আজকের শিরোনাম :

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি নির্বাচিত হওয়ার সেই দিনটি

  মোহাম্মদ শাহজাহান

১৪ এপ্রিল ২০১৯, ২৩:৩১ | অনলাইন সংস্করণ

বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনটি বাঙালি জাতির জন্য বরাবরই আনন্দের দিন। ১৫ বছর আগের এ দিনটি সমগ্র বিশ্বের সব বাঙালির জন্য ছিল একটি গৌরবের দিন, আনন্দের দিন, স্মরণীয় দিন। ওই দিন বাঙালি জাতির মহান নেতা, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিবিসি’র বাংলা ভাষাভাষি শ্রোতাদের ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি’ নির্বাচিত হন। আর এমন এক সময়ে শেখ মুজিব সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি নির্বাচিত হন, যখন স্বাধীনতাবিরোধী চক্র মুজিবের নাম এ বাংলায় প্রায় মুছে ফেলে দিয়েছিল। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট পরিবারের সদস্যসহ বঙ্গবন্ধু মুজিবকে হত্যার পর মূলত স্বাধীন বাংলাদেশকেই হত্যা করা হয়। স্বাধীনতাবিরোধী কিসিঞ্জার-ভুট্টো চক্রের এদেশীয় দালাল খুনি মোশতাক ও খুনি জিয়া এবং স্বৈরাচার এরশাদ বঙ্গবন্ধু মুজিবের নাম মুছে ফেলার জন্য সব আয়োজন সম্পন্ন করে। এমনকি স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসেও স্বাধীনতার জনক ও বিজয়ের মহানায়ক মুজিবের নাম স্মরণ করা হতো না। জিয়া, এরশাদ ও খালেদাÑ এ তিন কুচক্রী তাদের আড়াই দশকের ক্ষমতা দখলকালে স্বাধীন বাংলাদেশকে ‘মিনি পাকিস্তানে’ পরিণত করে। ষড়যন্ত্রের শিরোমণি ঘাতক মোশতাক ক্ষমতায় ছিল মাত্র ৮৩ দিন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সংগ্রামী জীবনের গৌরবগাথা এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলেই ঘাতকচক্র ক্ষান্ত হয়নি, ওরা গণতন্ত্রকে হত্যা করে এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে পরিণত করে। জিয়া, এরশাদ, খালেদার স্বাধীনতাবিরোধী সরকার ৩০ লাখ শহীদ এবং ৪ লক্ষাধিক মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশকে মানবাধিকারবিহীন এক বন্দী শিবিরে পরিণত করে।

বাংলা ও বাঙালি জাতির এমন কঠিন ও দুঃসহ পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি নির্বাচিত হন। এটা ছিল সমগ্র বাঙালি জাতির জন্য এক বিশাল আনন্দঘন পুরস্কার। ১৬ ডিসেম্বর যেমন বাঙালির জন্য বিজয়ের দিন, তেমনি ২০০৪ সালের পহেলা বৈশাখ (১৪ এপ্রিল) দিনটি বিশ্বের সব বাঙালির জন্য এক আনন্দঘন দিন। দিনটি ছিল শুক্রবার। বিবিসি বাংলা বিভাগের বিশ্বব্যাপী শ্রোতাদের ভোটে বঙ্গবন্ধু ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি’ নির্বাচিত হন। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ২০ জন বাঙালির তালিকায় প্রথম নামটি ছিল শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনটিতে ২০ জন বাঙালির মধ্যে এক নম্বর ব্যক্তি হিসেবে বঙ্গবন্ধুর নাম প্রচারিত হয়। ২০০৪ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত শীর্ষ ২০ বাঙালির ওপর বিবিসি অনুষ্ঠান প্রচার করে। ফেব্রুয়ারি মাসের ১১ তারিখ থেকে ২২ মার্চ পর্যন্ত বিশ্বের হাজার হাজার শ্রোতা চিঠি, ই-মেইল এবং ফ্যাক্সের মাধ্যমে তাদের মনোনয়ন পাঠায়। শ্রোতাদের মতামতের ভিত্তিতে বিবিসি তৈরি করে শীর্ষ ২০ জন বাঙালির তালিকা।

