেস্ক, আলাদা ফোন, নির্ধারিত লোক- সার্বক্ষণিক যোগাযোগ হচ্ছে। ৩০ ডিসেম্বর রাতে আমার মনে হয়েছে, এই যদি হবে, তাহলে এই লোকগুলো দিনরাত খাটলো কেন?
উল্টোদিকে বিএনপির সব থাউকা। মনোনয়ন নিয়ে, শরিকদের সাথে ভাগাভাগি নিয়ে, জামাত আর ঐক্যফ্রন্টের ঝামেলা মেটাতে লেজেগোবরে অবস্থা। একেক আসনে ৫/৭ জনকে প্রাথমিক মনোনয়ন দিয়ে পুরো জট পাকিয়ে ফেলে বিএনপি। আওয়ামী লীগের অফিসে যেখানে ২৪ ঘণ্টাই ব্যস্ততা, বিএনপি সেখানে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির বৈঠক পর্যন্ত করেনি বা করতে পারেনি। এটা নিশ্চয়ই আওয়ামী লীগের দোষ নয়। নিজেরা কিছুই করবেন না, আর মানুষ আওয়ামী লীগের ওপর বিরক্ত হয়ে আপনাদের খুজে খুজে ভোট দেবে, এতটা আশা করা বাড়াবাড়ি। নিজেদের পক্ষের ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করে কেন্দ্র পর্যন্ত আনার সক্ষমতা বিএনপি হারিয়েছে অনেক আগেই। তাও না হয় জনগণ খুজে খুজে বিপক্ষে ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে হারিয়ে দিল, তাহলে দেশটা কে চালাবে? বিএনপি? তাদের সেই সক্ষমতা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। আগে ছিল না। এই সন্দেহ তৈরি হয়েছে, ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের আগে বিএনপির অপেশাদারিত্ব, অদক্ষতার ধারাবাহিক প্রদর্শনী দেশে। পাছে দেশ পরিচালনার ভার চলে আসে, এই ভয়ে বিএনপি নির্বাচন থেকে দূরে থাকে; হয় বর্জন, নয় বয়কট। নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে তাদের মাথা ব্যথা নেই। তারা আগে থেকেই জ্বালাময়ী বক্তৃতার পয়েন্ট রেডি করেন, আগেই জানতাম নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। এই ফ্যাসিস্ট সরকার গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। ব্যস খেল খতম, পয়সা হজম।
আমি ভেবেছিলাম অবিশ্বাস্য ফলাফলের পর বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট রাজপথে অবিশ্বাস্য আন্দোলন গড়ে তুলবে। কিন্তু মামলা-হামলা, গুম-খুনে বিপর্যস্ত বিএনপির কোমরে যে আন্দোলন করার জোর নাই, সেটা আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। আর ঐক্যফ্রন্টে তো এক নেতা-এক দল সিস্টেম। জাফরুল্লাহ আর ব্যারিস্টার মইনুলের তো তাও নেই। তবে ভেবেছিলাম ড. কামাল হোসেন যেহেতু আছেন, তিনি নিশ্চয়ই ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনকে কোর্ট পর্যন্ত নিয়ে যাবেন। অন্তত ইতিহাসের স্বার্থে নির্বাচনটি যে ভালো হয়নি, তার একটি আইনী নোট অব ডিসেন্ট থাকা উচিত ছিল। কিন্তু মির্জা ফখরুল আর ড. কামাল হম্বিতম্বি অনেক করলেন। কিন্তু সবই হাওয়ায় তলোয়ার চালানো। এরপর বিভ্রান্তি নির্বাচিত এমপিদের সংসদে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে। আমি ভেবেছি, বিএনপি কক্ষনো সংসদে যাবে না। তাদের নামের পাশে ৬ আসন, বিরোধী দলের মর্যাদাও যেখানে নেই, সেখানে কেন যাবেন। বিএনপি নেতারাও বললেন, এই অবৈধ সংসদকে বৈধতা দিতে বিএনপি সংসদে যাবে না। একজন আগে শপথ নিলো বলে, তাকে জাতীয় বেঈমান বানিয়ে, বহিস্কার করে হুলস্থুল। কিন্তু সংসদে যোগ দেয়ার শেষ দিনে লন্ডনের নির্দেশে মির্জা ফখরুল ছাড়া সবাই হাজির। মির্জা ফখরুল গেলেন ননা কেন, এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর কেউ জানে না। সংসদে যাওয়ার