আজকের শিরোনাম :

মুক্তিযুদ্ধকালে সংবাদপত্রের ভূমিকা

  গাজী আজিজুর রহমান

১৭ এপ্রিল ২০১৯, ১৩:৪৬ | অনলাইন সংস্করণ

তাবৎ গণমাধ্যমের মধ্যে সংবাদপত্র হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী ও কার্যকর গণমাধ্যম। যে কোনো দেশের জনগণের মতপ্রকাশের মৌলিক অধিকার, স্বাধিকার ও স্বাধীনতার সঙ্গে সংবাদপত্রের সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে সম্পর্কিত। সংবাদপত্র যে সত্য প্রকাশের বাহন, বাস্তবচিত্র তুলে ধরার গণমাধ্যম এবং প্রয়োজনের শিল্প সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে শিল্পটি তখনই সজীব ও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে যখন জনগণ তাদের অধিকার, স্বাধিকার সম্পর্কে সচেতন উদ্দীপনা প্রকাশ করে। জনচিত্তের সরব প্রতিফলন ঘটানোই সংবাদপত্র এবং সাংবাদিকের কাজ। আর এই দুরূহ ও সাহসী কাজটি সম্পন্ন করতে গিয়ে শাসককুলের ঝুলন্ত খড়গের তলায় সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের বলিদান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে একশ ভাগ। জেল-জুলুম, পীড়ন, নির্বাসন তো আছেই। দেশের মঙ্গলার্থে, জনকল্যাণে, সত্য উদঘাটনে, অধিকার আদায়ে সংবাদপত্র যে বলিষ্ঠ ভূমিকা যুগে যুগে পালন করে এসেছে সেই প্রেক্ষাপটে আমাদের মুক্তিযুদ্ধকালে আমাদের সাংবাদিকরা এবং সংবাদপত্রসমূহ স্বাধীনতা আনয়নে কি ভূমিকা পালন করেছিল তার একটি দালিলিক তথ্য তুলে ধরতেই এই নিবন্ধ।

বাঙালি জাতির সুদীর্ঘকালের স্বপ্ন, আশা-আকাক্সক্ষা ও আবেগের সূর্যোদয় ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতা। স্বাধীনতার অর্থ যদি হয় আত্মাহুতি, রক্তদান, ত্যাগ-তিতিক্ষা, মরণপণ সংগ্রাম, ভায়োলেন্স, সশস্ত্র যুদ্ধ বাঙালি তা যথেষ্ট করেছে এবং দিয়েছে। পাকিস্তানিদের তেইশ বছরের অত্যাচার, নির্যাতন, হত্যা সহ্য করে, তিরিশ লাখ মানুষ জীবন দিয়ে, দু’লাখ মা-বোন ইজ্জত হারিয়ে, লক্ষাধিক মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করে, এক কোটি মানুষের দীর্ঘশ্বাসের ফসল এই সোনার বাংলার স্বাধীনতা। চব্বিশ বছর এক অসম দীর্ঘ লড়াইয়ে কে বা কাদের ভূমিকা ছোট-বড় সেটা বিচার্য নয়। যে কোনো জাতির স্বাধীনতার ইতিহাসে আপামর জনসাধারণের ভূমিকাই থাকে মুখ্য। থাকে অসংখ্য উপাদান ও উপাত্ত উপকরণ। সব মিলে বিকশিত হয় একটি মৃণাল, যে মৃণালে ফোটে শেষাবধি স্বাধীনতা নামক পুষ্পটি।

