জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
সুভাষ সিংহ রায়
২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১১:৫২ | আপডেট : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১২:০৩ | অনলাইন সংস্করণ
২৩ বছর আগে (১৯৯৬ সালের ২৪ অক্টোবর) মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের ৫১তম অধিবেশনে প্রথমবারের মতো ভাষণ দিয়েছিলেন। অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় এভাবেই শুরু করেছিলেন, ‘আজ থেকে ২২ বছর আগে ১৯৭৪ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর আমাদের মহান নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে এ মঞ্চে দাঁড়িয়ে সাধারণ পরিষদের এক মহান অধিবেশনে ভাষণ দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে, জাতির জনকের কন্যা হিসেবে এই অনন্য বিশ্ব ফোরামে বক্তব্য রাখার বিরল সম্মান ও সুযোগ আমাকে আবেগাপ্লুত করে তুলেছে। এর মধ্যে বিশ্বে অনেক নাটকীয় পরিবর্তন ঘটেছে, পুরনো আদর্শভিত্তিক বিভক্তি ভেঙে পড়েছে, আঞ্চলিক সহযোগিতার সম্পর্ক গভীরতর হয়েছে এবং এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বিগত দুই দশকে দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফলে নতুন শক্তিশালী ভূ-রাজনৈতিক জোটের উদ্ভব হয়েছে।...বাইশ বছর আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে ইস্যুগুলো এখানে উত্থাপন করেছিলেন, সেসব এখনো বিদ্যমান। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি মানবিক ঐক্যবোধ ও ভ্রাতৃত্ববোধের পুনর্জাগরণে পারস্পরিক নির্ভরশীলতার স্বীকৃতি প্রদান করে মানব সভ্যতাকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষার যুক্তিপূর্ণ সমাধান ও জরুরি কর্মসূচি গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি বলিষ্ঠ যুক্তি উত্থাপন করে বলেছিলেন, জাতিসংঘের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে একটি ন্যায়সংগত আন্তর্জাতিক অর্থব্যবস্থা গড়ে তুলতে যুক্তির শক্তি যোজনা। এ ব্যবস্থায় স্বীয় প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর প্রতিটি দেশের সার্বভৌম অধিকারের নিশ্চয়তা থাকবে। একটি স্থিতিশীল ন্যায়সংগত অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় বিশ্বের সব দেশের সাধারণ স্বার্থের ভিত্তিতে গড়ে উঠবে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বাস্তব কাঠামো।’
জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর মতো করে তাঁর সুকন্যা শেখ হাসিনাই বিশ্বনেতাদের সামনে স্পষ্ট করে বলতে পারেন। বাংলাদেশে শুধু প্রথম আলো বিশেষ ব্যবস্থায় প্রজেক্ট সিন্ডিকেটের নিবন্ধ বাংলায় প্রকাশ করে থাকে। ২০১৬ সালের ২১ সেপ্টেম্বর প্রজেক্ট সিন্ডিকেটের শেখ হাসিনার প্রতিবেদন প্রথম আলোয় খুবই গুরুত্ব সহকারে ছাপা হয়েছিল। শেখ হাসিনার লেখায় উল্লেখ করেছিলেন, ‘গন্তব্যে পৌঁছাতে গিয়ে চার হাজার ৩০০ জনেরও বেশি অভিবাসীর মৃত্যু হয়েছে। শুধু ভূমধ্যসাগরেই প্রাণহানি হয়েছে তিন হাজার ২০০ মানুষের। আর বঙ্গোপসাগরের ঠিক পূর্বে আন্দামান সাগরে হাজারো অভিবাসী কোথাও ভিড়তে না পেরে নৌকায় আটকে থেকেছে অথবা পাচারকারীদের হাতে জিম্মিদশায় পতিত হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘের সদস্য-সরকারগুলোর উচিত গত বছর যেসব উচ্চাশার প্রতি সমর্থন জানানো হয়েছিল, তার সঙ্গে বাস্তবতার ব্যবধান এবং বহু অভিবাসী যে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে, সে বিষয়ে ওয়াকিফহাল হওয়া। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের এ মাসের অধিবেশনে, বিশেষত অভিবাসন ও শরণার্থী বিষয়ে এই অভূতপূর্ব সম্মেলনে বিশ্বনেতারা এই দায় মেটাতে পারেন। বিশ্বনেতাদের প্রথমেই বৈশ্বিক অভিবাসন পরিচালনার বিষয়ে তাঁদের অঙ্গীকার নবায়ন করে নেওয়া উচিত। পাশাপাশি জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন এ বছরের গোড়ায় যেমনটা প্রস্তাব করেছিলেন, সে অনুযায়ী ২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো আন্ত সরকারি সম্মেলনে, বিশেষ করে অভিবাসন বিষয়ে নতুন বৈশ্বিক চুক্তি প্রণয়নের ব্যাপারে একমত হওয়া উচিত।’