যুক্তি কী? না, আমরা কথা বলার, আন্দোলন করার কোনো সুযোগ নষ্ট করবো না। সংসদে, রাজপথে, আদালতে সব জায়গায় প্রতিবাদ চলবে। আপনারা নিশ্চয়ই দেখতে পাচ্ছেন, কোথায় কোথায় প্রতিবাদ হচ্ছে। বিএনপির এমপিরা সংসদে জ্বালাময়ী বক্তব্য রাখছেন, প্রয়োজনে ওয়াকআউট করছেন, প্লট নিচ্ছেন, শুল্কমুক্ত গাড়ি নিচ্ছেন। সংসদীয় গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষায় তাদের অবদান ইতিহাসে প্লাটিনামের অক্ষরে লেখা থাকবে। সমস্যা হলো, সংসদে আমে-দুধে মিশে গেছে। আর যারা ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন নিয়ে ক্ষুব্ধ, গণতন্ত্র নিয়ে শঙ্কিত, নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে হতাশ জনগণ হলো আঁটি; তারা গড়াগড়ি খাচ্ছে।
৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন নিয়ে এত কথা বললাম, কারণ ৩০ জানুয়ারি আরেকটি নির্বাচন। মাত্র দুটি সিটি নির্বাচন, সরকার পরিবর্তন হবে না; তবুও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নির্বাচনটি হচ্ছে খোদ ঢাকায়। কে নির্বাচিত হবেন, এটা আপনিও জানেন, আমিও জানি। মজাটা হলো, পিক অ্যান্ড চুজ, পিক অ্যান্ড চুজ খেলায় বিএনপি এবার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। কিন্তু তারা কত দূর থাকবেন; তা নিয়ে সংশয় আছে। বিএনপি প্রার্থীদের তাই প্রধান প্রতিশ্রুতি হলো, হারজিত যাই হোক, আমরা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবো। জনগণের অনাস্থা, অবিশ্বাস দূর করার কী প্রাণান্তকর চেষ্টা। কিন্তু তাও তো সংশয় যায় না। মির্জা ফখরুল ফ্রুটিকা খেয়ে বলে দিয়েছেন, এই সরকারের অধীনে যে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, সেটি প্রমাণ করতেই বিএনপি নির্বাচনে গেছে। কী দুর্ভাগ্য আমাদের, নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করতে আমাদের জুড়ি নেই। নির্বাচনে জেতার চেয়ে বক্তৃতার পয়েন্ট জোগারে ব্যস্ত তারা। কবে ৩০ জানুয়ারি আসবে, তাদের প্রার্থী হারবে, আর তারা গলা উচিয়ে বলবেন, আমরা আগেই বলেছিলাম, এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এই সরকার গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। আর যদি কোনো কারণে জিতে যায়, তাহলে তো গলা আরো উচু হবে, আমরা আগেই জানতাম, জনগণ সরকারের সাথে নেই। তারা ফ্যাসিস্ট সরকারকে প্রত্যাখ্যান করেছে।
মির্জা ফখরুলকে ধন্যবাদ, তিনি অনেক আগেই মনের কথাটি বলে দিয়েছেন। বর্তমান সরকারের অধীনে যে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়; এটা আমরা সবাই জানি। এই জানা কথাটি প্রমাণ করার জন্য, আপনাদের এত কষ্ট না করলেও চলতো। আপনারা নির্বাচনে আসলে জয়ের জন্যই আসুন, মাটি কামড়ে পড়ে থাকুন, লড়াই করুন।
এই যে আজ নির্বাচনের আগেই সবাই রেজাল্ট অনুমান করতে পারছে, নির্বাচন ব্যবস্থাকে হাস্যকর করে ফেলা হচ্ছে, নির্বাচনকে ছেলেখেলা বানিয়ে ফেলা হচ্ছে; এর দায় অনেকটাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের, তবে বিএনপির দায়ও কম নয়। প্রিয় রাজনীতিবিদরা, দেশ আপনারাই চালাবেন, আপনারাই শাসন করবেন, শোষণ করবেন; আমাদের খালি শোষক নির্বাচন করার সুযোগ দিন। নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর আস্থাটা ফিরিয়ে দিন। লেখক : হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ
