আজকের শিরোনাম :

বিজয়ের আনন্দ ও বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের বিশেষত্ব

  ফনিন্দ্র সরকার

১৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:৪২ | অনলাইন সংস্করণ

১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে আমাদের মধ্যে একটি বীরত্বব্যঞ্জক মনোভাবের প্রকাশ ঘটে। আমাদের মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই বাঙালী জাতির মধ্যে সাহসিকতার মনোভাব সৃষ্টি করে গেছেন। যে কোন মহান নেতার কাছ থেকে আসা শক্তি, মানবোচিত উদ্দীপনা হলো তাঁর মহত্ত্বম অবদান। ভুলে গেলে চলবে না যে, রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক মুক্তি বাঙালী জাতির এক বৃহত্তর পরিপ্রেক্ষিত। আর তা থেকে স্বাধীনতা আন্দোলনের পথরেখায় শাশ^তভাবের দ্বারোদ্ঘাটন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি নির্ভীকতার মূর্ত প্রতীক। আজ ৪৯তম বিজয় দিবসকে ঘিরে হৃদয় পটে নানা স্মৃতি জেগে ওঠে। জেগে ওঠাই স্বাভাবিক। সেদিন যাদের জন্ম হয়নি তারা ইতিহাসের নান বাঁকে মুক্তিযুদ্ধের কথা জেনেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে অর্থাৎ ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা তথা মুক্তিযুদ্ধের সমস্ত চেতনাকে ধ্বংস করা হয়েছিল। বিভিন্ন কৌশলে অর্জনের ইতিহাস বিকৃত করে যে শিক্ষাব্যবস্থা চালু হয়েছিল তাতে দীর্ঘদিন বাঙালী প্রকৃত বিজয়ের আনন্দ থেকেও বঞ্চিত ছিল। ভাগ্যক্রমে শেখ হাসিনা বেঁচে যাওয়ায় আমরা পুণ্য পথের সন্ধান খুঁজে পেয়েছি। সে জন্য কম রক্ত ঝরেনি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা তৃতীয়বার আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হবার কারণে স্বাধীনতার মৌলিক দর্শনের গভীরে প্রবেশ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সে জন্যই বিজয়ের আনন্দটা একটু আলাদা।

