আজকের শিরোনাম :

ভারতীয় রাজনীতিতে বহুত্ববাদী আদর্শ মরতে বসেছে

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৭ জুন ২০১৮, ১৪:০৯

আহমদ রফিক, ০৭ জুন, এবিনিউজ : মতাদর্শের বিচারে ভারতীয় রাজনীতি কোন পথে-একসময় এমন প্রশ্ন মাঝেমধ্যে উঠলেও এখন তা একরকম মীমাংসিত সত্যে পৌঁছে গেছে। ভারত তার একদা প্রচারিত ‘বহুত্ববাদ’ বর্জন করে হিন্দুত্ববাদে পৌঁছে গেছে। বিজেপি সেটা সত্য প্রমাণ করে দিয়েছে, বিশেষ করে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে তাঁর সম্প্রদায়বাদী জাদুকাঠির প্রভাবে। লক্ষ করার বিষয় যে বীভৎস গুজরাট সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার আদর্শিক রূপকার নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে গত নির্বাচনের বেশ কিছু সময় আগে অনেকেরই মনে সংশয় ছিল তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্ব নিয়ে।

কিন্তু গুজরাটির ধারায় সমৃদ্ধ হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির এমনই মহিমা যে ভারতের বহুত্ববাদী উদারনীতি পরাস্ত করে যে দিল্লির সিংহাসন দখল করে নিয়েছে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সহজ জাদুতে, যা সম্বল করে গুজরাট বিজয় সম্ভব হয়েছিল একাধিকবার। এ জাদু অনেকটা উগ্র জাতীয়তাবাদের মতোই, যার তুলনা বিশ্বে কম নয়। উগ্র ধর্মবাদী রাজনীতির সঙ্গে উগ্র জাতীয়তাবাদের তফাত নীতিগত বিচারে সামান্যই বলা চলে। ভিন্ন নয় বর্ণবাদও। সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভাবিত (সেই সঙ্গে অবাঞ্ছিতও) নির্বাচনী বিজয় শেষোক্ত সত্যটির প্রমাণ।

সামনে ভারতীয় লোকসভার নির্বাচন। হয়তো তাই নির্বাচনী হারজিতের হিসাব-নিকাশ দৈনিক পত্রিকার কলামগুলোতে প্রভাব রাখতে শুরু করেছে, যেমন ভারতে তেমনি বাংলাদেশে। আর সে হিসাবে অতীতের রাজনৈতিক ভুল-ভ্রান্তিগুলো উঠে আসছে। আসছে রাজনৈতিক সংকীর্ণতা ও স্বার্থপরতার ইতিকথা, ছোট-বড় নানা ঘটনার চুলচেরা বিচার-ব্যাখ্যায়।

ভারতীয় রাজনীতির অঘটন-ঘটনের পালাবদল শুরু হয় ইন্দিরা রাজত্বের শেষকাল থেকে একভাবে, তার পরবর্তীকাল থেকে ভিন্নভাবে। ব্রিটিশ ভারতে ক্ষমতার হস্তান্তর পর্বশেষে নেহরু জমানার দুই প্রধান বৈশিষ্ট্য বহুত্ববাদী ভারত ও সেক্যুলারিজম। পরবর্তী সময় অপব্যবহারের টানে সেই রাজনৈতিক মতাদর্শ বাস্তবে ধরে রাখা যায়নি। অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ প্রাঙ্গণে মি. ক্লিন নামে সদ্য পরিচিত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরাতনয় রাজীব গান্ধীর হাতে রামমন্দিরের শিলান্যাস এর বড় প্রমাণ। এবং তা উচ্চ আদালতের স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ অগ্রাহ্য করে।

অবশ্য সেটা ছিল রাজনৈতিক-সামাজিক-অর্থনৈতিক ব্যাধির বাহ্য লক্ষণ। দুর্নীতি ও রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত জাতীয় কংগ্রেস নামক প্রাচীন বটবৃক্ষটিকে জীর্ণ করে ফেলেছিল। তাই জনবান্ধব নীতি নয়, রাজনৈতিক আদর্শবাদ নয়, যেনতেন প্রকারে ক্ষমতা ধরে রাখাটাই ছিল একমাত্র লক্ষ্য। আদর্শ বা জনহিতৈষণা চুলোয় যাক।