[email protected]
নির্বাচন, সংসদ প্রশ্নে বিএনপির অবস্থান যেন শরতের আকাশ, ক্ষণে ক্ষণে রং বদলায়। অংশগ্রহণ, বয়কট, আগের রাতে বর্জন, ভোটের দুপুরে বর্জন- অস্থির বালক যেন। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সেই সরকারের অধীনে প্রায় সব স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। তার অনেকগুলোতে তাদের চমক লাগানো ফলাফলও ছিল। বিশেষ করে ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে অনুষ্ঠিত পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয় বিএনপির নেতাকর্মীদের দারুণভাবে উজ্জীবিত করেছিল। সারাদেশেই বিএনপির পক্ষে একটা দারুণ জোয়ার সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু সেই জোয়ারের সুবিধাটুকু নিতে পারেনি বিএনপি, আসলে নিতে চায়ইনি। ২০১৪ সালের নির্বাচনেই অংশ নেয়নি বিএনপি। নির্বাচনে অংশ না নিলেও প্রতিহতের চেষ্টায় দেশজুড়ে ব্যাপক সন্ত্রাস করে সমর্থনের জোয়ারে ভাটার টান লাগিয়ে দেয় বিএনপি। জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নিলেও এরপর অনুষ্ঠিত বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। সেটাও আবার নিরবচ্ছিন্ন নয়; কোনো নির্বাচনে তারা যাচ্ছেন, কোনো নির্বাচনে যাচ্ছেন না। কোনটাতে যাবেন, কোনটাতে যাবেন না; তারও কোনো মানদন্ড নেই। পুরোটাই যেন ছেলেখেলা। একবার বলেন, এই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচনে যাবে না। আবার বলেন, আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে যাচ্ছি। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যাওয়ার যুক্তি হিসেবে বিএনপি নেতারা বিভিন্ন সময়ে বলেছেন, যেহেতু এ নির্বাচনে সরকার পরিবর্তন হবে না, তাই যেতে অসুবিধা নেই। যেন সরকার পরিবর্তন হয়ে গেলে বিএনপি বিশাল বিপাকে পড়ে যাবে। নির্বাচনে যাওয়া, না যাওয়া, বয়কট, প্রতিহতের সাথে বিএনপির আরেকটা স্টাইল আছে- বর্জন। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে আগের দিন মধ্যরাতে বর্জন করেছে, ঢাকায় করেছে নির্বাচনের দিন দুপুরে। কখন যে কোনটা করবে, তার কোনো গ্যারান্টি নেই। এমনও হয়েছে বিএনপি বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে, কিন্তু পরে দেখা গেল বিএনপি প্রার্থী জিতে গেছেন। এমনও হয়েছে, বিএনপিপন্থি কোনো বুদ্ধিজীবী বা বিএনপির কোনো নেতা টক শো'তে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থাকার পক্ষে হাজারটা যুক্তি দিলেন। সকালে সেই টক শো পুনঃপ্রচার হতে হতেই শোনেন, বর্জন। নীতির ব্যাপারে, সিদ্ধান্তের ব্যাপারে এমন অধারাবাহিক দল বিশ্বের ইতিহাসে বিরল।
সরকার পরিবর্তনের ঝুকি না থাকায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যাওয়া, না যাওয়া, বয়কট, বর্জন করতে করতেই ২০১৮ সাল চলে আসে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচন তো সরকার পরিবর্তনের নির্বাচন। এবার কী হবে? ২০১৪ সালের রাজনৈতিক অবস্থান বিবেচনায় বিএনপির বয়কট এবং প্রতিহত করার কথা। কিন্তু সবাই যে বলছে, ২০১৪ সালের নির্বাচনে না গিয়ে বিএনপি ভুল করেছে। জনগণ আওয়ামী লীগের ওপর ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে আছে। একবার নির্বাচনে গেলেই ক্ষমতা নিশ্চিত। এমন সুযোগ হেলায় হারানো ঠিক হবে