আজকের শিরোনাম :

রাজনীতির মূলধারায় ফিরতে চাই

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯ মে ২০১৮, ১৯:৪২ | আপডেট : ০৯ মে ২০১৮, ১৯:৪৯

ডা. আদেলী এদিব খান, ০৯ মে, এবিনিউজ : ‘বড় হয়ে তোমাকে রাজনীতি করতে হবে, দেশের জন্য কিছু করতে হবে’- এই নির্দেশ চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ুয়া এক ছাত্রীর প্রতি আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। সময়টা আজ থেকে ১৩ বছর আগের। বাবা রাজনীতি করতেন, বাবার হাত ধরেই সেই ছোট বয়সে বেশ কয়েকবার তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছেন, কথা বলেছেন আজকের আদেলী এদিব খান। আদেলীর বাবার সঙ্গে সে সময়কার দিনগুলোতে শেখ হাসিনার প্রায়ই ফোনালাপ হতো। সেই সুবাদে আদেলীও নেত্রীর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেতেন। সেদিন তার শিশুমনের জবাব ছিল- ‘বড় হয়ে আমিও শেখ হাসিনা হবো’। কচিমনের সেই উক্তি এখন মনে পড়লে নিজে নিজেই হাসেন আদেলী। ছোট্ট বয়সের ছোট্ট কথাগুলো বাস্তব না হলেও বাংলাদেশের রাজনীতিতে আদেলী এখন শেখ হাসিনার অনুসারী। রাজনৈতিক পরিবারের এই সন্তানকে রাজনীতিই যেন স্বাগত জানিয়েছে।

আদেলী এদিব খান বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন কেন্দ্রীয় কমিটি উপ-দপ্তর সম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন। পাশাপাশি এম্বাসেডর হিসেবে কাজ করছেন ‘আমার এমপি-এ’, নোয়াখালী ৫ আসনে। এতদিন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ঢাকা মহানগর কমিটির স্বাস্থ্যসম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। অনলাইন এক্টিভিস্ট হিসেবে কাজ করছে দীর্ঘদিন।

মেধাবী আদেলীর শিক্ষাজীবন নানা বৈচিত্র্যেপূর্ণ। বাবার সরকারি চাকরির সুবাদে কাটাতে হয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। সেই সুবাদে পাবনার মেয়ে হয়েও জন্ম এবং পড়াশোনার শুরুটা সাতক্ষীরায়। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত সেখানেই কাটে তার। তারপর ঢাকায় মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ ফাইভ নিয়ে এসএসসি শেষ করেন। পরে সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ থেকে এইচএসসি। মেন্ডি ডেন্টাল কলেজ থেকে বিডিএস পাস করেছেন। এখন ঢাকা ডেন্টাল হসপিটালে ইন্টার্নি ডাক্তার হিসেবে কাজ করছেন।

রাজনীতি, নারীর ক্ষমতায়ন ও ছাত্রলীগের আসন্ন সম্মেলনসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন তরুণ চিকিৎসক আদেলী এদিব খান। উন্নয়নে নারীদের গৌরবময় অগ্রযাত্রায় বাংলার নারীরা শুধুই এগিয়ে যাচ্ছেন তা নয়, অর্থনীতির চাকাকেও গতিময় করছেন। এই গৌরবময় অগ্রযাত্রা আর থামার নয়। নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন উন্নয়নে নারীদের অংশীদারিত্বের যেপথ দেখিয়ে গেছেন- সেই পথ ধরেই উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় অধিষ্ঠিত আজ নারীর ক্ষমতায়ন। যা প্রতিষ্ঠায় নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। সেই পথেই হাঁটছেন আজকের আদেলী খানরাও।

আদেলী বলেন, গ্রামীণ অর্থনীতিতে নারীর অবদান বিশেষত কৃষি ও শিল্প ক্ষেত্রে ৫৩ শতাংশ। বর্তমানে ১ কোটি ৬৮ লাখ নারী কৃষি, শিল্প ও সেবা অর্থনীতির বৃহত্তর এই তিন খাতে কাজ করছে। ষোল কোটি মানুষের দেশে নারীদের এই বিশাল অংশের কর্মক্ষম জাতীয় অর্থনীতির চাকাতে গতিময় রাখছে- এটাই বাস্তবতা। এই বাস্তবতা নির্মিত হয়েছে এবং অনেকটাই এগিয়েছে জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরেই।

দেশ এনালগ থেকে ডিজিটাল আজ। হাতের মুঠোয় বিশ্ব। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু রাজনীতির ক্ষেত্রটা যেন দিন দিন পিছিয়ে যাচ্ছে। বিশেষত শিষ্টাচার, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সৌজন্যতা অনেকটা হারিয়ে যাচ্ছে রাজনীতি থেকে। কমেছে সামাজিক মূল্যবোধও। এই ব্যাপারে রাজনীতি সচেতন আদেলী মনে করেন, এদেশের রাজনীতিকে জটিল করেছে জিয়াউর রহমানের ‘মানি ইজ নো প্রবলেম’-এর রাজনীতি। সেই রাজনীতির উত্তরসূরিরাই পরবর্তীতে এ দেশের রাজনীতিকে বাণিজ্যায়ন করেছে। এক সময় তাদের হাতে গড়া দুর্নীতির স্তম্ভ ছিল একটি বিশেষ ভবন। সেই ভবন থেকে দুর্নীতির হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয় বিদেশে। এখন সেই অর্থ দেশের স্বাভাবিক জীবন তথা সুষ্ঠু রাজনীতির ধারাকে নানাভাবে ব্যাহত করছে। সেই টাকা ব্যয় হচ্ছে জঙ্গীবাদ উত্থানসহ দেশকে অস্থিতিশীল করতে। রাজনীতিতে শিষ্টাচার, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সৌজন্য ফিরিয়ে আনতে এই অবস্থার অবসান জরুরি।