এই নিবন্ধে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, সংগ্রাম ও স্বাধীনতা অর্জনের সপক্ষে কেবলমাত্র সংবাদপত্র যে ভূমিকাটুকু পালন করেছিল তার ওপরই আমি আলো প্রক্ষেপণ করব। দার্শনিক নিৎসে কথিত দু’এ মিলে সূচিত সত্যের মতো সংবাদপত্র ও জনমানসের সাযুজ্যে সংবাদপত্র শিল্প সার্থক ও সত্য হয়ে ওঠে। যতই প্রচার-প্রসার ঘটুক না কেন জনসম্পৃক্ততা ছাড়া সংবাদপত্রের ভূমিকা গৌণ হয়ে যায়। সংবাদপত্রকে তাই জনচিত্তের চাহিদা ও আকাক্সক্ষার কাছে আত্মসমর্পণ করতেই হয়। জনসাযুজ্যের সেতু গড়ে তুলতে হয়। দুটো বিশ্বযুদ্ধ অথবা ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনে সংবাদপত্র একটি ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছিল। অমৃতবাজার, আনন্দবাজার, যুগান্তর, বসুমতী, ধূমকেতু, লাঙ্গল, ইত্তেহাদ, স্বরাজ, স্টার অব ইন্ডিয়া ইত্যাদি সংবাদপত্র ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনে যে ভূমিকা পালন করেছিল ইতিহাস তা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে যুদ্ধপূর্ব পাকিস্তান আমলে দৈনিক ইত্তেফাক, সংবাদ, পূর্বদেশ, জনপদ, অবজারভার বাঙালির জনচৈতন্যকে যেভাবে স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা আন্দোলনকে উদ্বুদ্ধ ও ঐকমত্য তৈরিতে ভূমিকা পালন করেছিল তা কি বিস্মৃত হওয়ার? শ্রদ্ধেয় মানিক মিয়া, জহুর আহমেদ চৌধুরী, আহমেদুল কবির, আব্দুস সালাম, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, এম. আর আক্তার মুকুল, রণেশ দাশগুপ্ত, সন্তোষ গুপ্ত ইত্যাদি নির্ভীক সাংবাদিকদের ভূমিকা আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনে আজো মাইলফলক হিসেবে চিহ্নমান। জীবন দিতে হয়েছে সাংবাদিক চিশ্তি হেলালুর রহমান, খন্দকার আবু তালেব, শহীদুল্লাহ কায়সারসহ আরো অনেক সাংবাদিক বন্ধুকে। এসব শহিদের রক্ত শপথে ’৭১-এর মার্চ থেকেই একদল সাহসী সাংবাদিক ও সাহিত্যিক দেশের ভেতরে-বাইরে, অবরুদ্ধ রণাঙ্গনে বসে, পালিয়ে, গোপনে, প্রকাশ্যে বের করেন একাধিক সংবাদপত্র। সে ইতিহাস আমাদের আজ আবার নতুন করে স্মরণ করা প্রয়োজন। প্রয়োজন আলোকে উদ্ভাসিত করা।

বারবার ফিরে দেখা। ইতিহাসের মুখোমুখি হওয়া। কালের অন্ধকারে আলো জ্বেলে দেখা। ইতিহাসের অতল গর্ভ থেকে মুক্তো খুঁজে আনা। স্বাধীনতা নামক মহাকাব্যের কবিদের কাছে নতজানু হওয়া।

দেশ ও ইসলাম রক্ষার অজুহাতে বর্বর পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ও এদেশীয় কিছু দালালের সহযোগিতায় ২৫ মার্চ ১৯৭১-এর কালরাতে পৃথিবীর ইতিহাসে ঘটে যায় সবচেয়ে বড় এক গণহত্যা। যার শিকার হয় পূর্ববাংলার নিরস্ত্র, নিরপরাধ জনগণ। জঙ্গি পাকিস্তানিরা সে দিন সশস্ত্র হামলার মাধ্যমে বিভীষিকা সৃষ্টি করে, ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে বাঙালির জাতিসত্তাসহ তাদের স্বাধীনতার চেতনাকে চিরতরে বাংলার বুক থেকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। কিন্তু না, বাঙালি মার খেয়ে, মরে আরো দৃঢ় সংকল্প হয়। ২৬ মার্চ বাঙালি জাতির হৃদয়-রক্ত নেতা, সংগ্রামী সিংহ পুরুষ, বাঙালি জাতির আশা-আকাক্সক্ষার প্রতীক, কালের কিংবদন্তি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে শুরু হয়ে যায় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। বাংলার কৃষক-মজুর, ছাত্র-যুবক, শ্রমিক-শিল্পী, রাজনীতিক-বুদ্ধিজীবী, সাহিত্যিক-সাংবাদিক-নারী ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলসহ সীমান্ত পার হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে বীর বাঙালি। ১৭ এপ্রিল কুষ্টিয়ার মেহেরপুরের আম্রকাননে গঠিত হয় স্বাধীন মুজিবনগর সরকার। এই সরকারের অধীনে দীর্ঘ নয় মাস এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।

