উন্নত বাংলাদেশ! রিডিকুলাস প্রত্যাশা!!

  অজয় দাশগুপ্ত

১৬ জুন ২০১৯, ১১:০০ | অনলাইন সংস্করণ

প্রায় দুই দশক আগে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের দুই পদস্থ কর্মকর্তা একটি ঘটনার উল্লেখ করেছিলেন এভাবে- খালেদা জিয়া তখন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে। অর্থমন্ত্রী হিসেবে কাজ করছেন সাইফুর রহমান। অর্থমন্ত্রী অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের ওই দুই কর্মকর্তাকে একদিন ডেকে বলেন, পরদিন তাদের খালেদা জিয়ার ক্যান্টনমেন্টস্থ বাসায় যেতে হবে। সেখানে তাকে পিএল-৪৮০ চুক্তি বিষয়ে ব্রিফ করতে হবে। অর্থমন্ত্রী এটাও জানালেন যে, প্রধানমন্ত্রীর এ বিষয়ে বিন্দুমাত্র ধারণা নেই। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে প্রতি বছর যে সহায়তা আসে, সেটা নিয়ে ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চান। সাইফুর রহমান ছিলেন স্পষ্টভাষী। তিনি ওই দুই কর্মকর্তাকে বারবার স্মরণ করিয়ে দেন যে, প্রধানমন্ত্রীকে অ আ ক খ-এর মতো বিষয়টি সহজে বুঝিয়ে দিতে হবে। আর যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর যেদিন আলোচনা হবে, সেদিন তাদের বৈঠকের আশপাশে থাকতে হবে, যাতে যে কোনো প্রয়োজনে তাদের ডেকে মতামত নিতে পারেন। 

ওই দুই কর্মকর্তা আমাদের এ ঘটনা বলার সময় মন্তব্য করেছিলেন এভাবে- দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যারা থাকেন, তাদের উপদেষ্টা-মন্ত্রী কিংবা বিশেষজ্ঞ-গবেষকদের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে হয়। তথ্য-পরিসংখ্যান জোগানেরও লোক থাকে হাতের কাছে। তবে সবকিছু ব্রিফিং দিয়ে হয় না। নিজের বুঝ থাকতে হয়। সিদ্ধান্ত নিতে উপস্থিত বুদ্ধি প্রয়োজন। বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) এমনটিই আমরা দেখলাম জাতীয় সংসদে। অর্থমন্ত্রী অসুস্থতার জন্য বাজেট ভাষণ সবটা পড়তে পারছিলেন না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে নিজেই তা পাঠ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। অর্থমন্ত্রীর লিখিত ভাষণে একাধিক স্থানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা ছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী কী করে নিজের প্রশংসা নিজে উচ্চারণ করেন? তবে তাকে এ নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়নি। বরং উপস্থিত বুদ্ধিতেই তিনি পরিস্থিতি সামাল দেন এই বলে যে, 'মাননীয় স্পিকার, আমি কিন্তু অর্থমন্ত্রীর লেখা ভাষণ পাঠ করছি।'

প্রতি বছর বাজেট পেশের পরের দিন সংবাদ সম্মেলন করেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু তিনি অসুস্থ বিধায় এ দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই। পরিকল্পনামন্ত্রী আবদুল মান্নান কয়েক মাস আগেও অর্থ প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী তাকে দিয়েই সংসদে অর্থমন্ত্রীর অসমাপ্ত বাজেট ভাষণ পাঠ করাতে পারতেন। সংবাদ সম্মেলনও তাকে দিয়ে করানো যেত। কিন্তু তিনি বুঝিয়ে দিলেন যে, অর্থমন্ত্রীর মতো জটিল বিষয়েও কেবল ব্রিফিংয়ের ওপর নির্ভর করেন না। নিজের ওপর তার আস্থা রয়েছে। এটা আমরা দেখেছি পদ্মা সেতুতে অর্থে জোগান না দিতে বিশ্বব্যাংকের ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময়। আমাদের স্মরণ থাকতে পারে যে, বাংলাদেশের শীর্ষ অর্থনীতিবিদদের একটি অংশ দৃঢ়ভাবেই বিশ্বাস করতেন যে, পদ্মা সেতুর মতো একটি ব্যয়বহুল প্রকল্প নিজেদের অর্থে নির্মাণ করা সম্ভব নয়। একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা সংস্থার একজন দায়িত্বশীল অর্থনীতিবিদ আমাকে বলেছিলেন, 'পদ্মা সেতু নির্মাণে বিপুল অর্থ ব্যয় হবে। এ অর্থ বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ হিসেবে পাওয়া গেলে ভালো হয়। তারা এ প্রকল্প থেকে সরে গেলে অন্যান্য প্রকল্পে তাদের কাছ থেকে ঋণ পাওয়া কঠিন হবে। এমনকি অন্য ঋণদাতা দেশ ও সংস্থাগুলোকেও তারা বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াতে নিরুৎসাহিত করবে।' তিনি এটাও বলেছিলেন যে, সে সময়ের যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন এবং কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা দুর্নীতি করেছেন, সেটা মেনে নেওয়াই ভালো।

