আজকের শিরোনাম :

গণতন্ত্র বনাম জাতীয়তাবাদ প্রসঙ্গ বাংলাদেশ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৪ জুন ২০১৮, ১০:১১

আহমদ রফিক, ১৪ জুন, এবিনিউজ : বাংলাদেশের সংবিধানে মূল স্তম্ভের দুটি হলো গণতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ। পঞ্চাশের দশক থেকে ভাষা আন্দোলন ও তার প্রভাবিত ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের পটভূমি তৈরি করেছিল পশ্চিম পাকিস্তান তথা পাঞ্জাব-সিন্ধুকেন্দ্রিক সামরিক ও আধাসামরিক স্বৈরাচারী শাসন তথা কেন্দ্রীয় শাসন। যে শাসনে মূল লক্ষ্য ছিল পূর্ববঙ্গকে শোষণ এবং দুই পাকিস্তানের মধ্যে প্রবল অর্থনৈতিক-সামাজিক বৈষম্য সৃষ্টি। এককথায় পূর্ববঙ্গকে (১৯৫৬ থেকে যা নীতিগতভাবে পূর্ব পাকিস্তান নামে চিহ্নিত) দুর্বল করে শাসন-শোষণ করা এবং পাঞ্জাব-সিন্ধুকে উচ্চমার্গে পৌঁছে দেওয়া। শেষোক্ত দুটির মধ্যে পাঞ্জাবেরই প্রাধান্য।

এর আনুষঙ্গিক দিক ছিল কেন্দ্রীয় শাসকশ্রেণির বাঙালির প্রতি, তার ভাষা-সংস্কৃতি, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদির প্রতি বিজাতীয় মনোভাব তথা বিদ্বেষ-বিরূপতা। আর একটি বড় অনুষঙ্গ উগ্র সাম্প্রদায়িকতা এবং বাঙালি অমুসলমান সম্প্রদায়ের প্রতি প্রকট ঘৃণা-বিদ্বেষ, কারণে-অকারণে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রকাশ, এই সূত্রে কথিত সংখ্যালঘু বিতাড়ন। গোপন উদ্দেশ্য জনসংখ্যার বিচারে পূর্ববঙ্গ বা পূর্ব পাকিস্তানকে পশ্চিম পাকিস্তানের তুলনায় সংখ্যালঘু প্রদেশ তথা ইউনিটে পরিণত করা।

এ উদ্দেশ্য প্রাথমিক পর্যায়ে স্পষ্ট হয়ে না উঠলেও তা নগ্নভাবে প্রকাশ পায় একাত্তরে গণহত্যার নীতিনির্ধারণে। সামরিক শাসকদের বক্তব্যে তা স্পষ্ট ভাষায় প্রকাশ পায় একাত্তরে এমন যুক্তিকে যে বাঙালি হিন্দু শিক্ষক ও পেশাজীবী শ্রেণির প্রভাবে বাঙালি মুসলমান পাকিস্তানবিষয়ক বিচ্ছিন্নতাবাদের শিকার। একুশ দফা (১৯৫৩) থেকে ছয় দফা বা ছাত্রদের ১১ দফার প্রধান দাবি প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন কেন্দ্রীয় শাসকদের চোখে বিচ্ছিন্নতার নামান্তর। পাকিস্তানি শাসকপক্ষে এ বিষয়ে চরম বিভ্রান্তিকর চিন্তা—পূর্ব পাকিস্তান ভারতে যোগ দিতে পারে, যা বাঙালি মুসলমানের ভাবনায় কখনো দানা বাঁধেনি। বরং রাজনৈতিক দিক বিচারে ভারতবিরোধিতা ধারণা ছিল প্রধান প্রবণতা। ভাষা ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে বিষয়টি যদিও ছিল ভিন্ন রকম—বাংলা-বাঙালি—বাংলা ভাষা সাহিত্য সংস্কৃতি নিয়ে। এ বিষয়ে ভুল বুঝেছিল অবাঙালি শাসকচক্র। বস্তুত প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের দাবি পঞ্চাশ থেকে ষাটের দশকে বিচ্ছিন্নতার দাবি ছিল না।