সেই অগ্নিঝরা, রক্তঝরা দিনগুলোতে অস্ত্র, কণ্ঠ ও কলম যুদ্ধে কলম সৈনিকরা সংবাদপত্রের মাধ্যমে যে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করে সেই অবদানের স্বীকৃতি পুনর্ব্যক্ত করতেই এ লেখা। চবহ রং সরমযঃবৎ ঃযধহ ংড়িৎফ এই প্রত্যয়ে বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত তথা বাংলার বাইরে থেকে মুক্তিযুদ্ধের গতি-প্রকৃতি, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, আশু বিজয়ের সম্ভাব্যতাকে সাংবাদিকরা যে ভাষার পিন পয়েন্টেড করে প্রচার করেছিল তাতে যুদ্ধের মোশনটা বিন্দুমাত্র টলে পড়েনি। অখণ্ড পাকিস্তানের অযৌক্তিকতা এবং বাংলার স্বাধীনতার যৌক্তিকতাকে জনমনে বদ্ধমূল করে তোলাই ছিল সংবাদপত্রগুলোর মুখ্য উদ্দেশ্য। সেই লক্ষ্য যে সার্থকভাবে সফল হয়েছিল ইতিহাস তার সাক্ষী।

বহ্নিমান শব্দমালার সংশ্লেষে যে পত্রিকাটির নাম সর্বাগ্রে উল্লেখ করতে হয় সেটি হলো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মুখপত্র ‘জয়বাংলা’। এই প্রধান সাপ্তাহিকটি ৩১ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর ’৭১ পর্যন্ত মোট ২২টি সংখ্যা বের হয়। সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি ও প্রকাশক : আহমদ রফিক। ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মতিন আহমদ চৌধুরী। প্রকাশ হতো মুজিবনগর, জয়বাংলা প্রেস থেকে। স্বাধীন বাংলার আদি পর্বে নওগাঁ থেকে এই নামে একটি ক্ষুদ্র দৈনিক প্রকাশ হতো। সম্পাদক : রহমতউল্লাহ এম, এ। তিনি দাবি করেন জয় বাংলা-ই সে সময়ে স্বাধীন বাংলার একমাত্র দৈনিক পত্রিকা এবং স্বাধীন বাংলার সাড়ে সাত কোটি জনগণের একমাত্র মুখপত্র। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে ‘জয়বাংলা’-র একশ পৃষ্ঠার অধিক কলেবরে একটি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয়। সমৃদ্ধ এই সংখ্যাটি স্বাধীনতার একটি মূল্যবান দলিল হিসেবে বিবেচনার দাবি রাখে। দুর্লভ কিছু আলোকচিত্রসহ দুই বাংলার কবি-সাহিত্যিক-সাংবাদিক-রাজনৈতিক নেতাদের লেখা নিয়ে প্রকাশিত সংখ্যাটির আলাদা আলোচনা একান্ত বাঞ্ছনীয়।

সাপ্তাহিক ‘বঙ্গবাণী’। সম্পাদক : কে. এম. হোসেন। প্রকাশ স্থান : ফিরোজ প্রেস, নওগাঁ। ১৩ জুন ’৭১ পর্যন্ত ৪টি সংখ্যার নজির পাওয়া গেছে।

সাপ্তাহিক ‘স্বদেশ’। জাতীয়তাবাদী বাংলার মুখপত্র। সম্পাদক ও প্রকাশক : গোলাম সাবদার সিদ্দিকী। সম্পাদক কর্তৃক বর্ণালী প্রেস, বাংলাদেশ থেকে মুদ্রিত। ১৬ জুন থেকে ১৪ ডিসেম্বর ’৭১ পর্যন্ত মোট ৫টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়।

সাপ্তাহিক ‘বাংলাদেশ’। বাংলাদেশ সম্পাদনা পরিষদের পক্ষে, সম্পাদক : আবুল হাসান চৌধুরী। আব্দুল মমিন কর্তৃক বাংলাদেশ প্রেস, রমনা, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। ২২ জুন থেকে ২২ নভেম্বর ’৭১ পর্যন্ত মোট ২২টি সংখ্যা বের হয়।

‘রণাঙ্গন’ : মুক্তিফৌজের সাপ্তাহিক মুখপত্র। সম্পাদক : রণদূত (ছদ্মনাম)। টাঙ্গাইল জেলা শত্রুসেনা পরিবেষ্টিত বাংলাদেশ হতে সাইক্লোস্টাইলে প্রকাশিত। ১১ জুলাই থেকে ২৪ অক্টোবর ’৭১ মোট ৬টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়। প্রতিষ্ঠাত্রী সম্পাদিকা : মিসেস জাহানারা কামারুজ্জামান। সম্পাদক : এস. এম. এ আলমাহমুদ চৌধুরী কর্তৃক প্রকাশিত। এবং বলাকা প্রেস, জামানগঞ্জ, রাজশাহী বাংলাদেশ হতে এম. এ মজিদ কর্তৃক মুদ্রিত। ১২ জুলাই ’৭১ পর্যন্ত ৭টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়।