২৬ মার্চ ২০তম স্থান লাভকারী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নাম প্রথম প্রচারিত হয়। এরপর ১৯ নম্বরে জিয়াউর রহমান, ১৮। অতীশ দীপঙ্কর, ১৭। স্বামী বিবেকানন্দ, ১৬। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, ১৫। বায়ান্নর ভাষা শহীদগণ, ১৪। ড. অমর্ত্য সেন, ১৩। সত্যজিৎ রায়, ১২। লালন শাহ, ১১। মীর নিসার আলী তীতুমীর, ১০। রাজা রামমোহন রায়, ৯। মওলানা ভাসানী, ৮। ঈশ্বরচন্দ্র বন্দোপাধ্যায় বিদ্যাসাগর, ৭। জগদীশ চন্দ্র বসু, ৬। বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত, ৫। সুভাষ চন্দ্র বোস, ৪। আবুল কাশেম ফজলুল হক, ৩। কাজী নজরুল ইসলাম এবং ২ নম্বরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম পর্যায়ক্রমে ঘোষণা করা হয়।

আগেই বলা হয়, ১ বৈশাখ (১৪ এপ্রিল) বিবিসি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির নাম ঘোষণা করবে। ১৩ এপ্রিল সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির শীর্ষ ২০ জনের মধ্যে দুই নম্বরে কবিগুরুর নাম প্রচারিত হওয়ার পর সবাই বুঝে যায়, এক নম্বরে রয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

১৪ এপ্রিল (১ বৈশাখ ১৪১১) শুক্রবার প্রভাতী অনুষ্ঠানে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির নাম প্রচারের সময় বিবিসি মুন্সিয়ানার পরিচয় দেয়। ভাষ্যকার বলেন, এবার শ্রোতাদের মনোনীত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির নাম। রেকর্ডে ধারণকৃত বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠস্বর বাজানো হয়Ñ ‘এর পরে যদি বেতন দেয়া না হয়, আর যদি একটা গুলি চলে, আর যদি আমার লোককে হত্যা করা হয়, তোমাদের ওপর আমার অনুরোধ রইল : প্রত্যেক ঘরে ঘুরে দুর্গ গড়ে তোল।’ এরপর বলা হয় শেখ মুজিবুর রহমান যার বজ্রকণ্ঠ ১৯৭১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি জনগোষ্ঠীকে মুক্তি ও স্বাধীনতার পথ নির্দেশিত করেছিল। এরপর আবার বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠস্বর বাজানো হয়Ñ ‘মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেবÑ এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ। এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রামÑ এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।’ শেখ মুজিবকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে কেন মনোনীত করেছেনÑ জবাবে জাপানের নাগাসাকি শহর থেকে একজন শ্রোতা মনিকা রশিদ বিবিসির অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আজ আমরা সারা বিশ্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে যে যেখানেই বসে যা কিছু করছি, যা বলছি এর কোনোটাই সম্ভব হতো না যদি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আমাদের ইতিহাসের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় সময়টাতে না পেতাম। তিনিই বাঙালি জাতিকে প্রথম বোঝাতে সক্ষম হন যে, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি- সর্বোপরি বাঙালি জাতি হিসেবে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে চাইলে রাজনৈতিকভাবে স্বাধীন হতে হবে। মৃত্যুভয় বা ক্ষমতার লোভ কোন কিছুই তার দীর্ঘ সংগ্রামী মনোভাবকে দমিয়ে দিতে পারেনি।’ বিবিসির সেদিনের প্রভাতী অনুষ্ঠানে সাংবাদিক আতাউস সামাদ বলেন, ‘১৯৭০-এর নির্বাচনে শেখ মুজিব তার নির্বাচনী প্রচারণায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিষয়টিকে মূল বক্তব্য হিসেবে তুলে ধরেছিলেন। উনি সব খানেই ছয় দফার কথা বলতেন এবং ৬ দফা না হলে একটা আঙুল তুলে বলতেন আমার দাবি ‘এই’ অর্থাৎ দেশ স্বাধীন করতে হবে।’

বিবিসি বাংলা সার্ভিসের শ্রোতা জরিপে তাদের পছন্দমতো ৫ জন শ্রেষ্ঠ বাঙালির তালিকা পাঠাতে বলা হয়। বিশ্বব্যাপী শ্রোতাদের প্রাপ্ত তালিকার ভিত্তিতে বিবিসি বাংলা সার্ভিস লন্ডন থেকে ২০ জন শ্রেষ্ঠ বাঙালির তালিকা তৈরি করে। সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালিদের নাম প্রচারের সময় কেন এবং কী কারণে শ্রেষ্ঠ- এ সম্পর্কে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মতামতও প্রকাশ করা হয়।

