আজকের শিরোনাম :

আমার প্রাণের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

  ড. আতিউর রহমান

০৬ এপ্রিল ২০১৯, ১২:১৭ | অনলাইন সংস্করণ

আমি তখন মোমেনশাহী (এখন মির্জাপুর) ক্যাডেট কলেজের ছাত্র। ১৯৬৮ সালে এসএসসি পরীক্ষা শেষে এসেছিলাম ঢাকায়। এরপর আরেকবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসেছিলাম আমাদের এক বছরের জুনিয়র নাবিদের সঙ্গে। ওর বাবা প্রফেসর নাফিজ আহমেদ ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের চেয়ারম্যান। নাবিদের বড় বোন জুলফিয়া আপা। তার স্বামী ডাকসাইটে সরকারি কর্মকর্তা জনাব আসফ্‌উদ্দৌলা। তিনি তখন বরিশালের জেলা জজ। তার সঙ্গে ওই সময় নাবিদের বাসাতেই পরিচয় হয়। পরে সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে একসঙ্গে কাজ করেছি। জুলফিয়া আপাই আমাকে অর্থনীতি পড়ার জন্য অনুপ্রাণিত করেন। ওই বিভাগের খুবই মেধাবী ছাত্রী ছিলেন তিনি। বিয়ে হয়ে যাওয়ার কারণে আর পড়াটা শেষ করতে পারেননি। এইচএসসি পরীক্ষা দিলাম। রেজাল্ট ভালোই হলো। এরপর অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হওয়ার অভিজ্ঞতাও মনে রাখার মতো।

সলিমুল্লাহ হলে আমার দূর সম্পর্কের মামা থাকতেন। তার ওখানেই উঠলাম। তার বন্ধুরা ছিলেন অর্থনীতির প্রভাষক। সবাই খুব উৎসাহিত করলেন অর্থনীতি পড়ার জন্য। তখন শুধু মৌখিক পরীক্ষা দিয়েই ভর্তি হওয়া যেত। ছিলাম বিজ্ঞানের ছাত্র। তাই স্বাভাবিক নিয়মে আমার কার্জন হলে যাওয়ার কথা। কিন্তু আমি ওদিকের পথ মাড়ালাম না। সোজা কলাভবনে এসে অর্থনীতি বিভাগে ফরম পূরণ করলাম। একদিন পরেই ভাইভা। এমএন হুদা স্যার ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন আনিসুর রহমান স্যার ও তাহেরুল ইসলাম স্যার। শুরুতেই আমার কাছে জানতে চাইলেন, বিজ্ঞান ভবনে না গিয়ে কেন অর্থনীতিতে পড়তে চাইছি। বললাম, অর্থনীতি বিষয়ে খুব একটা জানি না। তবে এটুকু বুঝতে পারছি যে, এ বিষয়টি খুবই সৃজনশীল এবং জীবনঘনিষ্ঠ। স্যার প্রশ্ন করলেন অর্থনৈতিক তত্ত্ব নিয়ে। বললাম, এ নিয়ে পড়াশোনা করিনি। তবে বিজ্ঞানের তত্ত্বের আলোকে কিছু কথা বলতেই পারি। স্যার শুনলেন এবং অর্থনীতি পড়ার অনুমতি দিলেন। স্যার ক্লাসে প্রায়ই আমাকে অর্থনৈতিক নীতি ও তার প্রয়োগ নিয়ে প্রশ্ন করতেন। ভীষণ স্নেহ করতেন আমাকে। আনিস স্যারেরও প্রিয় ছাত্র ছিলাম আমি। একজন সনাতনপন্থি; আরেকজন খুবই প্রগতিশীল। এ ছাড়া মুশাররফ স্যারও খুব স্নেহ করতেন আমায়। ওয়াহিদ স্যার শুরুর ক্লাসগুলো পড়াতেন। ভর্তি হওয়ার কয়েক মাস পরেই শুরু হয়ে গেল অসহযোগ আন্দোলন। এরপর মুক্তিযুদ্ধ।