সাপ্তাহিক ‘মুক্তিযুদ্ধ’। পূর্ব পাকিস্তানের (বাংলাদেশের) কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র। প্রকাশনা ও মুদ্রণ : মুক্তিযুদ্ধ প্রেস, বাংলাদেশ। ১৮ জুলাই থেকে ১৯ ডিসেম্বর ’৭১ পর্যন্ত মোট ২৪টি সংখ্যা বের হয়।

সোনার বাংলা : সাপ্তাহিক। মুক্তিবাহিনীর মুখপত্র। সম্পাদক : সরকার কবীর খান। কে, জি মোস্তফা কর্তৃক সোনার বাংলা প্রেস থেকে মুদ্রিত ও প্রচারিত। জুলাই ’৭১ থেকে ৩১ অক্টোবর ’৭১ অবধি মোট ৯টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়।

একটি সংবাদ নিবন্ধ সাপ্তাহিক ‘বাংলার মুখ’। সম্পাদক : সিদ্দিকুর রহমান আশরাফী। রঞ্জিনা প্রকাশনীর পক্ষে সম্পাদক কর্তৃক পলাশ আর্ট প্রেস, মুজিবনগর, বাংলাদেশ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। ২৭ আগস্ট থেকে ১০ ডিসেম্বর ’৭১ পর্যন্ত ১২টি সংখ্যা বের হয়।

বরিশাল থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ‘বিপ্লবী বাংলাদেশ’। সম্পাদক ও প্রকাশক : নুরুল আলম। রফিক হায়দার কর্তৃক চাঁপা প্রেস থেকে মুদ্রিত। ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ২৮ নভেম্বর ’৭১ পর্যন্ত ১৫টি সংখ্যা প্রকাশ পায়।

সাপ্তাহিক ‘জন্মভূমি’। বাংলাদেশের সংগ্রামী জনগণের বিপ্লবী মুখপত্র। সম্পাদক : মোস্তফা আল্লামা।

জন্মভূমি প্রেস এন্ড পাবলিকেশনের পক্ষে সম্পাদক কর্তৃক রবীন্দ্র এভিনিউ, মুজিবনগর, বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত। বিদেশ অফিস : ৩৩/২ শশীভূষণ দে স্ট্রিট, কলিকাতা-১২। ৬ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ ডিসেম্বর ’৭১ মোট ১৬টি সংখ্যা বের হয়।

‘বাংলার বাণী’ এই সাপ্তাহিকটির সম্পাদক ছিলেন : আমির হোসেন। মুজিবনগর থেকে আমির হোসেন কর্তৃক বাংলার বাণী প্রেস থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে ৭ ডিসেম্বর ’৭১ পর্যন্ত ১৫টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়।

‘নতুন বাংলা’। ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি বাংলাদেশের সাপ্তাহিক মুখপত্র। পত্রিকাটি পার্টির সভাপতি : অধ্যাপক মোজাফ্্ফর আহমদ কর্তৃক বাংলাদেশ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর ’৭১ অবধি ১৮টি সংখ্যা বের হয়।

সাপ্তাহিক ‘মুক্তবাংলা’। বাংলাদেশ মুক্তিসংগ্রাম সিলেট জেলার নির্ভীক স্বাধীন মুখপত্র। সম্পাদক পরিষদের সভাপতি : আবুল হাসনাত সাআদত খান। ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আকাদ্দাস সিরাজুল ইসলাম। আবুল হাসানাত কর্তৃক মুক্তবাংলা প্রেস থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। ভারতীয় ঠিকানা : প্রযতেœ এ. এম. চৌধুরী, করিমগঞ্জ, আসাম। ২০ সেপ্টেম্বর থেকে ১ নভেম্বর ’৭১ পর্যন্ত মোট ৭টি সংখ্যা প্রকাশ করে।

‘সাপ্তাহিক বাংলা’ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের কণ্ঠস্বর। সম্পাদক : মাইকেল দত্ত। ‘রূপসী বাংলা প্রেস এন্ড পাবলিকেশন’-এর পক্ষে বিজয় কুমার দত্ত কর্তৃক মুদ্রিত এবং মুজিবনগর ও সিলেট থেকে একযোগে প্রকাশিত। ২৬ সেপ্টেম্বর ’৭১ পর্যন্ত সাপ্তাহিক বাংলার মাত্র ২টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়।