এমন এক অনাচারী রাজনীতির প্রভাব সমাজে পড়তে বাধ্য। সমাজ দূষণের বিপরীত চক্রের প্রভাব রাজনীতিতে বহুলদৃষ্ট। ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনীতি বিভাগ-পূর্বকাল থেকে সাম্প্রদায়িকতার দুষ্টচক্রে আবর্তিত। তবে একালে তার সামাজিক শ্রীবৃদ্ধি ঘটে চলেছে নানা মাত্রায়। আমরা এ ক্ষেত্রে অতীত ইতিহাসের দীর্ঘ বয়ানে যাচ্ছি না। শুধু মনে করিয়ে দিতে চাই যে ভারতবর্ষ আধুনিককালে পৌঁছে কখনোই এক জাতি, এক ভাষা, এক সংস্কৃতির দেশ ছিল না, বহুত্বে ছিল এর শিকড়ের বাস্তব পরিচয়।

ভারতের জাতীয় সংগীতের প্রণেতা রবীন্দ্রনাথ তাঁর বঙ্গীয় স্বাদেশিকতা সত্ত্বেও দেশ বলতে বুঝতেন বহু জাতি, বহু ভাষী, বহুত্ববাদী এক আদর্শনিষ্ঠ ভারতকে। ব্যতিক্রম ছিলেন না এদিক থেকে তাঁর আদর্শিক অগ্রজ ‘ভারত পথিক’ রামমোহন রায়। তাতে পারস্পরিক সহিষ্ণুতার উদার চেতনাই ছিল প্রধান বিষয়। কংগ্রেস রাজনীতি জনসমর্থনে শক্তিমান হয়ে ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে কল্পিত স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপনে তাদের উচ্চারিত সংগীতের মর্মবাণী ছিল : ‘জাগে নব ভারতের জনতা/এক জাতি এক প্রাণ একতা।’

কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ভারতীয় মহাজাতি গঠনের স্বপ্ন ধারণ করেও ধর্ম-ভাষা-জাতিসত্তা ও সংস্কৃতির ভিন্নতা সম্পর্কে সচেতন ছিলেন বলে একাধিক সমস্যার ক্ষেত্রে ধর্মীয় স্বাতন্ত্র্যবোধ মেনে নিয়েই এক জাতি গঠনে এগিয়ে যেতে চেয়েছিলেন তাঁর বহুত্ববাদের মাধ্যমে। একই সঙ্গে এ ক্ষেত্রে বাধা ও বিপত্তিগুলো সম্পর্কে সচেতন ছিলেন। তাই তাঁর মন্ত্রশিষ্য সুভাষচন্দ্রের আন্তরিক আগ্রহে জীর্ণ শরীরে কলকাতায় মহাজাতি সদনের দ্বারোদ্ঘাটনে যেমন আপত্তি করেননি, তেমনি অন্যদিকে এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছিলেন যে দৈবক্রমে যদি একটি সর্বভারতীয় মহৎ আইডিয়াল জুটে যায়, তাহলে হয়তো হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রিস্টান মিলে ভারতীয় মহাজাতি গঠন সম্ভব হতে পারে।

রবীন্দ্রনাথের স্বপ্ন বাস্তবে ধরা দেয়নি। সংঘাতময় রাজনীতির স্বার্থপর দ্বন্দ্বের টানাপড়েনে তা গঙ্গা-সিন্ধুতে ভেসে গেছে। রবীন্দ্রানুরাগী জওয়াহেরলাল নেহরু ওই বহুত্ববাদে বিশ্বাসী হলেও স্বাধীন ভারতে তাঁর রক্ষণশীল, ক্ষমতাবান সহযোগীদের কারণে বেশি দূর যেতে পারেননি। অর্থাৎ কাগজে-কলমে (সংবিধানে) বক্তৃতা-বিবৃতিতে তা জারি রাখলেও বহুত্ববাদী মানবিক সহিষ্ণুতা ও উদারতার শিকড়-বাকড়গুলো বেশি দূর ছড়িয়ে দিতে পারেননি, তাদের শক্তিমান করে তুলতে পারেননি। এর যা কিছু সত্য তা বহিরঙ্গে। ১৯৪৮ সালের জানুয়ারিতে হিন্দুত্ববাদী যুবকের গুলিতে গান্ধী হত্যা তার প্রমাণ। এমনকি প্রমাণ স্বাধীন ভারতে ১৯৪৭ সালের আগস্ট-পরবর্তী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাগুলো।