কিন্তু এখন স্পষ্ট যে, বাংলাদেশ সরকার নয়, বিশ্বব্যাংকই ভুল করেছিল। আর পরবর্তী সময়ে তারা সেটা স্বীকার করে নিয়েছে। 'ক্ষতিপূরণ হিসেবে' তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক প্রকল্পে কম সুদে ও দীর্ঘমেয়াদে ঋণ প্রদান করে চলেছে। এ ঘটনায় বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের মর্যাদা বেড়েছে। বাংলাদেশে অর্থনৈতিক সক্ষমতার পাশাপাশি স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সাহস এবং দৃঢ়তাও অর্জন করেছে। এ কারণে পদ্মা সেতু এখন একটি স্পিরিটের নাম, চেতনার নাম। বাংলাদেশ অনেক কিছু পারে, সেটা বিশ্ব এ বড় অর্থনৈতিক প্রকল্পের মাধ্যমে জেনেছে। কেউ কেউ বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কেউ কেউ বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ মাথা পেতে নেওয়ার পক্ষে ছিলেন। এমনকি সে সময়ে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা আবুল মাল আবদুল মুহিত সাহেবও নাকি মনে করতেন- বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে টক্কর দেওয়া ঠিক হবে না। অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রীর কাছে এটা আদৌ শঠে শাঠ্যং বিষয় ছিল না। তিনি এ ইস্যুটিকে বিশ্বের কাছে নতুন বার্তা প্রদানের জন্য বেছে নিয়েছিলেন। এখন আমরা বুঝতে পারি- বাংলাদেশকে আর উপেক্ষা করা যাবে না, বরং নতুনভাবে তার সঙ্গে ডিল করতে হবে- এ বার্তা বিশ্বব্যাংক, যুক্তরাষ্ট্রসহ ব্রিটেন, জার্মানি প্রভৃতি দেশকে দিতে পেরেছেন। উন্নত বিশ্বের সারিতে যেতে সংকল্পবদ্ধ বাংলাদেশের নেতৃত্বে ভবিষ্যতে যারা আসবেন, তারা নিশ্চয়ই পদ্মা সেতু এপিসোড থেকে শিক্ষা নেবেন। 

আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার প্রায় সোয়া পাঁচ লাখ কোটি টাকা। শেখ হাসিনা দশ বছর আগে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর প্রথম বাজেট পেশ করা হয় ২০০৯-১০ অর্থবছরে। ওই বছর রাজস্ব ব্যয় ছিল ৭৮ হাজার কোটি টাকা এবং উন্নয়ন বাজেটে বরাদ্দ ছিল ২৮ হাজার কোটি টাকা। দুই খাত মিলিয়ে এক লাখ ছয় হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার তার চার গুণ। আমার ধারণা, শুল্ক্ককর ফাঁকি প্রদান কমিয়ে আনতে পারলে এখনও আমরা ৭ থেকে ৮ লাখ কোটি টাকার বাজেট তৈরি করতে পারি। আমাদের অর্থনীতির আকার বড় হচ্ছে, রাজস্ব আয় বাড়ছে। চীন ও জাপানের মতো দেশ থেকে বড় ধরনের বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি মিলছে। এমনকি ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশও বাংলাদেশের বিভিন্ন অর্থনৈতিক প্রকল্পে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়নের মতো দেশও বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াচ্ছে। এই দশ বছরে আমাদের রফতানি আয় ১৬ বিলিয়ন ডলার থেকে প্রায় আড়াই গুণ বেড়েছে। প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ বছরে ১১ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ১৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ এক হাজার কোটি ডলার থেকে বেড়ে হয়েছে তিন হাজার কোটি ডলারের বেশি। প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় পর্যন্ত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে পাঁচ কোটির বেশি। চাল-গম-ভুট্টা উৎপাদন চার কোটি টন ছাড়িয়েছে। ব্যাংকের আমানত দুই লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা বেড়ে হয়েছে ১০ লাখ কোটি টাকারও বেশি।