সাপ্তাহিক ‘দাবানল’। মুক্তিযোদ্ধা ও সংগ্রামী জনতার মুখপত্র। সম্পাদক : মো. জিনাত আলী। মুজিবনগর থেকে বিবর্ণ প্রকাশনীর পক্ষে মো. সেলিম কর্তৃক মুদ্রিত ও প্রকাশিত। ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে ২৮ নভেম্বর ’৭১ পর্যন্ত ৬টি সংখ্যা বের হয়।

‘প্রতিনিধি’ সাপ্তাহিক স্বাধীনতাকামী বাংলার মুক্তিযুদ্ধের মুখপত্র। শত্রুসেনা পরিবেষ্টিত বাংলাদেশের কোনো স্থান থেকে আহমেদ ফরিদউদ্দীনের সম্পাদনায় রক্তলেখা ছাপাখানা থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। ১৫ অক্টোবর ’৭১ অবধি ৩টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়।

‘মুক্তি’ : মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক মাসিক সাহিত্যপত্র। সম্পাদক : শারফউদ্দীন আহমেদ। প্রদীপ্ত সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী কর্তৃক প্রকাশিত ও প্রচারিত। পত্রিকাটি শত্রুসেনা পরিবেষ্টিত বাংলাদেশ থেকে সাইক্লোস্টাইলে প্রকাশিত। ১ কার্তিক ১৩৭৮ মুক্তির একটি সংখ্যা বের হয়।

সংগ্রামী বাংলা : বাংলাদেশের মুখপত্র। প্রধান পৃষ্ঠপোষক : মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। প্রধান সম্পাদক : আবদুর রহমান সিদ্দীক। সংগ্রামী বাংলা প্রেস, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। ১৮ অক্টোবর থেকে ২৭ নভেম্বর ’৭১ পর্যন্ত সংগ্রামী বাংলার মোট ২টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়।

‘অগ্রদূত’ : স্বাধীন বাংলার মুক্ত অঞ্চলের সাপ্তাহিক মুখপত্র। সম্পাদক : আজিজুল হক। ব্যবস্থাপক : সাদাকাত হোসেন এম. এন. এ ও নুরুল ইসলাম এম, পি, এ। প্রধান পৃষ্ঠপোষক : জে. রহমান, মুক্তিফৌজ অধিনায়ক। প্রকাশক : মোহাম্মদ আলী। রওমারী, রংপুর থেকে সাইক্লোস্টাইলে প্রকাশিত। ২০ অক্টোবর থেকে ১ ডিসেম্বর ’৭১ অবধি ১৪টি সংখ্যা বের হয়।

‘মুক্তবাংলা’ নামে আর একটি এক পাতার ক্ষুদে পত্রিকা শত্রুসেনা পরিবেষ্টিত বাংলাদেশের কোনো স্থান থেকে সাইক্লোস্টাইলে প্রকাশিত হয়। সম্পাদনায় সাংকেতিক নাম ‘দ-জ’ ব্যবহৃত। প্রকাশকের ঠিকানা গোপন রাখা হয়। ২৩ অক্টোবর থেকে ২ ডিসেম্বর ’৭১ পর্যন্ত মোট ৪টি সংখ্যার খোঁজ পাওয়া যায়।

‘জাগ্রত বাংলা’ : মুক্তিফৌজের সাপ্তাহিক মুখপত্র। ময়মনসিংহ জেলা ও উত্তর ঢাকার বেসামরিক দপ্তর আসাদনগর (ডাকাতিয়া) থেকে প্রকাশিত ও প্রচারিত। পত্রিকাটি শত্রুসেনা পরিবেষ্টিত বাংলাদেশ থেকে সাইক্লোস্টাইলে প্রকাশিত। সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : হাফিজ উদ্দীন আহমেদ। ৩০ অক্টোবর থেকে ১৬ ডিসেম্বর ’৭১ অবধি ৯টি সংখ্যা বেরিয়েছিল।

‘রণাঙ্গন’ নামে অপর একটি সাপ্তাহিক বাংলাদেশের মুক্তাঞ্চল থেকে বাংলাদেশের মুক্তিকামী জনতার মুখপত্র হিসেবে মুস্তফা করিমের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়। প্রধান উপদেষ্টা : মতিয়ার রহমান এম. এন. এ। প্রধান পৃষ্ঠপোষক : করিমউদ্দিন আহমেদ এমপিএ। ৩০ অক্টোবর ’৭১-এ ১টি মাত্র সংখ্যা বের হয়।

‘বাংলাদেশ’ নামে আর একটি সাপ্তাহিক শত্রুসেনা পরিবেষ্টিত বাংলাদেশের অন্তর্গত স্থান থেকে সাইক্লোস্টাইলে প্রকাশিত হয়। সম্পাদক : কীর্তি (ছদ্মনাম)। মুদ্রণে : তড়িৎ। সংগ্রাম পরিষদ কর্তৃক প্রকাশিত ও প্রচারিত পত্রিকাটি ৩১ অক্টোবর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭টি সংখ্যা প্রকাশ পায়।

