আজকের শিরোনাম :

বঙ্গবন্ধু হত্যাসূক্ষ্ম- পরিকল্পনার নিখুঁত বাস্তবায়ন

  আবদুল মান্নান

১৫ আগস্ট ২০১৯, ১০:৩৫ | অনলাইন সংস্করণ

কোনও একটি দেশের রাজনীতিবিদ, সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানের আততায়ীর হাতে নিহত হওয়া নতুন কিছু নয় । ইসলামের প্রথম যুগে চার খলিফার মধ্যে তিন খলিফাকে ঘাতকদের হাতে প্রাণ দিতে হয়েছিল । তারও আগে রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজারকে তার অতি আপনজনেরা প্রকাশ্যে হত্যা করেছিল। সেটি খ্রিস্টপূর্ব ৪৪ শতকের ঘটনা। এই হত্যাকাণ্ডে ষাটজন রোমান সিনেটর (সংসদ সদস্য) অংশগ্রহণ করেছিল, যার মধ্যে সিজারের একান্ত আপনজন বলে পরিচিত মার্কাস ব্রুটাসও ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আব্রহাম লিংকনসহ চারজন প্রেসিডেন্ট আততায়ীর হাতে প্রাণ দিয়েছেন। ভারতের মাহাত্মা গান্ধী, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও রাজিব গান্ধী, পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান, সেনা শাসক জিয়াউল হক, প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো, চিলির প্রেসিডেন্ট সালভাদোর আলেন্দে, বার্মার প্রধানমন্ত্রী অং সান (সু চি’র পিতা), মিসরের আনওয়ার সাদাতসহ আরও অনেকেই ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ঘাতকের বুলেট বা বোমার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। দেখা যায়, এসব হত্যাকাণ্ডের পেছনে দীর্ঘদিনের সূক্ষ্ম ও পরিকল্পত প্রস্তুতি ছিল। কোনও কোনও ক্ষেত্রে হত্যাকাণ্ডের পেছনে সীমিত সংখ্যক মানুষের সম্পৃক্ততা থাকলেও অন্যদের বেলায় এই সম্পৃক্ততার পরিধি অনেক বিস্তৃত ছিল, যেমনটি দেখা যায় বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড হঠাৎ ঘটে যাওয়া কোনও দুর্ঘটনা ছিল না। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ব্যর্থ করে দিতে প্রস্তুতিটা শুরু হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় এবং তাতে সম্পৃক্ত ছিল খোদ আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে থাকা কিছু দলীয় নেতৃবৃন্দ আর প্রবাসী সরকারের কতিপয় কর্মকর্তা। এদের নেতৃত্বে ছিলেন প্রবাসী সরকারের পররাষ্ট্র বিষয়কমন্ত্রী খোন্দকার মোশতাক আহমদ। এই কাজে তিনি সঙ্গে পেয়েছিলেন কুমিল্লা থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য জহিরুল কাইউম, তাহের উদ্দিন ঠাকুর, সরকারের আমলা কর্মকর্তা মাহবুব উল আলম চাষী প্রমুখদের। এদের একদিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন নিয়ে ছিল সন্দেহ আর অন্যদিকে ছিল দলের অভ্যন্তরে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব। আর একদল সামরিক কর্মকর্তা চাইতেন এই যুদ্ধটা একটি সামরিক কমান্ডের অধীনে পরিচালিত হোক। এদের একটা বড় অংশ চাইতেন না তাদের ওপর কোনও বেসামরিক সরকার খবরদারি করুক। এই মুক্তিযুদ্ধ যে একটি জনযুদ্ধ ছিল তা তারা মানতে চাইতেন না। মোশতাক মনে করতেন তাকে মন্ত্রিসভায় স্থান দিলেও তিনি যথেষ্ট গুরুত্ব পাচ্ছেন না। প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ মোশতাককে তেমন একটা বিশ্বাস করতেন না, যার কারণে যখন বাংলাদেশ থেকে একটি প্রতিনিধি দল জাতিসংঘে বাংলাদেশের পক্ষে লবিং করতে যায়, সেই দলে মোশতাককে রাখা হয়নি। এ ব্যাপারে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তাজউদ্দীনকে সতর্ক করেছিলেন। মোশতাকের পরিকল্পনা ছিল জাতিসংঘে গিয়ে বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যে একটা গণহত্যা চালিয়েছে তা অস্বীকার করা আর বঙ্গবন্ধুর মুক্তির বিনিময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিষয়ে আপস করা। ১৯৭১’র সেপ্টেম্বর মাসে মোশতাক জহুরুল কাইউমের মাধ্যমে কলকাতাস্থ মার্কিন কন্সাল জেনারেলের কাছে খবর পাঠান, যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির ব্যাপারে সহায়তা করলে তিনি মুক্তিযুদ্ধ বন্ধ করতে ব্যবস্থা নেবেন। এটি ছিল মোশতাকের একক সিদ্ধান্ত। মার্কিন কন্সাল জেনারেল মোশতাকের প্রস্তাবে সায় দেননি। কারণ, তিনি জানতেন প্রবাসী সরকারকে ডিঙিয়ে কিছু করার ক্ষমতা মোশতাকের নেই।

পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা মুক্তিযুদ্ধরত সেনাবাহিনীর মধ্যে তাদের নিজস্ব এজেন্ট অনুপ্রবেশ ঘটানোর তৎপরতা শুরু করে সঙ্গে তারা পরবর্তীকালে বাংলাদেশকে পুনরায় পাকিস্তানের সঙ্গে একীভূত করার চেষ্টা করে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার কাজে যেসব সামরিক অফিসার নেতৃত্ব দিয়েছিল তাদের প্রায় সবাই মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে পাকিস্তান থেকে এসে প্রবাসী সরকারের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল। বস্তুতপক্ষে এরা কেউ যুদ্ধের ময়দানে লড়াই করেনি। হত্যাকাণ্ডের অন্যতম পরিকল্পনাকারী মেজর সৈয়দ ফারুক রহমান মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের ঠিক পূর্বমুহূর্তে মধ্যপ্রাচ্যের কোনও একটি দেশ থেকে কলকাতা আসে এবং যশোর মুক্ত হওয়ার পর মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয়। পাকিস্তান ফেরত এসব ষড়যন্ত্রকারী ও ঘাতকদের সঙ্গে জিয়াউর রহমানের সুসর্ম্পক ছিল। ১৯৭৫ সালের মার্চ মাসে ফারুক রহমান জিয়ার সঙ্গে বঙ্গবন্ধু সরকারকে উৎখাতের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন। জিয়া ফারুককে বলেন একজন সিনিয়র অফিসার হিসেবে তিনি এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরাসরি জড়িত হতে পারবেন না। তবে তারা তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এগিয়ে যেতে পারে। জিয়া তখন ডেপুটি চিফ অব স্টাফ ছিলেন। বঙ্গবন্ধু এই পদটি জিয়ার জন্যই সৃষ্টি করেছিলেন। প্রজাতন্ত্রের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হিসেবে জিয়ার উচিত ছিল ফারুক গংদের এসব পরিকল্পনা সম্পর্কে তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো। ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে জিয়া আর মেজর ডালিমের অবারিত যাতায়াত ছিল।