আমার মনে আছে, ১৯৯৮ সালে প্রলয়ঙ্করী বন্যার পর বোরো মৌসুমে কৃষকদের ঋণ ও অন্যান্য সুবিধা প্রদান করেছিল শেখ হাসিনার সরকার। তখন অর্থমন্ত্রী ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ প্রদান করেন- কৃষকরা আবেদন করার দু'দিনের মধ্যে ঋণ বিতরণ করতে হবে। আমি বন্যাকবলিত কয়েকটি এলাকায় গিয়ে কয়েকজন বয়স্ক নারীর সঙ্গে কথা বলি। তারা অনুরোধ করেন, লাউ-কুমড়া-সবজির বীজ না দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেন চারা বিতরণ করেন। এ নিয়ে সে সময়ে 'মুক্তকণ্ঠ' নামের পত্রিকায় রিপোর্ট করার কয়েকদিন পর দেখি প্রধানমন্ত্রী বন্যাদুর্গতদের রিলিফ প্রদানের সময় সবজির বীজের পরিবর্তে চারা তুলে দিচ্ছেন। এটাই তো রাষ্ট্রনায়কদের সংবেদনশীলতা। এমনকি আপাতভাবে তুচ্ছ বিষয়েও নজর রাখতে হয় তাদের।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তার বাড়তি সহায়তা প্রদানের ফলও মেলে হাতে হাতে। পরের বোরো মৌসুমে প্রায় এক কোটি টন চাল উৎপাদন হয়। সেটা ছিল রেকর্ড। অর্থমন্ত্রী এসএএমএস কিবরিয়া সোনারগাঁও হোটেলে বিশ্বব্যাংকসহ কয়েকটি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের এক সভায় বোরো মৌসুমে এক কোটি টন চাল উৎপাদনের তথ্য তুলে ধরলে সভায় উপস্থিতদের কেউ কেউ স্বগতোক্তি করে উঠেছিলেন- 'রিডিকুলাস ক্লেইম, হাস্যকর দাবি। এটা অসম্ভব।' বাস্তবে কিন্তু এটাই ঘটেছিল। এখন অবশ্য তার দ্বিগুণ চাল কেবল বোরো মৌসুমেই উৎপাদিত হচ্ছে, যদিও জমির পরিমাণ বাড়েনি। কেউ আর বিষয়টি নিয়ে চ্যালেঞ্জ করে না।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পরপরই বিশ্বব্যাংক ও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্ডিতদের কেউ কেউ 'বাস্কেট কেস' শব্দযুগল ব্যবহার শুরু করেন। বাংলাদেশের অতি উৎসাহী রাজনীতিবিদ ও অর্থনীতিবিদদের কেউ কেউ বাস্কেট কেসকে কীভাবে যেন বটমলেস বাস্কেট বানিয়ে ফেলেন। এর অর্থ করা হয় তলাবিহীন ঝুড়ি। বলা হতে থাকে, এ দেশকে সহায়তা দিয়ে লাভ নেই। কারণ যা কিছু দেওয়া হবে, সব দুর্নীতি-অপচয় হয়ে যাবে, তলা না থাকা ঝুড়ি দিয়ে সব জমা পড়বে শাসক দলের দুর্নীতিবাজদের পকেটে। বাংলাদেশে দুর্নীতি আছে এবং যথেষ্ট মাত্রাতেই আছে। পাশাপাশি উন্নত হওয়ার একটি ধারণাও দৃশ্যমান। এখন বাংলাদেশ যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে, আপনাআপনি ঘটেনি।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বাজেট উত্থাপনের আগে অর্থমন্ত্রী কিংবা পরিকল্পনামন্ত্রী প্যারিসে যেতেন 'প্যারিস কনসোর্টিয়ামের' বৈঠকে যোগ দিতে। সেখানে দাতা দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধিদের সভায় পরবর্তী বাজেটের জন্য ঋণ ও অনুদানের অঙ্ক ঘোষণা করা হতো। একই সঙ্গে 'বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে কী করবে এবং কী করবে না' সেটাও বলে দিত। সে সময়ে একটি কৌতুক চালু ছিল এভাবে- 'বাংলাদেশে প্রতিটি দম্পতি কতটি সন্তান নেবে, সেটাও বিশ্বব্যাংক ও যুক্তরাষ্ট্র ঠিক করে দিত প্যারিস কনসোর্টিয়াম বৈঠকে'। 