প্রকৃতপক্ষে সুশাসনের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের দাবিকে ভুল বুঝে এর প্রতি পাকিস্তানি শাসকশ্রেণি আঘাতের পর আঘাতে এবং শেষ পর্যন্ত ১৯৭০ সালের নির্বাচনী জয়কে অস্বীকার করে ২৫ মার্চ গণহত্যার মাধ্যমে ছয় দফার স্বায়ত্তশাসনের দাবিকে এক দফার স্বাধীনতার দাবিতে পরিণত করেছিল বর্বর পাকিস্তানি সামরিক শাসন ও তার সেনাবাহিনী। এই অপরিণামদর্শিতার ফলে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ১৬ ডিসেম্বর (১৯৭১)।

দুই.

ভারত বিভাগের মাধ্যমে ভারত-পাকিস্তান এ দুই ডোমিনিয়নের জন্ম। এদের পরোক্ষ অভিভাবক ব্রিটিশ কমনওয়েলথ। পাকিস্তানের জন্য বিশেষ অভিভাবক যুক্তরাষ্ট্র তার অর্থ (ডলার), অস্ত্র ও রাজনৈতিক-সামরিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে। সামরিক চুক্তিগুলো তার প্রমাণ। এক উেস জন্ম ভারত কিছুটা ভিন্ন ধারায় এগিয়ে গেলেও পরবর্তীকালে তার চরিত্র বদল ঘটেছে।

এই প্রেক্ষাপটটুকু বলার প্রয়োজন ছিল এ কারণে যে পাকিস্তানি শাসনে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, এককথায় গণতন্ত্র কখনো ক্রিয়াশীল ছিল না। তার শাসন চরিত্র ছিল ফ্যাসিস্ট ধারার, উগ্রপন্থার, যেখানে ধর্মীয় রক্ষণশীলতা প্রবল। পাকিস্তান শাসিত হয়েছে প্রথম থেকে উগ্র ধর্মীয় স্বৈরতন্ত্রী ধারায়, পরে একই চরিত্রের সামরিক শক্তির কর্তৃত্বে, কখনো গণতন্ত্রের নামে আধাসামরিক বা স্বৈরাচারী পদ্ধতিতে। পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাস এমন সত্যই প্রকাশ করে, প্রমাণও করে।

জন্মলগ্নের (১৯৪৭ সালের আগস্ট) পর থেকে পাকিস্তানের স্বৈরাচারী শাসনের মধ্য দিয়ে ১৯৫৬ সালে তার প্রথম সংবিধান রচনায় এর পরিচয় ‘ইসলামী রিপাবলিক’। শাসন ওই ধাঁচেরই। সর্বোপরি ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রিত একটি রাষ্ট্র। বিশদ বিচারে জনৈক মার্কিন সমাজবিজ্ঞানীর ভাষায় ‘পাকিস্তান একটি উদ্ভট রাষ্ট্র’, প্রকৃতপক্ষে সামরিক রাষ্ট্র। পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করতেন না, ছিলেন একজন একনায়কী শাসক (ডিক্টেটর)। পাকিস্তান সেই ধারায়ই চলেছে, মাঝেমধ্যে কিছু ব্যতিক্রম ঘটিয়ে—কিন্তু তাদের শাসন স্থায়ী হয়নি। সমরতন্ত্র তা কেড়ে নিয়েছে। আরেকটি তথ্য মনে রাখার মতো যে বাঙালি মুসলমান আত্মোন্নয়নের জন্য পাকিস্তান চেয়েছিল, ভোটের ম্যান্ডেটে তা পেয়েছিল, তবে সে রাজনীতিতে যথেষ্ট উগ্রতা ছিল, ছিল সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রকাশ।

তিন.

ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনীতি-রাষ্ট্রনৈতিক চিন্তায় গণতন্ত্রের ধারণাটি আসে রেনেসাঁদীপ্ত ইউরোপ থেকে—মূলত ফরাসি, ইতালি ও ইংরেজ চিন্তানায়ক মনীষীদের সামাজিক-দার্শনিক ভাবনা থেকে। ব্যক্তিক-সামাজিক-রাষ্ট্রিক অধিকারের দিকগুলো চিহ্নিত করে আইনি শাসনের প্রতিষ্ঠায়, যেখানে মানবিক মূল্যবোধ প্রধান বিবেচ্য বিষয়।

জাতীয়তাবাদের বিষয়টিও একইভাবে একটি তাত্ত্বিক সূত্রে আহরিত। মধ্যযুগের ইউরোপ ক্যাথলিক পোপের ধর্মীয় শাসন ও ধর্মীয় ভাষা লাতিনের খাঁচা থেকে মুক্তি পেয়েছিল যেমন ভাষিক ধর্মীয় সংস্কারের মাধ্যমে, তেমনি মাতৃভাষায় জাতিরাষ্ট্র গঠনের প্রেরণায়। শুরুতে সব মুক্তিসংগ্রামের চরিত্রই তাকে ইতিবাচক, কখনো মানব মঙ্গলদায়ক। কিন্তু ইউরোপীয় জাতিরাষ্ট্র মুক্ত শিল্পবিল্পব ও বাণিজ্যিক পুঁজিবাদের তাড়নায় জাতীয়তাবাদী চেতনার হাত ধরে লোভ-লালসার টানে উপনিবেশবাদের চরিত্র অর্জন করে। পরভূমি দখল ও শাসন হয়ে ওঠে জাতীয়তাবাদের ধর্ম। সে উগ্র জাতীয়তাবাদ আপন স্বার্থের টানে নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ বাধাতেও দ্বিধা করে না। আঞ্চলিক যুদ্ধের কথা বাদ দিলেও দুই বিশ্বযুদ্ধ তার প্রমাণ, যেখানে কোটি কোটি মানুষের মৃত্যু, লোভ-লালসার আগুনে।

রবীন্দ্রনাথ মধ্যযুগের লাতিনের বন্ধন থেকে মঙ্গলজনক ভাষিক জাতিরাষ্ট্রগুলোর উদ্ভব ও মুক্তিকে আখ্যায়িত করেছিলেন প্রকৃত রেনেসাঁস বা নবজাগরণরূপে। পরে এদের পররাজ্য প্রেমের লিপ্সা এবং মানব হত্যার বর্বরতার কারণে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নিষ্ঠুরতা দর্শনে প্রথমে জাপান, পরবর্তী ধারায় ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের রূপটি তুলে ধরেছিলেন দুটি জাতীয়তাবাদবিরোধী তীক্ষ রচনায়। জাপান ক্ষুব্ধ হয়েছিল তার সফর সত্ত্বেও। ইঙ্গ-মার্কিনরা বিরক্ত হওয়া সত্ত্বেও ‘দ্য কাল্ট অব ন্যাশনালিজম’ প্রবন্ধটি তিনি পাঠ করেছিলেন দীর্ঘ সফরে আমেরিকার শহর থেকে শহরে ক্লান্তিভরা শ্রমে। তৃতীয় প্রবন্ধটি ন্যাশনালিজম ‘ইন ইন্ডিয়া’। বাদ যায়নি ভারতও। এগুলো ন্যাশনালিজম পুস্তিকার অন্তর্ভুক্ত (১৯১৭), প্রশংসিত ইউরোপীয় মনীষীদের বক্তব্যে।