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি তারিখে পাকিস্তানের কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর ১২ তারিখ নতুন মন্ত্রিসভা শপথ গ্রহণ করে। নতুন মন্ত্রিসভা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিকে আবার নিজের পায়ে দাঁড় করাতে এতই ব্যস্ত ছিল যে দেশে একটি অভ্যুত্থানের একটি নীলনকশা প্রস্তুত হচ্ছে সেই সম্পর্কে খোঁজ খবর নেওয়ার প্রয়োজন কেউ মনে করেনি। তবে এ বিষয়ে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ ঠিকই খবর রেখেছিল, যা তারা বঙ্গবন্ধুকে একাধিকবার অবহিত করেছিল। কিন্তু তিনি তা গুরুত্ব দেননি। একই সময় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি দিন দিন বেশ নাজুক হচ্ছিল। আজ এই পাটের গুদামে আগুন তো কাল কোনও এক সার কারখানায় বিস্ফোরণ। এই সময় আওয়ামী লীগের সাত জন সংসদ সদস্যকে ঘাতকরা গুলি চালিয়ে হত্যা করে। ঈদের জামাতে পর্যন্ত নির্বিচারে গুলি করা হয়। মওলানা ভাসানীর ন্যাপের ছাতার নিচে অতি বাম আর অতি ডানপন্থীরা তখন একত্রিত হয়েছে। ছাত্রলীগ থেকে বের হয়ে একদল মেধাবী তরুণ ‘বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রে’ দীক্ষিত হয়েছে। এদের নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে এসেছেন যুদ্ধদিনের নয় নম্বর সেক্টরের কমান্ডের মেজর জলিল। সঙ্গে আছেন ছাত্রনেতা সিরাজুল আলম খান, আ স ম আবদুর রব, শাজাহান সিরাজ, হাসানুল হক ইনু, আ ফ ম মাহবুবউল হক প্রমুখরা। জাসদ গঠন করে ‘গণবাহিনী’ নামে একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল। তাদের একটি ছোট দল বাংলাদেশে ভারতের নবনিযুক্ত হাইকমিশনার সমর সেনকে তাঁর ঢাকাস্থ অফিসে জিম্মি করে। নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে একজন নিহত হয় এবং বাকিদের আটক করা হয়। বঙ্গবন্ধু সরকার যখন দেশ গড়তে ব্যস্ত তখন এসব দল ও গোষ্ঠী দেশেকে অস্থিতিশীল করতে এই ধরনের নানা অঘটন ঘটাতে শুরু করে। ১৯৭৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর পূর্ব পাকিস্তান (তখনও নাম পরিবর্তন হয়নি) কমিউনিস্ট পার্টি (এম-এল) চেয়ারম্যান কমরডে আবদুল হক পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টোর কাছে ‘স্বৈরাচার’ মুজিব সরকারকে উৎখাত করার জন্য অর্থ, অস্ত্র আর বেতার চেয়ে পাঠান। ভুট্টো তার আস্থাভাজন এক কর্মকর্তা মাহমুদ আলীকে পাকিস্তানের সুহৃদ আবদুল হককে সহায়তা করার নির্দেশ দেন এই সময় ইরফানুল বারী সম্পাদিত মওলানা ভাসানীর সাপ্তাহিক সংবাদপত্র ‘হক কথা’, জাসদের মুখপত্র দৈনিক ‘গণকণ্ঠ’ ও কট্টর চীনপন্থীদের সাপ্তাহিক এনায়তুল্লাহ খানের ‘হলিডে’ পত্রিকা নানা ধরনের গুজব ছড়িয়ে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। দেশের কয়েক জায়গায় ১৯৭৩ সালের দুর্গাপূজার সময় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানেরও চেষ্টা করা হয়।

অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু তাঁর নিজের নিরাপত্তার ব্যাপারে ছিলেন চরম উদাসীন। মেজর জেনারেল সুজান সিং উবান ১৯৭১ সালে ভারতের স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্সের অধিনায়ক ছিলেন। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে মুক্তিবাহিনীর পাশে থেকে যুদ্ধ করেছেন। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর অনুরোধে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী উবানকে ঢাকা প্রেরণ করেন। উদ্দেশ্য ছিল তিনি বঙ্গবন্ধুকে যুদ্ধফেরত মুক্তিবাহিনীর সাধারণ সদস্যদের নিয়ে জাতীয় রক্ষীবাহিনী গঠনে সহায়তা করবেন। এদের কোনও নিয়মিত বাহিনীতে যাওয়ার তেমন একটা শারীরিক যোগ্যতা ছিল না। উবান তার স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থ ‘ফ্যান্টামস অব চিটাগং’-এ লিখেছেন, তিনি বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বর বাড়িতে গিয়ে দেখেন বাড়িটি সম্পূর্ণ অরক্ষিত এবং সবার জন্য বাড়ির দরজা অবারিত। এ বিষয়ে তিনি বঙ্গবন্ধুর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন ‘জনগণ আমাকে জাতির পিতা বলে ডাকে। তাদের জন্য তো আমার দরজা খোলা রাখারই কথা।’