শেখ হাসিনার সর্বশেষ দশ বছরে বাংলাদেশ দাতাদের এ ধরনের খবরদারি থেকে বহুলাংশে মুক্ত হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট পর্যালোচনা করতে গিয়ে আমাদের এ প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রাখতে হবে। খাতওয়ারি পর্যালোচনায় গিয়ে প্রশংসা ও সমালোচনার সুযোগ অবশ্যই রয়েছে। শিক্ষা বাজেটের প্রতি আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পড়েছে। বিশেষভাবে গুরুত্ব পেয়েছে শিক্ষার মান। প্রয়োজনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে যোগ্য-গুণী শিক্ষক আনার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। আমার বহুদিনের প্রস্তাব ছিল এভাবে- ঢাকা ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিষয়ে যারা সেরা শিক্ষক রয়েছেন, তারা যেন নির্দিষ্ট স্থানে বসে মাল্টিমিডিয়া প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন কলেজে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্সের ক্লাস নিতে পারেন, তার সুযোগ করে দেওয়া। অন্য দেশ থেকে সেরা শিক্ষকদের সবাইকে বাংলাদেশে নিয়ে আসার এখন প্রয়োজন পড়বে না। তারা নিজের দেশের কর্মস্থলে বসেই বাংলাদেশের অনেক প্রতিষ্ঠানে একসঙ্গে ক্লাস নিতে কিংবা গবেষণা কাজে পরামর্শ দিতে পারবেন। 

বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের যেসব কর্মী কাজ করেন, তাদের উৎসাহ দিতে এবারের বাজেটে কত সহজেই না একটি সমাধান দেওয়া হয়েছে- কেউ ১০০ টাকা পাঠালে তার নমিনির কাছে ১০২ টাকা তুলে দেওয়া হবে। সৌদি আরব-কুয়েত-মালয়েশিয়া-কাতার থেকে যত বেশি অর্থ আসবে, তার প্রভাব ভালো পড়বে আমাদের অর্থনীতিতে। একসময় প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের সিংহভাগ ব্যয় হতো জমি-ফ্ল্যাট বা বিলাসদ্রব্য কিনতে। এখন নজর পড়েছে বিনিয়োগের প্রতি। গবাদিপশু-হাঁস-মুরগি, মাছের খামারের উপকরণের জন্য শুল্ক্ক ছাড় এ ক্ষেত্রে ভালো পদক্ষেপ। কৃষি খাতে সাম্প্রতিক সময়ে সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। এটা আরও বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। কৃষকরা কেন যুগ যুগ ধরে চাল-সবজি-মাছ কম দামে জোগাবে? তাদের গাড়ি-বাড়ি করার স্বপ্ন আছে। সন্তানদের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠানো প্রবল ইচ্ছা আছে। এটা পূরণ করার জন্য কৃষিই তো হবে আয়ের উৎস। কাঁচা লঙ্কার দাম প্রতি কেজি একশ' টাকা হলেই গেল গেল রব ওঠা কিন্তু অর্থনীতির জন্য ভালো লক্ষণ নাও হতে পারে। কৃষক ও দিনমজুররা সংখ্যায় অনেক। তাদের হাতে বাড়তি টাকা গেলে সেটা ব্যয় হবে শিল্পপণ্য কেনার জন্য। এভাবে শিল্পপণ্যের বাজার বড় হবে। আমাদের শিক্ষার প্রসার ঘটছে। মান বাড়াতে বাড়তি নজর পড়ছে। কিন্তু সে তুলনায় শিক্ষিত তরুণ-তরুণীদের চাকরির সুযোগ বাড়ছে না। শিল্প ও সেবা খাতের প্রসার না ঘটলে কিন্তু শিক্ষিত তরুণ প্রজন্মকে আমরা কাজ দিতে পারব না। তখন অনেকেই হয়তো বলে উঠবে- 'লিখিত পড়িব মরিব দুঃখে...।' 

আমাদের অর্থনীতি ঠিক পথেই আছে। ভুল-ভ্রান্তিও আছে। সেসব দূর করাই সময়ের চ্যালেঞ্জ। তবে ভুলগুলোকে বড় করে দেখে আমরা যেন সাফল্যকে তুচ্ছ করে না দেখি, কারও ভালো দেখতে না পারা ছিদ্রান্বেষীর মতো বলে না উঠি- বাংলাদেশ উন্নত হবে, এ দাবি রিডিকুলাস, হাস্যকর। আমাকে অন্তত দু'জন খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ বলেছিলেন- বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ হবে, এটা ভাবেন কী করে? এখন কিন্তু আমরা ৮ এমনকি ১০ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির কথাও ভাবছি এবং সেটাকে কেউ অসম্ভব বা হাস্যকর মনে করেন না। 

লেখক: সাংবাদিক
[email protected]

এই বিভাগের আরো সংবাদ