জাতীয়তাবাদ, বর্ণবাদ ও ধর্মীয় জাতিবাদ সবগুলোই রবীন্দ্রনাথের বিচারে শয়তানবিশেষ, মানবতার জন্য বিপদবিশেষ, যদিও জাতীয়তাবাদকে তিনি সবহধপব শব্দটির দ্বারা এর চরিত্র চিহ্নিত করেছেন।

ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনে এই জাতীয়তাবাদী চেতনা স্বাধীনতা সংগ্রামী হয়েও ধর্মীয় জাতীয়তাবাদী অমানবিক বৈশিষ্ট্যে প্রশ্নবিদ্ধ। যদিও বলা হয় এর মূলে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, তবু প্রকৃত গণতন্ত্রের ব্যাবহারিক প্রকাশ সেখানে প্রায়ই অনুপস্থিত।

স্বাধীন বাংলাদেশের সমাজে রাজনীতিতে গণতন্ত্রের চর্চা কতটা শুদ্ধতা নিয়ে ক্রিয়াশীল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। ব্যক্তি-স্বাধীনতা, বাকস্বাধীনতা, সাংবাদিক স্বাধীনতা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে দেখা যাচ্ছে। রাজনৈতিক বিরুদ্ধতা ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে বেশ কিছু আগে থেকেই সমালোচনা শুরু হয় মানবাধিকার সংগঠনগুলোতে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। ভারতে এর ব্যাপক প্রকাশ ঘটেছিল ইন্দিরা গান্ধীর শাসনামলে জরুরি অবস্থায় এবং বিশেষ করে নকশালপন্থী আন্দোলন দমন উপলক্ষে।

রাজনৈতিক দলে গণতন্ত্রের সুষ্ঠু চর্চার প্রকাশ নিশ্চিত করা যায়নি বলে দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্বে নিজ দলেরই কর্মী বা নেতা হত্যা যেন স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গণতন্ত্রের চরিত্রবিরোধী রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতার প্রকাশ ঘটে পক্ষ-প্রতিপক্ষের সহিসংতায়। রাজনৈতিক হত্যার প্রভাব পড়ে সমাজে, সেখানে ব্যক্তিস্বার্থ বা গ্রুপ স্বার্থ, সমষ্টি স্বার্থ মিলে যে অপরাধ প্রবণতার প্রকাশ ঘটায় তাতে থাকে দুর্নীতির প্রবলতা, ভিত্তি পুরোপুরি অর্থলোভ, বিত্ত-বৈভবের অস্বাভাবিক আকাঙ্ক্ষা। সাম্প্রদায়িকতার প্রকাশও এখানে কম নয়।

দুর্নীতির ব্যাপকতা বংলাদেশের জনচরিত্রকে দূষিত করে চলেছে, ব্যতিক্রমীরা সংখ্যালঘু ও দুর্বল। ফলে নানা ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড বেড়ে চলছে। এর মধ্যে মাদক কারবার সমাজকে ধ্বংসের পথে নিয়ে চলেছে। বিপুলসংখ্যক তরুণ-তরুণী ও ছাত্র-ছাত্রী এই নেশার শিকার। শিক্ষার মান তাতে ব্যাহত, মেধার প্রকাশও তাই। বরং প্রকৃত মেধাবী সামাজিক ও শিক্ষায়তনিক নৈরাজ্যের কারণে দেশত্যাগী। সমাজ তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

দেশ তথা রাষ্ট্র হারাচ্ছে মেধাবী তরুণদের, যারা হওয়ার কথা দেশ গড়ার এবং সমাজকে শুদ্ধ মূল্যবোধে সমৃদ্ধ করার ভবিষ্যৎ নাগরিক। কিন্তু পরিবেশ দূষিত ও তা তাদের মেধার এমনই প্রতিকূল যে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তারা দেশসেবা সমাজসেবার পরিবর্তে আত্মসেবার টানে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে।