না। ক্ষমতায় যাওয়া যেন সময়ের ব্যাপার মাত্র। ক্ষমতায় গেলে কে রাষ্ট্রপতি হবেন, কে প্রধানমন্ত্রী হবেন, কে নিজে চাবি নিয়ে গিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে আসবেন; সব ঠিক প্রায়। না হওয়ার কোনো কারণ নেই। টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের ওপর মানুষ চরম বিরক্ত। বেগম জিয়া কারাগারে থাকায় বিএনপির পক্ষে সিমপ্যাথি ভোটের জোয়ার হবে। তাছাড়া এবার শুধু ২০ দল নয়, সাথে আছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ, ডান-বাম সব এক হয়েছে ধানের শীষের পতাকাতলে। আওয়ামী লীগের নৌকা এবার ডুববেই। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, মাহমুদুর রহমান মান্না, আ স ম আব্দুর রব, ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ব্যারিস্টার মইনুলের মত সেনাপতিরা তো আছেনই; তাদের সর্বাধিনায়ক হলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী, কোনো নির্বাচনে জেতার যার কোনো দুর্নাম নেই; সেই ড. কামাল হোসেন। সাজ সাজ রব। লাখে লাখে সৈন্য মরে কাতারে কাতার, শুমারও করিয়া দেখি মাত্র ৮ জন। বিএনপির ৬ জন, ঐক্যফ্রন্টের ২ জন। তবে কেউ ভাববেন না, এটা জনগণের রায়। এটা হলো গণতন্ত্র নিয়ে, নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের রাজনীতিবিদদের ছেলেখেলা।
এটা সবাই মানবেন, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ নির্বাচনগুলোর একটি। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে গবেষণা হলে সবচেয়ে খারাপ নির্বাচন নিয়ে ১৫ ফেব্রুয়ারি আর ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে দারুণ লড়াই হবে। আওয়ামী লীগ হয়তো ধরে আনতে বলেছিল, পুলিশ আর প্রশাসন মিলে হাত পা বেধে নিয়ে এসেছে। অনেকে বলেন, ২৯ ডিসেম্বর রাতেই নির্বাচন হয়ে গেছে। ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারাও কথা বলতে অস্বস্তি বোধ করেন। আড়ালে-আবডালে হাসাহাসি করেন, মাইকের সামনে পড়ে গেলে বলেন, নির্বাচন সর্বাঙ্গীন ভালো হয়নি, আমাদের আরো ভালোর দিকে যেতে হবে। আওয়ামী লীগের শরিক রাশেদ খান মেনন প্রকাশ্যে ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন নিয়ে সবচেয়ে ভালো মূল্যায়নটি ছিল সাংবাদিক মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জুর। ৩১ ডিসেম্বর তিনি ফেসবুকে লিখেছিলেন, 'ছেলে নকল করেছিল টেনেটুনে পাশ করার জন্য। ফলাফলে দেখা গেল গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে। তবে আমার ধারণা, এই নির্লজ্জ ডাকাতিটা না করলেও ৩০ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগই জিততো। কারণ বিএনপি অনেক আগেই নির্বাচনের মাঠ ছেড়ে দিয়েছিল। সত্যি কথা বলতে কি বিএনপি আসলে সিরিয়াসলি মাঠেই নামেনি। মধ্যরাতে ভোট সেরে ফেলার আইডিয়াটা কার মাথায় এসেছিল জানি না, তবে আওয়ামী লীগ নির্বাচনের প্রস্তুতিতে সিরিয়াস ছিল। নির্বাচনের কয়েকমাস আগে থেকেই ধানমন্ডিতে আলাদা অফিস নিয়ে এইচ টি ইমামের নেতৃত্বে বিশাল টিম দিনরাত কাজ করেছে। গবেষণা, জরিপ, হিসাব, প্রার্থী- ঘুম নেই কারো চোখে। দেশের প্রত্যেক অঞ্চলের জন্য আলাদা ডেস্ক, আলাদা ফোন, নির্ধারিত লোক- সার্বক্ষণিক যোগাযোগ হচ্ছে। ৩০ ডিসেম্বর রাতে আমার মনে হয়েছে, এই যদি হবে, তাহলে এই লোকগুলো দিনরাত খাটলো কেন?