ঢাকা শহরে থেকে পড়াশোনা করার মতো আর্থিক সঙ্গতি আমার ছিল না। তাই একেবারে শুরু থেকেই বোর্ড থেকে পাওয়া বৃত্তি এবং লেখালেখি করে সামান্য আয় দিয়েই চালাতে হয় জীবন। ইংরেজি দৈনিক অবজারভার, দি পিপলস এবং পূর্বদেশে লেখালেখি শুরু করলাম। একেকটি লেখার জন্য মাত্র ২৫-৩০ টাকা পেতাম। এক পর্যায়ে দি পিপলস-এর বার্তা সম্পাদক প্রয়াত আনোয়ার জাহিদকে একদিন বলেই ফেললাম আমার কষ্টের কথা। তিনি পত্রিকার মালিক ও সম্পাদক আবিদুর রহমানের সঙ্গে কথা বলে সম্পাদকীয় বিভাগে সহকারী হিসেবে পার্টটাইম কাজের ব্যবস্থা করে দেন। বেতন আড়াইশ' টাকা। সূর্য সেন হল থেকে হেঁটেই আসতে-যেতে পারি। আর সুযোগ পেলাম নির্বাহী সম্পাদক বরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ওয়াহিদুল হকের সঙ্গে কাজ করার। যেমন জানাশোনা, তেমনি উদার মনের এই মানুষটির সান্নিধ্যে না এলে হয়তো আমার পক্ষে সৃজনশীল চিন্তা ও লেখালেখির ভিত্তিটাই তৈরি হতো না।

আর্থিক টানাপড়েন খানিকটা কেটে যাওয়ায় আমি একটু ভালোভাবে পড়াশোনা করার সুযোগ পেলাম। ওয়াহিদ ভাইয়ের সঙ্গে কাজের সুবাদে কত কিছুই না জানার সুযোগ পেলাম! একদিন দেখি তার ঝোলাভর্তি স্থাপত্যবিদ্যার বই। বললাম, এগুলো কেন? বললেন, বুয়েটের খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে তিনি স্থাপত্যবিদ্যার সাংস্কৃতিক দিকগুলো পড়ান। একইভাবে বিজ্ঞানের নানা শাখায় তার সমান পারদর্শিতা। আর রবীন্দ্রনাথ তো তার জীবনেরই আরেক নাম। আমি উপ-সম্পাদকীয়গুলো দেখি, চিঠিপত্র লিখি এবং পুরো সম্পাদকীয় দলের সদস্যদের চাহিদামতো তথ্য সংগ্রহ করে দিই। বিদেশি পত্রিকা ও জার্নাল পড়ার দারুণ সুযোগও মিলল এই ফাঁকে। এর ফাঁকে ফাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার সঙ্গে জড়িয়ে পড়লাম। নিয়মিত বিতর্ক করতাম। একবার টিএসসির সামনের সড়ক দ্বীপের এক সাহিত্য সভায় একটি কবিতাও পড়েছিলাম। সাপ্তাহিক বিচিত্রায় আমার ছবিসহ কবিতার কয়েকটি লাইনও ছাপা হয়েছিল। তখন ডাকসু থেকে সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হতো। মাহাবুব জামান ও ম. হামিদ ভাইয়ের অনুপ্রেরণায় উপস্থিত বক্তৃতা, বিতর্ক, আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় ১৩৮০ বঙ্গাব্দে শ্রেষ্ঠ প্রতিযোগী হয়ে একটি স্বর্ণপদকও পেয়েছিলাম। সেই কারণে কি-না জানি না, অর্থনীতি বিভাগের পর্ষদে ছাত্রছাত্রীদের ভোটে সাহিত্য সম্পাদকও নির্বাচিত হয়েছিলাম। 'কড়ি' নামের একটি সাময়িকীও বের করতাম। বিতর্ক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতাম।

তখন বিতর্ক এতটা বৈচিত্র্যপূর্ণ ছিল না। তবে ডাকসু মাঝেমধ্যে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয়, আন্তঃহল বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করত। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আব্দুস সাত্তার মণ্ডল (বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং বর্তমানে ইমেরিটাস প্রফেসর), আমাদের বিভাগের মাহফুজ আনাম (ডেইলি স্টার সম্পাদক), সেলিম জাহান (জাতিসংঘে কর্মরত), ফারাবি (প্রয়াত) ও আকাশ (বর্তমানে অধ্যাপক) ওই সময়ের চৌকস বিতার্কিক। সেদিন ছিল ১৪ আগস্ট ১৯৭৫। সন্ধ্যাবেলায় টিএসসিতে ডাকসুর আয়োজনে বিরাট বিতর্ক অনুষ্ঠান। স্পিকার আব্দুল মালেক উকিল প্রধান অতিথি। বিতর্কের বিষয় ছিল সংসদীয় গণতন্ত্র। আমরা পুরো সন্ধ্যাটাই টিএসসিতে। বিতর্ক শেষে হলে এসে খেয়ে ঘুমুতে গেলাম। পরের দিন আমাদের জীবনে কী অপেক্ষা করছে, সে বিষয়ে কিছুই আঁচ-অনুমান করতে পারিনি। সকালে উঠেই মেজর ডালিমের কর্কশ কণ্ঠস্বরে ভেঙে চৌচির হয়ে গেল বাংলাদেশের হৃদয়খানি। 'বাংলাদেশের আরেক নাম' আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আর নেই। অথচ আমরা গভীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম তাঁকে তাঁর প্রিয় ক্যাম্পাসে বরণ করার জন্য। কেননা ওইদিন সকালে তাঁর ক্যাম্পাসে আসার কথা। ৩ নভেম্বর জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়। 