‘র’-এর এককালের শীর্ষ কর্মকর্তা আর কে যাদব তার গ্রন্থ ‘মিশন র’-তে লিখেছেন, বাংলাদেশে যে একটি সামরিক অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা হচ্ছে তা তারা তাদের সোর্স থেকে জানতে পেরেছিলেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর অনুমতি নিয়ে ‘র’-এর এই অন্যতম নীতিনির্ধারক ১৯৭৪ সালের ডিসেম্বর মাসে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বঙ্গভবনে দেখা করে তাঁকে এই ষড়যন্ত্র সম্পর্কে অবহিত করলে বঙ্গবন্ধু তা হেসে উড়িয়ে দিয়ে বলেন, এরা সকলে আমার সন্তান। তারা আমার কোনও ক্ষতি করতে পারে না। তারা হতাশ হয়ে দিল্লি ফিরে যান। ‘র’ ১৯৭৫ সালে সর্বশেষ আর একজন কর্মকর্তাকে দিল্লি থেকে ঢাকায় পাঠানো হয়। ওই কর্মকর্তা বঙ্গবন্ধুকে এই সম্ভাব্য অভ্যুত্থানের ব্যাপারে শুধু একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্রই দেননি, এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে কারা কারা জড়িত আছে তাদের নামও তাঁর কাছে প্রকাশ করেন। তবে ফলাফল একই। তবে সব শুনে বঙ্গবন্ধু জিয়াকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বদলি করেন এবং এটি নির্ধারিত হয় যে জিয়া কোনও একটি দেশে রাষ্ট্রদূত হয়ে চলে যাবেন। জিয়া অত্যন্ত চাতুর্যের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কিছু নেতার শরণাপন্ন হয়ে তার বদলির আদেশটি বাতিল করাতে সক্ষম হন। ১৯৭৫ সালে মাহবুব তালুকদার (বর্তমানে নির্বাচন কমিশনার) বঙ্গবন্ধুর স্পেশাল অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৫ আগস্টের কয়েক দিন আগে তিনি তার এক পরিচিত গোয়েন্দা সংস্থায় কর্মরত ব্যক্তির কাছ থেকে জানতে পারেন বঙ্গবন্ধুকে ক্ষমতাচ্যুত করতে এক গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে। মাহবুব তালুকদার বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে শেখ ফজলুল হক মনিকে অবহিত করেন। মনিও তাঁর মামা বঙ্গবন্ধুর মতো এসব সংবাদ আজগুবি বলে উড়িয়ে দেন।

ষড়যন্ত্রকারীরা তাদের সব কাজ অত্যন্ত পেশাদারিত্বের সঙ্গে প্রস্তুত করেন। মার্চ মাস নাগাদ বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা যাদের পদায়ন করা হয় তারা সবাই পাকিস্তানি ভাবধারার কর্মকর্তা ছিল। ১৫ আগস্ট যেসব সেনা অফিসার ৩২ নম্বর বাড়িতে পাহারারত ছিল, সবাই একসময় বঙ্গবন্ধুর অন্যতম ঘাতক মেজর হুদা আর মেজর ডালিমের ইউনিটে কর্মরত ছিল। ঘটনার সময় তারা তেমন কোনও প্রতিরোধ গড়ে তোলেনি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার চুয়াল্লিশ বছর পর কেউ যদি চিন্তা করেন বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের নৃশংস হত্যাকাণ্ড এড়ানো সম্ভব ছিল কিনা তার একটা সম্ভাব্য জবাব হবে- বঙ্গবন্ধু নিজে যদি আরও বেশি সতর্ক হতেন তাহলে হয়তো সম্ভব হতো।

মানুষ ক্ষমতায় থাকলে তার চারদিকে নানা মানুষ নানা মতলবে তাঁকে ঘিরে ধরে আর তাদের সকলের মতলব ভালো হয় না। এটি সব সময়ের জন্য সত্য। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের গুণের কথা বলে শেষ করা যাবে না। তবে তাঁর একটি দুর্বলতা ছিল আর তা হচ্ছে তিনি সবাইকে নির্বিচারে বিশ্বাস করতেন, যা ছিল আত্মঘাতী এবং এই সত্যটা তিনি নিজের জীবন দিয়ে প্রমাণ করেছেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর বাংলাদেশ এক অন্ধকার গহ্বরে প্রবেশ করেছিল। ত্রিশ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশকে পুনরায় আলোতে ফিরিয়ে আনার জন্য বাংলার মানুষকে অপেক্ষা করতে হয়েছে দীর্ঘ একুশ বছর, ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত যখন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা জাতীয় নির্বাচনে বিজয় লাভ করে সরকার গঠন করেন। পিতার ভুল হতে শিক্ষা নিয়ে কন্যা আগামী দিনগুলোতে পথ চলবেন এই প্রত্যাশা। আজকের এই দিনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, তাঁর পরিবারের সদস্যবৃন্দ ও জাতীয় চার নেতার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। (সংগৃহীত)

লেখক : বিশ্লেষক ও গবেষক

এই বিভাগের আরো সংবাদ