অন্যদের কথা আলাদা কিন্তু মেধাবীরা সেখানে ভালোভাবেই প্রতিষ্ঠিত, জীবনের সোনালি সময় গড়ায় ব্যস্ত। ব্যস্ত মূলত যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে, মহাদেশে কখনো বহু পরিচিত ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জে। এতে সায় রয়েছে সরকারের, পরোক্ষভাবে হলেও। আরেকটি অদ্ভুত বিষয় হলো রাজনৈতিক নেতাদের অনেকেরই বিকল্প বাসস্থান বিদেশে, তাঁদের সন্তানদের শিক্ষা বিদেশে, অবস্থান বিদেশে। একই কথা আরো সত্য, বিত্তবান ব্যবসায়ীকুলের ক্ষেত্রে। এ প্রবণতা আর যা-ই হোক দেশপ্রেম যে নয়, তা বলাই বাহুল্য।

চার.

এমন এক নৈরাজিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ কিভাবে ভাব সম্পদে, মননশীলতায় সমৃদ্ধ একটি রাষ্ট্ররূপে গড়ে উঠবে? তার সমাজও হবে মাঝারি মানের, কিছু ব্যতিক্রমী সদস্য বাদে, যারা বিরূপ বা প্রতিকূল অবস্থায়ও দেশের মাটি আঁকড়ে পড়ে আছে। তাদের সংখ্যা সীমিত পর্যায়ের। মনে হয় শাসক শ্রেণি চায় না এখানে যথেষ্ট সংখ্যায় দেশ গড়ার কারিগর গড়ে উঠুক। অন্তত এ বিষয়ে তাদের নীতি তেমন কথাই বলে।

আমাদের অনেকেরই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বলে, বিদেশগামী তরুণদের বক্তব্য হচ্ছে দেশে গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা অনুপস্থিত, মেধার মূল্য অস্বীকৃত, ন্যায়নীতির বালাই নেই, সর্বত্রই দলীয় সুবিধার প্রাধান্য, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা অনিশ্চিত, ভিন্নমত অসহিষ্ণু আচরণের শিকার ইত্যাদি নিয়ে আর যা-ই হোক নিজের পছন্দমতো জীবিকা সংগ্রহ ও বসবাস অসম্ভব। এসব অভিযোগ কী অজুহাত, নাকি ভিত্তিহীন।

এবার শুরুর কথায় ফিরি। জাতীয়তাবাদের ভিত্তি যদি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ হয়ে থাকে, তাহলে মানতে হয় যে বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদ তেমন মূল্যবোধসম্পন্ন সমাজ গড়ার শক্তি পুরোপুরি অর্জন করতে পারেনি, তার অর্থনৈতিক উন্নতি যেমনই হোক। দেশের তথাকথিত সুধীসমাজ বা নাগরিক সংস্থাগুলো এ বিষয়ে উদাসীন। তারা ব্যক্তিস্বার্থ বা শ্রেণিস্বার্থ নিয়ে জীবনের মধ্যাহ্ন আলোকিত করে তোলার সর্বক্ষমতা প্রয়োগে ব্যস্ত। দেশ শব্দটি যেখানে তাদের মননের সঙ্গে সম্পর্কহীন। অবশ্য বক্তৃতা-বিবৃতিতে ভিন্ন রূপ দেখা যায়। আগেই বলেছি, রাজনীতিতে, সমাজে এর ব্যতিক্রমীরা দুর্বল, স্বল্পসংখ্যক।

এমন বিরূপ বা বৈরী অবস্থা থেকে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র ও সমাজের মুক্তি অপরিহার্য, অন্তত বিশ্বপরিপ্রেক্ষিত বিচারে রাজনীতি ও সমাজনীতির পরিবর্তন তাই অনিবার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুস্থ গণতন্ত্রের চর্চা, কী রাজনীতিতে, কী সমাজে, অপরিহার্য। এর বিকল্প নেই। (কালের কণ্ঠ)

লেখক : কবি, গবেষক, ভাষাসংগ্রামী

এই বিভাগের আরো সংবাদ