তাই বলে এ কথা বলছি না, এ বিষয়ে তৎকালীন পাকিস্তান ধোয়া তুলসীপাতা। তার দুই অঙ্গেই ওই অসহিষ্ণুতার ক্ষতচিহ্ন। সাম্প্রদায়িক সহাবস্থানের অভাব বড় প্রকট হয়ে উঠেছিল, প্রমাণ করেছিল যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার যুক্তিতে দেশ বিভাগ কতটা ভিত্তিহীন। উপমহাদেশের দ্বিতীয় বিভাজনের পরও পরিস্থিতির আদর্শনিষ্ঠ পরিবর্তন ঘটেনি। কারণ একটাই, বিভাগোত্তর কালপর্বে কী ১৯৪৭ সালের শেষে, কী ১৯৭১ সালের শেষে ভূ-রাজনৈতিক স্বাধীনতায়ই তুষ্ট থেকে তৎকালীন রাজনীতি, সমাজের চরিত্র বদলের ক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র নজর দেওয়া হয়নি। সম্প্রদায়বাদী চেতনার ভূত তার অবস্থান থেকে স্থায়ীভাবে বিতাড়িত হয়নি।

দুই.

এ রাজনৈতিক ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় কথিত গণতন্ত্রী ভারত (এ ক্ষেত্রে ভারতীয় রাজনীতি ও সমাজই আলোচ্য কিছু নয়) ১৯১৪ সালে এসে তার জন্মকালীন বা তার পূর্বে প্রচারিত বহুত্ববাদের মতাদর্শকে চিতায় তুলে দিয়েছে। তাই মোদি জাদু দর্শনের পরিণামে দেখা গেল পশু জবাই থেকে শুরু করে বিভিন্ন ইস্যুতে বিজেপি-শিবসেনাকুলের অমানবিক, অগণতন্ত্রী আচরণ, ভিন্ন সম্প্রদায়ের উদ্দেশে প্রচারিত হিন্দুত্ববাদী বাণী—এখানে থাকতে হলে হিন্দু সংস্কৃতির ধারক হয়েই বাঁচতে হবে। অনেক ঘটনা পর পর ঘটে গেল। তাতে সংবিধানের মর‌্যাদা রক্ষায় ভারতের বহু প্রশংসিত সর্বোচ্চ আদালত এগিয়ে আসেননি। আসেননি তাদের সাংবিধানিক সত্যকে রক্ষা করতে। পবিত্র সংবিধান ছেঁড়া কাগজের মতোই বাতাসে উড়তে থাকে।

মোদির বিজয়রথ সাম্প্রদায়িক জয়ধ্বনিতে আদভানির রক্তক্ষয়ী রথযাত্রার চরিত্রটিকে ক্ষমতার কারণে সর্বত্র ছড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিবাদ যা উঠেছে তা যুক্তিবাদী, শান্ত সংগত ভাষায়। কিন্তু প্রভুত্ববাদী শক্তি তো যুক্তি মানে না। সে মানে তার বিশ্বাসকে, তা যতই অমানবিক হোক, যতই সহাবস্থানবিরোধী অশান্তবাদী হোক। এ অবস্থায় চার বছর কেটে গেছে। মোদি শাসন অনেক কৌশলের মধ্যেই তার হিন্দুত্ববাদী শাসন কায়েম রেখেছে। ভারতীয় জনসমাজ তার এই চরিত্র বদলের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো দূরে থাক, তাকে সত্য বলে মনেপ্রাণে গ্রহণ করেছে।