১৫ আগস্টের বেশ কিছু দিন আগেই 'দি পিপল' বন্ধ হয়ে যায়। আর আমার সামান্য খণ্ডকালীন চাকরিও চলে যায়। বিভাগীয় চেয়ারম্যান হুদা স্যারকে আমার সমস্যার কথা খুলে বললাম। অনার্স পরীক্ষার ফল ভালোই ছিল। তাই স্যার খুব ভালো একটি চিঠি লিখলেন তৎকালীন পর্যটন কমিশনের চেয়ারম্যান রফিকুল্লাহ চৌধুরীর (বর্তমান স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বাবা) কাছে। আমাকে একটি চাকরি দেওয়ার জন্য তিনি অনুরোধ জানালেন। মুশাররফ স্যারও টেলিফোনে তাকে বলে দিলেন। নির্বাহী অফিসার (পরিকল্পনা) পদে সাড়ে সাতশ' টাকা বেতনে কাজ শুরু করলাম। সকালে সূর্য সেন হল থেকে চলে আসি মতিঝিলে। বিকেলে ক্লাস থাকলে ক্লাস করি। আর সকালে ক্লাস থাকলে বন্ধুদের কাছ থেকে নোট নিয়ে ওই দিনের পড়াটা সামলে নিই। টিউটোরিয়াল ও পরীক্ষা থাকলে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসি। স্যাররা আমার সমস্যাটা জানতেন। তাই সর্বদাই তারা তাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। ততদিনে হুদা স্যার অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী হিসেবে সরকারে যোগ দিয়েছেন। পরীক্ষা দিলাম। বন্ধুরা হয়তো অবাকই হয়েছিল। অর্থনীতিতে প্রথম শ্রেণি পাওয়া সহজ ছিল না। ভাগ্য আমার প্রসন্নই বলা চলে। রেজাল্ট পেয়েই ঠিক করলাম আর পর্যটন নয়। বিআইডিএসে যোগ দিলাম একটি গবেষণা প্রকল্পে। কয়েক মাস পরেই 'স্টাফ ইকোনমিস্ট' পদের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি হলো। আমার চাকরিটা হয়ে গেল। 

ফিরে যাই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে। প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা নিয়ে টিএসসিতে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সম্মেলন। '৭৪-এর প্রথম দিকে। ওই সম্মেলনেই প্রফেসর নুরুল ইসলাম স্যারের সঙ্গে পরিচয় হয়। সেই পরিচয়ের সূত্র ধরে আজও আমি স্যারের স্নেহসিক্ত থাকতে পেরেছি।

