স্মৃতির ক্যানভাসে শৈশবের বৈশাখ
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০১৯, ১৬:৩৮
সময়ের স্রোতে দিন চলে যায়, মাস চলে যায়, বছর চলে যায় কিন্তু মনের অগোচরে থেকে যায় কিছু সুখময় স্মৃতি। তাই সময় বা বয়স সামনের দিকে এগিয়ে চললেও আমরা পিছনে ফিরে যেতে চাই, সেই নির্লোভ, নির্ভেজাল নিষ্কলুষ, ছোটাছুটি আর দুরন্তময় শৈশবের দিনগুলোতে। আর শৈশবে বাঙালির প্রাণের উতসব পহেলা বৈশাখ ঘিরে রয়েছে কিছু আনন্দঘন মুহুর্ত। শৈশবের ফেলা আসা বৈশাখী দিনের স্মৃতি বিজড়িত গল্প লিখেছেন মো.উমর ফারুক, ছবি তুলেছেন ওবাইদুল্লাহ রকি।
বৈশাখ মেলা শুরু হওয়ার এক মাস আগে থেকেই মন আনন্দের জোয়ারে ভাসতো, কখন আসবে বৈশাখের সেই দিনটি। মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায় প্রতিটি দিন প্রতিটি মুহুর্ত ছটপট করতে শুরু হতো। বৈশাখের দিনটি অন্যান্য দিনের তুলনায় একটু আলাদাই মনে হতো। গ্রামে বৈশাখ বরণ করে নিতে বিভিন্ন জায়গায় মেলার আসর বসত। বাবা মার কাছ থেকে মেলায় যাওয়ার জন্য টিফিনের টাকা থেকে জমিয়ে আগেই প্রস্তুত হয়ে থাকতাম।
অবশেষে আসত সেই প্রহর গুনা দিনটি। মেলায় কি খাব, কোথায় ঘুরব সে ভাবনায় রাতে ঘুম হতো না। মন বার বার চলে যেত মেলায় আঙ্গিনায়। অবশেষে সকাল হলে দেখতাম, সবাই মেলায় যাচ্ছে। বাবাকে বলতাম, আমরা কখন যাব। বাবা বলত, সবাই ক্রয় করা শুরু করুক, আমরা তারপর যাব। মনে প্রচন্ড রাগ কাজ করত। অবুঝ মন ছটপট করত মেলায় যাওয়ার জন্য কিন্তু বয়সে ছোট হওয়ায় একা যেতে পারতাম না।
বন্ধুরা মেলা থেকে তাদের হাতে নানা রকম খেলনা দেখে বাবাকে বাইনা ধরে বলতাম, বাবা ও বাবা আমিও মেলায় যাব, ওদের মতো খেলনা নিব। বাবা প্রথমে রাজি না হলে আমি কেঁদে ফেলতাম। তখন মা আমার অঝোরে কান্না দেখে এসে আমাকে সান্তনার দিয়ে বলতো বাবার কাজ শেষ হলে মেলায় নিয়ে যাবে। তবুও আমার কান্না শেষ হতো না। বাবা কাজ করত মাঠে আর আমি বসে থাকতাম কখন আমায় নিয়ে মেলায় যাবে।
অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হয় না। অবশেষে বাবার কাজ শেষ হলে বলত: চলো এবার মেলায় যাই। তখন মন উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠত। সাইকেলে চড়ে মেলায় যাত্রা শুরু করতাম। রাস্তায় প্রচন্ড ভিড়, বাবার পুরাতন সাইকেলের টিং টিং শব্দ কানে বাজত আর আমি মেলায় যেতাম। সেই মুহুর্তটা চমৎকার ছিল। অবশেষে মেলার স্থানে পৌঁছলাম। গ্রামে সাধারণত খোলা স্থানে মেলার আয়োজন করা হতো।
চারদিকে নানা আয়োজন, দোকানে দোকানে উপচে পড়া ভিড়। সবার হাতে খেলনা সহ অনেক রকম জিনিসের সমাহার। সবাই কেনাকাটায় ব্যস্ত। চারদিকে বাঁশির আওয়াজ মন কে আরো উচ্ছ্বসিত করে দিত। কেউ বা খেলনা বিক্রি করছে, কেউ খাবার বিক্রি করছে। কি কিনব ভেবে পেতাম না।
মন অনেক কিছু আবদার করত কিন্তু ছিল না কেনার সামর্থ্য, শুধু দেখেই যেতাম। হয়ত ঘোড়া, বাঁশি, খেলনা বন্দুক, মোবাইল নেওয়ার প্রতি বেশি ঝোঁক ছিল। কিন্তু অল্প টাকার কিছু খেলনা নিয়ে আমাকে সন্তষ্ট থাকতে হতো। তবুও আমার ভাললাগা কাজ করত। মেলা কে ঘিরে প্রধান আকষর্ণ ছিলো নাগরদোলা, সাপের খেলা, ঘোড়া দৌঁড়। বাবার হাত ধরে চারদিকে ছুটতাম।
সূর্য যখন পশ্চিম আকাশে রক্তআভা ধারণ করত তখন আমাদের বাড়ি ফেরার সময়ও হয়ে আসত। বাবার সাইকেলে করে বাড়ি ফিরে আসতাম। বাড়ি ফিরেই চলে যেতাম বন্ধুদের কাছে কে কি কিনেছে তা দেখার প্রচন্ড আগ্রহ নিয়ে। কেউ কিনেছে মোবাইল, কেউ বা কিনেছে খেলনা পিস্তল, সেগুলো দিয়ে চোর পুলিশ খেলায় মেতে উঠতাম। সে কি আনন্দ!
সূর্য অস্তমিত হওযার সাথে সাথে আমাদের খেলা শেষ করে বাড়ি ফিরতাম। মনে দিনশেষে অন্যরকম ভাললাগা কাজ করতো। সেই ভালোলাগা ছিল সীমাহীন। এভাবেই কেটে যেত সেই আনন্দঘন দিনটি। সময় আর বাস্তবতার মিশ্রণে আজ অনেক বড় হয়েছি কিন্তু কেবল স্মৃতির ক্যানভাসে জমে আছে পুরনো শৈশবের বৈশাখ।
মো.উমর ফারক
শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]
শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]
এই বিভাগের আরো সংবাদ