রাজ্যে রাজ্যে বিজেপির ভোট বিজয় তা প্রমাণ করেছে গত চার বছরে। দুরন্ত আসামের সাত বোন তাদের বিদ্রোহের পতাকা নামিয়ে হিন্দুত্ববাদের আদর্শকে বরণ করে নিয়েছে। ভিন্ন পথযাত্রীরা জনবিচ্ছিন্ন। বামপন্থীরা তাদের ভুলে-ভ্রান্তিতে রাজ্যহারা। একমাত্র কেরলে কোনোমতে টলমল অবস্থায় অস্তিত্ব রক্ষা করে চলা। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ত্রিপুরাও তাদের হাতছাড়া। অথচ এখানে দীর্ঘ শাসনে তাদের উন্নয়নকাণ্ডেও সুকৃতির অভাব ছিল না।

কিন্তু ওই যে হিন্দুত্ববাদী জাদুবাঁশির ডাক, কথিত মোদি ম্যাজিক ত্রিপুরাবাসীকেও আদর্শচ্যুত করেছে। অবশ্য এখানে কংগ্রেসের চিরাচরিত বাম বিরোধিতার খেলা প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়। নিজ হাতে, সংকীর্ণ দুর্বুদ্ধির তাড়নায় তাদের কথিত সেক্যুলারিজমের আদর্শ গোমতীর জলে ভাসিয়ে দিয়েছে ত্রিপুরা কংগ্রেস হিন্দুত্ববাদী বিজেপির সঙ্গে গাঁটছাড়া বেঁধে।

প্রসংগত বলতে হয়, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে মোদির বিজয় সম্পন্ন হয় ৫৪৫টি আসনের মধ্যে ২৭১টি আসন পেয়ে। একদা ভারতের সর্ববৃহৎ দল কংগ্রেসের লজ্জাজনক হার সর্বভারতীয় নির্বাচনে মাত্র ৪৮টি আসন পেয়ে। তাতেও তাদের শিক্ষা হয়নি। ত্রিপুরায় পূর্ব হারের শোধ নিতে তারা পুরনো তাসই খেলেছে, তাতে মতাদর্শ চুলোয় যাক, নিজের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হোক ক্ষতি নেই। নিজের নাক কেটে প্রতিপক্ষের যাত্রা ভঙ্গের ঐতিহ্য কংগ্রেস যথারীতি রক্ষা করে চলেছে।

এরই মধ্যে গত চার বছরে গণতন্ত্রমনাদের অবাক করে দিয়ে মোদি রাজত্বের আরো বিস্তার ঘটেছে। তাঁর শাসনের নেতিবাচক দিকগুলো আদর্শভিত্তিক বলেই বোধ হয় জনগণ সেগুলো হিসাবে আনছে না। তারা মোদি শাসনেরই সমর্থক। সম্প্রতি একটি জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, ৭৩ শতাংশ মানুষ এখনো  মনে করে, আগামী নির্বাচনে মোদি আবারও জয়ী হবেন। এতটাই মোদির রাজনৈতিক কারিশমা, তাঁর গেরুয়া পতাকার প্রতি আকর্ষণ!

তিন.

এরই মধ্যে কর্ণাটকে বিধানসভার নির্বাচনে বিজেপি যথারীতি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েও সরকার গঠন করতে পারেনি। কংগ্রেসের বদান্যতায় জনতা পার্টি থেকে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছে কংগ্রেসসহ আঞ্চলিক ছোট দলগুলোর জোট গঠনের কারণে। কংগ্রেসের এই নীতি বদলকে কেউ কেউ ইতিবাচক বিবেচনা করছেন। অবশ্য এমন মনে করার কারণও আছে। এর আগে বিজেপির উত্থানকালে, কংগ্রেসের নীতিগত জরাজীর্ণ অবস্থায় পিছু হটার কারণে ভারতের সংসদীয় রাজনীতিতে একধরনের পরিবর্তন ঘটে গেছে।