উল্টোদিকে বিএনপির সব থাউকা। মনোনয়ন নিয়ে, শরিকদের সাথে ভাগাভাগি নিয়ে, জামাত আর ঐক্যফ্রন্টের ঝামেলা মেটাতে লেজেগোবরে অবস্থা। একেক আসনে ৫/৭ জনকে প্রাথমিক মনোনয়ন দিয়ে পুরো জট পাকিয়ে ফেলে বিএনপি। আওয়ামী লীগের অফিসে যেখানে ২৪ ঘণ্টাই ব্যস্ততা, বিএনপি সেখানে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির বৈঠক পর্যন্ত করেনি বা করতে পারেনি। এটা নিশ্চয়ই আওয়ামী লীগের দোষ নয়। নিজেরা কিছুই করবেন না, আর মানুষ আওয়ামী লীগের ওপর বিরক্ত হয়ে আপনাদের খুজে খুজে ভোট দেবে, এতটা আশা করা বাড়াবাড়ি। নিজেদের পক্ষের ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করে কেন্দ্র পর্যন্ত আনার সক্ষমতা বিএনপি হারিয়েছে অনেক আগেই। তাও না হয় জনগণ খুজে খুজে বিপক্ষে ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে হারিয়ে দিল, তাহলে দেশটা কে চালাবে? বিএনপি? তাদের সেই সক্ষমতা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। আগে ছিল না। এই সন্দেহ তৈরি হয়েছে, ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের আগে বিএনপির অপেশাদারিত্ব, অদক্ষতার ধারাবাহিক প্রদর্শনী দেশে। পাছে দেশ পরিচালনার ভার চলে আসে, এই ভয়ে বিএনপি নির্বাচন থেকে দূরে থাকে; হয় বর্জন, নয় বয়কট। নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে তাদের মাথা ব্যথা নেই। তারা আগে থেকেই জ্বালাময়ী বক্তৃতার পয়েন্ট রেডি করেন, আগেই জানতাম নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। এই ফ্যাসিস্ট সরকার গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। ব্যস খেল খতম, পয়সা হজম।
আমি ভেবেছিলাম অবিশ্বাস্য ফলাফলের পর বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট রাজপথে অবিশ্বাস্য আন্দোলন গড়ে তুলবে। কিন্তু মামলা-হামলা, গুম-খুনে বিপর্যস্ত বিএনপির কোমরে যে আন্দোলন করার জোর নাই, সেটা আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। আর ঐক্যফ্রন্টে তো এক নেতা-এক দল সিস্টেম। জাফরুল্লাহ আর ব্যারিস্টার মইনুলের তো তাও নেই। তবে ভেবেছিলাম ড. কামাল হোসেন যেহেতু আছেন, তিনি নিশ্চয়ই ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনকে কোর্ট পর্যন্ত নিয়ে যাবেন। অন্তত ইতিহাসের স্বার্থে নির্বাচনটি যে ভালো হয়নি, তার একটি আইনী নোট অব ডিসেন্ট থাকা উচিত ছিল। কিন্তু মির্জা ফখরুল আর ড. কামাল হম্বিতম্বি অনেক করলেন। কিন্তু সবই হাওয়ায় তলোয়ার চালানো। এরপর বিভ্রান্তি নির্বাচিত এমপিদের সংসদে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে। আমি ভেবেছি, বিএনপি কক্ষনো সংসদে যাবে না। তাদের নামের পাশে ৬ আসন, বিরোধী দলের মর্যাদাও যেখানে নেই, সেখানে কেন যাবেন। বিএনপি নেতারাও বললেন, এই অবৈধ সংসদকে বৈধতা দিতে বিএনপি সংসদে যাবে না। একজন আগে শপথ নিলো বলে, তাকে জাতীয় বেঈমান বানিয়ে, বহিস্কার করে হুলস্থুল। কিন্তু সংসদে যোগ দেয়ার শেষ দিনে লন্ডনের নির্দেশে মির্জা ফখরুল ছাড়া সবাই হাজির। মির্জা ফখরুল গেলেন ননা কেন, এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর কেউ জানে না। সংসদে যাওয়ার যুক্তি কী? না, আমরা কথা বলার, আন্দোলন করার কোনো সুযোগ নষ্ট করবো না। সংসদে, রাজপথে, আদালতে সব