বাংলাদেশ-ভারত উদার দৃষ্টিভঙ্গি ও দৃঢ় বিশ^াসের সহাবস্থানে আসীন হবে এ প্রত্যাশা সবার। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রথম বিজয় দিবস আমি উপভোগ করেছি কিশোর মনের চেতনায়। আমি তখন সাভার অধরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর ছাত্র। ঢাকা জেলার সাভার উপজেলায় সাভার অধর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় ব্রিটিশ রাজের আমলে ছিল সাভার অধর চন্দ্র উচ্চ ইংরেজী বিদ্যালয়। ব্রিটিশ শাসন অবসানের পর ইংরেজী শব্দটি বাদ দিয়ে শুধু অধরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় রাখা হয়। ঐতিহাসিক সেই সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী হিসেবে গৌরববোধ করি আজও। যুদ্ধের নয় মাস গ্রামের বাড়ি ধামরাই থানার আড়ালিয়া গ্রামেই থেকেছি। আমাদের বাড়ি ধামরাই থানায় হলেও গ্রামটি সাভারের কাছাকাছি হওয়ায় সাভার অধরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করি। তবে কাছাকাছি হলেও বাড়ি থেকে চার কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে স্কুলে যেতে হতো। সাভার সংলগ্ন বংশী নদিটি পার হতে হতো। সে সময় বংশী ছিল খর¯্রােতা প্রমত্তা নদী। বর্ষায় নৌকা করে গ্রামের এক ঝাঁক শিক্ষার্থী উৎসবের আমেজে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করতাম। নদীতে বেশ কয়েকবার নৌকাডুবি হয়েছে। গ্রামের ছেলে সবাই সাঁতার কাটতে জানতাম। মূলত প্রাকৃতিক নিয়মেই আমরা সাঁতার শিখেছি। স্কুল জীবনের নানা স্মৃতি যখন হৃদয় মন্দিরে দোলা দেয় তখন অজান্তেই কান্না এসে যায়। সে কান্না আনন্দ বেদনার কান্না। যুদ্ধের সময় আমাদের গ্রামে কোন পাকিস্তানী মিলিটারি আসতে পারেনি দুর্গম যাতায়াত ব্যবস্থার করণে। কিন্তু তারপরও আমরা নির্যাতিত হয়েছি স্থানীয় রাজাকার দ্বারা। বিশেষ করে আমাদের হিন্দু গ্রামগুলো ছিল টার্গেট। প্রতিমুহূর্তে নানাভাবে আক্রমণ হতো। সেই বিপন্ন দিনগুলোর কথা মনে হলে এখনও গা শিউরে ওঠে। ১৬ ডিসেম্বরের পূর্বদিন পর্যন্ত দিনগুলো ছিল আতঙ্কের উদ্বেগের। যেদিন বিজয়ের ঘোষণা হলো তখন মানবীয় এক বিস্ময়কর উচ্ছ্বাসে কণ্ঠ থেকে উচ্চারিত হলো- জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। গ্রামের সমবয়সী বন্ধুরা একসঙ্গে দৌড় শুরু করলাম সাভারের দিকে। সাভারের ঢাকা-আরিচার প্রধান সড়কে পৌঁছে দেখি মুক্তির উল্লাস ফেটে পড়া জনতার জোয়ার। সকলের মুখে উচ্চারিত হচ্ছে- জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। সে এক সুখকর গাঢ় অনুভূতি থেকে উৎসারিত আনন্দ ধ্বনি। সড়কে সারিবদ্ধ চলন্ত ট্রাকে ভারতীয় মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের অভিবাদনের দৃশ্য দেখে আত্মহারা বাঙালী জাতি। পারস্পরিক অভিবাদন যেন মিলন মোহনায় লীন হয়ে গেছে। সে এক অপরূপ দৃশ্যের স্মৃতি কী ভোলা যায়! অথচ কী করুণ ইতিহাস আমাদের। মাত্র সাড়ে তিন বছর পরই পাল্টে গেল দৃশ্যপট। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে সবকিছু ভুলিয়ে দেবার চেষ্টা চলল দীর্ঘদিন। সত্য কখনও চেপে থাকে না। সে সমহিমায় উদ্ভাসিত হবেই। এটাই বাস্তবতা এটাই ইতিহাস। স্বাধীনতার এই ৪৯ বছরেও অনেক কিছুই অজানা রয়েছে। গবেষণা হবে যুগ যুগ ধরে নতুন নতুন তথ্য উপাত্ত বেরিয়ে আসবে নানা বাঁকে। আজ আমার একটি বিষয় হৃদয়ে হানা দিয়েছে। ভেবেছিলাম বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের কোন অংশে খুঁজে পাব বিষয়টি। হয়তো আছে, কিন্তু আমার চোখে পড়েনি। তাই পাঠকের কাছে দায়বদ্ধতা থেকে তুলে ধরছি। ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময় ১০ এপ্রিল প্রবাসী সরকার গঠিত হয়। অর্থাৎ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার জন্মগ্রহণ করে। সাবেক কুষ্টিয়া বর্তমানে মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথ তলায় বাংলাদেশ সরকারের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এটার নাম হয় মুজিব নগর। পরিচিতি লাভ করে মুজিব নগর সরকারের। কলকাতায় স্থাপন করা হয় কার্যালয় সে অর্থে প্রবাসী সরকার। মুজিব নগরে প্রধান সদর দফতর স্থাপনে এবং সরকারের শপথ অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক আয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন মেহেরপুরের কৃতী সন্তান মোঃ ছহীউদ্দিন বিশ^াস। বঙ্গবন্ধুর অন্যতম ভক্ত অনুসারী ছহীউদ্দিন বিশ^াসের অপরিসীম দেশপ্রেম ছিল। তিনি মুজিব নগর সরকারের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। ’৭০-এর নির্বাচনে এম.এন.এ হয়েছিলেন। ’৭৩ ও ৮৬-র জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ’৭৫-এর বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ছিলেন কুষ্টিয়া জেলা গবর্নর। কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের তিনিই ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা। যুদ্ধকালীন সরকার প্রতিষ্ঠার পর ছহীউদ্দিন বিশ^াস চলে যান কলকাতায়। পশ্চিমবঙ্গে প্রাদেশিক ক্ষমতায় তখন যুক্তফ্রন্ট সরকার। বিধান সভার স্পীকার ছিলেন অপূর্বলাল মজুমদার। যিনি আমার পরমাত্মীয়। আমার মেষোমহাশয়। স্বাধীনতার বহুদিন পর ১৯৮৭ সালে কলকাতা বেড়াতে গেলে আমার মেশোর কাছ থেকে জানতে পারি ছহীউদ্দিনের কথা। অপূর্বলাল মজুমদারের সঙ্গে ছহীউদ্দিনের খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। শরণার্থী ক্যাম্পে শরণার্থীদের তদারকি করতেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী যাতে বাংলাদেশের গণহত্যার বিরুদ্ধে সুদৃঢ় ভূমিকা পালন করেন এবং আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ে সচেষ্ট হন সে বিষয়ে অপূর্বলাল মজুমদারের সহযোগিতা চান। ছহীউদ্দিনের দেশাত্ববোধ, সুউন্নত চরিত্রের প্রতি শ্রী মজুমদারের দুর্বলতা ছিল প্রচুর। তিনি তাঁর অনুরোধের প্রতি সম্মান দেখিয়ে চিত্তরঞ্জন ছুতার ও ছহীউদ্দীন সাহেবকে শ্রমতী ইন্দিরা গান্ধীর কাছে নিয়ে যান। অপূর্বলাল মজুমদার ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে মোঃ ছহীউদ্দীনকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে দৃঢ় কণ্ঠে ছহীউদ্দীনের অভিব্যক্তি তুলে ধরেন। শ্রী মজুমদার বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাঙালী শরণার্থীরা তাদের স্বাধীন স্বদেশ ভূমিতে ফিরে যেতে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। ছহীউদ্দীনের সাহসী অভিব্যক্তিই শ্রী মজুমদারের কণ্ঠে উচ্চারিত হয়। সেটি হিন্দী ভাষায়। আমি বাংলায় বর্ণনা করলাম। সেই বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ ছহীউদ্দীন বিশ^াস ১৯৯৬ তে প্রয়াত হয়েছেন। স্বাধীনতা সংগ্রাম তথা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে তাঁর নাম অমর হয়ে থাকবে। উল্লেখ্য, তার সুযোগ্য পুত্র ফরহাদ হোসেন মেহেরপুর-১ আসনের এমপি ও বর্তমান সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।