মুশাররফ স্যার এ পৃথিবীতে নেই। যতদিন বেঁচে ছিলেন তার স্নেহধন্য ছিলাম আমি। আনিস স্যারও আমাকে খুবই স্নেহ করতেন। একসময় তিনি আমাদের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সমুন্নয়েও বসতেন। কিন্তু স্যার আজকাল আর জনসমক্ষে আসতে চান না। খুব চেষ্টা করেছিলাম নুরুল ইসলাম স্যার, রেহমান সোবহান স্যার ও মুশাররফ স্যারের মতো আনিসুর রহমান স্যারকেও বাংলাদেশ ব্যাংক পুরস্কার দেওয়ার। তিনি রাজি হননি। আর রেহমান সোবহান স্যার তো এখনও খুবই সক্রিয়। ছাত্র হিসেবে খুব বেশি ক্লাস তার পাইনি। কিন্তু বিআইডিএসে তার নেতৃত্বে অনেক গবেষণা কাজেই যুক্ত থাকার সুযোগ আমার হয়েছিল।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় সূর্য সেন হলই ছিল আমার স্থায়ী ঠিকানা। এই হলের প্রভোস্ট ছিলেন আইন বিভাগের প্রফেসর লুৎফুল কবির। পিতৃস্নেহে তিনি আমাদের হলের সংসার পরিচালনা করতেন। যে কোনো সমস্যা হলেই তার কাছে ছুটে যেতাম। অন্যান্য হাউস টিউটরের স্নেহ ও নজরদারিতেই আমরা বেড়ে উঠেছি। আমরা হলে গণতন্ত্রের সর্বোৎকৃষ্ট চর্চা লক্ষ্য করেছি। ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন, জাসদ ছাত্রলীগ ছাড়াও বামপন্থি অনেক ছাত্র সংগঠনই তখন সক্রিয়। বটতলায় একে অপরের সমালোচনায় মুখর। কিন্তু রাতে খাবার সময় দেখতাম, পাশাপাশি বসে পরম আত্মীয়তার আবেশেই ছাত্রনেতারা খাচ্ছেন। হলের নানা অনুষ্ঠানে তারা মিলেমিশেই কাজ করছেন। হলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গেও কী আন্তরিক সম্পর্কই না গড়ে উঠেছিল। হলে ওদুদ চাচা আমাদের আপদে-বিপদে সর্বদাই পাশে ছিলেন। ক্যান্টিনের রফিক আমার বিআইডিসের অফিসে কতবারই না এসেছে। হলে থাকতে আমরা বন্ধুরা দল বেঁধে সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখে আসতাম। হলের সেই বন্ধনের জোরেই এখনও আমাদের অনেকেরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনস্মৃতি অনেকটাই জীবন্ত রয়ে গেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের অন্তরে কতটা স্থায়ী, তা আমি বুঝতে পেরেছি, যখন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো, ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তির কোনো আবেদন এলেই আমি সাধ্যমতো সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতাম। সমাজবিজ্ঞান অনুষদের মোজাফ্‌ফর আহমেদ চৌধুরী হল, অর্থনীতি ও উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের আসাদুজ্জামান কনফারেন্স রুম ও সংশ্নিষ্ট অবকাঠামো, কম্পিউটর ল্যাব, গভর্নর স্কলারশিপ প্রবর্তন, আন্তর্জাতিক হলের লিফট স্থাপন, দি আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট সায়েন্স বিভাগে আধুনিক ল্যাব স্থাপন, অ্যালামনাই পরিচালিত নানা বৃত্তি ও অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যাংকগুলোকে তাদের সামাজিক দায়বদ্ধ কাজে উজ্জীবিত করতে যতটা পেরেছি করেছি। আমার বড়ই সৌভাগ্য যে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি। এখানেই আবার শিক্ষক হিসেবে পড়ানোর সুযোগ পেয়েছি।

শিক্ষক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খুব বেশিদিন কাজ করতে পারিনি। হঠাৎ করেই আমাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর করে নিয়ে গেল সরকার। এরপর ফিরে এসে কয়েক বছর শিক্ষকতার সুযোগ পেয়েছি। উন্নয়ন অধ্যয়ন ও বিজনেস ফ্যাকাল্টিতে অতিথি শিক্ষক হিসেবে পড়াচ্ছি। 

২০২১ সালে অনুষ্ঠিত হবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মশতবার্ষিকী। একই বছর বাংলাদেশেরও সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করব আমরা। এখন থেকেই আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে, কত সাফল্যের সঙ্গে এই দুটি শতবর্ষী অনুষ্ঠান আমরা উদযাপন করতে পারি সে কথা মনে রেখে। তার এক বছর আগে অর্থাৎ ২০২০ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেষ্ঠ ছাত্র বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করব। ওই বছর আমরা 'মুজিব বর্ষ' উদযাপন করব। তাই আগামী দুটি বছর খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনে। বুদ্ধদেব বসু, সত্যেন সেন, কাজী মোতাহার হোসেন, অমিয় দাশগুপ্ত, সরদার ফজলুল করিম, জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাকের পায়ের ছোঁয়া লাগানো এই বিশ্ববিদ্যালয়কে কী করে সত্যি সত্যি বিশ্বমানের একটি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আমরা গড়ে তুলতে পারি, সেসব আলাপ করব ও কর্মসূচি গ্রহণ করব এই সময়টায়।

আমাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরাই এ দেশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাই তাদের সহযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষায়, গবেষণায়, প্রকাশনায়, প্রশিক্ষণে বিশ্বমান অর্জন করার সক্ষমতা নিশ্চয় রাখে। সে জন্য চাই আমাদের ঐতিহ্যপ্রীতি, রাজনৈতিক অঙ্গীকার এবং শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের অবিচল আস্থা ও অঙ্গীকার। নিশ্চয়ই আমরা উন্নত বাংলাদেশ গড়তে পারব। আর সে কারণেই চাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিকায়ন ও উন্নয়ন।

লেখক: প্রফেসর (সম্মানীয়), উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাবেক গভর্নর বাংলাদেশ ব্যাংক
[email protected]

এই বিভাগের আরো সংবাদ