‘স্বাধীন বাংলা’ : কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের পূর্ববাংলা সমন্বয় কমিটির চট্টগ্রাম বিভাগের পাক্ষিক মুখপত্র। প্রকাশ ও প্রচার একটি বিভাগ। ১ নভেম্বর ’৭১ পর্যন্ত স্বাধীন বাংলার সর্বমোট ৩টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়।

‘দেশ বাংলা’ : এই সাপ্তাহিকটি বাংলাদেশের জনযুদ্ধের মুখপত্র হিসেবে দীপক সেন কর্তৃক বাংলাদেশের মুক্তাঞ্চল থেকে মুদ্রিত ও ‘অগ্নিশিখা’ প্রকাশনীর পক্ষে বিজয়নগর, ঢাকা থেকে প্রকাশিত। সম্পাদক : ফেরদৌস আহমদ কোরেশী। ৪ নভেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ‘দেশ বাংলার’ ৮টি সংখ্যা বের হয়।

‘দুর্জয় বাংলা’ : সম্পাদক : তুষার কান্তি কর। সংগ্রামী বাংলার কণ্ঠস্বর হিসেবে সিলেট সুরমা প্রকাশনীর পক্ষে তুষার কান্তি কর কর্তৃক মুদ্রিত ও প্রকাশিত। বিদেশের ঠিকানা : রফিকুর রহমান, পুরাতন স্টেশন রোড, করিমগঞ্জ, আসাম। ৪ নভেম্বর ’৭১-এ দুর্জয় বাংলা’র মাত্র ১টি সংখ্যা বের হয়।

‘স্বাধীন বাংলা’ নামে অপর একটি সাপ্তাহিক বাংলাদেশের সংগ্রামী জনগণের মুখপত্র হিসেবে সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি, খোন্দকার সামসুল আলম দুদু কর্তৃক মুজিবনগর থেকে স্বাধীন বাংলা প্রেস থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। ২৭ নভেম্বর ’৭১ পর্যন্ত স্বাধীন বাংলা’র মোট ১১টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়।

সাপ্তাহিক ‘আমার দেশ’। সম্পাদক : খাজা আহমদ। মুক্তবাংলার কোনো অঞ্চল থেকে খাজা আহ্্ছান কর্তৃক প্রকাশিত। ২৫ নভেম্বর ’৭১ পর্যন্ত ১৩টি সংখ্যার সন্ধান পাওয়া যায়।

‘সংগ্রামী বাংলা’ নামে আরো একটি সাপ্তাহিকী সংগ্রামী বাংলা প্রেস, তেঁতুলিয়া থেকে মো. এমদাদুল হক কর্তৃক প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়। সম্পাদক : মো. এমদাদুল হক। প্রধান উপদেষ্টা ও পৃষ্ঠপোষক সিরাজুল ইসলাম এমপিএ। নভেম্বরে বিশেষ ঈদ সংখ্যাসহ ৮ ডিসেম্বর ’৭১ পর্যন্ত এই পত্রিকার ৮টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়।

‘অভিযান’। সম্পাদক : সিকান্দার আবু জাফর। বাংলাদেশ সাপ্তাহিক সংবাদপত্র, ঢাকা। ঢাকা নিউজপেপার প্রাইভেট লি. থেকে মুদ্রিত। কলকাতার অস্থায়ী ঠিকানা : ৮৪/৯ রিপন স্ট্রিট, কলিকাতা-১৬। ১৮ নভেম্বর থেকে ১৭ ডিসেম্বর ’৭১ পর্যন্ত অভিযানের মোট ৪টি সংখ্যা বের হয়।

এছাড়া যারা অ-বাংলাভাষীদের মধ্যে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের ন্যায্যতা ও নৈতিক সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে বেশকিছু ইংরেজি পত্রিকা প্রকাশ করা হয় এর মধ্যে অন্যতম ছিল Bangladesh News Letter সাপ্তাহিকটি। এটি প্রকাশ হতো গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বাংলাদেশ মিশন, বহির্বিশ্ব প্রচার দপ্তর কর্তৃক মুজিবনগর বাংলাদেশ থেকে। ঠিকানা : ৯, সার্কাস এভিনিউ, কলিকাতা-১৭। জুলাই থেকে ২২ ডিসেম্বর ’৭১ পর্যন্ত এর মোট ২৬টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়।

