আজকের শিরোনাম :

অগ্নিদগ্ধ নুসরাতের অকাল মৃত্যু ও আমাদের নিষ্ক্রিয়তা!

  সুমিত বণিক

১১ এপ্রিল ২০১৯, ২০:০১ | আপডেট : ১১ এপ্রিল ২০১৯, ২০:৩৬ | অনলাইন সংস্করণ

সারাদেশেই অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটছে, এতে করে এক ধরণের উৎকন্ঠা তো আছেই! এজন্য বার্ণ ইউনিটগুলোতে আগুনে দগ্ধ মানুষের আত্মচিৎকারে ভারি হয়ে উঠছে চারপাশ। কিন্তু অতি সম্প্রতি গত ৬ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে অধ্যক্ষের প্ররোচনায় কিছু দুর্বৃত্ত যেভাবে আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি’র গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে, তা যেকোন বিবেকবান মানুষকেই নিঃস্তব্ধ করে দেয়। আর এ ধরণের বিকৃত মানসিকতার পরিচয় তো মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়!

এ কেমন অমানবিকতা আর পাশবিকতা ভর করেছে আমাদের মননে? শিক্ষকতার মতো মহৎ পেশায় থেকেও আমাদের লালসায় পঁচন ধরে যায়? কোথায় নিরাপদ আমরা? আমাদের মা-বোনরা কি তাদের সম্ভ্রম নিয়ে নিরাপদে থাকতে পারবে না?

একজন মানুষ হিসেবে যে কেউ তার উপর অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে পারে। আর সে ব্যাপারে দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী সুষ্ঠু বিচার পাওয়া তার নাগরিক অধিকার। এর ব্যাত্যয় ঘটলে সেটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের সামিল। ১৮ বছরের মেয়ে নুসরাত জাহান রাফি। হয়তো তারও আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন ছিলো! আর সেই স্বপ্নের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয় ৪/৫ জন বোরকা পরা ব্যক্তি। এতে তার শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যায়।

ঘটনা সূত্রে জানা যায়, গত ২৭ মার্চ তার মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদদৌলা তাকে নিজের কক্ষে ডেকে নিয়ে শ্লীলতাহানি করেন। ওই ঘটনায় থানায় তাঁর মা থানায় মামলা করে ছিলেন। ওই মামলায় অধ্যক্ষকে কারাগারে পাঠানো হয়। মামলা তুলে নিতে অধ্যক্ষের লোকজন হুমকি দিয়ে আসছিল বারবার। মূলত এ কারণেই এ মেয়েটির এই অমানবিক অগ্নিদগ্ধের ঘটনা ঘটানো হয়েছে।

মেয়েটি অগ্নিদগ্ধ হবার পর থেকে সারাদেশের সচেতন মানুষ মেয়েটির সুস্থ্যতা এবং মেয়েটিকে অমানবিকভাবে অগ্নিদগ্ধ করার বিচারের দাবীতে সোচ্চার হয়। তারপর একে একে গণমাধ্যমে উঠে আসতে থাকে ওই অধ্যক্ষের সকল কুকীর্তির আর যৌন নিপীড়নের কাহিনী। পরিতাপের বিষয় হলো অধ্যক্ষের মদদপুষ্ট কিছু স্থানীয় রাজনীতিকদের পৃষ্ঠপোষকতায় অধ্যক্ষের নিঃশর্ত মুক্তির দাবীতে মিছিলও করেছিল।

নুসরাতের সুস্থ্যতার জন্য স্বয়ং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত উৎকন্ঠিত ছিলেন। তিনি পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও নুসরাতকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানোর নির্দেশও দিয়েছেন। কিন্তু তার অবস্থার অবনতির জন্য তাকে সিঙ্গাপুরেও পাঠানো যায় নি। অবশেষে সকল উৎকন্ঠা আর চার দিনের প্রাণপণ লড়াই শেষে মৃত্যুর কাছে  হার মানলেন নুসরাত! গত ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে না ফেরার দেশে চলে যান। তাঁর এ মৃত্যুতে শোকাহত সকল সচেতন মানুষ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ার জুড়ে বইছে শুধু নুসরাতের জন্য শোকের ছায়া।

নুসরাতের এ অকাল মৃত্যু শুধু একটি তাঁজা প্রাণের অকাল প্রয়াণ নয়, এটি আমাদের সামাজিক অবক্ষয় আর নিষ্ক্রিয়তার এক জলন্ত উদাহারণ। মেয়েটি হয়তো মরে গিয়ে আমাদের বাঁচিয়ে দিয়ে গেছে। না হলে, হয়তো আবারো সমাজের নষ্ট মানুষগুলোর নগ্ন আক্রোশের শিকার হতো! কিন্তু আমাদের সমাজে হাজারো নুসরাত আছে, যারা আমাদেরই কারো সন্তান বা মেয়ে। আমরা কি তাদের নিরাপদে ও সুস্থ্যভাবে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তাটুকু দিতে পারবো না? রাষ্ট্রযন্ত্র কি এসব অবক্ষয় আর অনাচারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে এসকল নরপশুদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে পারে না?

সুমিত বণিক, উন্নয়নকর্মী
মহাখালী, ঢাকা।
[email protected]

এই বিভাগের আরো সংবাদ