ছোট্ট বয়সের একটি ঘটনা এখনও আদেলীকে পীড়া দেয়। পঞ্চম শ্রেণীতে ওঠার সময় স্বাধীনতার ঘোষক বঙ্গবন্ধু লিখেছিলেন বলে, সেই সময় তার ক্লাস টিচার লাল কালি দিয়ে খাতা কেটে দিয়েছিলেন। যে স্মৃতি এখনও তাকে তাড়া করে ফিরে। ছোট্ট আদেলী এই ঘটনাটি সেসময় শেখ হাসিনাকেও জানিয়েছিলেন।

ছোটবেলার চঞ্চল মেয়েটি পড়াশোনা, খেলাধুলা, গান-বাজনায় কোথাও পিছিয়ে নেই। স্কুলের শিক্ষকরা তাকে দ্রুতগামী মানবী বলে ডাকতো। স্কুলের দৌড় প্রতিযোগিতায় পড়াশোনার মতো প্রথম স্থানটা তার নিজেরই হতো। ভালো ক্রিকেটারের খাতায়ও নাম ছিল তার। ব্যাডমিন্টনেও নিয়মিত চ্যাম্পিয়ন হতেন। অনিয়মিত গানও করছেন। সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজে বিজ্ঞান মেলায় প্রথমও হয়েছেন। বাবার ইচ্ছেতেই ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পেয়ে বসে আদেলীকে। ডাক্তারির পাশাপাশি রাজনীতি কেন? আদেলীর সোজাসাপটা জবাব- ‘রাজনীতিতে আসা আমার জন্য একটা স্বপ্ন ছিল। যখন নেত্রীর সঙ্গে কথা বলতাম তখন থেকেই স্বপ্ন দেখতাম দেশের মানুষের জন্য কাজ করব। আমি অবহেলিত মানুষের জন্য কাজ করতে চাই।’ একথা সত্য যে, সমাজে একজন মেয়ে হয়ে রাজনীতি করা সত্যিই চ্যালেঞ্জ। নানা বাধা-প্রতিকূলতা মোকাবেলা করতে হয়। আদেলী মনে করেন, মেয়েদের রাজনীতিতে আরো বেশি করে আসা দরকার। কারণ, দেশের উন্নয়নে নারীর ক্ষমতায়নের বিকল্প নেই।

ছাত্রলীগের ২৯তম সম্মেলন নিয়ে আদেলীর অভিমত- শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতির পতাকাবাহী সংগঠন ছাত্রলীগ। জাতির মুক্তির স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া এই সংগঠন। তাঁর প্রাণের ছাত্রলীগ। সময়ের প্রয়োজন মেটাতেই এগিয়ে চলা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের। জন্মের প্রথম লগ্ন থেকে ভাষার অধিকার, শিক্ষার অধিকার, বাঙালির স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান, সর্বোপরি স্বাধীনতা ও স্বাধিকার আন্দোলনসহ প্রায় সাত দশকের সবচেয়ে সফল সাহসী সারথি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।  আদেলী বলেন, আমি ছাত্রলীগের একজন একনিষ্ঠ কর্মী হিসাবে চাই, ছাত্রলীগ তাঁর গৌরবময় ইতিহাসটুকু ধরে রাখুক। ব্যক্তিগত কোনো চাওয়া নয়, ছাত্র-জনতার কল্যাণই ব্রত হোক আগামীর ছাত্রলীগের। এই প্রিয় সংগঠনকে লক্ষ্য করে আঙ্গুল তোলার কোনো কারণ যেনো কোন ব্যক্তির কারণে কেউ খুঁজে না পায়। বিশ্বাস করি, মানুষের মন জয় করা যায় ভালোবেসে, অপরাজনীতি করে নয়।

ছাত্রলীগের আগামী কমিটিতে নিজের অবস্থান এবং আগ্রহ সম্পর্কে আদেলীর স্পষ্ট উচ্চারণ-
যতদূর জানি, এবার ছাত্রলীগের কমিটি করবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত কমিটির নেতৃত্বের সততা, ব্যর্থতা, অযোগ্যতা, জামায়াত-শিবির সংশ্লিষ্টতাসহ নানা অসঙ্গতির কথা বহুল প্রচারিত। আমার বিশ্বাস আমাদের সাংগঠনিক নেত্রী এবার এই বিষয়গুলো সতর্কতার সাথে দেখবেন। আর নেত্রী চাইলে, সংগঠন চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যে কোন পদে কাজ করার মতো আমার মানসিক প্রস্তুতি ও যোগ্যতা রয়েছে। অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে আমি সফলও হবো। আমাদের প্রধানমন্ত্রী ও ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেত্রী আমাদের প্রাণের ছাত্রলীগে যোগ্য, বলিষ্ট ও যুগোপযোগী নেতৃত্ব নির্বাচিত করে ছাত্রলীগকে রাজনীতির মূলধারায় ফিরিয়ে আনবেন এই প্রত্যাশা আমার। আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যেতে চাই।

-লেখিকা: চিকিৎসক, কলাম লেখিকা

এই বিভাগের আরো সংবাদ