আমরা এ কথা খুব ভালোভাবেই জেনেছি যে জাতিসংঘের আদর্শ ও উদ্দেশ্যের প্রতি অকুণ্ঠ অঙ্গীকার রেখে ১৯৭৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর সাধারণ পরিষদের সর্বসম্মত অনুমোদনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অসাধারণ কূটনৈতিক তৎপরতায় বাংলাদেশ জাতিসংঘের ১৩৬তম সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্তি লাভ করে। জাতিসংঘের স্বীকৃতি লাভ ছিল বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। স্বীকৃতি লাভের ক্ষেত্রে যেসব সমস্যার উদ্ভব হয়েছিল, বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সরকার অসাধারণ দক্ষতায় তা মোকাবেলা করেছিলেন। নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য চীন বাংলাদেশকে প্রথমত আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়নি। কিন্তু তা সত্ত্বেও অনানুষ্ঠানিকভাবে সেই দেশের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু সরকার সম্প্রীতিমূলক সম্পর্ক স্থাপন করতে পেরেছিলেন, যার জন্য চীনের ‘ভেটো’ প্রত্যাহার করিয়ে বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করেছিল। জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধু তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণে বলেছিলেন, ‘যে মহান আদর্শ জাতিসংঘের সনদে রক্ষিত আছে, আমাদের লাখ লাখ মানুষ সেই আদর্শের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করিয়াছে। শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে সকল মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের উপযোগী একটি বিশ্ব গড়ে তোলার জন্য বাঙালি জাতি পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামকে সার্বিক অর্থে শান্তি ও ন্যায়ের সংগ্রাম হিসেবে অবহিত করেছিলেন। জাতির জনক শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও সবার প্রতি বন্ধুত্ব—এ নীতিমালার ওপর ভিত্তি করেই জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন। তৃতীয় বিশ্বের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্বশান্তি আন্দোলনে অসাধারণ ভূমিকার জন্য ‘জুলিও কুরি’ পদকে ভূষিত হয়েছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, একমাত্র শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই কষ্টলব্ধ জাতীয় স্বাধীনতার সুফল ভোগ করা সম্ভব। বঙ্গবন্ধুর মতো তাঁর কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও শান্তির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর কূটনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও পরিবর্তিত বিশ্বব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এগিয়ে যাচ্ছেন। সমাধানে মিয়ানমারের সঙ্গে জাতিসংঘের চুক্তি অবিলম্বে কার্যকর করার তাগিদ দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, ‘যেহেতু রোহিঙ্গা সমস্যা উদ্ভব হয়েছে মিয়ানমারে, তাই এর সমাধানও হতে হবে মিয়ানমারে।’ পিতার কাছ থেকেই মানবিকতার মহৎ গুণ অর্জন করেছেন তিনি। তাই তো বিশ্বসম্প্রদায়ের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী বিপুলসংখ্যক নিপীড়িত ও রোহিঙ্গাদের মতো নিজ গৃহ থেকে বিতাড়িত মানুষের দুঃখ-দুর্দশা আমার হৃদয়কে ব্যথিত করে। এজাতীয় ঘটনাকে অগ্রাহ্য করে শান্তিপূর্ণ, ন্যায্য ও টেকসই সমাজ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।’ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখনই জাতিসংঘে প্রতিনিধিত্ব করেন, তখনই দেশের জন্য সম্মান বয়ে নিয়ে আসেন। এবারও রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানে মানবিক ও দায়িত্বশীলতার নীতির জন্য অনন্য নেতৃত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ মর্যাদাপূর্ণ ‘ইন্টারন্যাশনাল অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ এবং ২০১৮ ‘স্পেশাল ডিস্টিংশন অ্যাওয়ার্ড ফর আউটস্ট্যান্ডিং অ্যাচিভমেন্ট’ প্রদান করা হয়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিস্ময়কর সাফল্য অর্জন করেছেন। মোট ১৩ বার তিনি জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দিয়েছেন। বিশ্বের ইতিহাসে এমন আর একটি নজির নেই। বিশ্বরাজনীতির সার্বিক চিত্র আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ থেকে জানতে পারি। স্নায়ুযুদ্ধের অবসানের ফলে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে মৌলিক ও ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। বহু ঐতিহাসিক পরিবর্তন সত্ত্বেও আমাদের জাতির পিতা এখানে যে উৎকণ্ঠা অত্যন্ত বলিষ্ঠভাবে উত্থাপন করেছিলেন, তা অনেকাংশে আজও এই মহান ফোরামে সমাধানের অপেক্ষায় রয়েছে। বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ এখনো দারিদ্র্য, ক্ষুধা, রোগ ও অপুষ্টিতে ভুগছে। বিশ্বের সর্বত্র বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ থেকে আজও মিলিয়ন মানুষ বঞ্চিত। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর তালিকাভুক্ত বাংলাদেশ গত দুই দশকে উন্নয়ন গতি ছিল শ্লথ। জনসংখ্যা বিস্ফোরণের কারণে আমাদের সফলতা অর্জন ব্যাহত হয়েছে। তাই আমাদের সরকার দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি ত্বরান্বিত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আমাদের সর্বোচ্চ অঙ্গীকার হলেও সমতা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার বিষয়টিও আমাদের কাছে গুরুত্ববহ। তিনিই একমাত্র সরকারপ্রধান, যিনি সোজাসুজি স্পষ্ট করে বলতে পারেন। ‘বিশ্বব্যাপী পুঁজি, বাণিজ্য ও সেবা প্রবাহের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার অনুকূলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরাম এবং সেমিনারে জোরালো যুক্তি প্রদর্শন করা হয়। আমরা মনে করি, এর পাশাপাশি শ্রমিকদের গমনাগমনের ওপর বিধি-নিষেধের নিয়ন্ত্রণ শিথিল করার পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। এ বিষয়টি নিশ্চিতভাবে খোলামনে কোনোরূপ বৈষম্য ছাড়াই যথেষ্ট গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা উচিত। ইতিহাস দৃঢ়ভাবে সাক্ষ্য দেয় যে উন্নত জীবনের সন্ধানে অভিবাসনকারীরা স্ব স্ব অভিবাসনের দেশকে দরিদ্র নয়; বরং বিত্তশালী করেছে, উন্নত করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে স্থাপিত প্রতীকটি যা ফ্রান্সের জনগণ যুক্তরাষ্ট্রকে উপহার দিয়েছিল, তা বিশ্বব্যাপী মুক্তির প্রতীক-মূর্তি হিসেবে স্বীকৃত। আমাকে বলা হয়েছে যে মেঘমুক্ত দিনে জেএফকে বিমানবন্দরে অবতরণের সময় আকাশ থেকে এটি ক্ষণিকের জন্য দেখা যায়। এই মূর্তি-প্রতীকের একটি দিক আমেরিকার বাইরে ততটা সুবিদিত নয়। এই মূর্তির পাদদেশে রয়েছে একটি ভাঙা শিকল, যার প্রতীকী অর্থ হচ্ছে স্বাধীনতার পুনরাবিষ্কার এবং এর পাদদেশে একটি ফলকের ওপর Emmo Lazrus-এর The New Colossus থেকে একটি অমর বাণী খোদাই করা আছে। এই বাণীটি আমি উদ্ধৃত করছি—
‘Give me your tired, your poor
Your huddled masses yerning to breath free,
The wretched refuse of your teeming shore,
Send these, the homeless, tempest tossed, to me,
I lift my lamp beside the golden door!’