আজ ৪৯তম বিজয় দিবসে- বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের নব বিশেষত্ব নিয়ে আলোকপাত করা খুবই প্রাসঙ্গিক। মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে যে সরকার ছিল রাজনৈতিক দর্শনের দিক থেকে বিপরীতমুখী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বর্তমান বিজেপি সরকার ক্ষমতায় এলেও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করছে। দু-দেশের বন্ধুত্বের সম্পর্কটা আপেক্ষিক সত্য। আমার দৃষ্টিতে উচ্চতর সত্য নয়। উচ্চতর সত্য নয় বলেই সম্পর্কোন্নয়নের জন্য কাজ করতে হচ্ছে। ভারতে নরেন্দ্র মোদি টানা দ্বিতীয় মেয়াদে আর বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন। তাই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ব্যারোমিটার অনেক উপরে উঠে গেছে সে ধারণা বা বিশ^াস আমরা করতেই পারি। তবে ভারত-বাংলাদেশের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ সম্পর্ক উন্নয়নের কথা ঘোষণা করে আসছে নিয়মিত। দু-দেশের সম্পর্ক উচ্চতর সত্যে প্রতিষ্ঠিত হলে উন্নয়নের প্রসঙ্গটি আসত না। সম্পর্ক নিয়ে এত আলোচনা করবার-ই বা কী দরকার? হিন্দুত্ববাদী চেতনা ধারণ করে বিজেপি সরকার অসাম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ভারত পরিচালনা করছে। সনাতন ধর্মে সৎ চরিত্র, পবিত্রতা ভালবাসা ও করুণার কথা রয়েছে। শ্রীমদ্ভাগবত গীতায় দ্বাদশ অধ্যায়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের উপদেশ বর্নিত হয়েছে। শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন কে আমার প্রকৃত ভক্ত? এই প্রশ্নের মাধ্যমে তিনি নিজেই প্রকাশ করেছেন যে, সে-ই আমার প্রকৃত ভক্ত, যে নিজে শক্তিধর ও ভয়হীন আবার অপরকেও শক্তিমান ও নির্ভয় করে তোলে। যে অপরের বিনাশ সাধন করতে স্বীয় শক্তি ব্যবহার করে না, সে সংসারে ভয়ের কারণ হয় না, আবার সংসারের কারণে ভীতও হয় না (গীতা/১২/১৫) এটা হচ্ছে সুউন্নত চরিত্র। ভীরু লোক সংসারে ভয়ের কারণ হয় না। কিন্তু তার ভীরুতায় কোন গুণ নেই। কিন্তু একজন অসম শক্তি সম্পন্ন ব্যক্তি পৃথিবীর পক্ষে ভয়ের কারণ হতে পারে। তাতে কোন গুণের অবকাশ নেই বরং শক্তিধর ও নির্ভীক হও অপরকে সেরূপ হতে অনুপ্রাণিত কর। সনাতন ধর্মে এটা হলো আদর্শ মানবতা। এটাই মূল শিক্ষা, এটা সনাতন ধর্ম সাহিত্যের শিক্ষা। শ্রীমদ্ভাগবতে পাওয়া যায় সনাতন ধর্মের শ্রেষ্ঠ মানব মনের বৈশিষ্ট্য খ্যাপনকারী সেই সংস্কৃত কথাটি ‘অজাত শত্রু, অর্থাৎ যার শত্রু এখনও জন্মায়নি। তোমার একজন শত্রু আছে, তাকে তুমি ভালবাস, ক্ষমা কর- সে এক জিনিস। আর তোমার কোন শত্রুই নেই, তোমার মনে কোন শত্রুর স্থান নেই এই হলো মনের উচ্চতম অবস্থা। এই সংজ্ঞাটিও খুবই অর্থবহ। যার মনে শত্রুর স্থান নেই- এ মানসিকতা হচ্ছে মানবিক উৎকর্ষের উচ্চতম পর্যায়। সম্ভবত খুব কম লোকই এ সর্বোচ্চ অবস্থায় উঠতে পারে। উচ্চতম অবস্থায় উপনীত হতে হলে, আগ্রাসী মনোভাবকে ক্রমশ কমিয়ে আনতে পারলে আরও বেশি প্রেমময় ও শান্তিপ্রিয় হয়ে উঠে সমাজ। একজন রাজনৈতিক নেতা যখন শান্তিপ্রিয় ও প্রেমময় অভিমুখে অগ্রসর হবে তখন তার অগ্রগতিটা পুরো মানবসত্তায় পরিবেষ্টিত থাকবে। আর এ অগ্রগতিটা সনাতন ধর্মের গীতায় ব্যাখ্যা করা হয়েছে মানবিক উৎকর্ষ সাধনের দর্শন হিসেবে। এ পথে কখনও কখনও অশুভ শক্তিকে প্রতিহত করতে হবে লড়াই করে, সংগ্রাম করে। তা না হলে নিজের সংস্কার ও সামগ্রিকভাবে রাষ্ট্রে ও সমাজে উন্নতি সাধন করা সম্ভব নয়। ভারতের বর্তমান নরেন্দ্র মোদি হিন্দুত্ববাদী নেতা হিসেবে সনাতনী দর্শনকে অনুসরণ করে রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন এটা বিশ্বাস করা যেতেই পারে।