জায়গায় প্রতিবাদ চলবে। আপনারা নিশ্চয়ই দেখতে পাচ্ছেন, কোথায় কোথায় প্রতিবাদ হচ্ছে। বিএনপির এমপিরা সংসদে জ্বালাময়ী বক্তব্য রাখছেন, প্রয়োজনে ওয়াকআউট করছেন, প্লট নিচ্ছেন, শুল্কমুক্ত গাড়ি নিচ্ছেন। সংসদীয় গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষায় তাদের অবদান ইতিহাসে প্লাটিনামের অক্ষরে লেখা থাকবে। সমস্যা হলো, সংসদে আমে-দুধে মিশে গেছে। আর যারা ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন নিয়ে ক্ষুব্ধ, গণতন্ত্র নিয়ে শঙ্কিত, নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে হতাশ জনগণ হলো আঁটি; তারা গড়াগড়ি খাচ্ছে।
৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন নিয়ে এত কথা বললাম, কারণ ৩০ জানুয়ারি আরেকটি নির্বাচন। মাত্র দুটি সিটি নির্বাচন, সরকার পরিবর্তন হবে না; তবুও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নির্বাচনটি হচ্ছে খোদ ঢাকায়। কে নির্বাচিত হবেন, এটা আপনিও জানেন, আমিও জানি। মজাটা হলো, পিক অ্যান্ড চুজ, পিক অ্যান্ড চুজ খেলায় বিএনপি এবার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। কিন্তু তারা কত দূর থাকবেন; তা নিয়ে সংশয় আছে। বিএনপি প্রার্থীদের তাই প্রধান প্রতিশ্রুতি হলো, হারজিত যাই হোক, আমরা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবো। জনগণের অনাস্থা, অবিশ্বাস দূর করার কী প্রাণান্তকর চেষ্টা। কিন্তু তাও তো সংশয় যায় না। মির্জা ফখরুল ফ্রুটিকা খেয়ে বলে দিয়েছেন, এই সরকারের অধীনে যে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, সেটি প্রমাণ করতেই বিএনপি নির্বাচনে গেছে। কী দুর্ভাগ্য আমাদের, নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করতে আমাদের জুড়ি নেই। নির্বাচনে জেতার চেয়ে বক্তৃতার পয়েন্ট জোগারে ব্যস্ত তারা। কবে ৩০ জানুয়ারি আসবে, তাদের প্রার্থী হারবে, আর তারা গলা উচিয়ে বলবেন, আমরা আগেই বলেছিলাম, এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এই সরকার গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। আর যদি কোনো কারণে জিতে যায়, তাহলে তো গলা আরো উচু হবে, আমরা আগেই জানতাম, জনগণ সরকারের সাথে নেই। তারা ফ্যাসিস্ট সরকারকে প্রত্যাখ্যান করেছে।
মির্জা ফখরুলকে ধন্যবাদ, তিনি অনেক আগেই মনের কথাটি বলে দিয়েছেন। বর্তমান সরকারের অধীনে যে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়; এটা আমরা সবাই জানি। এই জানা কথাটি প্রমাণ করার জন্য, আপনাদের এত কষ্ট না করলেও চলতো। আপনারা নির্বাচনে আসলে জয়ের জন্যই আসুন, মাটি কামড়ে পড়ে থাকুন, লড়াই করুন।
এই যে আজ নির্বাচনের আগেই সবাই রেজাল্ট অনুমান করতে পারছে, নির্বাচন ব্যবস্থাকে হাস্যকর করে ফেলা হচ্ছে, নির্বাচনকে ছেলেখেলা বানিয়ে ফেলা হচ্ছে; এর দায় অনেকটাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের, তবে বিএনপির দায়ও কম নয়। প্রিয় রাজনীতিবিদরা, দেশ আপনারাই চালাবেন, আপনারাই শাসন করবেন, শোষণ করবেন; আমাদের খালি শোষক নির্বাচন করার সুযোগ দিন। নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর আস্থাটা ফিরিয়ে দিন। লেখক : হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ
[email protected]
এই বিভাগের আরো সংবাদ