তাই নিউ ইর্য়ক এবং এই বিশ্ব সংস্থা নিঃসন্দেহে বিশ্বসম্প্রদায়ের সামনে আন্তর্জাতিক অভিবাসনের ইস্যুটি উপস্থাপন করার জন্য যথার্থ স্থান। ১৯৯৬ সালের জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া সেই ভাষণের প্রতিটি অধ্যায় সৃজনশীল কূটনৈতিক দ্যোতনায় পরিপূর্ণ ছিল। সেই ঐতিহাসিক ভাষণের কয়েকটি এই পরিসরে উৎকলন করা যেতে পারে। ‘আমরা কেমন ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা করি, মানস চক্ষে দেখি? বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বহু বছর আগে এ ধরনের এক গীতিময় ভবিষ্যৎ স্বপ্নের রূপরেখা তাঁর কবিতায় মেলে ধরেছেন—
“চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির,/‘জ্ঞান যেথা মুক্ত, যেথা গৃহের প্রাচীর/আপন প্রাঙ্গণ তলে দিবস শর্বরী/বসুধারে রাখে নাই খণ্ড ক্ষুদ্র করি’/যেথা বাক্য হৃদয়ের উৎসমুখ হতে/উচ্ছ্বসিয়া উঠে, যা নির্বারিত স্রোতে/দেশে দেশে দিশে দিশে কর্মধারা ধায়/অজস্র সহস্রবিধ চরিতার্থতায়—”
আমাদের তথা সব উন্নয়নশীল দেশের সমস্যা হলো, আমরা কিভাবে এ স্বপ্ন বাস্তবায়িত করব। এ ক্ষেত্রে আমাদের সদিচ্ছার অভাব নেই, আমরা এর পরিধি ও বিশালতা সম্পর্কেও সম্পূর্ণ সচেতন। তবে যে বিশ্বাস, স্থিরতা ও দৃঢ়তা নিয়ে এ ক্ষেত্রে আমাদের এগিয়ে যাওয়া, ঈপ্সিত সেভাবে এখনো এগোতে পারিনি। আমরা সব সময়ই শুরু করি; কিন্তু কখনোই তা অব্যাহত রাখি না, কখনোই সম্মুখে এগোই না, কখনোই পূর্ণ করি না এবং কখনোই সমাপ্তি টানি না। প্রায়শ আমরা সঠিক পথে প্রথম পদক্ষেপ গ্রহণ করেই সন্তুষ্ট থাকি, কদাচিৎ দ্বিতীয় পদক্ষেপের দিকে অগ্রসর হই এবং প্রায় সব ক্ষেত্রেই তৃতীয় পদক্ষেপ কখনোই গ্রহণ করি না। শুরুর দিকের কয়েকটি পদক্ষেপ, যা প্রকৃতপক্ষে শুরু নয় এবং যা কোনো গন্তব্যেও নিয়ে যায় না, তা দিয়ে অর্থপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করা সম্ভব নয়।
লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক, প্রধান সম্পাদক - এবিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম ও সাপ্তাহিক বাংলা বিচিত্রা
এই বিভাগের আরো সংবাদ