পাক্ষিক ঞযব ঘধঃরড়হ। সম্পাদক : আব্দুস সোবহান। বাংলাদেশের সংগ্রামী জনগণের মুখপত্র হিসেবে দ্য ন্যাশান পাবলিকেশন্স, মুজিবনগর, বাংলাদেশের পক্ষে আব্দুস সোবহান কর্তৃক মুদ্রিত ও প্রকাশিত। ঠিকানা : ৯, ক্রক্্ড লেন, কলিকাতা-১। ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে ২২ অক্টোবর অবধি ঞযব ঘধঃরড়হ এর ৩টি সংখ্যা বের হয়।

বিশ্ব বিবেককে জাগ্রত করার জন্য ব্রিটেন থেকে বের হয় ইধহমষধফবংয ঘবংি খবঃঃবৎ। সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : ফরিদ এস, জাফরি। পাক্ষিকটি পূর্ববাংলার স্বাধীনতা আন্দোলনের মুখপত্র হিসেবে ৩৯১, কিংস্্টন রোড, লন্ডন থেকে প্রকাশিত। নভেম্বর ’৭১ পর্যন্ত পাক্ষিকটির মোট ১২টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়।

Bangladesh Today’ এটিও একটি পাক্ষিক। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ, মুজিবনগর সরকারের লন্ডনস্থ বাংলাদেশ মিশনের প্রচার বিভাগ কর্তৃক প্রকাশিত হতো। ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ১ নভেম্বর ’৭১ পর্যন্ত এর ৫টি সংখ্যা বের হয়।

‘বাংলাদেশ সংবাদ পরিক্রমা’। একটি অর্ধ সাপ্তাহিক। এই বাংলা পত্রটি বাংলাদেশ স্টিয়ারিং কমিটির জনসংযোগ বিভাগ কর্তৃক ১১নং গোরিং স্ট্রিট, লন্ডন থেকে প্রকাশ হতো। ১৪ ডিসেম্বর ’৭১ অবধি পত্রিকাটির ৫০তম সংখ্যা প্রকাশিত হয়।

লন্ডনের অপর সাপ্তাহিক ‘জনমত’। প্রধান সম্পাদক : এ. টি. এম ওয়ালী আশরাফ। ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আনিস আহমদ। জনমত পাবলিশার্স লি., ২ টেম্পারলে রোড, লন্ডন থেকে প্রকাশিত। ২১ নভেম্বর ’ ৭১ এর ১টি সংখ্যা বের হয়।

বাংলাদেশ লীগ অফ আমেরিকা বের করে ‘বাংলাদেশ পত্র’। কলেজ স্টেশন শাখা কর্তৃক এটি মুদ্রিত, প্রকাশিত ও প্রচারিত। ১৪ মে ’৭১ টেক্সাস : সংখ্যা-১ প্রকাশিত হয়।

ÔBangladesh News Letter’ এই উল্লেখযোগ্য পত্রিকাটি বাংলাদেশ লীগ অফ আমেরিকা শিকাগো শাখা থেকে মুদ্রিত ও প্রচারিত হতো। ১৭ মে থেকে ১০ ডিসেম্বর ’৭১ অবধি পত্রিকাটির মোট ১৪টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়।

এবার কানাডা ও কুবেক। ‘Bangladesh’ নামক এই পত্রিকাটি বাংলাদেশ সমিতি কানাডা টরেন্টো শাখা কর্তৃক প্রকাশিত। ৩১ অক্টোবর ’৭১ পর্যন্ত ‘Bangladesh’-এর মোট ৭টি সংখ্যা বের করা হয়েছিল।

Sphulinga : বাংলাদেশ সমিতি কুবেক শাখা কর্তৃক প্রকাশিত। ১ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর ’৭১ পর্যন্ত স্ফুলিঙ্গের মোট ৩টি সংখ্যা বের হয়।

Bangladesh’- এই সাপ্তাহিক সংবাদ বুলেটিনটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ, মুজিবনগর সরকারের পক্ষে বাংলাদেশ মিশন, ওয়াশিংটন থেকে এম, আর, সিদ্দিকী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত। ৩ সেপ্টেম্বর ’৭১ থেকে ১৭ ডিসেম্বর ’৭১ পর্যন্ত-এর ১৬টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়।

‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র ৬ষ্ঠ খণ্ড’ এর এই পরিসংখ্যানের বাইরে যে আরো পত্রিকা প্রকাশ পেত তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যেমন : ইংরেজি পত্রিকা ঞযব ঢ়বড়ঢ়ষব; মহিলাদের কাগজ মায়ের ডাক; বা মুক্তি যেটি সম্পাদনা করতেন রণজিৎ কুমার দাস। এ টি এম, এ গফুর এম এন, এর উদ্যোগে ও পৃষ্টপোষকতায় পশ্চিমবঙ্গের বসিরহাট থেকে প্রকাশিত হতো। এরপর যে আর কোনো পত্রিকা নেই তা নয়। আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিল হিসেবে সেগুলোর উদ্ধার করা একান্ত প্রয়োজন। ’৭১-এর সেই উত্তাল দিনগুলোতে অবরুদ্ধ অথবা অবমুক্ত বাংলাদেশে কিংবা প্রবাসে এসব সংবাদপত্রের মাধ্যমে সাংবাদিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রক্ত-ঘাম ঝরিয়ে যে প্রচার যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধে তার ব্যাপক প্রভাব পড়েছিল। সে দিনের সংবাদপত্রের সৈনিকরা শত সংকটের মাঝে যে স্বদেশ প্রেমের পরিচয় দিয়েছিলেন, ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন যুদ্ধ শেষে তার প্রাপ্য কি তারা পেয়েছেন? শ্রদ্ধেয় গাজীউল হককে দেখেছি রৌদ্রতপ্ত কলকাতার রাস্তায় ‘জয়বাংলা’ ফেরি করে বিক্রি করছেন। ‘মুক্তি’ সম্পাদক রণজিৎ কুমার দাসকে দেখেছি নিজ হাতে মেশিন চালিয়ে, নিজ হাতে পত্রিকা বিক্রি করছেন। এরকম কত পরিশ্রম, ত্যাগ-তিতিক্ষা স্বীকার করে সাংবাদিকরা যুদ্ধকে বাঙালি ও বিশ্ববাসীর কাছে অনিবার্য করে তুলেছিলেন। সান্ত্বনা হয়তো এখানেই যে তাদের উদ্দেশ্য সফল হয়েছিল। প্রিয় বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল।

সংবাদপত্র যে সত্য ও বিবেকের দর্পণ, বিদেশের বহু সংবাদপত্র আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষে ভূমিকা রেখে তা প্রমাণ করেছিল। এর মধ্যে ভারতের প্রায় সব সংবাদপত্রসহ লন্ডনের দ্য গার্ডিয়ান; ‘সানডে টেলিগ্রাম’ ‘সানডে টাইমস্’ ‘পিস নিউজ’ ‘নিউইয়র্ক টাইমস’ ‘ইভনিংস্টার’ যুগোসøাভিয়ার ‘দ্য কমিউনিস্ট’ টোকিওর ‘মইনিচি শিমবুন’ সিঙ্গাপুরের ‘নিউনেশন’ নেপালের ‘রাইজিং নেপাল’ রাশিয়ার ‘প্রাভদা’ বিশেষভাবে উল্লেখ্য। এই সুযোগে আর একবার তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

স্বাধীন বাংলাদেশ আজ আমাদের রক্তের মতো একটি বাস্তবতা। হাজার বছরের বাংলায় ১৯৭১ পূর্ব তা ছিল অবাস্তব। অথচ আজ থেকে এক শত ছয় বছর আগে ফরিদপুরের মহামুনি প্রভু জগদ্বন্ধু একটি স্বাধীন বাংলাদেশের ভবিষ্যদ্বাণী লিপিবদ্ধ করে দিয়েছিলেন “Dacca will be the red city’ একাত্তরের ঢাকা কী তা হয়নি? এ যেন অনেকটা রাম জন্মানোর আগে রামায়ণ লেখার মতো এক অবিশ্বাস্য ঘটনা। তার ভবিষ্যদ্বাণীর ৭৭ বছর পর সেই ফরিদপুরের আর এক অগ্নিঋষি শেখ মুজিবুর রহমান ৫ ডিসেম্বর ১৯৬৯ সালে ঢাকা হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে সোহরাওয়ার্দীর স্মরণ সভায় বক্তৃতাকালে ঘোষণা করেছিলেন, “আজ হইতে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশটির নাম হইবে পূর্ব পাকিস্তানের পরিবর্তে শুধুমাত্র ‘বাংলাদেশ’।” (দৈনিক ইত্তেফাক : ৬-১২-৬৯)। এভাবে সংবাদপত্রই যেন কালের সাক্ষী হয়ে জন্ম দিল একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। (দৈনিক ভোরের কাগজ থেকে সংগৃহীত)

এই বিভাগের আরো সংবাদ