২৬ মার্চ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিদিন বিবিসির এ অনুষ্ঠানের সামনে শ্রোতাদের উৎসুক ভিড় ছিল। সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির তালিকায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় যথাক্রমে বঙ্গবন্ধু, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামের ওপর তিনদিন বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করে বিবিসি। বিবিসি বাংলা বিভাগের প্রধান সাব্বির মুস্তাফার তত্ত্বাবধানে পুরো জরিপটি পরিচালিত হয়। বঙ্গবন্ধুকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি ঘোষণার পর রাজনৈতিক ভাষ্যকার সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বিবিসির অনুষ্ঠানে বলেন, ‘তিনি সাহসী, দৃঢ়চেতা এবং আপসহীন ছিলেন। যার অভাব আমাদের দেশের নেতৃত্বে আমরা বারবার দেখছি।’ অনুষ্ঠানে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘বলা হতো অসম্ভবকে সম্ভব করা হলো, সেটা বঙ্গবন্ধু করেছেন এবং আমার মনে আছে কিসিঞ্জার উনাকে যে ট্রিবিউটটা দেন, ইউ হ্যাভ ডিফাইড হিস্ট্রি, আমাদের ইতিহাসবিদদের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল এভাবে একটি রাষ্ট্র ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠা হতে পারে না, কিন্তু তোমরা তা করে ফেললে।’ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সবচেয়ে বড় লক্ষণীয় দিকটি হচ্ছে, তিনি বাঙালিকে একটি রাষ্ট্রীয় সত্তায় ঘোষিত করেছিলেন। কিসিঞ্জারের মন্তব্য ‘বঙ্গবন্ধু ডিফাইড হিস্ট্রি’র সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, ড. কিসিঞ্জার বাঙালি আর বাঙালির ইতিহাস সম্পর্কে জানতেন না বলেই এ কথা বলেছেন। বঙ্গবন্ধু দীর্ঘ ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীন রাষ্ট্রীয় সত্তার যে উদ্ভব সেটিকে চূড়ান্ত পর্যায়ে অনুঘটক নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করেছেন। কাজেই তিনি ইতিহাসকে দায়ী করেননি এবং ইতিহাসের সঙ্গেই লগ্ন হয়ে আছেন।

ফলাফল প্রচারের পর পর বঙ্গবন্ধুর দু’কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা জরিপে অংশগ্রহণকারী সব শ্রোতা এবং বিশ্বের সব বাঙালির প্রতি অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। শেখ হাসিনা এক বিবৃতিতে বলেন, ‘সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বীকৃতি দেয়ার সমগ্র গৌরব বাঙালি জাতির। বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাসে তার নিজস্ব ভাষা ছিল, কৃষ্টি ছিল, সংস্কৃতি ছিল, ঐতিহ্য ছিল। ছিল না শুধু একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই বাঙালিকে দিয়েছিলেন জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন স্বাধীনতা, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র। এখানেই বঙ্গবন্ধুর স্বার্থকতা। বঙ্গবন্ধু ধারণ করেছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ এবং বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্বপ্নকে। বাস্তবায়িত করেছেন তিতুমীর, সূর্যসেন, নেতাজী সুভাষ বসু, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মওলানা ভাসানীসহ মুক্তিকামী বাঙালির আকাঙ্ক্ষাকে। তার নেতৃত্বেই পরাধীনতার শিকল ভাঙে বাঙালি জাতি।’ শেখ হাসিনা ১৫ আগস্ট কালরাতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে নিহত সব শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ‘আজ যখন জাতির প্রকৃত ইতিহাস এবং বাঙালি জাতি হিসেবে আমাদের পরিচয়কে ক্ষমতার দাপটে অস্বীকার করার চেষ্টা হচ্ছে, তখন বিবিসির শ্রোতাদের এবার ইতিহাস বিকৃতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহস জোগাবে। আবারও প্রমাণিত হলোÑ হত্যা করে বা ইতিহাস বিকৃত করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নাম মুছে ফেলা যাবে না। বাঙালি জাতি যতদিন থাকবে, বাংলাদেশ রাষ্ট্র যতদিন থাকবে, ততদিন বেঁচে থাকবেন এ রাষ্ট্রের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রিত্ব বা সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব নয়, আমার সবচেয়ে বড় পরিচয় আমি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির কন্যা। এ পরিচয় আমাকে অনুপ্রাণিত করে। ইনশাল্লাহ যতদিন বেঁচে থাকব বাংলাদেশ ও বাঙালির জন্য কাজ করে যাব।’