আর তা হলো সর্বভারতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেসের একদলীয় আধিপত্যের অবসান এবং একাধিক আঞ্চলিক দলের শক্তিমান আবির্ভাব। সেই সঙ্গে আবির্ভাব শক্তিমান আঞ্চলিক নেতৃত্বেরও। যেমন—বিহারে নীতিশ কুমার ও লালু প্রসাদ যাদব, অন্ধ্রে চন্দ্রবাবু নাইডু, তামিলনাড়ুতে সুন্দরী অভিনেত্রী রাজনীতিক জয়ললিতা (কিছুদিন আগে প্রয়াত)। এর আগে কংগ্রেসের একদা শক্তিশালী ঘাঁটি উত্তর প্রদেশের দুই শক্তিমান বিরোধী নেতার আবির্ভাব। তাঁদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দলিত সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি অতীব উচ্চাভিলাষী মায়াবতী।

শেষোক্ত দুজনের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল উত্তর প্রদেশকে কংগ্রেসের হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়া। সে উদ্দেশ্য সাধনের পর তাঁদের নজর কেন্দ্রীয় শাসনের দিকে, বিশেষ করে মায়াবতীর। কিন্তু বিজেপির অভাবিত উত্থান তাঁদের সে আশার গুড়ে অনেকটা বালি ছিটিয়ে দিয়েছে। আর লালু প্রসাদ তো তাঁর অতি লোভের টানে দুর্নীতির জালে আটকা পড়ে তাঁর সেক্যুলার সম্ভাবনা সবটুকু নষ্ট করে ফেলেছেন। পূর্বাঞ্চল থেকে দুই সম্ভাব্য কেন্দ্রীয় নেতা নীতিশ কুমার ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে অন্ধ্রে ম্রিয়মাণ চন্দ্রবাবু নাইডু।

আরো একটি কথা। এর আগে জ্যোতিবসুর দীর্ঘ শাসনামলেও বিকল্প সেক্যুলার তৃতীয় রাজনৈতিক জোট গঠনের চেষ্টা চলেছিল। কিন্তু রাজনৈতিক নেতা কারো কারো সংকীর্ণ চিন্তা ও স্বার্থবুদ্ধির কারণে সে চেষ্টা ফলপ্রসূ হয়নি। এখন নব্য শক্তিমান রাজনৈতিক দল বিজেপির কিছুকাল মসনদে আসীন থেকে বিচ্যুত না হওয়া পর্যন্ত তাদের হটানো সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। তেমনি দুরাশা বিজেপিবিরোধী জোট গঠন, কর্ণাটকে কংগ্রেসের নতুন তাস খেলা সত্ত্বেও।

কারণ কংগ্রেসের রাজনৈতিক খেলায় বিশ্বাস রাখা কঠিন। কংগ্রেস কয়েক দশকে অনেক পাল্টি খেয়েছে রাজনীতিতে অনাস্থা ও হতাশা সৃষ্টি করে, মূলত সংকীর্ণ স্বার্থবুদ্ধির টানে। পরিণামে তাঁদের রাজনৈতিক হারই ভবিতব্য হয়ে উঠেছে। সর্বোপরি তাঁদের দলে সুদক্ষ, বিচক্ষণ নেতৃত্বের অভাব। সর্বোপরি কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে মোদি-চাতুর্যের পাল্টা শক্তিমান নেতৃত্ব দৃশ্যমান নয়। এই শূন্যতা ও সংকীর্ণ ভেদবুদ্ধি, সর্বোপরি প্রতিযোগী উচ্চাভিলাষের কারণে আগামী নির্বাচনে মোদিকে তথা বিজেপিকে হারানো সম্ভব হবে না। এদের বিজয় পতাকা আরো কিছুকাল বাতাসে উড়বে, হঠাৎ কোনো বিস্ফোরণ না ঘটা অবধি। বহুত্ববাদের এ পরিণতির দায় রাজনীতিকদের, বিশেষ করে কংগ্রেসের। বৃথাই আক্ষেপ করেছেন প্রবীণ সাংবাদিক কুলদীপ নায়ার বহুত্ববাদের বর্তমান দুর্দশায়। (কালের কণ্ঠ)

লেখক : কবি, গবেষক, ভাষাসংগ্রামী

এই বিভাগের আরো সংবাদ