সম্প্রতি নাগরিকত্ব আইন নিয়ে যে বিতর্ক চলছে তা নিরসনকল্পে ভারত সরকার পদক্ষেপ নেবে বলে আশা করি। বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে একটা উদ্বেগ তৈরি হয়েছে এটাকে কেন্দ্র করে। উদ্বেগের কোন কারণ নেই বলেও ভারতের শীর্ষ নেতারা বলে আসছেন সেটার ব্যাখ্যা তারা নিশ্চয়ই দেবেন। দু-দেশের সম্পর্কে এখন সোনালি অধ্যায় শুরু হয়েছে। সোনার রং যেন ছাই রঙে পরিণত না হয়। একটি কথা উল্লেখ করতে চাই যে, ভিয়েতনামী যুদ্ধের বিরুদ্ধে আমেরিকান তরুণরা তীব্র প্রতিবাদ করেছিল। আমেরিকান সেনাদের যুদ্ধে অংশগ্রহণকে শয়তানী যুদ্ধ হিসেবে আখ্যায়িত করে এমন আন্দোলন গড়ে তুলেছিল যার ফলে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু হিটলারের নাৎসী মতবাদের বিরুদ্ধে যখন আমেরিকা যুদ্ধে যোগ দিয়েছিল তখন একজন আমেরিকানও আপত্তি জানায়নি। কেননা নাৎসীবাদ ছিল মানবতাবিরোধী বিপজ্জনক মতবাদ। কাজেই যে কোন দেশের মানবতাবিরোধী কোন মতবাদই প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে না নিজ দেশের প্রতিবাদের কারণেই। আমাদের এ উপমহাদেশের মানুষের মধ্যে একটা পবিত্র অনুভূতি কাজ করে তা হচ্ছে, পরিবর্তিত পরিস্থতিতেও মনুষ্যত্ব বোধের অনুভূতি। কোন রাষ্ট্র ব্যবস্থাই এ অনুভূতিকে উপেক্ষা করতে পারবে না। বাংলাদেশ-ভারতের সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা অদৃশ্য বাঁধনের সংহতি রয়েছে। ঐ অদৃশ্য সংহতির বাঁধনে সম্পর্কের বিশেষত্ব বহন করবে যুগ-যুগান্তরে।

লেখক : কলাম লেখক ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক
[email protected]

এই বিভাগের আরো সংবাদ