সেদিন ১ বৈশাখ আওয়ামী লীগের শোভাযাত্রা শেষে শেখ হাসিনা তার বক্তৃতায় বলেন, “স্বাধীনতাবিরোধী ও একাত্তরের পরাজিত শত্রুরা গত ২৯ বছর ধরে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলা এবং তার মর্যাদা খাটো করার ষড়যন্ত্র করেছে। সঠিক ইতিহাস কখনও মুছে ফেলা যায় না। ইতিহাস সব সময় সত্যকেই স্বীকৃতি দেয়। তাই সমগ্র বিশ্বের সব বাঙালির রায়ে সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি নির্বাচিত হয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আজ প্রমাণিত হয়েছে ইতিহাস সত্য কথা কয়। আমরা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে এদেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাবো। দুঃশাসনের কবল থেকে বাংলাদেশের মানুষকে মুক্ত করবই।’ বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা লন্ডন থেকে বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে দেয়া তার প্রতিক্রিয়ায় বিবিসি ও তার শ্রোতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘আজ এ কথা প্রমাণিত হয়েছে যে, ইতিহাস বঙ্গবন্ধুকে সঠিক স্থান দিয়েছে। এ ঘটনায় তার সীমাহীন আনন্দ প্রকাশ করে শেখ রেহানা বলেন, ‘বাঙালির হৃদয় থেকে কেউ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম মুছে ফেলতে পারবে না। বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, ততদিন প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন বঙ্গবন্ধু।’ আজকে তো আওয়ামী লীগের ও বঙ্গবন্ধুর কথা বলার জন্য পত্রপত্রিকা-টিভি চ্যানেলের অভাব নেই। খালেদা-নিজামী চক্রের সেই দুঃশাসনের দিনে ২০০৪ সালের ১৮ এপ্রিল দুর্দিনের বন্ধু দৈনিক সংবাদ-এ বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার এই বক্তব্য বিস্তারিত প্রকাশিত হয়েছিল।

দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ বাঙালি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বিবিসি বলেছে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যাকে অনেকেই বাঙালি অস্তিত্বের শিকড় হিসেবে বর্ণনা করেন। এটা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, বাঙালি সমাজে রবীন্দ্রনাথের প্রভাব শুধু ভাষা সাহিত্য সংস্কৃতিতেই সীমাবদ্ধ নেই, রবীন্দ্রনাথ আমাদের জাতীয় সংগীতের রচয়িতা। রবীন্দ্রনাথ তার অসংখ্য কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক ও সংগীত রচনার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যকে বিশ্ববাসীর সামনে উপস্থাপিত করেছেন। আর কোন কবি-লেখক তার ধারেকাছেও পৌঁছাতে পারেননি। তিনিই প্রথম বাঙালি যিনি গীতাঞ্জলি রচনার জন্য ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করে বিশ্ববাসীর সম্মুখে বাংলা সাহিত্যকে গৌরবের আসনে অধিষ্ঠিত করেন। ১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল তিনি জালিয়ানওয়ালাবাগে জেনারেল ডায়ারের নির্দেশে নারকীয় হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে ইংরেজদের দেয়া ‘নাইট’ উপাধি বর্জন করে দেশপ্রেমের আদর্শ তুলে ধরেন। তৃতীয় স্থানে থাকা স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম সম্পর্কে বিবিসি বলেছে, এ কবি যার লেখা গান, কবিতায় যুগে যুগে বাঙালির জীবন সংগ্রাম ও স্বাধীনতার প্রেরণার উৎস হয়ে কাজ করেছে। চতুর্থ শ্রেষ্ঠ বাঙালি শেরে বাংলা একে ফজলুল হক সম্পর্কে বিবিসি বলেছেÑ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন যুগান্তকারী ঘটনার কেন্দ্রে ছিলেন ফজলুল হক। সব ধর্মীয় সম্প্রদায়কে নিয়ে একটি অবিভক্ত বাংলা প্রতিষ্ঠায় নিরলস চেষ্টা করেছেন তিনি। পঞ্চম সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি নেতাজী সুভাষ বসু। একজন আপসহীন রাজনীতিক যিনি যুগে যুগে বাঙালিদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমাকে রক্ত দাও, আমি স্বাধীনতা দেব।’

বাংলাদেশের রাজনীতির চার কলঙ্কিত নাম- মোশতাক, জিয়া, এরশাদ ও খালেদা। এই চারজনই বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার জন্য ষড়যন্ত্র করেছেন। অথচ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ সৃষ্টি না হলে এই চার কুচক্রী রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, লেফটেন্যান্ট জেনারেল, এমপি ইত্যাদি কিছুই হতেন না। বিবিসির জরিপে বঙ্গবন্ধু সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি নির্বাচিত হওয়ার ঐতিহাসিক ঘটনাটি স্বাধীনতাবিরোধীদের জন্য ছিল একটি শক্তিশালী চপেটাঘাত। এ ঐতিহাসিক স্মরণীয় উদ্যোগটি নেয়ার জন্য বিবিসি, সাব্বির মুস্তাফা এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই বিশ্বব্যাপী বাঙালিদের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

লেখক : সাপ্তাহিক বাংলাবার্তা সম্পাদক
[email protected]

এই বিভাগের আরো সংবাদ